somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলে গেলেন প্রখ্যাত শিল্পী সোহরাব হোসেন.....

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলে গেলেন নজরুল ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রখ্যাত শিল্পী সোহরাব হোসেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যবরণ করেছেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনিসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।

ঘাড়ে ব্যথা অনুভব করায় গত ২৯ নভেম্বর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সোহরাব হোসেনকে। পরীক্ষায় তার মূত্রথলিতে ইনফেকশন ধরা পড়ে। এছাড়া তার কান, কিডনি, হার্টসহ শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখতে পান ডাক্তাররা। অসুস্থ হওয়ার পর তাকে নাকে নল দিয়ে খাওয়ানো হয়। কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয়। স্কয়ার হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়াহাব খানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সর্বশেষ আইসিউইতে থাকা অবস্থায় আজ ভোরে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

নজরুল সঙ্গীতের এই কিংবদন্তি ১৯২২ সালের ৯ এপ্রিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাটের কাছাকাছি আয়েশতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিকভাবে তিনি গান-বাজনা পরিবেশের মধ্যে বড় হয়েছেন। ৯ বছর বয়সে রানাঘাটের সঙ্গীত শিক্ষক জয়নুল আবেদীনের কাছে গান শেখা শুরু করেন।

সোহরাব হোসেন যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়েন, তখন একদিন গ্রাম থেকে গোপী মাঝির নৌকায় চড়ে রানাঘাট যাওয়ার সময় তৎকালীন জমিদার ক্ষীরোদ পাল চৌধুরীর নজরে পড়ে তার গান। জমিদার তাকে কিরণ দে চৌধুরী নামে এক সঙ্গীত শিক্ষকের কাছে গান শেখার ব্যবস্থা করে দেন। চূর্ণি নদী পার হয়ে তিনি গান শিখতে যেতেন-আসতেন। এছাড়া নজরুল সঙ্গীতশিল্পী পূরবী দত্তের বাড়িতে তিনি গান শুনতে যেতেন।

গানের প্রতি এই বরেণ্য শিল্পীর এমনই আকর্ষণ ছিল যে, গ্রামোফোন রেকর্ডে কোনো গান শুনলেই তিনি তাৎক্ষণিক তা গলায় তুলে ফেলতেন। তবে তার এ সঙ্গীতপ্রীতি পরিবারের তেমন একটা পছন্দ ছিল না। এ কারণে তার বড় ভাই পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়ে তাকে ব্যবসার কাজে লাগিয়ে দেন। রানাঘাটে একবার শিল্পী আব্বাস উদ্দীন, ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, পল্লীকবি জসীম উদদীন এবং তবলা বাদক বজলুল করিম আসেন একটি গানের অনুষ্ঠানে। তাদের সঙ্গে একই মঞ্চে গান করার সুযোগ পান সোহরাব হোসেন। তার শিক্ষক কিরণ দে চৌধুরীর মাধ্যমে পরে কলকাতায় গিয়ে শ্রীরঙ্গম থিয়েটারে মাসে ১২ আনা বেতনে গান গাওয়ার কাজ পান তিনি।

আব্বাস উদ্দীনের সঙ্গে স্যাভয় হোটেলে দেখা করে সোহরাব হোসেন ১৯৪৬ সালে ৬ জুন একটি পাবলিসিটি বিভাগে চাকরি পান। তিনি এইচএমভি ও রেডিওতে অডিশনে পাস করেন। কলকাতায় তিনি আঙ্গুরবালা, ইন্দুবালা, গিরীশ চক্রবর্তী, কৃষ্ণচন্দ্র দের মতো বিশিষ্ট শিল্পীদের সাহচর্যে আসেন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ঢাকায় চলে আসেন তিনি। তিনি আব্বাস উদ্দীনের মাধ্যমে ৪১ জিন্দাবাজার লেনের একটি বাড়িতে ওঠেন। চাকরি পান ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্টে। এ ছাড়াও তিনি নিয়মিত রেডিওতে অনুষ্ঠান এবং টিউশনিও করতেন। ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ, শিল্পী শচীন দেব বর্মণ এবং অঞ্জলি মুখার্জীর সঙ্গে তার খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি আব্বাস উদ্দীনের সঙ্গে বাংলাদেশের নানা স্থানে ঘুরেছেন এবং গান গেয়ে বেড়িয়েছেন।

চলচ্চিত্রেও প্লে-ব্যাক করেছেন সোহরাব হোসেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো মাটির পাহাড়, যে নদী মরু পথে, গোধূলির প্রেম, শীত বিকেল ও এদেশ তোমার আমার।

অভিনয়েও পারদর্শী ছিলেন সোহরাব হোসেন। কার্জন হল মঞ্চে নাটকে অভিনয় করেছেন। তিনি তুলসী লাহিড়ীর ছেঁড়া তাঁর নাটকে অভিনয় করে দর্শকনন্দিত হয়েছিলেন। দেশের অনেক জনপ্রিয় ও গুণী শিল্পী তার কাছে সঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন। তার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আছেন সঙ্গীতজ্ঞ সানজীদা খাতুন, শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল, আতিকুল ইসলাম, সাদিয়া মল্লিক, মাহমুদুর রহমান বেনু ।

সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য বরেণ্য এই শিশ্পী স্বাধীনতা পদক, মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা, নজরুল একাডেমী পদক, চ্যানেল আই পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×