চুপচাপ বসে আছি আমার প্রিয় জানালাটার পাশে।ছোট এই জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যায়।সে আকাশ অনেকবিশাল।অনেক স্বপ্নের হাতছানি তাতে। আজ মনে হয় সন্ধ্যেটা আর হবেনা।সমস্ত আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে আছে আবির রং।থোকা থোকা নরম আলোগুলো গলে গলে মিলিয়ে যাচ্ছে গাছে ঘাসে, পুকুর পাড়ে।স্থির হয়ে গেছে সময় সঙ্গে প্রকৃতিও।অবচেতনে তোমাকেই ভাবছি আমি।
ঘোর কাটে রিমঝিম এর চিৎকারে।রিমঝিম হলো আমার রুমমেট।বেশ ভাল মেয়েটি,যদিও একটু চন্ঞ্চল প্রকৃতির।কাল ভ্যালেন্টাইনস ডে।সেই জন্য এত আয়েআজন সবার মধ্যে।রিমঝিম ও এর ব্যাতিক্রম নয়।কাল কোন শাড়িটা পড়বে,কিভাবে সাজবে তা নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই।শেষ পযন্ত শাড়ি নিবাচনের ভার পড়ল আমার উপর।সম্প্রতি একজনের সন্গে অ্যাফেয়ার হয়েছে রিমঝিম এর।ওর প্রানচন্ঞ্চল মুখটা দেখে খুব ভালো লাগছে আমার।এর মধ্যে আমি হারালাম অতীত এর এক হাতছানিতে।আজ থেকে দুবছর আগের কথা।আমি তখন সবে মাত্র দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছি।ক্লাসে,হলে সবার কাছে মিষ্টি মেয়ে মেঘা নামে পরিচিত ছিলাম।এর মধ্যে পেয়েছি অনেক প্রেমের প্রস্তাব।কিন্তু ভাবনার তুলিতে যাকে একেছি তাকে কখনই খুঁজে পাইনি।বই পড়তে গান শুনতে আমার খুব ভালো লাগতো।ঘুরে বেড়ানোতেও ছিলাম ওস্তাদ।আর তাই এক বিকেলে আমার এক ঘনিষ্ট বান্ধুবি ফাহমির অনুরোধে বের হলাম ক্যাম্পাসে।সিলেট থেকে ওর বন্ধুরা এসেছে বেড়াতে।তারপর সবাই মিলে ঘুরলাম।আর এভাবেই দেখা হয় অর্নবের সন্গে আমার। আর তখন থেকেই শুরু হয় নতুন এক সম্পর্কের জাল।অর্নব যদিও তেমন সুন্দুর নয়।
দুদিন পরেই তারা চলে যায় সিলেটে।তার কিছুদিন পড়েই অর্নবের জম্নদিন।জম্সদিনে শুভেচ্ছা পাঠাতে আমার খুব ভালোলাগতো তাই চিন্তা করলাম যে প্রথম ফোনটা আমিই ওকে করবো ।যেমন ভাবা তেমন কাজ।রাত ১২টার আগেই ফোন দিয়ে ফেলি...
এরপর আমাদের কথা চলতেই থাকে।জানতে থাকি অর্ণবের ভাললাগা, পছন্দ সহ অনেক কিছু । ইতিমধ্যে অর্ণবের মাঝে খুজে পাই আমার ভালবাসার মানুষকে।মনের অজান্তেই ভালোবাসতে থাকি তাকে ।সাহস করে বলতে পারিনি।মনে মনে ভাবতাম সে কি আমাকে ভালোবাসতে পারবে, যদি না বাসে, যদি সে আমাকে গ্রহন না করে । অবশেষে চিন্তা কররাম সামনের ভালোবাসা দিবসে তাকে আমার মনের কথা জানাবই।চলে এল সেই মাহেন্দ্র দিন।আবারো রাত ১২টায় তাকে জানাতে চাইলাম ভালোবাসার কথা, কিন্তু ১০ বার ফোন দেবার পরও ফোনটি ধরলোনা অর্ণব।হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো আমার মন।তাহলে কি অর্ণব আমাকে ভালবাসতে পারবেনা..
আর কিছুই চিন্তা করতে পারলাম না আমি।মনে পাথর চেপে সারাটা রাত জেগে রইলাম আমি।সকালে কিছুই খেতে পারলামনা ।
চারদিকে আকাশে অনেক মেঘ । মনে হয় বৃষ্টি হবে । রিমঝিম আমাকে বলছে আপু বৃষ্টি হলে আজ বৃষ্টিতে ভিজবো আমরা । কোন উত্তর না দিয়েই আমার জানালাটার পাশে বসে রইলাম ।
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো । না দেখে কেটে দিলাম দুবার, কিন্তু পরের বার যখন বেজে ইঠলো তখন ভাবলাম অর্নব নয়তো। ফোন হাতে নিয়েই মনটা যেন ভাল হতে শুরু করলো । অর্ণবের ফোন...
ফোনটা ধরতেই অর্ণব বললো মেঘা একটু নিচে আসবে ?
আর কিছু না বলে নিচে নেমে গেলাম আমি । হলের গেট পেরিয়েই একটু এদিক ওদিক তাকাতেই দেখি এক গাছ তলায় অনেকগুলো লাল গোলাপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে । কাছে যেতেই সে ফুলগুলো আমাকে দেয়, আর বলে, প্রথম যেদিন দেখি সেদিন থেকেই ভালোবাসতে শুরূ করেছে সে আমাকে ।আর কিছু না ভেবে জড়িয়ে ধরলাম তাকে । এরপর সারাদিন একসাথে ঘুররাম আমরা, খেলাম আড্ডা দিলাম । অবশেষে বিকেলে সে চলে গেলো সিলেটে । এর পর থেকে প্রায়ই সে আসতো আমার কাছে, অনেক ভালোবাসতো সে আমাকে ।এভাবে কেটে যায় প্রায় এক বছর ।
হঠাৎ এক বিকেলে ওকে ফোন দিলে ওর ফোনটা বন্ধ পাওয়া যায় । অস্থির হয়ে ওঠে মনটা । তাই এর এক বন্ধুকে ফনে দেই আমি । ওর বন্ধু আমাকে জানায় সে অসুষ্থ এবং সিলেট মেডিকেল এ ভর্তি আছে । আর কিছু না ভেবে আমার এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে রওনা হই সিলেটের উদ্দেশ্যে । তার সাথে আর শেষ দেখা হয়না আমার । জানতে পারলাম বন্ধুরা মিলে পাহাড়ে উঠতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যায় অর্ণব । মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায় । অবশেষে চলে যায় আমার থেকে দূর বহুদূর এ । অঙ্গান হয়ে পড়ি আমি । ঙ্গান ফিরে দেখি চারদিকে সবকিছুই যেন স্বদ্ধ ।
ভুলতে পারিনা তাকে আজও তাকে । আবারো রিমঝিম এর চিৎকার । ঘোর কাটে আবারো তবে এতদিন পরে এসেও বলতে চাই চিৎকার করে অর্ণব এখোনো আমি ভালোবাসি তোমায় শুধু তোমায়.......
ভেজা চোখটা মুছে দিতে চায় রিমঝিম .................