somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সত্যকা
রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

দূর্ঘটনারোধে চাই সকলের সচেতনতা

০৫ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পিকনিকের বাস খাঁদে পড়ে ৩০জন আহত, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার পিকনিকের বাস খাঁদে-আহত কমপক্ষে ৩৫জন, এরকম হাজারও পিকনিকের বাস দূর্ঘটনার কবলে পড়ার কথা আমাদের জন্য নিত্য-নৈমিত্তিক খবর হয়ে দাড়িয়েছে । পত্রিকার পৃষ্ঠা উল্টালে অথবা টিভির চ্যানেল পাল্টালে পিকনিকের বাস দূর্ঘটনা সংক্রান্ত একের পর এক খবর দেখতে পাওয়া যায় । গত ১৫ই ফেব্রুয়ারী মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে পিকনিক শেষে বেনাপোল ফেরার পথে যশোরের চৌগাছা উপজেলার ঝাউতলা নামক স্থানে শতাধিক স্কুল শিক্ষার্থী বহনকারী একটি বাস রাস্তার পাশে গভীর খাঁদে পড়ে যায় । এতে দূর্ঘটনাস্থলেই ৭জন শিশু নিহত হয় পরবর্তীতে সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে থেকে একরামূল হক (১০) মারা যায় । এ মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় প্রায় ৭০জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয় । যশোরের এ দূর্ঘটনাটি সারা দেশকে শোকে মূর্ছমান করে ফেলে । দূর্ঘটনার খবরকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয । ১৭ই ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের সকল প্রাইমারী স্কুলে দূর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠান করা হয় । কেউ কেউ ১৫ই ফেব্রুয়ারীকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণার দাবী উত্থাপন করেন । সর্বশেষ ০৩-০৩-’১৪ গাইবন্ধার ফুলছুড়ি উপজেলার ‘খাবিরিয়া মাদ্রাসার’ একটি পিকনিক বাস ভাত খাঁদে পড়ে যায়, এতে ঘটনাস্থলেই ২জন নিহত এবং ২৫জন গুরুতর আহত হয় । অত্যন্ত দূর্ভাগ্যের হলেও সত্য যে, পিকনিকের বাসগুলির দূর্ঘটনার কারন এবং এর প্রতিকার নিয়ে কেউ উল্লেখ যোগ্য কোন কথা বা পদক্ষেপ নিচ্ছেন না ।

বাংলাদেশে সাধারণত সারা বছরব্যাপী শিক্ষাসফর বা পিকনিক চলে । তবে আবহাওয়া ও শিক্ষা কাঠামো বিবেচনায় ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর‌্যন্ত শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা শিক্ষা সফর করেন । বাস দূর্ঘটনা এদেশে কোন নতুন ঘটনা নয় তবে পরিবহন, কোচ বা লোকাল বাসের তুলনায় শিক্ষাসফর বা পিকনিকের বাস দূর্ঘটনার হার তূলনামূলক অনেক বেশি হওয়ার কারন কী ? গত কয়েকদিন আগে একটি অনলাইন পত্রিকায় দেখলাম, দেশের স্বনামধন্য একজন লেখক দূরে কোথাও শিক্ষাসফর বা পিকনিকে না গিয়ে নিজস্ব গন্ডির মধ্যে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করার পরামর্শ দিয়েছেন । অন্যথায় এ জাতীয় প্রথ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন । এ যেন ‘মাথায় উঁকুন হলে মাথা কেটে ফেলার’ মত অবস্থা । তবে এ লেখকের মতের সাথে স্বজন হারানো পরিবার শুধু একমত হবেন না বরং জোড়ালোভাবে সমর্থনও করবেন । আমার অভিভাবকের মত যারা কোন অবস্থায় সন্তানকে হারাতে চান না তারা হয়ত কোন অবস্থাতেই বাধ্যগত সন্তানদেরকে শিক্ষাসফর বা পিকনিকে যাওয়ার অনুমতি দেবেন না । আর এটাই স্বাভাবিক । পিকনিক বা শিক্ষাসফরের বাস যে সকল কারনে দূর্ঘটনায় পতিত হয় সে সকল কারন খুঁজে বের করে তার সমাধান করে অবশ্যই পিকনিক বা শিক্ষা সফরে যেতে হবে । কেননা শিক্ষা সফর শিক্ষা অর্জনের অন্যতম একটি প্রধান মাধ্যম । এমনকি ইসলাম ধর্মেও সফরের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে । শিক্ষাসফরের মাধ্যমে একদিকে যেমন ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তেমনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে দূরত্ব কমে আসে । যার ফলে শিক্ষক থেকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহন প্রক্রিয়া সাবলীল হয়ে আসে । এছাড়াও শিক্ষা সফরের মাধ্যমে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের দর্শনীয়স্থান সম্পর্কে সম্যক ধারনা লাভ করে যা বই পড়ে হাজার বছরেও অর্জন করা সম্ভব নয় ।


শিক্ষাসফরের বা পিকনিকের বাসগুলো অধিকহারে দূর্ঘটনায় কবলিত হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারন আছে । ছাত্রজীবনে স্ব-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর‌্য্ন্ত একবার সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা আরেকবার কুমিল্লাবার্ড, ময়নামতিসহ স্থানীয় অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছি । এ দু’টো সফরে অনাকাঙ্খিত কিছু না ঘটলেও প্রতিমূহুর্তে উপলব্ধি করেছি দূর্ঘটনা কেন ঘটে । শিক্ষাসফরের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ার পর প্রতি মূহুর্তে মনে হয়েছে এই বুঝি কিছু একটা হল । স্বভাবত যে সকল কারনে পিকনিকের বাস দূর্ঘটনায় পড়ে-

* শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস । ভ্রমনের প্রারম্ভ খেকেই শিক্ষার্থীরা বাসের মধ্যে হই-হুল্লুরে মেতে থাকে । এ চিৎকার চেঁচামেচিতে বাস চালকের মনঃসংযোগ ব্যাহত হয় । ফলশ্রুতিতে দূর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায় । এটাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসফর অথবা পিকনিকের বাস দূর্ঘটনার প্রথম এবং প্রধান কারণ ।

* বাস চালকের দীর্ঘ অনিদ্রা । অনেকসময় দেখা যায় দীর্ঘদিনব্যাপী শিক্ষা বা পিকনিকে যাওয়া হয় । এটা অনেক সময় চার-পাঁচদিন বা তারও বেশি সময় হতে পারে । শিক্ষাসফর বা পিকনিকের ধরনেই হল একস্থান থেকে অন্যস্থানে ছুটা । যে কারনে বাসের চালক পরিমিত পরিমান এমনকি মোটেও ঘুমোতে পরে না । এ কারনে বাস চালানো অবস্থায়ই বাস চালকের তন্দ্রা আসে । এটাও দূর্ঘটনার অন্যতম কারন ।

* শিক্ষাসফর, পিকনিক বা অন্যান্য পরিবহন চালানোর সময় চালককে অনেক সময়ে মোবাইলে কথা বলতে দেখা যায় এবং তাতে তিনি উত্তেজিত হয়েও পড়ে । বাস বা অন্য কোন গাড়ী চালালোর সময় মোবাইলে কথা বলা নিষিদ্ধ বলে আইন থাকলেও বাস্তবতায় সেটার বাস্তবায়ন দেখা যায় না । এ কারনে দূর্ঘটনা ঘটে ।

* অদক্ষ চালকের অনভিজ্ঞতার কারনে দূর্ঘটনা হয় । শিক্ষাসফর বা পিকনিকের বাস যেখান থেকে ভাড়া করা হয় সেখানের বাস মালিকেরা নিয়মিত দক্ষ ড্রাইভারদের নিয়মিত পরিবহনের জন্য রেখে অদক্ষ, অনভিজ্ঞ ও বেকার ড্রাইভারদের দিয়ে পিকনিকের বাস পাঠান । এ সকল ড্রাইভারদের অনভিজ্ঞতা, অদক্ষতার কারনেও দূর্ঘটনা ঘটে ।

* শিক্ষাসফর বা পিকনিকের বাস অন্যান্য বাসের তূলনায় অধিক দ্রুত গতিতে চালানো হয় যার কারনে চালক বাসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রন রাখতে পারে না । আর তখনই দূর্ঘটনা হয় ।

* বাসের কিছু চালকরা নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহন করে বাস চালায় । দীর্ঘ ভ্রমনের ক্ষেত্রে নেশাগ্রহনের মাত্রা বেশি হয় । সেজন্য দূর্ঘটনা ঘটে ।

* শিক্ষাসফর বা পিকনিকের বাসে যাত্রাপথেই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা হয় । যেজন্য বাসের চালক এবং তার সহযোগী গানের প্রতি মনোযোগী হয় । আর তখনই বাস চালানোর প্রতি ড্রাইভারের মনঃসংযোগ পূর্ণমাত্রায় থাকে না । একারনেও দূর্ঘটনা হয় ।

* শিক্ষাসফর বা পিকনিকের উদ্দেশ্যে যাত্রা প্রায়ই রাত্রিকালীন সময়ে হয় । রাত্রে যে সকল গাড়ী চলে তার গতি স্বভাতই দিনে চলানো গাড়ীর তুলনায় বেশি হয় । সেকারনে চালকের একটু অমনযোগীতাই শত শত জীবনকে ধ্বংস অথবা পঙ্গু করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ।

সুতরাং উপরোক্ত সমস্যাগুলোর সমাধান করে যদি শিক্ষাসফর বা পিকনিক আয়োজন করা যায় তবে সে শিক্ষাসফরে প্রাণ নাশের আহাজারি থাকবেনা বরং সফর হবে চিন্তামুক্ত এবং আনন্দের । মুকুলেই আর কোন সম্ভাবনা হারাবে না । কোন পিতা-মাতাকেও বুকেরধন হারানোর আহাজারি নিয়ে বুকে কষ্টের পাথর চাপা দিয়ে বেঁচে থাকতে হবে না । শিক্ষা সফর শুধু আনন্দ আর বিনোদনের জন্য নয় বরং শিক্ষা অর্জনের জন্য । শিক্ষা মানুষকে মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য নিয়ে মানুষ হতে সাহায্য করে । অতএব শিক্ষার্থীরা পৃথিবীর যে প্রান্তে, যে পরিবেশে থাকুক না কেন মানুষের গুনাবলি নিয়ে থাকা উচিত । স্রষ্টা প্রদত্ত জীবনকে মূল্যবান মনে করে জীবনের দাম দেয়াই হোক আমাদের পণ । সরকারও যেন সড়ক পরিবহনের আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন করে সকলের জীবন রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহন করে সেজন্য সরকারের প্রতি বিনীত আবেদন রাখি । সবচেয়ে বড় কথা একটু সচেতনতাই মহামূল্যবান জীবন রক্ষা করতে পারে ।

রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
[email protected]
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×