somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“আপু, এই বাসা থেকে পালিয়ে চলে এসো।"

০২ রা মার্চ, ২০১৪ ভোর ৫:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একসময় কন্যার জন্য পাত্র দেখতে যাওয়া, অথবা ছেলের জন্য পাত্রী দেখতে যাওয়ায় আত্মীয়মহলে আমার বেশ একটা মুল্য ছিল। এখনো আছে, কিন্তু একদিকে নিজের ব্যস্ততা অন্যদিকে পরিবারে বিবাহযোগ্য ছেলে-মেয়ের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কমে যাওয়ায় ইদানিং একটু ভাটা পড়েছে। কথিত আছে যে, আমার পছন্দ করা পাত্র-পাত্রীরাই নাকি আমাদের পরিবারগুলোতে এখনও বেষ্ট। উদাহরন চাইলেই সবাই আমার বড় তিন খালাতো-মামাতো বোনের জামাই আর দুই বড় ভাবীর উদাহরন দেন –যাহারা তাহাদের শ্বশুরকুলের নয়নের মনি, শান্তির দূত। আর উল্টা উদাহরন হলো আমার আর এক ভগ্নীপতি, আর এক ভাবী যাদের ব্যাপারে আমি ভেটো দেওয়া সত্বেও বিয়ে হয়েছিলো। এখন সেই বোনের মা নাকের পানি মোছেন আর ভাই বউ সহ শ্বশুরবাড়ীতে থাকেন।

এখানে আমার ক্রেডিট অবশ্য কিছু নাই। কাউরে আমার ভালো লাগলে এসে বলতাম ভালো লেগেছে, আর না লাগলে বলেছি নাই। ব্যাখ্যা চাইলে ব্যাখ্যাও দিতাম, মুরুব্বীরা শুনতেন। ব্যাস...। যাই হোক, ঐ ভালো দুলাভাই এবং ভাবীগনকে দেখলেই লম্বা করে সালাম দেই। হাজারো হোক তাঁরাই তো আমার এই রেপুটেশনের শো-রুম প্রডাক্ট।

কন্যা বা পুত্রদায়গ্রস্ত মুরুব্বীদের ফোন এলেই বুঝতাম শীঘ্রই কোন এক বিকেলে বা সন্ধ্যায় বেশ একটা খানা-পিনা আছে, আর যদি পাত্র-পাত্রী পছন্দ হয়ে যায় তো কথাই নেই। রাতের খাবারটাও বেশ জমে যাবে। আমি এসব আসরে সাধারনত চুপচাপ ভুমিকা দিয়েই শুরু করি, শুধু মাঝে মাঝে দু-চারটা প্রশ্ন করি।

তো সেবার আমার এক ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গিয়েছি, সঙ্গে ভাইয়া, ছোট মামা আর বড় আপু। মেয়ের পিতা ব্যবসা করেন, বিশাল অবস্থা। বাসায় ঢুকতেই দরজা থেকেই যেন তাদের টাকা-পয়সা হাত নেড়ে তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছিলো। রুচির চেয়ে দামি জিনিসপত্রেই বাড়ী বেশী ভরা। আমার একটু অস্বস্তিই হচ্ছিলো। সম্পর্কটা এসেছে খুব গুরুত্বপুর্ন মাধ্যম থেকে, হেলা করবার উপায় নেই। মেয়ের বাসায় যেয়ে বুঝলাম কেন এত গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল এই প্রস্তাবে। মেয়ের পিতা ছিলেন এলাকায় বেশ নামকরা ব্যাক্তি। আমার ভাইটিও বেশ। বাবার বদৌলতে ঢাকায় নিজেদের বাড়ী। বিসিএস পাশ করে একটা জেলা শহরে তখন চাকুরী করছেন। অত্যন্ত আকর্ষনীয় ব্যাক্তিত্ব, মজার মানুষ এবং সৎ। দুষ্টু বদগুন তেমন নাই।

যথারীতি আপ্যায়ন চলছে। আমি গভীর মনযোগ দিয়ে একটা একটা করে আইটেম চেখে দেখছি। কন্যা তখন আসি আসি করছেন। ভাইয়ার হবু শ্বশুর আর চাচা-শ্বশুর ভাইয়াকে টুকটাক প্রশ্ন করে যাচ্ছেন, আমরাও করছি। এর মধ্যে হঠাৎ কন্যার পিতা জিজ্ঞেস করে বসলেন, “তো বাবা, এখানে এক্সট্রা ইনকাম কি রকম?” প্রথমে আমি বা ভাইয়া ব্যাপারটা বুঝি নাই। তো মেয়ের চাচা আরেকটু ভেঙ্গে বললেন, “কমিশন-টমিশন কেমন পাও? তুমি যে পদে আছো, তাতে তো ভালোই আসার কথা।“ আমি একটু অবাক, প্রথমে ভাবলাম ওনারা বোধহয় মজা করছেন। নাহ্‌, দুজনই বেশ সিরিয়াস। তারপর ভাবলাম পরীক্ষা করছেন। কিন্তু পরে তাদের কথায় সেটাও মনে হলো না। মেয়ের বাবা বলছেন, “এখন না হয় ঢাকার বাহিরে আছো, চলে যাচ্ছে। কিন্তু একসময় ঢাকায় আসবে তো, নাকি?” ভাইয়া হ্যাঁসুচক মাথা নাড়তেই আবার বললেন, “তো তখন তো এই বেতন দিয়ে ঢাকায় চলা ডিফিকাল্ট হবে। বেতন দিয়ে এখন চালিয়ে যাও, আর কমিশনের টাকাগুলো জমাও, কিছু একটা শুরু করো। পরে খুব দরকার হবে।“ আমি খাবার থেকে হাত তুলে বসে আছি। ভাইয়ার চোখ-মুখ দেখলাম শক্ত হয়ে আছে। গল্প-সিনেমায় এরকম ঘটনা ঘটে, কিন্তু বাস্তবে সামনে এরকম প্রশ্ন শুনে আসলে কি করা বা বলা উচিত মাথায়ই আসছিলো না। ভদ্রলোক ধরেই নিয়েছেন যে ভাইয়া ঘুষ খান বা খাবেন আর কি।

এরপর যথারীতি কন্যা এলো। সম্ভাব্য ভাবীকে দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল, মিষ্টি একটা শান্ত মেয়ে। তার বড় বড় চোখ মেলে তাকানো আর বসে থাকাটা এখনো মনে পড়ে। ভাইয়া ভালো করে দেখলেনও না, তার কোথায় লেগেছে আমি জানি। আমি জানি এই মেয়ে দেখার ফলাফল কি হবে। মেয়েটা জানবেও না তার কি অযোগ্যতা ছিল, আদৌ সেটা তার নিজের অযোগ্যতা কিনা। একবার ইচ্ছে হলো মেয়েটার কানে কানে বলি, “আপু, এই বাসা থেকে পালিয়ে চলে এসো। আমার ভাইয়াটা খুব ভালো, সৎ একটা মানুষ। কিন্তু তোমার বাসার মানুষদের কাছে সে খুব অযোগ্য।“

আমাদের দেশে কতগুলো সরকারী পদ তাদের অধিকারীদের কারনে এমনই নাম অর্জন করেছে যে, সবাই ধরে নেয় এই পদের মানুষগুলোর সবারই রয়েছে অবৈধ কিছু আয়। আবার কিছু মানুষ এই অবৈধ আয়টাকে এমন ভাবে ধরে নিয়েছেন যেন সেটা ঐ পদের জন্য একান্তই বৈধ, না করাটাই আশ্চর্যের।
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

উপকূলের ভাই-বোনদের প্রতি গভীর সমবেদনা

লিখেছেন বিষাদ সময়, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৭




আমরা ঢাকার পাকা দালানে বসে যখন আয়েস করে চায়ে চুমুক দিয়ে বৃষ্টি বিলাসে বিভোর, ঠিক সেই সময় আমাদের উপকূেলের ভাই-বোনেরা হয়তো কেউ স্বজন, কেউ ঘর, কেউ ফসল, কেউবা গবাদী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: অশ্লীলতা কি পোশাক দিয়ে নির্ধারণ করা উচিৎ নাকি মানসিকতা ও চরিত্র দিয়ে?

লিখেছেন লেখার খাতা, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫২


ছবিটি -ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

কহিনুরের, ফ্লোরা ওরিয়েন্টাল বিউটি সোপ।১৯৭৮ সালের বিজ্ঞাপন। ছবিটি ফেসবুকে পেয়েছি। ব্লগার সোনাগাজী, ব্লগার কামাল ১৮ সহ যারা মুরুব্বি ব্লগার রয়েছেন তারা হয়তো এই বিজ্ঞাপনটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

রেমাল ঘূর্ণিঝড়ে

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২৭ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪



কতোজনে ভাসছে জলে
পথ ঘাট সব যে পানির তলে
রেমালের কবলে পড়ে।
কতোজনে আজ দূর্বিপাকে
ভাবছি বসে তাদের কথা
কতৈনা দূর্গতি, বাড়িঘর
ফসলী জমি গৃহস্থালি;
ভাসছে আজ জোয়ার জলে
প্রকৃতির বিষম খেয়ালে।
জেলেরা আজ ধরছে না মাছ,
স্কুল কলেজে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন বেনজীর আহমেদ ও আমাদের পুলিশ প্রশাসন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪২



বৃষ্টিস্নাত এই সন্ধ্যায় ব্লগে যদি একবার লগইন না করি তাহলে তা যেন এক অপরাধের পর্যায়েই পরবে, যেহেতু দীর্ঘদিন পর এই স্বস্তির বৃষ্টির কারণে আমার আজ সারাদিন মাটি হয়েছে তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×