somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মামলা পরিচালনায় আইনজীবীর ফি কত?

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একটা মামলা পরিচালনা করতে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে কত টাকা দিতে হবে, তার নির্দিষ্ট কোনো আইন কিংবা বিধান নেই। ফলে মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে আইনজীবীরা ইচ্ছেমতো টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাইকোর্টে কোনো মামলায় আগাম জামিনের জন্য ৫ থেকে ৫০ হাজার, অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের জন্য ২০ হাজার থেকে ১ লাখ, কোনো আবেদন বা মামলার কার্যকারিতার স্থগিতাদেশ নিতে ২৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা আইনজীবীকে ফি হিসেবে দিতে হয়।
আপিল বিভাগ কিংবা হাইকোর্টে কোনো দেওয়ানী (জমিজমা) মামলার শুরুতেই সিনিয়র আইনজীবীদের লাখ টাকা দিতে হয়। একই সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তি করতে লাখ থেকে শুরু করে কোটি টাকার চুক্তি করা হয় বলেও জানা গেছে। এ ছাড়া সুপ্রিমকোর্টের অনেক সিনিয়র আইনজীবী আছেন, যারা ২ লাখ টাকার কমে কোনো মামলা শুরুই করেন না।
একই সঙ্গে সিনিয়র আইনজীবীরা আদালতে গিয়ে মক্কেলের পক্ষে বসে থাকলে এক রকম ফি এবং আদালতে কথা বললে আরেক রকম ফি দিতে হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলা পরিচালনায় সুপ্রিমকোর্টের অভিজ্ঞ এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বিচারপতি টিএইচ খানকে প্রতি শুনানির জন্য সর্বনিম্ন ১ লাখ, ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে প্রতি শুনানির জন্য ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। মামলা ফাইলিং করার খরচ মক্কেলের আলাদা। ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামকে ফাইলিংয়ের সময় ৫ লাখ এবং প্রতি শুনানির জন্য ২ লাখ, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে প্রতি শুনানির জন্য ৬০ হাজার, অ্যাডভোকেট বাসেত মজুমদারকে মামলার শুরুতে ৩ লাখ এবং শুনানির ফি চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনকে প্রতি শুনানির জন্য ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম স্বভাবত হাইকোর্টের কোনো মামলা পরিচালনা করেন না। আর আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয় এ আইনজীবীকে। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনকে প্রতি শুনানির জন্য সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা ফি হিসেবে পরিশোধ করতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুপ্রিমকোর্টের কয়েকজন আইনজীবী দ্য রিপোর্টকে জানান, সুপ্রিমকোর্টের বেশ কয়েকজন আইনজীবী আছেন, যারা মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিভিন্ন সময় ২ কোটিরও অধিক টাকা নিয়েছেন।
বিচারপতিকে ম্যানেজ করার জন্য টাকা লাগবে বলেও অনেক আইনজীবী মামলাকারীর কাছ থেকে অনেক সময় টাকা গ্রহণ করেন বলে জানান তারা।
সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবীরা মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে মোটা অংকের টাকা নিয়ে থাকেন বলে কথিত আছে। একই সঙ্গে জনস্বার্থে অনেক মামলা তারা বিনা টাকায় নিষ্পত্তি করে দেন বলেও জানা গেছে।
তবে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কত টাকা নেওয়া হবে, তা সম্পূর্ণ সংশ্লিষ্ট মক্কেলের ওপর নির্ভর করে। মামলার ভুক্তভোগী ভিআইপি বা ধনী হলে ফির পরিমাণ বেশি হয়। আর অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক হলে ফির পরিমাণ কম হয়।
অপরদিকে নিম্ন আদালতে কোনো রিমান্ড নামঞ্জুর বা জামিনের জন্য আইনজীবীকে ১ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। আর আসামির হাজিরার জন্য প্রতিদিন ১০ থেকে ৫০ হাজার, ভ্রাম্যমাণ আদালতে শাস্তিপ্রাপ্তদের জামিনের জন্য ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। নিম্ন আদালতে কোনো মামলার কার্যক্রম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিষ্পত্তির জন্য মক্কেলের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার চুক্তি করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
এ ছাড়া আইনি পরামর্শের ক্ষেত্রে ২০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়। উভয়পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে মামলা নিষ্পত্তি করতে চাইলে ৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে তা করতে হয়। আদালতে মামলার নিয়মিত শুনানির জন্য প্রত্যেক শুনানিতে ১ থেকে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। মক্কেলের আর্থিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় বলেও জানা গেছে।
নিম্ন আদালতে মামলা ফাইলিং করার ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়।
আমাদের দেশে মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবীকে কত টাকা দিতে হবে, তার নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। যদিও ‘দ্য বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনারস অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার অ্যান্ড রুলস’ ১৯৭২ এর পেশাগত আচরণ এবং শিষ্টাচার নীতি (Bangladesh Bar Council Canons Of Professional Conduct And Etiquette) এর দ্বিতীয় অধ্যায়ে `মক্কেলের সাথে আইনজীবীর আচরণ’ বিষয়ে বিধান বর্ণিত আছে।
এ আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে মক্কেলের সঙ্গে আইনজীবীর আচরণের ব্যাপারে ১৪টি বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও আসামির (মক্কেল) কাছ থেকে মামলা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে কত টাকা নিতে হবে তার নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ উল্লেখ নেই। মামলা পরিচালনায় আইনজীবীর ফির সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণের কথাও বলা নেই এ বিধানে।
অথচ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইডেনসহ বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশে আইনজীবীর ফির ব্যাপারে নির্দিষ্ট আইন আছে। কোথায়, কীভাবে, কেমন পরিমাণ টাকা নেওয়া যাবে তাও বর্ণনা করা আছে। আইনের মাতৃভূমি ব্রিটেনে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য ঘণ্টাভিত্তিক টাকা পরিশোধ করা হয় সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তাকে।
একটা মামলার ক্ষেত্রে আইনজীবীকে কেমন টাকা দিতে হয়- সে বিষয়ে কথা হচ্ছিল সুপ্রিমকোর্টে আসা এক মামলাকারী আব্দুল মান্নানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একটা ফৌজদারি মামলায় আমার পক্ষে রায় হয়। পরে বিপরীত পক্ষ হাইকোর্টে আপিল করে। হাইকোর্টে মামলা ফাইলিং করার সময় আমার ৪৫ হাজার টাকা লেগেছে। এরপর প্রতি শুনানির দিন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয় আইনজীবীকে।’
এ পর্যন্ত কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকার কোনো হিসাব নেই। এটা বলে শেষ করা যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, আইনজীবীদের ফি নির্ধারণে আমাদের দেশে বিশেষ কোনো আইন নেই। তাছাড়া মামলার ঘটনা ও বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট আইন করা মুশকিল।
তিনি বলেন, ফি নেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে হবে। এ ছাড়া খ্যাতি অনুযায়ী ফি নির্ধারণ করা উচিত। সিনিয়ররা তুলনামূলক বেশি, জুনিয়ররা একটু কম নেবে; তাহলেই ঠিক হয়ে যাবে।
ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম জানান, ফি নেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে মক্কেলের ওপর। মামলাকারীর অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করেই মূলত ফি নেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, এ ছাড়া আইনজীবী-মক্কেলের সম্মতির মাধ্যমেই তো মূলত ফি নির্ধারণ হয়। কারো কাছ থেকে জোর করে কোনোপ্রকার টাকা নেওয়া হয় না।
সুপ্রিমকোর্টের বেশ কয়েকজন আইনজীবী জানান, মামলা পরিচালনায় ফি নির্ধারণে আইন করা হলে কোনো আইনজীবী আর ওকালতি করবেন না। কারণ আইনের মাধ্যমে তাদের আয়ের পরিমাণ কমে যেতে পারে।

(এস এম সাকিল আহমেদ)
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×