ভোট চলছে ১১৫ উপজেলায়

প্রথম ধাপে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পর দ্বিতীয় পর্বে ৫২ জেলার ১১৫টি উপজেলার প্রায় দুই কোটি ভোটার তাদের জনপ্রতিনিধি বেছে নিতে ভোট দিচ্ছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2014, 02:26 AM
Updated : 27 Feb 2014, 02:26 AM

নির্বাচন কমিশন জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় নির্ধারিত সময়েই এসব উপজেলার ৮ হাজার ১৩১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

ভোটের শুরুতে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার সংখ্যা একেবারেই কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে ভোট দিতে আসা মানুষের লাইন।

ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় দুটি কেন্দ্র থেকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠলেও প্রথম ২ ঘণ্টায় কোথাও বড় কোনো গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি বলে উপজেলার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা বশির আহমেদ জানান।     

ভোট শুরুর আগে মাগুরার শালিখা উপজেলার শতখালী উইনয়নের ‘গোবরা মাধ্যামিক বিদ্যালয়’ কেন্দ্র থেকে পুলিশের একটি রাইফেল খোয়া গেলেও সেখানে ভোট শুরু হয়েছে সময়মতোই।

মাগুরার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবীর জানান, ওই ঘটনায় তিন পুলিশ কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। 

ঢাকার সাভার, দিনাজপুর, মাগুরা, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলার ভোটের উপজেলাগুলোতে দায়িত্বরত নির্বাচনী কর্মকর্তারা আমাদের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, সব জায়গায় শান্তিপূর্ণ ভোট চলছে।  

চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে এসব উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন ১৩শ’ জনের বেশি। তাদের মধ্যে থেকে ৩৪৫ জনকে নির্বাচিত করবেন ১ কোটি ৯৮ লাখ ৫১ হাজার ১৭৬ ভোটার।

প্রথম পর্বের অধিকাংশ উপজেলায় দলীয় নেতাদের বিজয়ের ধারাবাহিকতা এই পর্বেও ধরে রাখতে আশাবাদী বিএনপি। ভোটে কারচুপি হলে আন্দোলনের হুমকিও দিয়ে রেখেছে সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দলটি।

অন্যদিকে প্রথম পর্বের ভোটের অভিজ্ঞতা নিয়ে ইসি বলেছে, অনিয়মের বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “প্রথম পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচনের ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়েছি। তাই দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচন আরো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য এখন আরো সতর্ক হয়ে কাজ করছি।”

তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তারা দলমত নির্বিশেষে আচরণবিধি লংঘনের জন্য শাস্তি দিচ্ছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের কঠোর হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সহিংসতার মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনের এক মাসের ব্যবধানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৯৮ উপজেলায় ৬২ শতাংশ ভোট পড়ে। দ্বিতীয় পর্বে ভোটের হার আরো বাড়বে বলে আশাবাদী ইসি।

প্রথম পর্বে ছোটোখাটো দুয়েকটি ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে বলে ইসির পাশাপাশি পর্যবেক্ষক সংগঠনগুলোও জানিয়েছে।

ওই পর্বে একটি উপজেলা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হওয়ায় ফল স্থগিত হয়ে যায়, সেই কেন্দ্র দুটিতে আগামী ৩ মার্চ ভোটের দিন ইতোমধ্যে ঠিক করেছে ইসি।

এবার আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে মঙ্গলবার থেকে পাঁচ দিনের জন্য মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। রয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক ‌র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য।

সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় সংখ্যালঘু ভোটারদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১৭ উপজেলায় ভোট গ্রহণের তফসিল হলেও কক্সবাজারের মহেশখালী ও চাঁদপুরের হাইমচরে ভোট এদিন হচ্ছে না। আদালতের আদেশে আটকে যাওয়া মহেশখালীতে ভোট হবে ১ মার্চ, হাইমচর নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

এর আগে ১৯৮৫ সালে প্রথম ও ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একাধিক দিনে ভোট হয়। তারও দেড় যুগ পর ২০০৯

এবার ছয় ধাপে দেশের ৪৮৭ উপজেলায় পর্যায়ক্রমে ভোট হচ্ছে। প্রথম পর্বে ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোট হয়েছিল। তৃতীয় পর্বে ১৫ মার্চ ৮৩ উপজেলায়, চতুর্থ পর্বে ২৩ মার্চ ৯২ উপজেলায়, পঞ্চম পর্বে ৩১ মার্চ ৭৪ উপজেলায় ভোট হবে। ষষ্ঠ পর্বে ৩ মে বাকি উপজেলাগুলোতে ভোট হবে।

 

দ্বিতীয় পর্বের ভোটতথ্য

দ্বিতীয় পর্বে তিন পদে ৫২ জেলার ১১৭ উপজেলায় মোট ১ হাজার ৩৭৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫১৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান  প্রার্থী ৫২১ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩৪০ জন।

এ ধাপের মোট ভোটার ১ কোটি ৯৮ লাখ ৫১ হাজার ১৭৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯৯ লাখ ৩৭ হাজার ৭৪১ জন, নারী ৯৯ লাখ ১৩ হাজার ৪৩৫ জন।

দুটি উপজেলা মহেশখালী ও হাইমচরে বৃহস্পতিবার ভোট না হওয়ায় ৩৬ প্রার্থী ও আড়াই লাখ ভোটার কমবে।

১১৭ উপজেলায় ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৮ হাজার ১৩১টি, ভোটকক্ষ ৫১ হাজার ৬৯৮টি।

প্রতি ভোটকেন্দ্রে একজন করে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, প্রতি ভোটকক্ষের জন্য এক জন করে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা থাকবেন। প্রতিকক্ষে দুই জন করে পোলিং কর্মকর্তা (মোট ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ জন) দায়িত্ব পালন করবেন।

 

রাজনৈতিক দলের লড়াই

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপজেলা নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ার সুযোগ না থাকলেও প্রার্থী নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রচার-প্রচারণায় দলগুলোর তৎপরতা একে রাজনৈতিক রূপ দিয়েছে।

প্রথম পর্বে ৯৭টি উপজেলা পরিষদে ভোটের ফলাফলে ৪৫টিতে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।

তাদের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর নেতারা ১২টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ীদের অধিকাংশও এই জোটের নেতা।

৩৪টিতে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা। তাদের এক সময়ের জোটসঙ্গী ও বর্তমান সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একজন নেতা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে সদরসহ দুটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন ইউপিডিএফ নেতারা। একটিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা গ্রুপ) নেতা।

বাকি দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন নির্দলীয় প্রার্থীরা।

দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও উপজেলা নির্বাচন গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে বিএনপি। আওয়ামী লীগও পিছিয়ে নেই। 

জয় নিশ্চিত করতে দলের একাধিক প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঠেকাতে দুই দলেরই তোড়জোড় রয়েছে। উভয় দলই এই জন্য বিভিন্ন উপজেলায় বেশ কয়েকজনকে বহিষ্কারও করেছে।