somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রশ্ন: শুধু ’আল্লাহু’ ’আল্লাহু’ বলে জিকির করা কি শরীয়ত সম্মত?

০৬ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উত্তর: আল হামদুলিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়া সালামু আলা রাসূলিল্লাহ। আম্মা বাদ:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে দুয়া ও জিকিরের ব্যাপারে যতগুলো হাদীস পাওয়া যায় সবগুলোই পূর্ণাঙ্গ বাক্য। যেমন, সুবাহান আল্লাহ, আল হামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ ইত্যাদি। কতবার পড়তে হবে সংখ্যা সহ হাদীসগুলোতে উল্লেখ আছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

أفضل ما قلت أنا والنبيون قبلي: لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير.
“আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণের বলা শ্রেষ্ঠ জিকির হল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর।”

তিনি আরও বলেন:

أفضل الذكر لا إله إلا الله
“শ্রেষ্ট জিকির হল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।”

তিনি আরও বলেন:

أفضل الدعاء الحمد الله
“শ্রেষ্ঠ দুয়া হল, আল হমদুলিল্লাহ।” এভাবে বহু হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে জিকিরের শব্দাবলী শিক্ষা প্রদান করেছেন।
কিন্তু আল্লাহ তায়ালার একটি মাত্র নাম নিয়ে একক শব্দে, (যেমন, আল্লাহু আল্লাহু… বা আর রাহমানু আর রাহমানু… ইত্যাদি) জিকির করার ব্যাপারে একটি হাদীস পাওয়া যায় না। সাহাবী তাবেঈদের নিকট থেকেও এমন নজির খুঁজে পাওয়া যায় না।

একক শব্দে জিকির করা যদি শরীয়ত সম্মত হত তবে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের জন্য উল্লেখ করতেন। সাহাবীগণও তা পালন করতে পিছুপা হতেন না।
ভ্রান্ত আকীদার পীর-ফকীর ও সূফীগণ এভাবে জিকির করে থাকেন। তাদের কেউ কেউ তো আল্লাহ শব্দ বাদ দিয়ে কেবল হু হু বলে জিকির করে থাকে। এভাবে তারা দীনের মধ্যে বিদআত আবিষ্কার করেছে। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী।

একটি হাদীস ও তার জবাব:

আল্লাহ আল্লাহ শব্দে জিকির করার ব্যাপারে নিম্নোক্ত হাদীসটি দ্বারা দলীল পেশ করা হয়:

« لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لاَ يُقَالَ فِى الأَرْضِ اللَّهُ اللَّهُ »
“কিয়ামত ততদিন পর্যন্ত সংঘটিত হবে না যত দিন না ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ বলা বন্ধ হয়। (সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদ: শেষ যমানায় ঈমান চলে যাওয়া।)
এর উত্তরে বলব: উক্ত হাদীসটি অন্য শব্দে এভাবে বর্ণিত হয়েছে:

لا تقوم الساعة حتى لا يقال لا إله إلا الله
“কিয়ামত ততদিন পর্যন্ত সংঘটিত হবে না যত দিন না লা ‘ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা বন্ধ হয়।”
(দ্র: মাজমাঊয যাওয়ায়েদ ওয়া মামবাউল ফাওয়ায়েদ, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান, অনুচ্ছেদ: “কিয়ামত ততদিন পর্যন্ত সংঘটিত হবে না যত দিন না লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা বন্ধ হয়।)

এ হাদীসেগুলো অর্থ অত্যন্ত স্পষ্ট যে, কিয়ামত এমন এক সময় সংঘটিত হবে যখন পৃথিবীর বুকে এমন একজন মানুষও বিদ্যমান থাকবে না যে ’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বা ‘আল্লাহ’ শব্দটি মুখে উচ্চারণ করে। সব মানুষ যখন আল্লাহকে ভুলে শিরক, কুফুরী, নোংরামি, ও নানা পাপাচারে ডুবে যাবে তখন এ সকল নিকৃষ্ট মানুষদের উপর কিয়ামত সংঘটিত হবে।

উক্ত হাদীস থেকে ১০০, ২০০, ৫০০, ১০০০ বা এক লক্ষবার… আল্লাহু আল্লাহু জিকির করার বৈধতা আদৌ প্রমাণিত হয় না।
সুতরাং মুসলমানদের কর্তব্য, ইবাদত-বন্দেগী এখলাসের সাথে এমনভাবে করা যেভাবে দ্বীনের নবী শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। তার দেখানো পন্থাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানোন।

কতিপয় কথোপকথন/ প্রশ্নোত্তর:

উক্ত বিষয়ে আমার লেখাটা ফেসবুকে ছাড়ার পর কিছু ভায়ের সাথে কথোপকথন হয়েছে। এগুলোর মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিচে তুলে দেয়া হল:

জনৈক প্রশ্নকারী:আল্লাহ তাআলা তাঁর কালামে ইরশাদ করেছেন:

وَلِلّهِ الأَسْمَاء الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا
“নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য সুন্দর নামসমূহ রয়েছে। তোমরা আল্লাহকে ঐ সমস্ত নামে ডাক।” (সুরা আ’রাফ) সুতরাং, যেখানে আল্লাহ স্বয়ং তাঁর কালামে তাঁকে এ সমস্ত নামে ডাকতে আদেশ দিচ্ছেন, সেখানে এ সমস্ত নামে ডাকা কিংবা বারবার জপা বা উচ্চারণ করা (অর্থাৎ যিকির করা) কে আপনি বিদআত কিভাবে বলেন?

আমার উত্তর: উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আদেশ করছেন, আমরা যেন তার নামের ওসীলায় তাঁর নিকট দুয়া করি। কোন কিছু চাইতে হলে তার নাম ধরে যেন চাই। তাঁকে যেন তাঁর সুন্দর সুন্দর নাম ধরে তাকে ডাকি। যেমন, রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ডাকার পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন এভাবে:

(১) কোন ব্যক্তির জীবনে যখন বিপদ-আপদ, দু:শ্চিন্তা বা পেরেশানী নেমে আসে তখন সে যেন বলে:

لا إله إلا الله العظيم الحليم ، لا إله إلا الله رب العرش العظيم ، لا إله إلا الله رب السماوات والأرض ورب العرش الكريم رواه الشيخان والترمذي والنسائي
(২) তিনি ফাতিমা রা.কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তুমি সকাল সন্ধায় এ দুয়াটি পাঠ করবে: : يا حي يا قيوم برحمتك أستغيث, হে চিরঞ্চিব, হে সব কিছুর সংরক্ষক, তোমার রহমতের ওসিলায় তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি। (তিরমিযী, সহীহ)।

(৩) অনুরূপভাবে সূরা হাশরেরর ২২, ২৩ ও ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ তায়াল অনেকগুলো নাম বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত তিনটি আয়াত পাঠ করে আল্লাহর নিকট দুয়া করতে বলেছেন, (দারেমী, মাকাল ইবনে ইয়াসার রা. হতে বর্ণিত)

প্রশ্নকারী: আল্লাহ তাঁকে তাঁর সুন্দর নামে ডাকতে আদেশ দিয়েছেন। তাই আমি আল্লাহকে আল্লাহ, আর রাহমান, আর রাহিম নামে ডাকলাম এবং অনেক্ষণ ধরে ডাকলাম। এতে সমস্যাটা কোথায়? আপনার আলোচনা হতে পারে, নির্দিষ্ট সংখ্যাকে জরুরী মনে করা ঠিক না বেঠিক, আল্লাহ, আল্লাহ না বলে কেবল হু হু যিকির করা ঠিক না বেঠিক। কিন্তু একাধিকবার আল্লাহ আল্লাহ ডাকলেই সেটা বেদআত হবে কেন?

উত্তর: আল্লাহর নাম ধরে ডাকার ব্যাপারে তো আপত্তি করা হয় নি। ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাহমান, ইয়া হাইউ, ইয়া কাইয়ুমু, অথবা আল্লাহুম্মা.. এভাবে ডাকলে তো তখন সেটা আর অপূর্ণ বাক্য থাকল না। তবে কথা হল, এভাবে ডাকার পর নিজের চাহিদা তুলে ধরতে হবে। যেমন, ইয়া গাফুর, ইগফির লী অর্থাৎ হে ক্ষমাশীল, আমাকে ক্ষমা করুন। ইয়া রাযযাক, উরযুক নী..হে রিজিক দাতা, আপনি আমাকে রিজিক দিন। ডাকার পর যদি কোন কিছু না চাওয়া হয় তবে এই ডাকার কোন অর্থই থাকল না। আপত্তি হল, শুধু আল্লাহু আল্লাহু আল্লাহু বলে অপুর্ণ বাক্য দ্বারা জিকির করার ব্যাপারে।

প্রশ্নকারী: রাসুল সাল্লা্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: إن لله تسعة وتسعين اسماً من حفظها دخل الجنة رواه البخاري লক্ষ্য করুন এখানে حفظها বলা হয়েছে। তো হিফয করার জন্য কি এক শব্দ বারবার পড়তে হয় না। বারবার পড়া বেদআত হলে এগুলোকে হিফয করতে কেন বললেন?

আমার উত্তর: আমাদের আলোচনা একক শব্দে জিকির করা প্রসঙ্গে। আল্লাহর নাম মুখস্ত করার উদ্দেশ্যে বার বার পড়া আর জিকির করা এক কথা নয়।

আরেক জন প্রশ্নকারী: বিলাল রা. কে যখন তার মনীব পাথর চাপা দিয়ে নির্যাতন করছিলো তখন তিনি কেবল ‘আহাদ’ ‘আহাদ’ বলেছিলেন? এ থেকে কি একক শব্দে আল্লাহর জিকির প্রমাণিত হয় না?

আমার উত্তর: খেয়াল করুন, বেলার রা. কে যখন উত্তপ্ত বালির উপর ফেলে বুকের উপর বিরাট পাথর চাপা দিয়ে এক আল্লাহর দাসত্ব পরিহার করার জন্য নির্যাতন করা হচ্ছিল তিনি তখন আল্লাহ আল্লাহ বলে জিকির করেন নি। তিনি আহাদ আহাদ বলেছেন। অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন আহাদ মানে একক..আল্লাহ এককভাবে ইবাদতের যোগ্য। অন্য কেউ নয়। কারণ, তিনি জানতেন আরবের মুশরেকরা আল্লাহ অস্বীকার করত না। কিন্তু এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করাকে অস্বীকার করত। তাই তিনি এই কঠিন পরিস্থিতিতেও তাদেরকে এই একত্তবাদের স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। তিনি সেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কোন দিন আহাদ আহাদ বা আল্লাহ আল্লাহ বলে জিকির করেছেন মর্মে কি কোন প্রমাণ পাওয়া যায়?
আল্লাহ আমাদের বোঝার তাউফিক দান করেন।
(সুত্র: আল কোরআনডট কম)
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×