somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতের জমি দখল করল বাংলাদেশ। (দাদাদের আনন্দবাজারের রিপোর্ট)

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"বাংলাদেশ সীমান্তে জমি দখল, উত্তেজনা ছড়াচ্ছে কিছু শক্তি"

দেড় মাস আগে দীপাবলির রোশনাইয়ে গোটা দেশ যখন মাতোয়ারা, সেই সময়েই বিনা প্ররোচনায় জলপাইগুড়ি সীমান্তে বেরুবাড়িতে আউটপোস্ট এগিয়ে এনে বেশ কিছুটা ভারতীয় জমি দখল করে নেয় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)। খুদিপাড়া এলাকায় ক্যাম্পও বসিয়ে দেয় বিজিবি-র ১৮ নম্বর ব্যাটেলিয়ন। বিএসএফ খবর পেয়ে বড়সড় বাহিনী নিয়ে যাওয়ার পরে তারা ফের পিছিয়ে যায়। কিন্তু তার আগে টানা দু’দিন কার্যত অবরুদ্ধ ও বন্দি অবস্থায় থাকতে হয় দক্ষিণ বেরুবাড়ির কয়েকশো বাসিন্দাকে।
সম্পর্ক মজবুত করতে দিল্লি ও ঢাকা যখন সীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে তৎপর হয়েছে, বাংলাদেশের ভিতরেরই একটি প্রভাবশালী শক্তি তখন উত্তেজনা সৃষ্টি করে সমস্যা জিইয়ে রাখতে মাঠে নেমেছে বলে অভিযোগ। এই উদ্দেশ্যে বিতর্কিত এলাকার জমি দখল থেকে শুরু করে সীমান্তবর্তী ভারতীয় গ্রামগুলিতে হুমকি দিয়ে চাষাবাদ বন্ধ করে দেওয়ার কাজও তারা করে চলেছে। এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনার উল্লেখ করে রাজ্য সরকারকে আলাদা আলাদা রিপোর্ট দিয়েছেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক ও ‘ইন্দো-বাংলাদেশ বর্ডার ডিমার্কেশন’-এর যুগ্ম অধিকর্তা। একই মর্মে রিপোর্ট দিয়েছেন নদিয়ার করিমপুরের বিডিও-ও। সব রিপোর্টেই বলা হয়েছে, সীমান্ত সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে ফেললেই একমাত্র এই ধরনের অপচেষ্টা বন্ধ হতে পারে।
বেরুবাড়ি এখনও শান্ত হয়নি। নিত্য সেখানে গোলমাল চলছে। তাই পরবর্তী স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে রাজ্যের তরফে বিষয়টি উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ১৩ ডিসেম্বর ‘ইন্দো-বাংলাদেশ বর্ডার ডিমার্কেশন’ (আইবিবিডি)-এর যুগ্ম অধিকর্তা দীপঙ্কর রায়চৌধুরি স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি রিপোর্ট (মেমো নম্বর- বিডিওয়াই/১৩৭৩-৪৩২-টি/২০১২) পাঠিয়ে বেরুবাড়ি সমস্যার সমাধানে ‘উপযুক্ত’ অবস্থান নেওয়ার কথা বলেছেন। বেরুবাড়ির অশান্তি ও সেখানকার বাসিন্দাদের শোচনীয় অবস্থা নিয়ে ১১ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকি মহাপাত্রও মহাকরণে পৃথক রিপোর্ট পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন। করিমপুরের বিডিও-ও রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, নদিয়ায় সীমান্ত সংলগ্ন বাউসমারিতে চাষাবাদে বাধা দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে বিজিবি। রাজ্য সরকার যেন বিষয়টি কেন্দ্রের কানে তোলে।
আইবিবিডি-র রিপোর্টটিতে লেখা হয়েছে, ‘২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা মেটাতে প্রোটোকল স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ। এই প্রোটোকলই ১৯৭৪ সালের ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্টের (এলবিএ) সংশোধিত রূপ হিসাবে চূড়ান্ত হবে। সেই হিসাবে বেরুবাড়ি ভারতের ‘অ্যাডভার্স পজেশন’-এ রয়েছে, এবং তা ভারতেই থাকছে। এই অবস্থায় বিজিবি-র ১৮ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাকির হোসেন কালীপুজো এবং দিওয়ালির দিন (১৩ এবং ১৪ নভেম্বর) বেরুবাড়ির খুদিপাড়ায় ক্যাম্প তৈরি করেন। এই ভূখণ্ডটি সীমান্তের মানচিত্রে স্ট্রিপ শিট নম্বর- ৪২৬ হিসাবে চিহ্নিত। যা ভারতের দখলেই রয়েছে বরাবর।’ রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ‘খুদিপাড়ায় ক্যাম্প তৈরি করে বিজিবি-র সদস্যরা দু’দিন ধরে বেরুবাড়ি দখল করে রাখে। ভারতীয়দের সেখান থেকে বাইরে আসতে দেওয়া হয়নি। এমনকী হুমকি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়, কেন তারা ভারতে থাকতে চায়। এখনও বিজিবি-র উস্কানিতে সেখানে ভারতীয়দের চাষবাসে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’ বেরুবাড়ির ঘটনা দুই দেশের আলোচনায় তোলার জন্য বিদেশ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে উদ্যোগী হতে বলে মহাকরণে লিখেছেন আইবিবিডি-র কর্তা দীপঙ্করবাবু। যদিও জানতে চাওয়া হলে তিনি এই রির্পোট নিয়ে কিছু বলতে অস্বীকার করেন।
বেরুবাড়ি কোথায়?
• জলপাইগুড়িতে ভারতের ‘অ্যাডভার্স পজেশন’
‘অ্যাডভার্স পজেশন’ কী?
• এর অর্থ বিতর্কিত এলাকা
দু’দেশের সীমান্ত প্রোটোকল কী বলছে?
• পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে ভারতের সব ‘অ্যাডভার্স পজেশন’ ভারতেরই থাকবে
বেরুবাড়ির ভবিষ্যৎ কী?
• বেরুবাড়ি ভারতেই থাকবে
তবে বেরুবাড়ি নিয়ে সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকি মহাপাত্র। তিনি বলেন, “উত্তেজনা এখনও রয়েছে। সরকারকে সে বিষয়ে জানিয়েছি। বেরুবাড়ি আমাদের ‘অ্যাডভার্স পজেশন’-এ রয়েছে। এর অর্থ বিতর্কিত এলাকা। দু’দেশে স্বাক্ষরিত স্থলসীমা প্রোটোকল অনুযায়ী এই অঞ্চল ভারতীয় ভূখণ্ডেই অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু এখানে বাসিন্দাদের চাষবাসে বাধা দেওয়া, হুমকি চলছেই।” কালীপুজোর সময় বেরুবাড়ি কি বিজিবি-র দখলে চলে গিয়েছিল?
স্মারকি জানান, “স্থানীয় সূত্রে এমন খবর পেয়ে বিএসএফ সেখানে যায়। এর পরে টানা টহলদারি চলছে। তবে বিজিবি এখন পিছিয়ে গিয়েছে।”
বিএসএফের পূর্বাঞ্চলের এডিজি বংশীধর শর্মা এই প্রসঙ্গে বলেন, “বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বেরুবাড়ি ভারতের রয়েছে। সেখানে রাস্তা নির্মাণ হচ্ছিল। তা নিয়ে আপত্তি তুলে বিজিবি হঠাৎই এগিয়ে এসে ক্যাম্প তৈরি করে। কাজে বাধা দেয়। খবর পাওয়ার পর সেখানে বাহিনী পাঠিয়ে অ্যাকশন নেওয়া হয়েছে। এখন অবশ্য স্থিতাবস্থা ফিরেছে।”
২০০১-এর এপ্রিলে মেঘালয়ের পিরদিউয়া ‘অ্যাডভার্স পজেশন’-এ মোতায়েন ১৫ জন বিএসএফ জওয়ানকে বাংলাদেশি ভূখণ্ড বরাইবাড়িতে টেনে নিয়ে গিয়ে নৃশংস অত্যাচারের পরে খুন করা হয়। বাংলাদেশের তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এর বেশ কিছু সদস্যও এ কাজে ইন্ধন জুগিয়েছিল বলে অভিযোগ। এ ঘটনার পরে দু’দেশের সম্পর্ক সাংঘাতিক খারাপ দিকে মোড় নিয়েছিল। ঘটনাচক্রে আওয়ামি লিগের আগের আমলের শেষ দিকেই এই ঘটনা ঘটেছিল।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক শীর্ষস্থানীয় কর্তা ফোনে জানান, বেরুবাড়িতে কোনও ঘটনা ঘটেছিল বলে ‘সরকারি ভাবে’ তাঁদের জানা নেই। তবে ওই কর্তার কথায়, “বাংলাদেশের কিছু স্বার্থান্বেষী শক্তি যে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যার সমাধান চায় না, তা সত্যি। পদে পদে তারা বাগড়া দিচ্ছে। এই একই শক্তি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সহযোগী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আটকাতেও মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ জন্যই আমরা বিষয়টি দ্রুত মিটিয়ে ফেলার জন্য দিল্লিকে বলছি। দেরি করলে এই সমস্যা আরও জটিল হতে পারে।” আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান চান বিজিবি-র ডিরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদও। শনিবার টেলিফোনে তিনি বলেন,“আমি সপ্তাহ দুয়েক আগে বাহিনীর দায়িত্ব নিয়েছি। ফলে পুরনো বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে আমি মনে করি, যে কোনও সমস্যাই আলোচনার মাধ্যমে মিটে যেতে পারে।”
জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×