প্রথম দুই পর্বে বিএনপির চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় পর্বে এসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
Published : 15 Mar 2014, 09:48 PM
আগের দুই পর্ব মিলিয়ে বিএনপির চেয়ে ১৬ উপজেলা চেয়ারম্যান কম থাকলেও এবার অন্তত ১১টি উপজেলায় এগিয়ে তারা।
বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন সহিংসতার মধ্যে ৮১ উপজেলায় শনিবার দিনভর ভোটগ্রহণের পর ৭৭টির চেয়ারম্যান পদের ফল ভোর পর্যন্ত পাওয়া গেছে।
গোলযোগের কারণে কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চারটি উপজেলায় ফল ঘোষণা স্থগিত করা হয়েছে।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৩৯ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা।
অন্যদিকে বিএনপি নেতারা ২৮টি উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
তাদের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী নেতারা সাতটি উপজেলায় চেয়ারম্যান হতে চলেছেন। একটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন এলডিপি সমর্থিত প্রার্থী। তিন দলের বিজয়ীদের নিয়ে ১৯ দলের ৩৬ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এ ধাপে।
প্রথম দুই পর্বের তুলনায় তৃতীয় পর্বে গোলযোগের মাত্রা ছিল বেশি, যাতে দুজন নিহতও হয়েছেন। গোলযোগের কারণে ১৩টি উপজেলার ২৬ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়।
অপেক্ষাকৃত গোলযোগপূর্ণ তৃতীয় পর্বে কেন্দ্র দখলের ‘মহোৎসব’ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারলে ‘ভরাডুবি’ হবে বুঝতে পেরে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ‘জবরদখল’ করেছেন।
তবে আওয়ামী লীগ বলেছে,দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সব জায়গায় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভোটের সময় তাদের সমর্থিত প্রার্থী ও সমর্থকরাই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ‘আক্রমণের’ শিকার হয়েছেন বলেও দাবি করেছেন দলটির নেতারা।
প্রথম দুই পর্বে ২১৩টি উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৮২ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিন পর্ব মিলিয়ে ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যানের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১২১ জন।
অন্যদিকে তিন পর্ব মিলিয়ে বিএনপির চেয়ারম্যানের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১২৬ জন।
সে হিসেবে বিএনপির চেয়ে এখনো পাঁচজন উপজেলা চেয়ারম্যান কম থাকছে ক্ষমতাসীন দলের।
তবে জামায়াত ও এলডিপি নেতাদের নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলের চেয়ারম্যানের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫৩ জন, এর মধ্যে জামায়াতের ২৭ জন।
তৃতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত ভোটের মধ্যে যশোরের মণিরামপুর, বরিশালের হিজলা, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও ময়মনসিংহের মুক্তগাছায় ফল ঘোষিত হয়নি।
দেশের ৪৮৭ উপজেলার মধ্যে তিন দিনে ২৯৪টিতে ভোটগ্রহণ হল। আরো তিন পর্বে বাকি উপজেলাগুলোতে ভোট হবে।
এবারের উপজেলা নির্বাচনে এ পর্যন্ত নির্বাচিতদের মধ্যে দেশের একমাত্র নারী চেয়ারম্যান হয়েছেন রাঙামাটির বরকল উপজেলার মনি চাকমা, যিনি জনসংহতি সমিতির সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন।
এবার পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষমতাসীন দলের কোনো নেতা চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী না হলেও বান্দরবানে দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপিবিহীন সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রথম দুই পর্বে দুটি উপজেলায় চেয়ারম্যানের পদ পেলেও এবার তাদের কোনো নেতাই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারেননি।
চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় পর্বে ৪১ জেলার ৮১ উপজেলায় শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৪৪টি কেন্দ্রে টানা ভোটগ্রহণ চলে।
এসব উপজেলায় ১১শ’ জনের বেশি প্রার্থীর মধ্য থেকে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিতে ভোটার ছিলেন এক কোটি ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ১৩ জন।
প্রথম দুই পর্বে ৬২ শতাংশের বেশি ভোট পড়লেও তৃতীয় পর্বে ভোটের হারের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি নির্বাচন কমিশন।
বিএনপি অনিয়মের অভিযোগ করলেও ভোট তদারকের দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেছেন,“পাড়ায় পাড়ায় বা দলীয় দ্বন্দ্বে কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। এজন্য নির্বাচনও বন্ধ করতে হয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শেষ হয়েছে।”
ভোট চলাকালে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় একটি কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে দুর্বৃত্তদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিতে এক আওয়ামী লীগ নেতার নির্বাচনী এজেন্ট নিহত হয়েছেন।
ভোটের সকালে বাগেরহাটে সন্ত্রাসী হামলায় এক যুবক নিহত হয়েছেন, যাকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে জামায়াতে ইসলামী।
ভোট চলাকালে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বাগেরহাটের শরণখোলা, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা,নেত্রকোণা সদর এবং নড়াইলের লোহাগড়ায় ভোট বর্জন করেন বিএনপি-জামায়াত এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
বাগেরহাটের শরণখোলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাট সদর উপজেলায়ে পুনঃভোটের দাবিতে রোববার জেলায় হরতাল ডেকেছে বিএনপি।