বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিন নেতাকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে দলটি।
Published : 16 Mar 2014, 01:21 PM
মির্জা ফখরুল, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব আব্দুস সালামকে রোববার কারাগারে নেয়ার পর দলের কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে আসেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিক্ষোভের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, “ উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আজ নিম্ন আদালতে হাজির হলে তাদের জামিন বাতিল করা হয়।”
বিএনপি নেতাদের কারাগারে পাঠানোর ঘটনাকে ‘সরকারের প্রতিহিংসা ও দুর্বিনীত জুলুম নির্যাতনের বর্হিঃপ্রকাশ’ বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
এর প্রতিবাদে সোমবার সারা দেশে মহানগর-জেলা-উপজেলায় এবং রাজধানীতে থানায় থানায় বিক্ষোভ-সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন রিজভী।
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, দল, দেশ, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলার জন্য ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ নেতৃবৃন্দের জামিন বাতিল করা হয়েছে। তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
হরতাল-অবরোধের মধ্যে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মানুষ হত্যাসহ নাশকতার তিন মামলায় হাই কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন ফখরুল, আব্বাস ও সালাম। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আপিল বিভাগ গত ৯ মার্চ তা বাতিল করে দেয়।
রোববার তারা বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক তা নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠান।
এই তিন নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেন রিজভী।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “বিএনপি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, জনগণ ও দলের নেতা-কর্মীদের হতাশ ও বিপথগামী করার জন্য ভারপ্রাপ্ত মহাসচিসহ জাতীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গণবিচ্ছিন্ন সরকার জনরোষের আতঙ্ক থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে চাইছে।”
তবে সরকার এভাবে আন্দোলনের ঐক্য দুর্বল করতে পারবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
“সরকার জাতীয় নেতাদের পালাক্রমে গ্রেপ্তার করে আনন্দময় খেলা খেলে নিজেদের অবৈধ মসনদকে নিরাপদ করতে চাইছে। তারা জাতীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে কিছুদিন কারাগারে আটকে রেখে আবার জামিন দেয়। এরপর আবার অন্য কিছু নেতাদের গ্রেপ্তার করছে। কয়েকদিন আগে একইভাবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসনকেও একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে।’’
অন্যদের মধ্যে বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, সহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, যুব দলের সিনিয়র সহ সভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হোসেন ও রফিক শিকদার সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
খোন্দকার দেলোয়ারের কবরে শ্রদ্ধা
বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মানিকগঞ্জে তার কবরে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রোববার ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জের ঘিওরে খোন্দকার দেলোয়ারের কবরে গিয়ে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে তারা মিলাদ মাহফিলেও অংশ নেন।
দেলোয়ারের ছেলে ড. খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু, খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলু, খোন্দকার আখতার হামিদ পবন, মেয়ে দেলোয়ারা বেগম পান্নাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদের মধ্যে সহ দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, মহিলা দলের সভানেত্রী নুরী আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর শরফত আলী সপু, শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, জাসাস সভাপতি এম এ মালেক, উলামা দলের সাধারণ সম্পাদ শাহ নেসারুল হক, জেলা সভানেত্রী আফরোজা খানম রীতা, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবির এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খোন্দকার দেলোয়ারের স্মরণে মিলাদ মাহফিল হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, সহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, যুব দলের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম আজাদসহ নেতা-কর্মীরা এতে অংশ নেন।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার আগে দলের মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে বহিষ্কার করেন এবং খোন্দকার দেলোয়ারকে দলের মহাসচিব নিয়োগ করেন। ২০১১ সালের ১৫ মার্চ সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেলোয়ার।