somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মালয়েশিয়ান বিমান নিখোঁজ রহস্য অন্তরালে পাইলটের আত্মহত্যা

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ‘৭৭৭-২০০’ উড়োজাহাজটি নিখোঁজ হবার মাঝে পেরিয়ে গেছে ১ সপ্তাহ।

উড়োজাহাজটির রুটের সম্ভাব্য সবকটি স্থানের জল ও স্থলে বিশ্বের ১৪টি দেশের গন্ডায় গন্ডায় জাহাজ ও উড়োজাহাজ সন্ধান চালিয়ে হয়রান। যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে বিমানটি। এমনকি কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্য নিয়েও বিমানটির অবস্থান সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

এ পরিস্থিতিতে বিমানটির ভাগ্যে কি ঘটেছে তা নিয়ে ঘনীভূত হচ্ছে নানা রহস্য। নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে বিশেষজ্ঞরা দেখাচ্ছেন যুক্তি, পাল্টা যুক্তি।

তবে এসব যুক্তি-তক্ক-গপ্পোর মধ্যে হালে পানি পাচ্ছে পাইলটদের ইচ্ছাকৃতভাবে সমুদ্রের বুকে বিমানসহ সলিল সমাধির আকাঙক্ষা।

শুনতে আজগুবি মনে হলেও এই তত্ত্বের সমর্থনে দেয়া যুক্তিও কিন্তু কম জোরালো নয়।

একটি বিমান অনন্তকাল আকাশে ভেসে থাকতে পারবে না। বোয়িং ‘৭৭৭-২০০’ বিমানটিও সর্বোচ্চ আট ঘণ্টা আকাশে ভেসে থাকার প্রয়োজনীয় জ্বালানি নিয়ে উড়াল দিয়েছিলো।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবার মুহূর্তটিতে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে যদি বিমানটি সাগরে পড়তো তবে এতে থাকা বিপুল পরিমাণ উচ্চ দাহ্য ক্ষমতা সম্পন্ন জ্বালানি বিস্ফোরিত হয়ে বিমানটিকে হাজার হাজার খণ্ডে বিভক্ত করতো। পাশাপাশি তেল ছড়িয়ে পড়তো সাগরের কয়েক বর্গ মাইল এলাকায়।

মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের জলসীমার মধ্যবর্তী যে স্থানে বিমানটি রাডার থেকে হারিয়ে যায়, তা একটি ব্যস্ততম বাণিজ্যিক সামুদ্রিক রুট।

তার ওপর এক সপ্তাহের জল ও অন্তরীক্ষের ব্যাপক অনুসন্ধান অভিযানের মুখে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ কারও না কারও চোখে পড়তোই। তাই বলা যেতে পারে অন্তত জ্বালানি থাকা অবস্থায় ওই স্থানে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে ভেঙ্গে পড়েনি বিমানটি।

মালয়েশিয়া বলছে বিমানটিকে সর্বশেষ তারা মালাক্কা প্রণালীর পশ্চিমে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।

অর্থ‍াৎ বিমানটিকে তার রুট থেকে পেছন দিকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যেহেতু ককপিট ছাড়‍া কোনো বিমানকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

তাহলে বলতে হবে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক পাইলটরাই বিমানটিকে ঘুরিয়ে এনেছেন।

এখন প্রশ্ন হলো তাদের কি জোরপূর্বক এ কাজে বাধ্য করা হয়েছে, নাকি তারা স্বেচ্ছায় এ কাজ করেছেন? আবার জোর করে তাদের এ কাজে বাধ্য করার সম্ভাবনাও মূলত কতটুকু?

বোয়িং ৭৭৭ যাত্রীবাহী বিমানগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত। এতে রয়েছে সর্বশেষ প্রজন্মের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

বিশেষ করে ৯/১১ এর ঘটনার পর যাত্রীবাহী এয়ারলাইনারগুলোর ককপিট এবং কেবিনের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী দরজাও বিশেষভাবে তৈরি।

তাই কেউ যদি একা অথবা দলবল নিয়ে ককপিটে ঢুকতেই চায় তাহলে তাকে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকতে হবে। এক্ষেত্রে দরজা ভেঙ্গে ফেলার আগেই কন্ট্রোল টাওয়ারে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক সংকেত দেয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পেতেন বৈমানিকরা।

তাহলে বোঝা যাচ্ছে দুর্ঘটনা না ঘটে থাকলে পাইলটদেরই কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তার রুট থেকে বিমানটিকে সরিয়ে নিয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো বিমানটিকে আশপাশের কোনো সুনির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কি না?

আশপাশের কোনো স্থলভূমিতে অবতরণ করানোর আগে বিমানটিকে মোকাবিলা করতে হতো ওই এলাকার প্রায় সবগুলো দেশের অত্যাধুনিক রাডার ব্যবস্থাকে।

দক্ষিণ চীন সাগরের উত্তপ্ত ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এমননিতেই এ অঞ্চলের প্রায় সব দেশই সর্বাধুনিক রাডার ব্যবস্থা সম্বলিত। তার ওপর সেখানে রয়েছে চরম নজরদারি।

যেখানে একটা সামান্য ড্রোন কিংবা ফাইটার প্লেন ক্ষণিকের জন্য কোনো দেশের আকাশ সীমা লঙ্ঘন করলে তা নিমিষেই রাডারে ধরা পড়ে। সেখানে একটা আস্ত বোয়িং ৭৭৭ রাডারে ধরা পড়বে না, তা অসম্ভব।

এ পরিস্থিতিতে একমাত্র পাইলটদের পক্ষেই সম্ভব রাডারের দৃষ্টি এড়িয়ে বিমানটিকে ঘুরিয়ে দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের দিকে নিয়ে যাওয়া।

কিন্তু সেদিকে আদিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি। নিরাপদে অবতরণের মত কোনো স্থল ভূমিও নেই সেখানে।

এক্ষেত্রে যদি পাইলটরা ইচ্ছে করেই বিমানটিকে সাগরে ডুবিয়ে দেন তাহলেই কেবল সম্ভব পেছনে কোনো চিহ্ন না রেখে সাগরে নিশ্চিহ্ন হওয়া। আর ভারত মহাসাগরের কোনো কোনো স্থানে সমুদ্রের গভীর ১২ হাজার ফুট পর্যন্ত।

তাই বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ, বিচিত্র কোনো মানসিক অবস্থার শিকার হয়ে দুই পাইলটের কোনো একজন অপরজনকে ঘায়েল করে তার ইচ্ছেমতো বিমানটিকে সমুদ্রের মাঝে নামিয়ে দিয়েছেন। ফলে রাডারে ধরা না পড়ে, পেছনে কোনো চিহ্ন না রেখে বিমানটি হারিয়ে গেছে মহাসাগরের অতল গভীরে।

আর ককপিটে থাকা পাইলট‍ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিমান সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছেন এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে।

১৯৯৯ সালে ইজিপ্ট এয়ারের ফ্লাইট ৯৯০ জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কিছুক্ষণ পরই আটলান্টিক মহাসাগরে তলিয়ে যায়। পরবর্তী অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, বিমানটির কো পাইলট গামিল আল বাতোতি ইচ্ছাকৃতভাবে একে সাগরে নিমজ্জিত করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড বা এনটিএসবি অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, বিমানের নিয়ন্ত্রণ কো পাইলট বাতোতির হাতে দিয়ে বাথরুমে গিয়েছিলেন ক্যাপটেন। কিন্তু তিনি ফিরে দেখেন সমুদ্রে নাক বরাবর ডাইভ দেয়ার জন্য বিমান ঘোরাচ্ছেন কো পাইলট।

এ সময় বাধা দিলেও কো পাইলটকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন ক্যাপটেন। ফলে বিমানটি নেমে যায় সাগরের গভীরে। এ ঘটনায় সলিল সমাধি ঘটে বিমানটির ২১৭ জন আরোহীর।

তাই মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ৭৭৭ বিমানটির ভাগ্যেও এমনটা ঘটার আশঙ্কাও তাই একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×