মেয়েকে দেখতে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম এসেছিলেন নুরুল আলম ও আনোয়ারা বেগম; দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর এখন মেয়ের লাশ নিয়ে ফিরতে হচ্ছে তাদের।
Published : 11 Mar 2014, 04:41 PM
মঙ্গলবার নগরীর চান্দগাঁওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় পোশাক শ্রমিকবাহী মিনিবাসের যে চার যাত্রী নিহত হন, তার মধ্যে আলম-আনোয়ারার মেয়ে ইয়াসমিন বেগমও একজন।
দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গে মেয়ের লাশের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন এই দম্পতি, সেখানেই তাদের সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
মর্গের সামনে বসে সন্তান শোকে কাঁদছিলেন আলম ও আনোয়ারা। আর তাদের দিকে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তাদের চার বছর বয়সী নাতনি জেরিন সুলতানা।
স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর ইয়াসমিন নিজে চট্টগ্রামে এসে চাকরি নিলেও মেয়ে জেরিনকে রেখে আসেন মহেশখালীতে নানা বাড়িতে। স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে সে।
আলম বলেন, ছয় বছর আগে কফিল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ইয়াসমিনের। কয়েক বছর বিদেশে থেকে দেড় বছর আগে দেশে ফিরে ইয়াসমিনকে ছেড়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেন তিনি।
“তখনি পেটের দায়ে মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম চলে আসে ইয়াসমিন,” স্বামীর মুখ থেকে কথা টেনে নিলেন ইয়াসমিনের মা আনোয়ারা।
তিনি বলেন, নিজে চট্টগ্রাম এলেও মেয়ে জেরিনাকে তাদের কাছেই রেখে আসে। মেয়ের ভরণ-পোষণের পাশাপাশি প্রতিমাসে বাবা-মার জন্যও কিছু টাকা পাঠাত ইয়াসমিন।
নিজেদের মেয়েকে দেখতে নাতনিকে নিয়ে চারদিন আগে চট্টগ্রাম আসেন আনোয়ারা ও আলম। মাঝেমধ্যেই এরকম আসতেন তারা।
“সবসময় মেয়েকে রেখে গেলেও এবার যাব মেয়ের লাশ সঙ্গে নিয়ে,” বলেন আলম।
কালুরঘাট শিল্প এলাকার বেইজ টেক্সটাইল মিলের শ্রমিকবাহী ওই বাসের নিহত যাত্রী জুলিয়া বেগমের লাশ নিতে মর্গের সামনে ছিলেন তার বোন ডলি বেগম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১০ বছর আগে ক্যান্সারে মারা যান জুলিয়ার স্বামী। সেমসয় তার একমাত্র সন্তানের বয়স ছিল মাত্র এক বছর।
জুলিয়ার ছেলেটি এখন তার নানার বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার স্থানীয় একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।
“প্রতিমাসে নিজের খরচটা রেখে ছেলের জন্য টাকা পাঠাতেন বরগুনায়,” বলেন ডলি।