somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন সুন্দর; মাহী বেশি সুন্দর – চলচ্চিত্র প্রতিক্রিয়া - অগ্নী

০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সকাল হইতে রশীদ সাহেব “মাহীরে দেখুম; মাহীরে দেখুম” বলিয়া মাথা খারাপ করিয়া দিতেছিলেন। জীবনের প্রতি সম্প্রতি কিঞ্চিত মায়া মহব্বত কমিয়া যাওয়ায় মায়া বাড়াইতে উহার পিড়াপীড়িতে রাজিও হইয়া গেলাম। দল বল লইয়া সিনেমা দেখায় আনন্দ বেশি ভাবিয়া বান্ধবীদের শুধাইলাম, “অগ্নি দেখতে জাইতেসি; যাবা?” বান্ধবিরা চোখ টিপ মারিয়া বলিল, “এই ছবি তুম্রা ছেলেরা ছেলেরা দেখিয়া আসো; আমরা যাইব কুন দুঃখে?” চোখ টিপের মাহাত্ব না বুঝিয়াই খান তিনেক ছেলে বন্ধুকে লইয়াই(দুষ্টু লোকেরা অন্য কিছু ভাবিয়া বসিবেন না যেন !!!) আবেগে বলাকা সিনেমা হলে পৌছাইয়া গেলাম। গুনিয়া গুনিয়া চারখানা একশত টাকার নোট খরচা করিয়া সিটে গিয়া বসিয়াও পড়িলাম।

সিনেমা শুরু হইল। প্রথম দৃশ্যেই নায়িকার ভিলেনের প্রাইভেট চেম্বারে প্রবেশ এবং ভিলেনের “আমেরিকা হইতে ফিরিয়া আসার কারণ” হিসেবে “ফার্মের মুরগী খাইতে ভাল লাগে না। দেশী মুরগী খাইতে আসছি” – জাতীয় গভীর ইঙ্গিতপুর্ন বাক্যালাপ শুনিয়া নড়িয়া চড়িয়া বসিলাম। রশীদ সাহেবের দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই বলিলেন – “রোসো; এ তো স্যাম্পল মাত্র; গোডাউন তো সামনে।“ দিগুন উৎসাহে পর্দায় মন দিলাম।

মুভি চলিতে লাগিল। নায়িকা তার বাবা মার খুনিদের খুন করিবার নিমিত্তে থাইল্যান্ড গমন করিয়াছেন। সেইখানে তার সাথে দেখা এবং পরিচয় হইল সিনেমার হিরো, ভিলেনদের বডিগার্ড, তিনবারের থাই বক্সিং চ্যাম্পিয়ন, সকল রকম অস্ত্র চালনায় পারদর্শী, সাইকেল, মটরসাইকেল থেকে শুরু করে উরাজাহাজ চালনায় সিদ্ধহস্ত, রজনিকান্তের বাপ, চাক নরিসের আপন মায়ের পেটের খালাতো ভাই, বাংলার দ্বিতীয় অনন্ত জলিল আরেফিন শুভ ওরফে ড্রাগন মতান্তরে ড্রাগেন কিংবা ড্রাগান ওরফে শিশিরের। উচা লম্বা ফিগারের নায়ক সারাটা মুভি দৌড়ায়েই গেলেন, দৌড়ায়েই গেলেন, দৌড়ায়েই গেলেন..., তবে ভিলেনদের পিছনে না; নায়িকার পিছনে !!! আজব হিসাব নিকাশ !!! আর দৌড়ের সময় তার সবচেয়ে প্রিয় বাক্য ছিল - “স্টপ। স্টপ রাইট দেয়ার।” যেন উনার চোস্ত ইংলিশ শুনিয়া যে যেখানে যে অবস্থায় ছিল সেখানেই দাঁড়াইয়া যাইবে !!! মাহি বোধহয় উসাইন বোল্টের শিক্ষিকা ছিলেন এক সময়। তিনবারের থাই বক্সিং এর চ্যাম্পিয়ন গোটা তিনেক দৌড়াদৌড়ি আর গাড়ি স্পিডবোট চেইজেও একবারের জন্যও নায়িকাকে ধরিতে সক্ষম হইলেন না। সার্কাস !!!





কাহিনী আগাইয়া চলিল। নায়িকা কসরত টসরত করিয়া ন্যাকা ন্যাকা ভাব করিয়া নায়কের মামার বাসায় ভাড়াও লইয়া লইলেন। সেইখানে নায়কের হাতে পিস্তল দেখার পর উনি সর্বদাই অজ্ঞান অথবা আধা অজ্ঞান হইয়া যাওয়ার ভান করিতে লাগিলেন। দুই তিন বার ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখিয়া নায়কের মামা নায়ককে সদুপদেষ দিতে গিয়া দিলেন পুরো সিনেমার সবচেয়ে এপিক ডায়লগ - “আল্লাহর ওয়াস্তে তোর মেশিনটা ভিতরে রাখ।” পুরো প্রেক্ষাগৃহে হাসির রোল পড়িল।

এরপর সিনেমা চলিতেই লাগিল, থোড় বরি খাড়া আর খাড়া বরি থোড় এর মতন ছবির কিয়দংশে নায়ক নায়িকার রগড় আর কিয়দংশে মাহী একের পর এক মুদি দোকানে আলু পটল কেনার মতন এক এক ভিলেনকে উপরে পাঠায় দিতে থাকিলেন। অতঃপর আর কি? একে একে সকল ভিলেন মরিয়া গেলে নায়ক নায়িকা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল !!!

বুলেট পয়েন্ট একঃ বাংলা সিনেমার কারিগরি দিক দিয়া বেশ ভালই উন্নতি হইসে। ইফেক্ট টিফেক্ট সহ ক্যামেরার কাজ; একশন দৃশ্যগুলো খুবই ভাল ছিল।
বুলেট পয়েন্ট দুইঃ সেই প্রায় গৎবাঁধা স্ক্রিপ্ট আর মাঝে মাঝে ভারামির ব্যর্থ চেষ্টা – এই দুই তিনটা জিনিস বাংলা মুভিতে কখনোই চেইঞ্জ হইল না। হতাশা !!!
বুলেট পয়েন্ট তিনঃ নায়ক নায়িকার অভিনয় এবং এপিয়ারেন্স বেশ স্মার্ট ছিল। তবে ডায়লগ রাইটারের আরও খানিকটা যত্নবান হওয়া উচিত ছিল।

সব মিলায় ঝিলায় কারিগরি দিক দিয়ে বেশ ভাল কিন্তু বুদ্ধিমত্তার দিক দিয়া দুর্বল একখানা ছবি দেখিয়া পয়সা উসুল করিয়া বাড়ি ফিরলাম।

(ডিস্ক্লেইমারঃ ইহা শুধুমাত্রই সিনেমাটা দেখিয়া আমার নিম্নবুদ্ধির খানিকটা রসিকতা ধরণের রিভিউ লেখার চেষ্টা মাত্র। সিনেমাটাকে খাটো করিয়া দেখানোর বা এই ধরণের কোন কিছুরই অভিপ্রায় আমার ছিল না; নাইও। ধন্যবাদ।)


সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:০৯
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×