somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেটার লাক নেক্সট টাইম

১২ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেউ জার্মানিতে যাবার আগে একটা বিষয় জেনে যাওয়া খুবই জরুরি। জার্মানরা নাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে আলাপচারিতা মোটেই পছন্দ করে না। ও প্রসঙ্গ তুললে নাকি এমনিক অপদস্ত হবারও সম্ভবনা আছে। ব্যাপারটা অবশ্য খুব একটা অস্বাভাবিকও নয়। পরাজয়ের কথা চর্চা করতে কারইবা ভালো লাগে? কে হায় হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে?

আমাদেরও এখন জার্মানদের মতো অবস্থা। কেউ আমাদের সা¤প্রতিক ক্রিকেট নিয়ে, মূলত পুরুষ ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে গেলে তারও অপদস্থ হবার সমূহ সম্ভবনা আছে। পুরুষ ক্রিকেটের কথা বললাম কারণ, জনতার কষ্টে একটুও প্রলেপ না পরলেও যে রাতে আমাদের ছেলেরা পাকিস্তানের কাছে তিনশর বেশী রান করেও পরাজিত হলো সেই একই রাতে আমাদের প্রমিলারা সেই পাকিস্তানকেই ৪৩ রানে পরাজিত করলো। কিন্তু কষ্টতো কেবল গতরাতের পরাজয় নিয়ে নয়। কষ্টতো এই ২০১৪ সালের সমগ্র পরাজয় নিয়েই। দুটি ম্যাচে শেষ বলে পরাজয়, একটা ম্যাচে ৬০ রানে বিপক্ষের ৮ উইকেট ফেলে দেবার পরও পরাজয়, আফগানিস্তানের কাছেও হার। এই ম্যাচগুলোর যে কোনটিতে অনায়াশেই আমরাই বিজয়ী হতে পারতাম। ক্রিকেট বিধাতা আমাদের আর কত দুঃখ দেবেন কে জানে। নিজেকে সান্তনা দেবার জন্যেই মনে মনে জপ করছি, দুখের মাঝে জন্ম যাদের তাদের আবার দুঃখ কিসের?

এশিয়া কাপ আসলেই আমাদের যত ট্র্যাজেডি। গত এশিয়া কাপের ট্র্যাজেডি সম্ভবত আমাদের ক্রিড়া ইতিহাসেরই সবচেয়ে বড় আপসেট। এবারের পরাজয়কে অবশ্য ট্র্যাজেডি বলা যায় কিনা কে জানে। একটা মৃত্যুকে নাকি বলে ট্যাজেডি আর অনেকমৃত্যুকে বলে পরিসংখ্যান। সেই হিসেবে এবারের পরাজয় কেবলই পরিসংখ্যান। তাছাড়া ট্র্যাজেডির নিজস্ব সংজ্ঞা অনুযায়ীও নিছক মৃত্যু ট্র্যাজেডি নয়। ট্র্যাজেডি হতে হলে মহানায়কের মহান মৃত্যু হতে হয়। একজন সাধারণ মানুষ বন্দুকের গুলিতে মরলেও তা ট্র্যাজেডি নয় আবার মহানায়ক ডায়েরিয়ায় মারা গেলেও তা ট্র্যাজেডি নয়।

তবে গত এশিয়া কাপের ফাইনালে পরাজয় অবশ্যই ট্র্যাজেডি। সেবার আমরা ছিলাম মহানায়ক, হয়েছিল মহান মৃত্যু। আমরা যেদিন ভারতকে পরাজিত করি সেদিন ছিল আমার বিয়ের প্রোগ্রাম। অনুষ্ঠানে আমি বরের গাম্ভীর্য ধরে রেখে ফটো সেশনে মন দেব নাকি সব ভুলে জনতার মাঝে মিশে যাবো বুঝতে পারছিলাম না। বন্ধুরা সব খেলা নিয়েই ব্যস্ত ছিল। একটু পরপর আপডেন জানাচ্ছিল আমাকে। আমার শরীরটা ফটোসেশনে থাকলেও মনটা পড়েছিল খেলায়।

মোল্লার দৌড় ওই মজসজিদ পর্যন্ত আর মধ্যবিত্তের মধুচন্দ্রিমা ওই কক্সবাজারেই। যেদিন কক্সবাজারের বাসে চড়লাম সেদিন আবার শ্রীলঙ্কাবধ। ম্যাচের একটা গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে বেরসিক বাসের যাত্রা শুরু হলো। নববধূর সাথে রাতের বাসের প্রথম যাত্রা। তবুও খানিকটা মনো হলো যাত্রাটা একদিন পিছিয়ে দিলে মন্দ হতো না।

কাছাকাছি অনুভূতি পরের ম্যাচেও। কক্সবাজার থেকে গেলাম সেন্টমার্টিন পর্যন্তও। সেন্টমার্টিনে যে এত মানুষ থাকে সেটা টের পেলাম পাকিস্তানের সাথে ফাইনাল ম্যাচের সময়। যে কয়টা যায়গায় টিভির ব্যবস্থা ছিল সেখানেই শত শত মানুষ। টিভির সামনে সুবিধা করতে না পেরে এক রেডিওর সামনে বসে বসেই দেখলাম চোখের সামনে আমাদের পরাজয়। সে বেদনা দূর করার শক্তি বিধাতা এমনকি নববধুকেও দেননি।

এবারের এশিয়াকাপের এই লেজে গোবরে অবস্থা দেখে বন্ধুরা সেই বছর দুয়েক আগের কথা আরেকবার রোমন্থন করলো। জাতীয় প্রয়োজনে আরেকবার দ্বার পরিগ্রহণের আহ্বানও জানালো কেউ কেউ।
নিজে বিয়ে না করে ছেলেকে বিয়ে করালে কি চলবে? ছেলেব বয়স এখন ৭ মাস, যদি কাজ চলে তাহলে না হয় ওরা মেয়ে খুজুক আমার সাত মাসের রূপবান রহিমের জন্য।

এরই মাঝে অনেককেই দেখি তারা দিব্যি খাচ্ছে-দাচ্ছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমিও খাচ্ছি-দচ্ছি, ঘুড়ে বেড়াচ্ছি ঠিকই। তবে হঠাৎ হঠাৎই বুকের মাঝে একটু বুদবুদের মতো উঠে আসে। সচেতনভাবে অবশ্য বুদ্বুদটাকে উঠে আসতে দেই না, বুকের মাঝেই চেপে ধরি। তবে অচেতন ভাবে দু’একটা ঠিকই চেপে ধরার আগেই বেড়িয়ে যায়। বাংলাদেশের এহেন পরাজয় দেখে যারা কষ্ট পাচ্ছে না তাদেরকে দেখে আমার ঈর্ষা হয়--আহা কত ভালোই না আছে। মনটা শান্ত হলে অবশ্য আবার মনে হয় যারা এতটা তীব্র কষ্ট পাচ্ছে না তারাতো আবার আমাদের জয়ে আমার মতো অত তীব্র আনন্দও পায় না!

গর্বটা প্রথম অনুভব করি গত টি-২০ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চ্যাম্পিয়ন হবার পর। কারণ এর আগের প্রায় এক দশক এক ডুবন্ত টাইটানিক ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আমি ভালো বেসে গেছি। সেই ডুবন্ত টাইটানিক যখন গতবার সাবমেরিন হয়ে গেল তখন দেখি অনেকেই পোলার্ড-গেইল-স্যামুয়েলসদের প্রতি দাবি নিয়ে হাজির! আমার তখন গর্ব এবং ঈর্ষা মিশ্রিত এক অনভূতি। নতুন প্রেমিকদের দেখি আর আমার এমন একটা অনুভূতি হয়--কেন, এখন কেন?

মানুষের আনন্দ ও বেদনা, গর্ব ও গ্লানি কিছুই চিরস্থায়ী নয়। তারপরও গত এশিয়া কাপের ফাইনালের পরাজয়ের মতো ম্যাচের কথা মনে হলেই মনে পড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ভালোবেসে আমরা যতটা কষ্ট পাই অনেকেই কোন নারীকে ভালোবেসেও এতটা কষ্ট পাইনা। তারপরও আমরা সবকিছু ভূলে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকি। মনকে বোঝাই--ওই হ্যাভ লস্ট দ্যা ব্যাটল, নট দ্যা ওয়ার। আমরা এশিয়া কাপের আঞ্চলিক ব্যর্থতা ভুলে বিশ্বকাপের বৃহত্তর মঞ্চের দিকে তাকিয়ে আছি। আর অপেক্ষা করছি গেইল-পোলার্ড-স্যামুয়েলসদের মতো আমাদের সাকিব-মুশফিকুর-নাসিরদের আবারও বুকে তুলে নিতে জনতার ভির পরে যাবে, আর আমরা গর্বিত হবো, ঈর্ষান্বিত হবো, আর আবার মনে মনে ভাববো--কেন, এখন কেন?
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×