somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য সেপারেশনস অফ A Separation---বিচ্ছেদের গল্পগুলো

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আ সেপারেশন!একেতো ইরানী মুভি, তার উপর আবার অস্কারজয়ী।একটা মুভির জন্য এর চে বেশি বিজ্ঞাপনের আর দরকার পড়ে না।মুভি দেখা শেষে মুগ্ধ হলাম!সেই সাথে মাথায় অনেক ভাবনাও খেলে গেলো।

A Separation মুভিটির মূল নাম হচ্ছে Jodái-e Náder az Simin (جدایی نادر از سیمین )।এটি ইরানী পরিচালক আসগার ফরহাদির ৫ম চলচিত্র।মুভিটির রানিং টাইম ১২৩ মিনিট।নাদের-সিমিনের ডিভোর্স ও তার ফলস্বরূপ ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা নিয়ে এগিয়েছে মুভির কাহিনী

নাদের আর সিমিন তেহরানের এক উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবার।সিমিন ইরান ছেড়ে উন্নত কোনো দেশে যেতে চায়।কারণ, তার ধারণা ইরান তার মেয়ের বেড়ে ওঠার জন্য উপযোগী নয়।কিন্তু নাদের তার বৃদ্ধ বাবাকে একলা রেখে কোথাও যাবে না।সেকারণেই, সিমিন সিদ্ধান্ত নেয় নাদেরকে ডিভোর্স দিয়ে মেয়ে তেমরেহকে নিয়ে চলে যাবে।সিমিন নিজের মায়ের বাসায় চলে যায়।ব্যাংকার নাদের তার বাবার দেখাশোনা করার জন্য রাজিয়া নামে এক গর্ভবতী মহিলাকে নিয়োগ দেয়।কিছুদিন পরে, তর্কের এক পর্যায়ে রাগত নাদের রাজিয়াকে ধাক্কা দিয়ে সিড়ি থেকে ফেলে দেয়।পরবর্তীতে জানা যায়, রাজিয়ার বাচ্চাটি মারা গিয়েছে।

আর এরপর থেকেই আর দশটা সাধারণ ইরানী মুভি থেকে আলাদা হয়ে যায় A Separation মুভিটি।রাজিয়ার স্বামী হোজাত ঋণগ্রস্হ এক বেকার।সে তার অনাগত সন্তানকে হত্যার অভিযোগে মামলা করে নাদের এর বিরুদ্ধে।অপর দিকে নাদের দাবী করতে থাকে, সে রাজিয়ার প্রেগন্যান্সির বিষয়টি আদৌ জানতো না।শুষ্ক ড্রামা মুভিতে চলে আসে কোর্ট-রুম ড্রামার স্বাদ।আর কাহিনীর অগ্রগতির সাথে সাথে দারুণ উইটি কিছু টুইস্ট।

মুভিটির ক্রীপ্ট অসম্ভব স্মার্ট (স্ক্রীন-প্লে বিভাগে অস্কারে একটা নমিনেশনও পেয়েছিলো।একটা নন-ইংলিশ মুভির জন্য এটা বেশ বড় একটা অ্যাচিভমেন্ট)।কাহিনী বিন্যাসটাও দারুন।ইরানী সমাজে যেহেতু তালাকের প্রচলন কম, তাই এটি গল্পগত দিক থেকেও নিজস্বতা নিয়ে এসেছে।সেই সাথে উঠে এসেছে ইরানী আইনী ব্যবস্হা, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, পিতা-সন্তানের সম্পর্ক, তালাকের প্রভাব,মানব মনের নীতিবোধের পরিসীমা।তবে, আলাদা করে বলতে হয় ক্যামেরা-ওয়ার্কের কথা।মুভির বিভিন্ন অংশে আমরা হোজাত ও রাজিয়াকে ঘোলা কাঁচ অথবা জানালার শিকের ওপাশে দেখি।এটা যতটা না লোহার শিক তার চে অনেক বেশি দারিদ্রের শিক, অপারগতার ভেতরে বন্দীত্ব।হ্যান্ড-হেল্ড ক্যামেরার ব্যবহারটিও লক্ষ্য করে দেখুন।পরিচালক ফরহাদি চেয়েছেন দর্শক যেন গল্প থেকে ডিটাচড না থাকে।আপনার যেন মনে হয়, আপনি মুভির চরিত্রগুলোর পাশে থার্ড পার্সন হিসেবে উপস্হিত আছেন।শুধু তাই নয়, মুভি শেষে বোঝা যায় আমরা দর্শকরা এমন সব তথ্য পেয়েছি, যেগুলো মুভির চরিত্রগুলোও পায়নি (যেমন: নাদেরের ড্রয়ার থেকে টাকা কে নিয়েছে অথবা মিসক্যারিজ কিভাবে হলো ইত্যাদি)।যার ফলে, আমাদের ভূমিকা শুধু মাত্র দর্শকে সীমাবদ্ধ থাকে না।এই কোর্ট-রুম ড্রামায় আমরা প্রত্যেক দর্শকই পরিণত হই এক একজন বিচারকে।

মোটা দাগে বিচার করলে আ সেপারেশন হয়তো নাদের আর সিমিনের সেপারেশনের গল্প।কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলে আরো কয়েকটি অনুচ্চারিত বিচ্ছেদের সুর খুঁজে পাবো।সেগুলোর কথায় পরে আসছি।মুভির সব বিষয় খুব ভালো লাগলেও, তেমরেহকে আমার খুব মিসকাস্টেড লেগেছে।এই চরিত্রটিতে ছিলেন পরিচালক আসগার ফরহাদির মেয়ে।১১ বছরের তেমরেহর চরিত্রে ১৮ বছরের (মুভিটির নির্মাণকাল ২০১০) সারিনাকে অভিনয় করানো ছিলো সেপারেশনের সবচে দুর্বল দিক।

যদিও মুভিতে বলা হয়নি তেমরেহ আসলে কার সাথে থাকবে।তবে এটা নিয়ে আমার একটা হাইপোথিসিস আছে।আমার ধারণা সে তার মায়ের সাথে থাকবে।কারণটা বলছি।মুভির শুরুতে আমরা পিতা-কন্যার যে সম্পর্কটা দেখেছিলাম, মুভির শেষে এসে তার পরিবর্তন ঘটেছে।মেয়ে তেমরেহর চোখে পিতা নাদের তার দেবতুল্য শ্রদ্ধার আসনটি হারিয়েছে।মা সিমিন কিন্তু শুধুমাত্র তার ভালোর কথা ভেবে দেশ এবং সংসার ছাড়ছে।মুভির শুরুতে তেমরেহ তার মায়ের সাথে না গিয়ে বাবার সাথে থেকেছিলো।কারণ সে জানতো, শুধুমাত্র তাকে দেখার জন্য হলেও সিমিন আসবে।ফলে বাবা-মার মিলনের সম্ভাবনাটা জিইয়ে রাখা গেলো।অপরদিকে নাদের বলেছিলো, সে তার বাবার দেখাশোনা করার জন্য ইরানে থাকবে।কিন্তু বাবার মৃত্যুর পরও যখন নাদের ডিভোর্স নিচ্ছে, তখন দেশ না ছাড়ার সিদ্ধান্তটি আগাগোড়াই তার জেদের প্রতিফলন বলে বোধ হয়।এক্ষেত্রে ১১ বছরের একটা বাচ্চার তার মায়ের সাথে থাকতে চাওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি যৌক্তিক।

মুভি শেষে বলা চলে, ক্ষতির তালিকায় শীর্ষস্হানটি অনস্বীকার্যভাবে নাদেরের দখলে।সে শুধু সিমিন থেকেই আলাদা হয়নি।আলাদা হয়েছে তার মেয়ে তেমরেহ থেকে, হারিয়েছে তার বাবাকে।আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ অথচ অদৃশ্য (অফ-স্ক্রীন) বিচ্ছেদ হতে পারে রাজিয়া আর হোজাতের মাঝে।হোজাতের মাথার উপর ঋণের বোঝা ছিলো।তার শেষ আশার প্যান্ডোরার বাক্সটি ছিলো নাদেরের ব্লাডমানি।কিন্তু সে সম্ভাবনা রাজিয়া নিজ হাতে ধংস করে।মুভির আগাগোড়া হোজাতকে আমরা দেখেছি মাথা গরম, অবিবেচক, ইম্পালসিভ এক মাণুষ হিসেবে।তাই রাগের বশে নাদেরের গাড়ির উইন্ডশিল্ডের পাশাপাশি নিজের বৈবাহিক সম্পর্কটাও সে ভেঙেছে বলেই আমার বিশ্বাস।



ইরানী চলচিত্রগুলো যেখানে দর্শককে ভুলে শৈল্পিক দিকটাকে বেশি গুরুত্ব দিতো, সেখানে সেপারেশন এসেছে দর্শককে আনন্দ দিতে।নিজের ছোট্ট পরিসরে উচ্চকন্ঠে জানান দিচ্ছে, শিল্পের সাথে বিনোদনের কোনো বিরোধ নেই, একদমই না!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:০৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শেষ মুহূর্তে রাইসির হেলিকপ্টারে কী ঘটেছিল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩২

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত খুব কমই জানা গেছে। এবার এ ঘটনার আরও কিছু তথ্য সামনে এনেছেন ইরানের প্রেসিডেন্টের চিফ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের কিছু উল্টা পালটা চিন্তা !

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১০

১।
কলকাতা গিয়ে টুকরা টুকরা হল আমাদের এক সন্ত্রাসী এমপি, কলকাতা বলা চলে তার ২য় বাড়ি, জীবনে কতবার গিয়েছেন তার হিসাব কেহ বের করতে পারবে বলে মনে করি না, কলকাতার অলিগলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×