somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধোঁকা

১২ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝরাত। বাতাসে বসন্তের পাতা ঝরার খসখস শব্দ হচ্ছে। হালকা একটা টিশার্ট গায়ে ছেলেটি চার তলার ছাদে পা ঝুলিয়ে বসেছে। বসন্তের শুরুতে ফুরিয়ে যাওয়া শীতের কামড় ছেলেটির মনোযোগ কাড়তে না পারলেও হাতে ধরা ফোনের ডিসপ্লেতে ভেসে আসা ফেসবুক ম্যাসেজটা ছেলেটির আবেগুলোকে বেশ ভাল ভাবেই নাড়িয়ে দিতে থাকে।
*****

মি: হায়েনা আকাশের দিকে তাকালো। আকাশ আলো করে পূর্ণিমার চাঁদ ঝুলছে। যতদূর চোখ যায় সাদা আলোয় ভেসে যাচ্ছে। মি: হায়েনা হা হা করে হেসে উঠল। চারিদিকে সে হাসির ঠা ঠা প্রতিধ্বনি তুলে গাছ পালার অন্ধকারে মিশে যেতে লাগল। তার পর সব সুনশান। ঝিঝিরাও ডাকা বন্ধ করে ঘুমিয়ে গিয়েছে কতক্ষন হল। রাস্তায় জ্বলা ল্যাম্পপোস্টের আলোটাও দুবার মিটমিট করে এক নাগাড়ে জ্বলে পাশের বাসার দেয়ালে একটা দৈত্যের ছবি আঁকতে লাগল।
মি: হায়েনা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর এঞ্জেল অনন্যার ইনবক্সে খটখট করে মোবাইলের বাটন টিপে একটা ম্যাসেজ টাইপ করে ফেলল।

টুং করে শব্দ হতেই ল্যাপটপের উপর ঘুমিয়ে পড়া অনন্যার কাঁচা ঘুমটা ছুটে গেল। ফেসবুক চ্যাট বক্সে ওপেন হওয়া ম্যাসেজটা দেখে সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল তার। কাঁচের জানালা দিয়ে এসে পড়া চাঁদের আলো বিছানার উপর কালো-সাদার আলপনা আঁকছে। তারি কিছুটা যেন সমুদ্রের ঢেউওয়ের মত বালুতীরে দাড়ানো অনন্যার পা ছুয়ে ছুয়ে যাচ্ছে।

'যদি কখনো ঘুম ভেঙ্গে দেখ ঐ আকাশের চাঁদ খানা তোমার পায়ে লুটিয়ে পড়েছে তখন যদি তোমায় বলি ভালবাসি? ভালবাসবে? অনন্যা আজ এই চাঁদ শুধু তোমাকেই দিলাম।'

মি: হায়েনা! কি বিদঘুটে নাম। যেমন নাম তেমন বিদঘুটে কাজ ছেলেটার। মাঝরাতে প্রায় প্রায় ফেসবুকে কেমন কেমন ম্যাসেজ দেয় ছেলেটা। এক মাস থেকেই পরিচয় ছেলেটার সাথে অথচ কত না রহস্য। যত কথা বলে তত জট পাকায় অনন্যার মাথায়। ছেলেটা কি তাকে ভালবাসে? নাকি মজা করে?

আজকের ম্যাসেজটা দেখে আরো এলোমেলো হয়ে যায় অনন্যা। কি বোর্ডের বাটনে ঝড় তোলে।

সত্যি?
-হুম সত্যি। আজ এই চাঁদ শুধু তোমার।
আর?
-আর কি?
কিছুনা।
তুমি এমন বিদঘুটে নাম কেন রেখেছ?
-আমি যে মানুষরূপী হায়েনা তাই।
তুমি হায়েনা হবে কেন! তুমি অনেক ভাল।
-তাই!?
হুম তাই।
-তাহলে আমার একটা ভাল নাম তুমি দিয়ে দাও।
-আচ্ছা। তাহলে আজ থেকে তোমার নাম শুভ্র।

রাত গভীর হতে থাকে। মি: হায়েনা, এঞ্জেল অনন্যা জেগে থাকে। সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে। চ্যাটবক্সে ভালবাসার ইমো ছড়িয়ে দেয় দুজনে। একসাথে জোছনা দেখে স্বপ্ন সাজায়। অনন্যা ভালবেসে ফেলে।
*****

দুই বছর পর ঠিক সেই রাতে অনন্যা জানালার পাশে দাড়ায়। সেই একই চাঁদ অনন্যার মুখে আলো ফেলে। অনন্যার চোখ মুখ জ্বলে যায়। মনে হয় এই চাঁদ তার নয় অন্য কারো। সব মিথ্যা। সব ভুল। ছলনা। কি নিষ্ঠুর ছেলেটা। কি নিষ্টুর!

টুং টুং করে ল্যাপটপে শব্দ হতে থাকে। এঞ্জেল অনন্যা এখন নীল পরী হয়ে ছেলেদের মাঝে ধরা দিয়েছে। অনন্যা আবারো কি বোর্ডে ঝড় তুলে।

'যদি কখনো ঘুম ভেঙ্গে দেখ ঐ আকাশের চাঁদ খানা তোমার পায়ে লুটিয়ে পড়েছে তখন যদি তোমায় বলি ভালবাসি? ভালবাসবে? আজ এই চাঁদ শুধু তোমাকেই দিলাম।'

অনন্যা কপি করে। তারপর ছেলেগুলোকে একটা একটা করে পাঠাতে থাকে। শান্তি লাগে। খুব শান্তি লাগে অনন্যার।
****

মাঝরাত। বাতাসে বসন্তের পাতা ঝরার খসখস শব্দ হচ্ছে। হালকা একটা টিশার্ট গায়ে ছেলেটি চার তলার ছাদে পা ঝুলিয়ে বসেছে। বসন্তের শুরুতে ফুরিয়ে যাওয়া শীতের কামড় ছেলেটির মনোযোগ কাড়তে না পারলেও হাতে ধরা ফোনের ডিসপ্লেতে ভেসে আসা ফেসবুক ম্যাসেজটা ছেলেটির আবেগুলোকে বেশ ভাল ভাবেই নাড়িয়ে দিতে থাকে।

'যদি কখনো ঘুম ভেঙ্গে দেখ ঐ আকাশের চাঁদ খানা তোমার পায়ে লুটিয়ে পড়েছে তখন যদি তোমায় বলি ভালবাসি? ভালবাসবে? আজ এই চাঁদ শুধু তোমাকেই দিলাম।'

নীল পরি! কি অদ্ভুত নাম মেয়েটার। তার থেকেও অদ্ভুত মেয়েটার পাঠানো ম্যাসেজগুলো। প্রায় একমাস হল পরিচয়। অথচ কত না রহস্য মেয়েটার মধ্যে। যত কথা বলে তত জট পাকায় ছেলেটির মাথায়।

মেয়েটি কি তাকে ভালবাসে? নাকি মজা করে?

হাতের ছোঁয়ায় ম্যাসেজ টাইপ করতে থাকে ছেলেটি। রাত বাড়তে থাকে। ঘুরে ফিরে জোছনা আসতে থাকে। আসতে থাকে বসন্ত। বার বার। বহুবার।

(উৎসর্গ: সেই সব ছেলে মেয়ে অথবা শিকারি শিকার যারা মাঝরাতে অযথাই অনলাইনে থাকে।)
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×