somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার অর্থ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া নয়

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নতুন প্রেক্ষাপটে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সত্যিই কি জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে আগ্রহী? নাকি জামায়াতের অতীত কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে বেসরকারি বিরোধী জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল হিসেবে বিএনপির রাজনীতিকেও বিতর্কিত করে তুলতে চায়? ধস নামাতে চায় তার জনপ্রিয়তা কিংবা জনসমর্থনে?


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি সফিপুরে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত হচ্ছে একটি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। তারা গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী একটি সাম্প্রদায়িক শক্তি। এখন প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কিংবা সাম্প্রদায়িক শক্তি কি না তা একটি প্রমাণসাপেক্ষ বিষয়। এ কথা ঠিক যে একাত্তরের মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের জন্য জামায়াতকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে বিএনপি সংশ্লিষ্ট নয়। তবে বিরোধীদলীয় জোটগত আন্দোলনের কিছু সাম্প্রতিক ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য ঢালাওভাবে সবাইকে গণতন্ত্রবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি বলে চিহ্নিত করা সংগত নয়। কারণ উল্লিখিত অভিযোগগুলো অত্যন্ত গুরুতর বিধায় তা তদন্ত ও বিচারসাপেক্ষ বিষয়। আর সরকার যদি মসনদে তার অবস্থান নিষ্কণ্টক করার জন্য কিংবা বিএনপি-জামায়াত জোটকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখার উদ্দেশ্যে তাদের গণতন্ত্রবিরোধী 'অপশক্তি' বলে অভিহিত করে, তাহলে তারা নিজেরা কতটুকু গণতান্ত্রিক সে প্রশ্ন তোলাও অবান্তর হবে না। তা ছাড়া সরকার যদি অতীতের বিভিন্ন কার্যকলাপের জন্য অভিযুক্ত জামায়াতের সঙ্গে জোটগত আন্দোলনের কারণে বিএনপিসহ এক গুলিতে দুই শিকার করতে চায়, তাহলে জনগণের কাছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে, সেটা দেখার জন্য অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে। উল্লিখিত কাদা ছোড়াছুড়ির কৌশলে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং দেশে সত্যিকার অর্থে একটি প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার গণতান্ত্রিক দাবিকে কোনোমতেই চাপা দেওয়া যাবে না। বরং তা করতে গেলে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ একটি অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরশাসনাধীন দেশ হিসেবেই চিহ্নিত হবে। তাতে হয়তো সাময়িকভাবে দেশে অর্থনৈতিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হবে, তবে একটি সভ্য দেশ হিসেবে অর্জিত আমাদের সম্মান ও মর্যাদাটুকু চলে যাবে। সে অবস্থায় নাকের বদলে নরুনই সার হবে।

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার অর্থ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া নয়

বর্তমান সরকারের শাসনকাল কিংবা 'জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার প্রসঙ্গে' সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথাবার্তা বলেই যাচ্ছেন। তাঁদের কথাবার্তায় কোনো যুক্তিগ্রাহ্য চিন্তাভাবনা কিংবা দলগত সমন্বয় আছে বলে মনে হয় না। কেউ বলেন জনগণ নাকি তাঁদের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার জন্যই ভোট দিয়েছে। আবার কেউ কেউ বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছেড়ে আগামী নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা বলতে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে অতীতের মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময় জামায়াত ও তার অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও ও জঙ্গি তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে এ দেশে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণারও দাবি তোলা হয়েছে। গত বছরের ১ আগস্ট একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে উচ্চ আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছেন। তা ছাড়া জামায়াতকে একটি অপরাধী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে তার রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারেও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এরই মধ্যে একটি সুপারিশ করেছেন। সে সুপারিশের ভিত্তিতেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। কিন্তু তা না করে কৌশলে বিএনপির ওপর রাজনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে জামায়াতের তথাকথিত সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে কোনো নিবন্ধিত দল তার সঙ্গে প্রকাশ্যে সম্পর্ক রাখার আবশ্যকতা দেখাবে না। তবে তাদের সমর্থকদের ভোটগুলো পাওয়ার জন্য ভেতরে ভেতরে তৎপরতা যে অব্যাহত রাখবে, তা তো বলাই বাহুল্য। তাতে আওয়ামী লীগ কিংবা তার সহযোগী সংগঠনের উপকৃত হওয়ার বিশেষ সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। তবে উল্লিখিত বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং তার রাজনীতি এ দেশে নিষিদ্ধ হলেও তারা যে আবার নতুন নামে ও নতুন আঙ্গিকে আত্মপ্রকাশ করতে কিংবা নিবন্ধিত হতে পারবে না এমন নয়। একটি বিশেষ মহল থেকে এ দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। কিন্তু শুধু এশিয়া মহাদেশে নয়, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, কিউবাসহ সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত কিছু দেশই ব্যতিক্রম মাত্র। ইউরোপে, বিশেষ করে জার্মানি ও ইতালিতে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটরা অত্যন্ত শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। তাদের ধর্মভিত্তিক কিছু নীতি-আদর্শ থাকলেও রাজনীতিগতভাবে তারা অসাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদবিরোধী। আমাদের প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানে যেমন ধর্মভিত্তিক নীতি-আদর্শের অসংখ্য রাজনৈতিক দল রয়েছে, তেমনি সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছে 'ইখওয়ান আল-মুসলেমুন' বা 'মুসলিম ব্রাদারহুড' নামে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন। তা ছাড়া ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে রয়েছে মাওলানা আবুল আলা মওদুদী প্রতিষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামী। অবিভক্ত ভারতের লাহোরে ১৯৩২ সালে এই দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু হলে পাকিস্তানভিত্তিক জামায়াতে ইসলামীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখা তার বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ থাকলেও পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শহীদ জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলে তারা আবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসে।

কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হলে দেশে একটি গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে। বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা ছিল ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। সে আশঙ্কা এখন আর নেই বললেই চলে। তা ছাড়া কোনো তাণ্ডব কিংবা অরাজকতা সৃষ্টি করে জামায়াত-শিবির বাংলাদেশে শেষ পর্যন্ত অর্থবহ কিছু অর্জন করতে পারবে বলে নিজেরাই এখন মনে করে না। এর মাধ্যমে তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত তাদের নেতাদের যেমন উদ্ধার করতে পারবে না, তেমনি নিজেদের দলকেও জনগণের মধ্যে টিকিয়ে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশের বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে কেউই এখন আর দীর্ঘস্থায়ী অরাজকতা কিংবা নৈরাজ্য টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবে না। তাতে সবার আগে সমাজের বিভিন্ন স্তরের পেশাজীবী মানুষের বিরোধিতার মুখে আন্দোলন জনগণের সমর্থন হারিয়ে ফেলবে। শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা ও বিভিন্ন সেবা খাতকে অগ্রসর করে নেওয়ার স্বার্থে উন্নয়নশীল প্রায় সব দেশেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখন একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র সুসংহত করা এবং আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করার বিকল্প এখন আর খুব বেশি কিছু নেই। তবে এক ধরনের ক্ষমতালিপ্সু অগণতান্ত্রিক শক্তির একগুঁয়েমির কারণেই উন্নয়নশীল কিছু দেশে এখনো রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অচলাবস্থা, অরাজকতা ও নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়ে থাকে। গণ-আন্দোলন কিংবা গণ-অভ্যুত্থান ছাড়া কোনো সরকারকেই ক্ষমতা থেকে সরানো সম্ভব হয় না। কোনো উন্নত দেশে এ পরিস্থিতি এখন চিন্তাও করা যায় না। কারণ সরকার পরিবর্তনসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন বিষয় তারা একবারেই গণতান্ত্রিকভাবে নির্ধারণ করে নিয়েছে। ক্ষমতায় এসে আমাদের মতো পারস্পরিক আস্থার সংকট তারা বারবার সৃষ্টি করতে পারে না। গণতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী সমাজের এটাই হয়তো একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের মতো এত বিশাল জনসংখ্যা ও আর্থসামাজিক সমস্যায় ভারাক্রান্ত একটি দেশ এভাবে চলতে পারে না। এ বিষয়টি আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি ও জামায়াতকে উপলব্ধি করতে হবে। দুর্নীতি, অনিয়ম, অপশাসন ও সব ধরনের সামাজিক অনাচারের মূলোচ্ছেদ আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক। তা ছাড়া কোনো একটি নির্দিষ্ট দল ছাড়া দেশ চলবে না- এমন ধারণাও সম্পূর্ণভাবে বর্জন করতে হবে। তা না হলে গণতন্ত্রের কথা বলা, জনগণের মত প্রকাশ কিংবা অধিকার প্রয়োগ করার কথা বলা সম্পূর্ণ অবান্তর হয়ে পড়বে। সেদিকে লক্ষ রেখে সরকার পরিবর্তনের জন্য একটি গণ-অভ্যুত্থান কিংবা দেশব্যাপী নতুন অরাজকতার অপেক্ষা না করে বর্তমান সরকারকে যথাশীঘ্র একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
'জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার প্রসঙ্গ আসে কেন?' - এই শিরোনামে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত আমার সাম্প্রতিক এক লেখায় আমি বলেছি যে বিগত আন্দোলনে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতাদের বিচারের ইস্যু- দুটো এক করে ফেলা ছিল জামায়াত ও বিএনপির একটি বিরাট কৌশলগত ভুল। নির্বাচন নিয়ে তৎকালীন ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পেছনে সেটিও ছিল অন্যতম প্রধান কারণ। কারণ তাতে দেশের জনগণ অত্যন্ত বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল যে আসলে তারা কী চায়? সে সময় ব্যাপক যানবাহন ভাঙচুর, বাসযাত্রীদের পুড়িয়ে মারা এবং রেললাইন উপড়ে ফেলাসহ অনেক হিংসাত্মক কার্যকলাপ সংঘটিত হয়েছে, যা বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর কাছে জঙ্গিবাদী তৎপরতা বলে চিহ্নিত হয়েছে। আন্দোলনের নামে সেই তাণ্ডব ও সহিংসতার জন্য গণমাধ্যম মূলত জামায়াত-শিবিরকেই দায়ী করেছে। তাতে বিভিন্ন মহল থেকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জামায়াতের রাজনীতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এটি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে একটি সুযোগ করে দিয়েছে। তা ছাড়া এ ব্যাপারে দেশের উচ্চ আদালতে একটি রিটও বোধ হয় জমা পড়ে আছে, যা আগামী মাসে শুনানির জন্য উঠতে পারে। সে অবস্থায় হয়তো জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়ার একটি সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। এ দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। অথচ জামায়াত কোনো দিনই বাংলাদেশে ইসলামি শাসনতন্ত্র কিংবা ইসলামি শরিয়াভিত্তিক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেনি। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করতে এসে বাংলাদেশে তারা কোরআন ও সুন্নাহ নিয়ে কোনো অর্থবহ ইস্যু তৈরি করতে পারেনি। সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ফেলে রেখে তারা বরং বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করেছে। কাউকে ক্ষমতায় যেতে সাহায্য করেছে, আবার দুটি মন্ত্রীর পদ নিয়ে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় চারদলীয় জোট সরকারের অংশীদার হয়েছে এবং তাতেই আওয়ামী লীগ নেতাদের, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির রোষানলে পড়েছিল জামায়াত। এরই পরিণতিতে জামায়াতের প্রায় সব প্রবীণ নেতাই একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। সে বিষয়গুলো নিয়ে এখন জামায়াত-শিবিরের একাত্তর-পরবর্তী প্রজন্মকে নতুনভাবে তাদের সব কর্মকাণ্ডের পর্যালোচনা ও পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।

চারদলীয় জোটের অংশীদারির কারণে বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক ও বিভিন্ন কর্মসূচি ১৩-১৪ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। একাত্তরে প্রবীণ জামায়াত নেতাদের ভূমিকার জন্য বিএনপিকে অনেক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এখনো তার খেসারত দিতে হচ্ছে। বিএনপি হয়তো জামায়াতের সমর্থন পেয়ে অনেকভাবে উপকৃত হয়েছে। আবার তার ভাবমূর্তিও হারিয়েছে অনেকটা। এই দোলাচলে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে হয়তো বিএনপির জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক পথচলার সূচনা হবে। অন্যদিকে জামায়াতের একাত্তর-পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো বাংলাদেশের প্রকৃত দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে সম্পূর্ণ কলঙ্কমুক্তভাবে আত্মপ্রকাশের নতুন সুযোগ পাবে। আর জামায়াতের রাজনীতি যদি নিষিদ্ধ না হয়, তাহলে বিএনপিকে জোটগতভাবে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কৌশল নতুনভাবে নির্ধারণ করতে হবে। জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকার দায়দায়িত্ব যেমন বিএনপি নিতে পারে না, তেমনি তার ভুলের জন্য পবিত্র ইসলামের মূল্যবোধও কলঙ্কিত হতে পারে না। ইসলাম বাংলাদেশের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পবিত্র ধর্ম। ইসলামের প্রতি উপেক্ষার ভাব দেখিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কারো অবস্থান সুদৃঢ় করা সম্ভব হবে না। আর কথায় কথায় জামায়াতকে জড়িয়ে বিএনপিকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া কিংবা হেনস্তা করার আওয়ামী সংস্কৃতি তাদের জন্য কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনতে নাও পারে। তাতে বরং জনমনে তাদের প্রতিপক্ষের জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুত্র
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:৪৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×