মুদ্রা পাচার মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
Published : 13 Mar 2014, 01:44 PM
ঢাকার মহানগর হাকিম শামসুল আরেফিন বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক আহসান আলী বৃহস্পতিবার দুপুরে খন্দকার মোশাররফকে আদালতে হাজির করে তিন দিন রিমান্ডের আবেদন করেন।
এর বিরোধিতা করে এই বিএনপি নেতার পক্ষে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ।
শুনানি শেষে বিচারক জামিন নাকচ করে তিন দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড শুনানিতে দুদকের আইনজীবী কবির হোসেন আদালতকে বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালে মোশাররফ ও তার স্ত্রী বিলকিস আক্তার ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা পাচার করেন। লন্ডনের লয়েডস টিএসবি অফশোর প্রাইভেট ব্যাংকে ওই টাকা রাখা হয়। এই টাকার উৎস জানতে আসামিকে রিমান্ডে নেয়া জরুরি।
শুনানিতে তাকে সহায়তা করেন মীর আহমেদ আলী সালাম ও মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।
অন্যদিকে মোশাররফের আইনজীবী মাসুদ বলেন, সাবেক এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কারণে এ মামলা করা হয়েছে। মামলা করার আগে অভিযুক্তকে নোটিসও দেয়া হয়নি। অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ তিনি পাননি।
এর জবাবে দুদকের আইনজীবী বলেন, মুদ্রা পাচার মামলায় নোটিস দেয়ার বিধান নেই।
রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা ও জামিনের পক্ষে খন্দকার মোশাররফ নিজেও আদালতে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, “কোনো টাকা বিদেশে পাচার করিনি। ২০১৩ সালের মে মাসে সব টাকার হিসাব দিয়েছি। লন্ডনে যে টাকা নিয়ে দুদক মামলা করেছে তা মিথ্যা। ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৭৫ সালে ওই টাকা আমি ও আমার স্ত্রী আয় করেছি, লন্ডনের শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করেছি। আমি আমার বৈধভাবে অর্জিত টাকা থেকে কর জমা দিয়েছি। অর্জন করা, আর টাকা পাচার এক নয়।”
বুধবার রাতে এই বিএনপি নেতাকে তার গুলশানের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা। রাতে রাজধানীর রমনা থানায় রাখার পর বৃহস্পতিবার সকালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় দুদক কার্যালয়ে। সেখানে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন উপ-পরিচালক আহসান আলী।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিমান্ডের জন্য এই বিএনপি নেতাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।
দুদক কমিশনার এম সাহাবুদ্দিন সেগুন বাগিচায় দুদক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “খন্দকার মোশাররফের টাকা পাচারের বিষয়টি ইংল্যান্ডের ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি প্রথম আমাদের অবহিত করে। এরপর আমাদের অনুরোধে ওই অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়।”
গত বছর মার্চে অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় এ সংক্রান্ত নথিপত্র হাতে আসার পর চলতি বছর ৬ ফেব্রুয়ারি রমনা থানায় মামলা করে দুদক।
এই মামলায় মোশাররফ হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন নিলেও দুদকের অনুরোধে আপিল বিভাগ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তা বাতিল করে বলে জানান এম সাহাবুদ্দিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক শিক্ষক খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১৯৯৪ সাল থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য।
কুমিল্লা – ২ আসনে বিএনপির সাবেক এই সাংসদ ১৯৯১-৯৫ পর্যন্ত তখনকার বিএনপি সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। গত বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলে তিনি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
দুদকের ব্রিফিংয়ে এম সাহাবুদ্দিন বলেন, কেবল খন্দকার মোশাররফ নয়, বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আরো ‘চার/পাঁচজন মন্ত্রী-সাংসদের’ মুদ্রা পাচারের অভিযোগ কমিশনের হাতে আছে।
মোশাররফের মতো তারাও ইউরোপের বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ পাচার করেছেন বলে জানালেও তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।
“যে তথ্য আমরা পাচ্ছি তাতে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ গঠন সম্ভব। আমরা এদের বিষয়েও আইনানুগ ব্যাবস্থা নেব।”
অবশ্য বিএনপি বলছে, উপজেলা নির্বাচন ঘিরে সরকারের ‘অপকর্ম’ থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতেই বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্য মামলা হচ্ছে। গ্রেপ্তার মোশাররফের মুক্তিও দাবি করেছেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
খালেদার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মতো খন্দকার মোশররফের টাকাও ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়া হবে কি না- জানতে চাইলে দুদক কমিশনার বলেন, “মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”