somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দড়ি বাঁধা একটি ঝকঝকে প্রাণী

০২ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




গ্রামে, পশ্চিমের পুকুর পেরিয়ে, ডগির ধারে দাঁড়িয়ে ছিলাম;

একা।

অনেক দিনের পর।

কখনো কখনো অতীতের মত একা আর কিছুই হয় না। এই অতীতেই আমার "একা"র, যাত্রা। বহুবার শুরু বহুবার শেষ। এখনো চলছে, নিয়ত অতীতে, নিয়ত বর্তমানে; শুরু এবং শেষ।

মাঠে, বসন্ত বাতাস। হু হু করা। অচীন পাখির কান্নার রোল পড়েছে যেন। ঝড়ে পড়া পাতা আর মাতোয়ারা সবুজ ধানে ভেসে আসছে মৃত্যুর গন্ধ। অসহনীয় রকম নির্বিকার। একটা রিসাইকেল প্রসেস মাত্র। চারপাশে কেবল মাটি আর মাটিজাত সবকিছু। এমনকি নীল আকাশটাও। এই গন্ধের গন্ধ নাই, কিন্তু দৃশ্য আছে। অপূর্ব সবুজ, জীবনময় দৃশ্যকল্প।

এই গন্ধের গন্ধ নাই, কিন্তু শব্দ আছে। শনশন শনশন। হু হু হু হু।

মাঠে আরো একজন।

তিনি গ্রামের বৃদ্ধা, ছোটবেলায় যাঁর স্তনজোড়া ঘিরে আমার বিমুগ্ধ বিষ্ময়। দুপুরের পুকুর থেকে ওঠার পর তাঁর ভেজা শালকাঠের বাঁক; পিচ্ছিল, দৃঢ়। এর মাঝে তাঁর শ্লোগানের মত উদ্ধত স্তন; প্রাণবন্ত, অনিঃশেষ বিপ্লব আর জীবনের উৎস। দারিদ্র, ছনের ঘরের যুদ্ধ, ঝগড়া, বছরে বছরে নতুন শিশু, রূঢ় রসিকতা সবকিছুকে সামাল দেয়া একজোড়া টগবগে জীবন, একজোড়া হুংকার। ব্লাউজহীন বুকের জমিনে লড়াইয়ের পেশী।

তিনি। একটা ঝকঝকে ছাগলকে নিয়ে মাঠের ভিন্ন ভিন্ন কোণায় নিয়ে খুঁটি বাঁধছেন। ঠক ঠক ঠক। আবার খুঁটি উপড়ে ফেলছেন। মাটিটা নরম, খুঁটি গেঁথেও যাচ্ছে যেমন, বেরও হয়ে যাচ্ছে তেমনি। বিশেষ কোন পরিশ্রম নেই। তবুও মাটির কোন প্রান্তেই স্বস্তি হচ্ছে না। হয়ত এই প্রাণীটির সবুজ ঘাস পাওয়া মুখ্য নয়, প্রাণীটি; এই সকালে হয়ত ক্ষুধার্তও নয়। প্রাণীটির সাথে বাঁধা আছে লম্বা একটা দড়ি, সে যেতে পারে যেখানে ইচ্ছা, যখন তখন। তার ঘাসের অভাব নেই। এই মাঠেরও নেই। যদিও বৃদ্ধার স্বস্তি হচ্ছে না।

আমি তাঁর দিকে পিঠ দিয়ে বেনসন ধরাই। তাঁকে সম্মান জানাই। অতীতে দেয়া সম্মানের অভ্যাস। এই সম্মানের অভ্যাসের কোন অর্থ কি আছে? তিনি কি আমাকে চিনেছেন? আমার চিন্তা করতে ভালো লাগে না। আমি শুধু সিগারেটের কথা ভাবি। প্রবল বাতাসে সিগারেট ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত।

এই বৃদ্ধা, এই সবুজ, এই নির্বিকার ধান-ক্ষেত, এই একা অতীত থেকে, আমরা না; ফিরতে ইচ্ছা করে না। এই মাটি থেকে আমার ফিরতে ইচ্ছা করে না। এই সুদৃশ্য নিষ্ঠুর রিসাইকেল সহ্য করার চাইতে আমার তখনি ঢুকে যেতে ইচ্ছে করে থকথকে মাটির ভেতর। অথবা হয়ে যেতে ইচ্ছে করে একটি ঝকঝকে প্রাণী, দড়ি বাঁধা।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৪ সকাল ৮:৪৩
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×