বিচারক বদল হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় দেয়ার আগে আবারো দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
Published : 26 Feb 2014, 11:14 AM
আসামিপক্ষের আবেদনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর নতুন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বুধবার এই আদেশ দেন।
পুনরায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ১০ মার্চ দিন ঠিক করে দিয়েছেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের এই বিচারক এদিনই প্রথম ট্রাইব্যুনালে বসলেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত না হওয়ায় তাদের লিখিত যুক্তিতর্ক জমা দিতে বলে গত ১৩ নভেম্বর নিজামীর মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিল ট্রাইব্যুনাল।
এরপর ট্রাইব্যুনাল-১ চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টিএম ফজলে কবীর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে গেলে এই আদালতের বিচার কার্যক্রমে কার্যত স্থবিরতা তৈরি হয়।
সাবেক জোট সরকারের মন্ত্রী নিজামীর বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো ১৬টি অভিযোগ রয়েছে।
২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামীকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করার পর একই বছরের ২ অগাস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এরপর গত বছর ১১ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উপস্থাপন করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। ২৮ ডিসেম্বর আদালত অভিযোগ আমলে নেয়।
নিজামীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে একাত্তরের ডিসেম্বরে পাবনার বেড়া থানার বৃশালিকা গ্রাম ঘেরাও করে ৭০ জনকে গুলি করে হত্যা ও ৭২টি বাড়িতে আগুন দেয়া, ডেমরা ও বাউশগাড়ী গ্রামে ৪৫০ জনকে গুলি করে হত্যা, সাঁথিয়া উপজেলার করমচা গ্রামে মন্দিরের সামনে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের ঘটনাও রয়েছে।
এসব ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ২৮ মে জামায়াত আমিরের বিচার শুরু হয়।
অভিযোগ গঠনের আদেশে বলা হয়, ১৯৪৩ সালে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে জন্ম নেয়া নিজামী ১৯৬৩ সালে কামিল পাস করেন। জামায়াতের তখনকার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার প্রধান হিসাবে একাত্তরে তিনি ছিলেন আলবদর বাহিনীরও প্রধান।
স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর দমন-পীড়ন চালাতে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটিতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খানের জবানবন্দি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে গত বছর ২৬ অগাস্ট এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্য দেন মোট ২৬ জন।
আর নিজামীর পক্ষে তার ছেলে মো. নাজিবুর রহমানসহ মোট চারজন সাফাই সাক্ষ্য দেন। বাকি তিনজন হলেন- অ্যাডভোকেট কে এ হামিদুর রহমান, মো. শামসুল আলম ও আবদুস সলাম মুকুল।
সাক্ষ্য ও জেরা শেষে গত ৩ থেকে ৬ নভেম্বর প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। এরপর ৭ নভেম্বর থেকে চার দিন আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের জন্য দিন রাখা হলেও নিজামীর আইনজীবীরা আসেননি।