somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌' এর প্রকৃত অর্থ

০২ রা মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলামের আকীদা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌' ইসলামী জীবনাদর্শের মূল ভিত্তি। বর্তমান সমাজে এই আকীদা চিন্তা-ভাবনা না করে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কিছু বিশ্বাস হিসেবে গৃহীত হচ্ছে। কিন্তু ইসলামের প্রাথমিক অনুসারীরা অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর সাহাবীরা (রা.) তাঁদের চিন্তাকে ব্যবহার করে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌' এর সত্যতা বুঝতে পেরেছিলেন। তাঁরা (রা.) ইসলামকে বুঝে শুনে নিয়েছিলেন বলেই তাঁরা এর দায়িত্ব বহনে বলিষ্ঠ ছিলেন এবং ইসলামকে পৃথিবীতে একটি বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। আজ যদি আমরা মুসলমানদের পুনর্জাগরণ চাই তাহলে আমাদের মাঝে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌' এর বাস্তব উপলব্ধি তৈরী করতে হবে।

'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌' এরা সত্যিকার মানে বুঝতে হলে আমাদের দুটো জিনিস বুঝতে হবে। প্রথমত: আল্লাহ্‌'র অস্তিত্বের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণ এবং দ্বিতীয়ত: 'ইলাহ' শব্দের মানে। প্রথমটি অর্থাৎ আল্লাহ্‌'র অস্তিত্বের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণ খুব সহজ কেননা যে কোন মানুষই একটু চিন্তা করলেই আল্লাহ্‌'র অস্তিত্বের সত্যতা উপলব্ধি করতে পারবে। এজন্য দরকার কেবল বুদ্ধির একটু ব্যবহার। আল্লাহ্‌'র অস্তিত্ব প্রমাণে বিপুল বৈজ্ঞানিক গবেষনা কিংবা গভীর দার্শনিক তত্ত্বালোচনার প্রয়োজন নেই।

আমাদের চার পাশের জগত যেমন: মানুষ, জীবজন্তু, চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, গাছপালা, পাহাড় এসব কিছুকে পর্যবেক্ষণ করলে একটা জিনিস স্পষ্টতই বুঝা যায় যে এরা প্রত্যেকে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, আকার, জীবনকাল ইত্যাদি নানা দিক থেকে সীমাবদ্ধ এবং নানাভাবেই পরনির্ভরশীল। এই সীমাবদ্ধ দূর্বল সত্তাগুলো কখনোই নিজেরা নিজেদের অস্তিত্বে আনতে পারেনা, অথচ বাস্তবে এরা অস্তিত্বে রয়েছে। অতএব, অবশ্যই একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন যিনি এদের সবাইকে অস্তিত্বে এনেছেন; তিনিই আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা), একক এবং সর্বশক্তিমান সত্ত্বা, যিনি অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে সকল কিছুকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেন,
"আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবা-রাত্রির আবর্তনে অবশ্যই চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।" [সূরা আলি-ইমরান : ১৯০]

'ইলাহ' বলতে বোঝায় এমন কিছু বা এমন কেউ যার কাছে মানুষ নিজেকে সমর্পন করে এবং যার অনুসরণ করে। যেমন: আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেন,
"আপনি কি তাকে দেখেছেন যে নিজের প্রবৃত্তিকে নিজের ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে।" [সূরা আল ফুরক্বান : ৪৩]
এখানে তাদের কথা বলা হচ্ছে যারা তাদের খেয়ালখুশীর অনুসরণে জীবনযাপন করে, এজন্যই প্রবৃত্তিকে তাদের ইলাহ বলা হয়েছে।

এছাড়াও আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) ফেরাউন তার লোকদের কাছে নিজের ব্যাপারে কী দাবী করতো সে সম্পর্কে বলেন,
"ফেরাউন বললো: 'হে পারিষদবর্গ! আমি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন ইলাহ আছে বলে আমার জানা নেই।' " [সূরা ক্বাসাস : ৩৮]
এর কারণ হাচ্ছে সে তাদের শাসক ছিল এবং জনগণ তার শাসনের অনুগত ছিলো।

ইহুদী এবং খ্রীস্টানদের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেন,
"তারা আল্লাহ্‌'র পরিবর্তে তাদের ধর্মযাজক ও সাধুদেরকে নিজেদের প্রভূ বানিয়ে নিয়েছে।" [সূরা তাওবা : ৩১]
এর কারণ হচ্ছে এসব সাধু ও ধর্মযাজকরা তাদের জন্য বিধান তৈরী করতো এবং কোনটি বৈধ, কোনটি অবৈধ তা নির্ধারণ করতো, আর তারাও তা মেনে নিতো।

এ সকল আয়াত থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ্‌'কে একমাত্র 'ইলাহ' হিসেবে গ্রহণ করা মানে কেবন মূর্তিপূজা ত্যাগ করা নয় বরং এ জাতীয় আরো সকল ইলাহ'কে বর্জন করা। অতএব, যদি আমরা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌' উচ্চারণ করি আর আল্লাহ্‌'র উদ্দেশ্যে কিছু ইবাদত-বন্দেগী করি, কিন্তু অন্যদিকে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নিজেদের প্রবৃত্তির খেয়ালখুশীকে অনুসরণ করি তাহলে এর মানে হচ্ছে ইবাদতের ক্ষেত্রে আমরা ইলাহ হিসেবে নিয়েছি আল্লাহকে কিন্তু ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইলাহ হিসেবে নিয়েছি আমাদের প্রবৃত্তিকে। যদি আমরা রমযানে রোযা রাখি কিন্তু এমন শাসকদের আনুগত্য ও অনুসরণ করি যারা ফেরাউনের মতো নিজেদের খেয়াল-খুশী দিয়ে আমাদের পরিচালনা করে তাহলে আমরা রোযার ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌'কে ইলাহ মানছি কিন্তু শাসনকার্যে ইলাহ মানছি ঐ শাসকবর্গকে। এভাবেই, যদি আমরা নামায, রোযা আর যাকাতের ব্যাপারে আল্লাহ্‌'কে মানি আর একইসাথে ঐ রাজনীতিবিদদেরও মানি যারা আমাদের জন্য নিজেদের ইচ্ছেমতো আইন-কানুন তৈরী করে তার মানে দাঁড়ায়, আমরা ধর্মীয় ও আধ্যাত্বিক ব্যাপারে আল্লাহ্‌'কে ইলাহ মানলেও রাজনৈতিক বিষয়ে ইলাহ মানছি আমাদের রাজনীতিবিদদেরকে। অতএব বোঝা গেল যে, ইলাহ শব্দের মানে অনেক ব্যাপক এবং আল্লাহ্‌'কে একমাত্র ইলাহ মানার অর্থ এই ব্যাপক অর্থেই তাকে মানা।

অতএব, একজন মুসলিম আল্লাহ্‌'কে নিজের ইলাহ হিসেবে বিশ্বাস করলে তাকে তার জীবনের সকল ক্ষেত্রে অর্থাৎ: ধর্মীয়, পার্থিব, রাজনৈতিক সব ব্যাপারে আল্লাহ্‌'কেই কেবল মানতে হবে। কাজেই, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌' এর উপর আকীদা বা বিশ্বাস - যা কিনা ইসলামের মূলভিত্তি - তা একই সাথে একটি আধ্যাত্বিক ও রাজনৈতিক আকীদা।

এই আকীদা দাবী করে একমাত্র মহান আল−াহ্‌ তা'আলাই সকল ইবাদতের উপযুক্ত এবং কেবল তার সামনেই প্রকাশ করা হবে সকল প্রকার বিনয় ও বশ্যতা। তিনিই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, বিধান দাতা, ফায়সালাকারী, যখন যা ইচ্ছা তা করার ক্ষমতার অধিকারী, হেদায়েতদাতা, রিযিক দাতা, জীবন দাতা, মৃত্যু দাতা এবং সাহায্যকারী। তিনিই একমাত্র সত্ত্বা যার হাতে সকল রাজত্ব, ক্ষমতা এবং তিনিই যাবতীয় বিষয়ে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।

আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেন,
"তিনিই আল্লাহ্‌, তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনিই রাজা, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তা-বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অহংকারের অধিকারী; ওরা যাকে শরীক করে আল্লাহ্‌ তা হতে পবিত্র, মহান।" [সূরা হাশর : ২৩]

"সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান তাঁর জন্যই (সংরক্ষিত)।" [সূরা আ'রাফ : ৫৪]

"কর্তৃত্বতো শুধুমাত্র আল্লাহ্'র। [আল আন'আম: ৫৭]

ইসলামী আকীদা জীবনের সব বিষয়েই চিন্তা ও বিধি-বিধান নিয়ে এসেছে। এটা এমন আকীদা, যা থেকে ব্যাপক ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে, যে ব্যবস্থা মানুষের আমল-আখলাক ছাড়াও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রে উদ্ভুত প্রয়োজন ও সমস্যাগুলোর সমাধান দিয়ে থাকে। ইসলামের এই আকীদা রাষ্ট্র, সংবিধান, সমস্ত আইন-কানুন এবং ঐ সমস্ত বিষয়েরও মূল ভিত্তি, যা এই আকীদা থেকে উৎসারিত হয়। এমনি ভাবে এই আকীদা ইসলামের সমস্ত চিন্তা, আহ্‌কাম এবং ধ্যান-ধারনারও বুনিয়াদ। মোটকথা, এটা মানুষের বাস্তব বিষয়াদি সমাধান করার আকীদা। এই আকীদা সমাজ ও রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত বিধায় এটি রাজনৈতিক আকীদাও বটে। এজন্যই এই আকীদা ইসলামের দাওয়াতকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া, এর হেফাযত করা, একে রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করা, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এর পৃষ্ঠপোষকতা করা, একে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা, অব্যাহত রাখা এবং সরকারের পক্ষ থেকে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবহেলা দেখা দিলে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করা ইত্যাদির বাস্তবায়ন দাবী করে। অতএব, ইসলামের রাজনৈতিক আকীদা হচ্ছে পরিপূর্ণ ও ব্যাপক যা জীবনের সকল ক্ষেত্রকেই বেষ্টন করে। আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেন,

"আমি আপনার প্রতি এমন কিতাব নাযিল করেছি যা প্রত্যেক বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা।" [সূরা নাহল : ৮৯]

এসব কিছু থেকেই এটা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইসলামের এই মূল কালেমাটি একইসাথে আধ্যাত্বিক এবং রাজনৈতিক। একদিকে এটা আল্লাহ্‌'র সাথে মানুষের সম্পর্কের রূপরেখা দেয় এবং ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে মানুষকে জান্নাতে যাবার পথ দেখায় আর অন্যদিকে একই সাথে আল্লাহ্‌ ছাড়া আর সব নেতৃত্ব-কতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, ফেরাউনের মতো শাসকদের উৎখাতের ডাক দেয়। এই কালেমা অত্যাচারী, খোদাদ্রোহী, জালেম শাসকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রাম চালিয়ে তাদেরকে উৎখাতের মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থায় আল্লাহ্‌'র একক কতৃত্ব তথা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌'র সামগ্রিক অর্থের বাস্তবায়ন দাবী করে।
ইসলাম পৃথিবীতে এসেছে এই সত্যটি প্রতিষ্ঠিত করতে যে ব্যক্তিগত ইবাদত, সামাজিক ব্যবস্থাপনা এবং রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি সমস্ত ব্যাপারে আর সব মিথ্যা ইলাহ'কে প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহ্‌'কেই (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) একমাত্র 'ইলাহ' বলে মানতে হবে এবং তাঁর কাছে থেকে আসা জীবন ব্যবস্থা ইসলামের মাধ্যমেই সব কিছু পরিচালনা করতে হবে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এই একটি মাত্র বাক্য নিয়েই মক্কার পুরো নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। মক্কার কাফেররা এই কালেমার অর্থ বুঝতে পেরেছিল বলেই এটাকে তাদের কতৃত্বের অবসান হিসেবে দেখেছিল এবং সর্বশক্তি দিয়ে এই কালেমার প্রতিষ্ঠা প্রতিহত করতে চেয়েছিল। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) তাদের বলেছিলেন - "আমার এক হাতে সূর্য, অন্য হাতে চন্দ্র এনে দিলেও এর প্রচার বন্ধ হবে না।" আবু তালিবের মৃত্যুশয্যায় আবু জেহেলসহ সমস্ত কুরাইশ নেতৃবৃন্দ তার কাছে এসে মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে শেষ আপোষ-রফা করতে চাইলে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) তাদের বলেন, "তোমরা আমাকে একটা মাত্র কথা দাও, যার ফলে তোমরা আরব জাহানের অধিকর্তা হয়ে যাবে এবং অনারব বিশ্ব তোমাদের বশ্যতা মেনে নেবে।" আবু জেহেল তখন বললো; "বেশ! তোমার পিতার কসম এরূপ হলে একটা কেন আমরা দশটা কথা দিতে রাজী।" তিনি বললেন : "তা হলে তোমরা বল, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'। তিনি (আল্লাহ্‌) ছাড়া আর যাদের উপাসনা তোমরা করো তাদের সবাইকে পরিত্যাগ করো।" একথা শুনে তারা এই বলে চলে গেলো যে, "হে মুহাম্মদ (সাঃ)! তুমি সব ইলাহ'কে এক ইলাহে পর্যবসিত করতে চাও।"

কেননা কাফের নেতৃবৃন্দ বুঝতে পেরেছিলো যে এই বাণীর কছে নিজেদের সমর্পণ করলে তাদের বর্তমান কতৃত্ব আর থাকবে না বরং সব বিষয় ইসলামের কতৃত্বে পরিচালিত হবে। আর তাদের প্রতি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর এই আহ্বানের মাধ্যমে এটাও সুস্পষ্ট যে এই কালেমার চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে আরব অনারব তথা সমগ্র বিশ্বের উপর ইসলামের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা। তৎকালীন বিশ্বের বিভিন্ন রাজন্যবর্গের প্রতি তাঁর পত্রেও কালেমার এই আহ্বানের মর্মার্থ সুস্পষ্ট। আবিসিনিয়ার রাজা নাজ্জাশীর কাছে তিনি (সাঃ) লিখেছেন, "আমি আপনাকে সেই একক অদ্বিতীয় উপাস্যের দিকে আহ্বান করছি। আপনি আমার আনুগত্য স্বীকার করুন। আমি আপনাকে এবং আপনার বাহিনীসমূহকে মহান আল্লাহ্'র দিকে আহ্বান করছি।" রোম সম্রাটের কাছে তিনি লিখেন, "আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করে নিন, নিরাপত্তা লাভ করবেন।" পারস্য সম্রাটকেও অনুরূপ পত্র লিখেন। মিশরের শাসক মুকাওকিসকে লিখেন, "আমি তোমাকে আল্লাহ্‌'র একত্বে বিশ্বাসের দাওয়াত দিচ্ছি। যদি তুমি স্বীকার করে নাও, তবে এ হবে তোমার সৌভাগ্য, আর যদি তুমি তা প্রত্যাখ্যান কর তবে এ হবে তোমার দূর্ভাগ্য।" বাহরাইনের শাসক মুনযিরকে লিখেন, "যদি ইসলাম গ্রহণ কর, তবে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে এবং তোমার হাতে যা কিছু আছে আল্লাহ্‌ তা তোমারই হাতে ছেড়ে দেবেন। জেনে রেখো, অচিরেই আমার দ্বীন ভূ-ভাগের সেই প্রান্ত অবধি পৌঁছবে যতদূর ঘোড়া ও উট পৌঁছাতে পারে।" সিরিয়ার বাদশাহ্‌কে লিখেন "আমি আপনাকে লা শরীক আল্লাহ্‌'র প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আপনি যদি ঈমান আনেন, তবে আপনার রাজত্ব বহাল থাকবে।" ওমানের রাজন্যদ্বয়কে লিখেন, "...যদি তোমরা আমার আহ্বানকে অস্বীকার কর তবে অচিরেই আমার নবুয়্যাত তোমাদের রাজত্বের উপর প্রভাব বিস্তার করবে।" এভাবে তিনি তৎকালীন পুরো বিশ্বকে এই বাণীর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে ইসলামের কতৃত্বকে মেনে নেয়ার জোরালো আহ্বান জানিয়েছিলেন।

আজ আবার মুসলিম উম্মাহ'কে পুনর্জাগরিত করতে হলে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর উদাহরণ অনুসরণ করে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌'কে আমাদের জীবনের ভিত্তি বানানো এবং এই কালেমার ভিত্তিতেই শাসন ও কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম শুরু করতে হবে। এই সংগ্রাম অবশ্যই হতে হবে সুসংগঠিত যা শাসন কতৃপক্ষের পাঁজরকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে, তাদেরকে সম্মানের আসন থেকে নামিয়ে জনগণের সামনে লাঞ্ছিত-অপদস্থ করবে, জনগণকে উদ্বুদ্ধ করবে ঐ সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হতে এবং প্রতিবাদী হাত ও আঙ্গুলের সংখ্যা এমনভাবে বাড়াবে যেটা শাসন কর্তৃপক্ষের গলার চারপাশে চেপে বসে তাদের শ্বাসরুদ্ধ করে তাদের ক্ষমতা পুরোপুরি শেষ করে দিবে। এই সংগ্রাম চালিয়ে যাবার ক্ষেত্রে আমাদেরকে শাসন কতৃপক্ষের পক্ষ হতে ক্ষুধা, দারিদ্র, কারাবাস, নির্যাতন ইত্যাদির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এবং সেই সাথে প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের সময়, প্রচেষ্টা, সম্পদ এমনকি জীবনকে উৎসর্গ করার জন্য।

মূলঃ ইসলামের ফিরে আসা
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×