somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুর্কী প্রেসিডেন্টের চিঠিঃ কিছু প্রশ্ন

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৮-১২-২০১২


ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার আজ (শুক্রবার,২৮ ডিসেম্বর ২০১২) একটি খবর ছেপেছে যে "বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে আটক জামায়াতে ইসলামী ও প্রধান বিরোধীদল বিএনপি'র সিনিয়র নেতাদের বিচার বন্ধের জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট একটি চিঠিতে দৃশ্যত বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছেন। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি গোলাম আযমসহ অন্য জামায়াত নেতাদের মৃত্যুদণ্ড না দেওয়ার অনুরোধ ও করেছে তুরস্ক।প্রেসিডেন্ট গুল তার ওই চিঠিতে বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতারা এতটাই বয়স্ক যে তারা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে সক্ষম নন এবং বাংলাদেশে একটা গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে।"

আলোচ্য চিঠিতে ৫টি প্রশ্ন:-(১)বিচার বন্ধের জন্য তুর্কী প্রেসিডেন্টের দৃশ্যত অনুরোধ (২)মৃত্যুদণ্ড না দেওয়ার অনুরোধ (৩)আসামিদের বয়স (৪)গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়া ও (৫)ঢাকা-আঙ্কারা কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন।

প্রশ্ন:-(১)বিচার বন্ধের জন্য তুর্কী প্রেসিডেন্টের দৃশ্যত অনুরোধ :-তুর্কি প্রেসিডেন্টের চিঠির পর 'অন অ্যারাইভাল ভিসা'(আগমন-পরবর্তী ভিসা)নিয়ে তুরস্কের এনজিও ক্যানসুয়ু এইড অ্যান্ড সলিডারিটি এসোসিয়েশনের ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত ২০ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা সফর করে। প্রতিনিধিদলে ছিলেন সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। এদের মধ্যে ছিলেন তুরস্কের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট এ কে পার্টি ও সাদাত পার্টির প্রতিনিধিরা।বাংলাদেশ সফরের সময় তুরস্কের প্রতিনিধিদলটি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নুল আবেদীন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপু, আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামালের সঙ্গে বৈঠক করে(রেডিও তেহরান,২৮ ডিসেম্বর ২০১২) । তুর্কী প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরকালে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বলেন যা সরকারের সৎ সমন্বয়ের ফসল। কিন্তু চিঠিটি তার আগেই চলে এসেছে।কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে- ১৭ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুর্কি প্রেসিডেন্ট ওই চিঠি দিয়েছেন। ২৩ ডিসেম্বর চিঠিটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেয় ঢাকায় তুরস্কের দূতাবাস। গতকাল বৃহস্পতিবার চিঠি দু'টি বঙ্গভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে(রেডিও তেহরান,২৮ ডিসেম্বর ২০১২)। তুর্কী প্রতিনিধিদল সফরকালে সরকারের আশানুরুপ সহযোগিতা পেয়েছে।না পাওয়ার কথা এখনও আমরা জানিনা।একটা উদ্দেশ্য নিয়ে তারা এসেছিল এবং এর সমন্বয়ও নিশ্চয় তাদের সরকারের(তুর্কী সরকার) সাথে ছিল।প্রতিনিধিদলের কাছ থেকে রিপোর্ট প্রাপ্তির পর চিঠিটি এলে একটা সাদৃশ্য থাকতো।কিন্তু তা বিচার বন্ধের জন্য আসবে তা কাম্য নয়।কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতির দীর্ঘ দিনের দাবি।তবে এর স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ স্কাইপ কেলেংকারী ও আওয়ামীলীগের নেতানেত্রীদের অতিকথনে ইতিমধ্যেই দানা বাঁধতে শুরু করেছে।প্রতিনিধিদলটি এখানেই একটা স্বাতন্ত্র রাখতে পারত।কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের অনুরোধ বাংলাদেশের জনমানুষের আকাংখার প্রতি সামন্জস্যপূণ নয়।পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি আজ অবশ্য বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের কথা কেউ আমাদের বলেনি(দৈনিক মানবজমিন অনলাইন সংখ্যা,২৮ ডিসেম্বর ২০১২)। সত্য হলে বাংলাদেশী হিসাবে অত্যন্ত দুঃখের সাথে তুর্কী প্রেসিডেন্টকে বলছি আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের অনুরোধ আমরা রাখতে পারছি না।

প্রশ্ন:-(২)মৃত্যুদণ্ড না দেওয়ার অনুরোধ :-কেবলমাত্র আওয়ামীলীগের নেতানেত্রীদের অতিকথনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় এবং সে রায় মৃত্যুদন্ডের কথাও শোনা যায়।সরকার বিচার শুরু করেছে,যেকোন রায় আসবে এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু তা মৃত্যুদণ্ড কিনা সে রায় এখনও মায়ের পেটে।কিন্তু তার আগেই এই চিঠি।মৃত্যুদণ্ড মওকুফের জন্য দন্ডপ্রাপ্ত আসামীও রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারে।মহামান্য রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করেন কিনা সেটা একান্ত তার বিষয়।সারা বিশ্বের অনূরোধ সত্ত্বেও Kurdish Worker Party-PKK নেতা Abdullah Öcalan কে ১৯৯৯ সালে তুরস্ক সরকার ফাঁসি দিয়েছিল।সেটা যদি তুর্কী সরকারের আভ্যন্তরীণ ও জাতীয় ইস্যু হয়ে থাকে তবে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায়(যদি হয়)বাংলাদেশের জনগণের কাছে কোন অংশে কম নয়।তুর্কী জনগণের কাছে প্রশ্ন রইল এমন অনুরোধ করার অধিকার তারা তাদের রাষ্ট্রপ্রধানকে দিয়েছে কিনা।স্কাইপ কেলেংকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে অসততার দাগ বসিয়েছে অনেক আগে।এখন তুর্কী সরকারের চিঠি(আরও দু’একটা রাষ্ট্রের কাছ থেকে চিঠি আসলেও অবাক হওয়ার থাকবে না) নিশ্চয় বিচার প্রক্রিয়ায় আলাদা মাত্রা নিয়ে আসবে।

প্রশ্ন:-(৩)আসামিদের বয়স :-দুনিয়ার প্রথম মানব হযরত আদম(আঃ)এর দু’সন্তান হাবিল ও কাবিল খুনোখুনির উদ্বোধন করে দিয়ে গেছেন।সেই ধারা আজও চলছে।আজ পৃথিবীর বয়স কত?এই বুড়া বয়সেও পৃথিবী অপরাধমুক্ত নয়।যুদ্ধাপরাধীরা এখন বয়স্ক হতে পারে।৭১সালের তান্ডবলীলার সময় তারা ফিডারে দুধ খাওয়া কচি বাবু ছিল না।
প্রশ্ন:-(৪)গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়া :-স্বাধীনতা পরবর্তী জাতি এই অল্প সময়ে দেখেছে মুজিব হত্যা,জাতীয় চার নেতা হত্যা,জিয়া হত্যা ও সর্বপরি বিডিআর হত্যাকান্ড।দগদগে ঘা নিয়ে এ জাতির যাত্রা শুরু,রক্তের নিশান হাতে এর পথ চলা।স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ায় আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে চাই।চাই একটি জাতীয় ইস্যুর জাতীয় সমাধান।গৃহযুদ্ধের ভয় নয় এতে জাতির মাথার উপর থেকে একটা কালো মেঘ কেটে যাবে।আওয়ামীলীগের মাত্রাতিরিক্ত আফ্ফালন নয়,জাতির ঐকান্তিক একাগ্রতা ও বিশ্ববাসীর সহযোগিতা নিয়ে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ন্যায় প্রতিষ্ঠার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।

প্রশ্ন:-(৫)ঢাকা-আঙ্কারা কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন :- তুর্কী প্রেসিডেন্টের চিঠি ও এনজিও প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরে বাংলাদেশ যে উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ, তা গত বুধবার সকালে ঢাকায় তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মেহমুত ভাকুর ইরকুলকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে তুরস্ককে কড়া ভাষায় জানানো হয়েছে।একদিন পর বৃহস্পতিবার তুরস্ক সরকার আঙ্কারায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকুর রহমানকে তলব করে তাদের ভাষ্য বলে দিয়েছে।যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে দেশটির এ অবস্থান নতুন নয়। ২০১১ সালের মে মাসে ইস্তাম্বুলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি ভুলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর এ বছরের এপ্রিলে আঙ্কারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান একই অনুরোধ করেন।(দৈনিক প্রথম আলো অনলাইন সংখ্যা,২৮ ডিসেম্বর ২০১২)।দক্ষ কূটনৈতিক জ্ঞান ভাল রাজনীতির অপরপিঠ। আওয়ামীলীগের নেতানেত্রীরা যুদ্ধাপরাধের বিচারকে দারুণভাবে রাজনীতিকরণ করে ফেলেছেন।আশা করব কূটনৈতিক জ্ঞান দিয়ে তারা এর ফয়সালাও করবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৫৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অলীক সুখ পর্ব ৪

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৫

ছবি নেট

শরীর থেকে হৃদয় কে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে চেয়েছি
তুমি কোথায় বাস করো?
জানতে চেয়েছি বারবার
দেহে ,
না,
হৃদয়ে?
টের পাই
দুই জায়গাতে সমান উপস্থিতি তোমার।

তোমার শায়িত শরীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় জেনে নেই!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫১

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় তা জেনে নেই৷ এবার আপনাদের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ঘটনা শেয়ার করবো৷ আমি কোরিয়ান অর্থনীতি পড়েছি৷ দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১৯৭০ সালের পর থেকে প্রায় আকাশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৮

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪


আজকের গল্প হেয়ার স্টাইল ও কাগজের মোবাইল।






সেদিন সন্ধ্যার আগে বাহিরে যাব, মেয়েও বায়না ধরল সেও যাবে। তাকে বললাম চুল বেধে আসো। সে ঝটপট সুন্দর পরিপাটি করে চুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×