বিদ্যুতের দাম গড়ে ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার, যা চলতি মাস থেকেই কার্যকর হবে।
Published : 13 Mar 2014, 04:18 PM
গত সপ্তাহে গণশুনানির পর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বৃহস্পতিবার দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
তবে আবাসিকে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত এবং সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন বিইআরসি চেয়ারম্যান এ আর খান।
গত জানুয়ারিতে নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিদ্যুতের দাম এবারই প্রথম বাড়ানো হল। বিএনপির পাশাপাশি বাম দলগুলো এর বিরোধিতা করে আসছে।
বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর পরিচালন লোকসান সমন্বয়ের জন্য বিদ্যুতের এই দাম বাড়ানো হয়েছে।
তবে এক্ষেত্রে কমিশন সকল শ্রেণির ভোক্তার স্বার্থ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর আর্থিক প্রভাব এবং সর্বোপরি দেশের সামাজিক ও আর্থিক গুরুত্ব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি।
এ আর খান বলেন, “হতদরিদ্র বা দরিদ্র মানুষ, যারা ৫০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তাদেরকে আমরা লাইফ লাইন ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছি। তাদের ব্যবহার্য বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি, তা আগের মতই আছে।
“একইভাবে কৃষি এদেশের মেরুদণ্ড, এখন সেচ মৌসুম চলছে। কৃষি ও কৃষকের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য সেচ পাম্পে ব্যবহার্য বিদ্যুতের দামও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।”
আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে মোট ছয় ধাপে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিটের দাম ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিটের দাম ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের দাম ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের দাম ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ৬০১ ইউনিটের বেশি বিদ্যুতের দাম ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বিইআরসির হিসাব অনুযায়ী, প্রথম ধাপের বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের খরচ বাড়বে ১৫ টাকা, দ্বিতীয় ধাপে বাড়বে ২২ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত, তৃতীয় ধাপে ৫৯ টাকা থেকে ৮৬ টাকা, চতুর্থ ধাপে ৯৮ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা, পঞ্চম ধাপে ১৪৮ থেকে ২৪১ টাকা এবং সর্বশেষ ধাপের খরচ ২৫৫ থেকে ৪৬১ টাকা বাড়বে।
এছাড়া বাণিজ্যিক ও অফিসের বিদ্যুৎ ব্যবহারে ফ্লাট রেট ৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৫৮ পয়সা, অফ-পিক আওয়ারে ৭ টাকা ২২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ১৬ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। তবে পিক আওয়ারের বিদ্যুতের দাম ১১ দশমিক ৮৫ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য ফ্লাট রেটের বিদ্যুতের দাম ৬ টাকা ৯৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৪২ পয়সা, অফ পিক আওয়ারে ৫ দশমিক ৯৬ থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬৪ পয়সা এবং আওয়ারে ৮ দশমিক ৪৭ থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা করা হয়েছে।
রাস্তার বাতি ও পানির পাম্পের জন্য ফ্লাট রেট ৬ টাকা ৪৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬টাকা ৯৩ পয়সা করা হয়েছে।
এছাড়া উচ্চ চাপের সাধারণ ব্যবহারের (৩৩ কেভি) জন্য ফ্লাট রেট ৬ টাকা ৪৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ২০ পয়সা, অতি উচ্চ চাপের সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য (১৩৩কেভি) ৬ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৯৬ পয়সা করা হয়েছে।
দেশে কর্মরত পাঁচটি বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানির মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড ৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে।
বিদ্যুৎ বাড়ানোর এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে বিইআরসি কারওয়ান বাজারে নিজস্ব কার্যালয়ে গত ৪ মার্চ থেকে তিনব্যাপী গণশুনানির আয়োজন করে।
শুনানিতে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, গণসংহতি আন্দোলনসহ ভোক্তা প্রতিনিধিরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।
বিইআরসি চেয়ারম্যান এ আর খান, সদস্য সেলিম মাহমুদ, প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন ও মাকসুদুল হক শুনানি গ্রহণ করেন।
প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশের পর দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের গত সরকারের আমলে খুচরা এবং পাইকারি পর্যায়ে ১১ দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালে সেপ্টেম্বরে খুচরা বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ এবং পাইকারির দাম ১৭ শতাংশ বাড়ানো হয়।