somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন মহাবিশ্বের খোঁজে

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন ধরে মাথায় চিন্তাটা ঘুর ঘুর করছে,আমাদের এই মহাবিশ্ব কি একটাই? নাকি অনেক বিশ্বের ভিড়ে আমাদের এ বিশ্ব নিতান্তই ক্ষুদ্র এক গণ্ডি? সহজ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ৪০০ বছর ধরে বিরামহীন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকেরা। ১৬ শতকের জ্যোতির্বিদ জোহান কেপলার থেকে শুরু করে এ যুগের স্টিফেন হকিং পর্যন্ত মহাবিশ্বের রহস্য উদ্ধারে বিভিন্ন তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেছেন। তবে কসমোলজি বা বিশ্ব সৃষ্টির রহস্য উদঘাটনে গবেষকদের সাম্প্রতিক গবেষণার ফল বলছে, এই মহাবিশ্বে কোটি কোটি বিশ্বের সঙ্গী আমাদের এই বিশ্ব। অর্থাত্ কোটি কোটি বিশ্ব নিয়ে তৈরি এই অনন্ত বিশ্ব বা মাল্টিভার্স।
আইনস্টাইন বলেছিলেন, বিশ্ব সৃষ্টির সময় স্রষ্টার হাতে আর কোনো বিশ্বের তুলনা ছিল কি না, এ নিয়ে তাঁর যথেষ্ট কৌতূহল জাগে। অর্থাত্ এই বিশ্ব একটাই কি না—তাঁর কাছে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল এটা। আইনস্টাইনের জিজ্ঞাসা ছিল বিস্তীর্ণ ছায়াপথ, অসংখ্য নক্ষত্র ও গ্রহের আবাসস্থল অনন্য বিশ্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম কি বাঁধাধরা? নাকি আমাদের এই বিশ্ব ছাড়াও অন্য কোথাও একই নিয়মে তৈরি হয়েছে আরও বিশ্ব?
আইনস্টাইনের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বর্তমান সময়ের গবেষকদের মনে জন্ম নিয়েছে নতুন প্রশ্নের। প্রতি বছর গাড়ির ক্ষেত্রে যেমন নতুন নতুন মডেল নতুন সুবিধা নিয়ে বাজারে আসে, সেই গাড়ির বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন মানুষের জন্য ব্যবহার উপযোগী করা হয়, তেমনি এই বিশ্বের ক্ষেত্রেও কি নিয়মতান্ত্রিক পরিবর্তন ঘটে? গবেষকদের ভাষ্য, শক্তিশালী টেলিস্কোপ ও লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের মতো কণা বিশ্লেষণ করার যন্ত্রের মাধ্যমে আমরা এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাব।
বিশ্বের সৃষ্টিরহস্য নিয়ে আইনস্টাইনের পর থেকে আরও গভীর পর্যালোচনা ও গবেষণা করেছেন গবেষকেরা। আইনস্টাইন কেবল পদার্থবিদ্যার সূত্রের মধ্যেই বাঁধতে চেয়েছিলেন এই বিশ্বরহস্যকে। কিন্তু এখন কেবল আর অনুমান বা তত্ত্বনির্ভর নয়, পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ হাজির করতে কাজ করছেন গবেষকেরা। প্রথম দিকের গবেষকেরা কেবল আমাদের বিশ্বের মধ্যে কী রয়েছে, সে গবেষণা করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে গবেষকেদের লক্ষ্য, আমাদের এই বিশ্বের বাইরে অন্যান্য বিশ্বের সন্ধান করা। মাল্টিভার্স বা অনন্ত বিশ্বের ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে বিগ ব্যাং তত্ত্ব, ইনফ্ল্যাশনারি কসমোলজি বা স্ফীতিতত্ত্ব ও স্ট্রিং থিওরি। এই তিনটি তত্ত্ব নিয়ে কাজ করছেন—এমন গবেষকদের ভাষ্য, আমরা অনন্য বিশ্বে নয়, আমরা অনন্ত ও কোলাহলপূর্ণ বিশ্বে বাস করছি। আমাদের বিশ্বের বাইরে যেসব বিশ্ব রয়েছে, সেই বিশ্ব আমাদের বিশ্বের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা হতে পারে। এ বিশ্বগুলো তৈরি হতে পারে অন্য কোনো কণায়। সেখানে রাজত্ব করতে পারে অন্য কোনো শক্তি। এ অনন্ত মহাবিশ্বে হয়তো কোলাহলপূর্ণ মহাজাগতিক আলাদা আলাদা বিষয় ছড়িয়ে রয়েছে।
অনন্ত মহাবিশ্ব বা একাধিক বিশ্বের এই তত্ত্ব নিয়ে সব গবেষকেরা একমত নন। অনেকে এই ধারণাকে এখনো অনুমাননির্ভর ও বিজ্ঞানের ব্যাখ্যাতীত ও বাস্তবতা-বিবর্জিত বিষয় বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা কোন পক্ষে যাব, কী বিশ্বাস করব? অনন্ত মহাবিশ্ব, নাকি একক মহাবিশ্ব? এ সংশয়ের বাধা ও সন্দেহ দূর করতে আমাদের বিগ ব্যাং তত্ত্বের মধ্যে ঢুঁ মারতে হবে।
১৯১৫ সালে ‘জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি’ বা আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রকাশ করেন আইনস্টাইন। মাধ্যাকর্ষণ বল নিয়ে ১০ বছরের গবেষণা শেষে আইনস্টাইন আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রকাশ করেন। বিজ্ঞানের অসাধারণ গাণিতিক এক সমীকরণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও পরিণতির একটি ব্যাখ্যা পাওয়া গেল। আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি কাজে লাগিয়ে ‘স্পেস-টাইম’ বা স্থান-কালের ধারণার যে বিবর্তন ঘটে গেল—তার হাত ধরেই মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও ভবিষ্যত্ পরিণতির একটা যৌক্তিক ধারণা পাওয়া গেল।
এর পর গবেষকেরা জানালেন, প্রতিনিয়ত সম্প্রসারণ ঘটছে এই মহাবিশ্বের। অর্থাৎ প্রতিটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ পরস্পর থেকে প্রতিনিয়ত দূরে সরে যাচ্ছে। মার্কিন জ্যোতির্বিদ এডউইন হাবল ১৯২৯ সালে তা নিশ্চিত করেন। গবেষকেরা ভাবা শুরু করলেন, মহাবিশ্ব যদি সম্প্রসারিত হতে থাকে, এই সম্প্রসারণ শুরুর আগে নিশ্চয় মহাবিশ্বের উপাদানগুলো একসঙ্গে প্রচণ্ড ঘনত্ব নিয়ে ক্ষুদ্র অবস্থায় ছিল। সুদূর কোনো অতীতে এই ক্ষুদ্র বস্তুটিই বিস্ফোরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্রমাগত প্রসারিত হতে থাকে। গবেষকেরা এই ঘটনাটিরই নাম দিলেন ‘বিগ ব্যাং’। এ তত্ত্বটি অনেকের সমর্থনও পেল। তবে তাঁরা বিগ ব্যাং তত্ত্বের মধ্যেও দুর্বলতা খুঁজে পেলেন। তাঁদের প্রশ্ন, বিগ ব্যাংয়ের ফলে সবকিছুই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়লে এই অঘটনের পেছনে কোন শক্তি আর কেনই বা ঘটল বিগ ব্যাং? এই শক্তির প্রমাণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা গবেষকেরা দাঁড় করাতে পারেননি। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২৩
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×