somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সত্যকা
রাজু আহমেদ । এক গ্রাম্য বালক । অনেকটা বোকা প্রকৃতির । দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারি নি ,তবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অনুভব করেছি । সবাইকে প্রচন্ড ভালবাসি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে পারি না । বাবা এবং মাকে নিয়েই আমার ছোট্ট একটা পৃথিবী ।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়

১৯ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আন্তর্জাতিক বাজার এবং দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের গভীর ষড়যন্ত্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সাথে সাথে সকল পণ্যের মূল্য দিনের পর দিন বেড়েই চলছে । স্বাভাবিক মূল্যের তুলনায় প্রতিটি পণ্যের দাম ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে । দ্রব্যমূল্যের এ আকাশ ছোঁয়া মূল্য সাধারণ জনগনের জীবনকে নাভশ্বাস করে তুলেছে । দেশের মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা । প্রতিনিয়ত মানুষকে ছুটতে হচ্ছে জীবনের রেসে । সব কিছু সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে ভেবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে তো সব যাবে । আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যের মূল্য যতই বৃদ্ধি বাড়ুক দেশের আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা, উৎপাদিত শস্য রক্ষাণাগার এবং মধ্যসত্ত্বভোগীরা যদি একটু মানবদরদী হত তাহলে প্রান্তীক কৃষকরা যেমন চাষবাসের প্রতি গুরুত্বারোপ করত তেমনি সাধারণ ক্রেতাও জীবনযাত্রার নিম্নমান নিয়ে হলেও খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকতে পারত । বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারনে তা হচ্ছে না । দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে কাঁচামাল পাঠাতে পরিবহন খরচ খুবই ব্যয়বহুল । তাছাড়াও দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরাবস্থার কারনে সঠিক সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে এ সকল পচনশীল শস্য পাঠানো যায় না । সকল সমস্যার সাথে যোগ হয় স্থানে স্থানে টোলের নামে চাঁদাবাজি । তাতে দেখা যায় এক টাকা মূল্যের একটি দ্রব্যের উপর বাড়তি তিনটাকা যোগ হয়ে যায় । যে কারনে প্রান্তীক কৃষক এবং খুচরা বিক্রেতারা তেমনভাবে লাভবান না হলেও যারা কৃষিকাজের সাথে মধ্যসত্ত্ব হিসেবে কাজ করে তারা অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা করে । এসকল কারনে কোন এক দ্রব্যের মূল্য স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুন বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে । দ্রব্য মূল্যের এ উর্ব্ধগতির প্রভাবটা সরাসরি সাধারন মানুষের জীবযাত্রার উপর প্রভাব ফেলে জীবন যাত্রাকে বিপর‌্যস্ত করে তুলে ।

দ্রব্য মূল্যের উর্ব্ধগতি সমানভাবে সকলের জীবনে সমান প্রভাব ফেলে না । কমবেশি সকলেই হুমকির সম্মুখীন হলেও সমাজের মজুর শ্রেণী এবং অভিজাত শ্রেণীর তুলনায় বেশি ভোগান্তিতে পড়ে মধ্য শ্রেণী । বছর দশেক আগের কথা । যারা গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারে গ্রহস্থলির কাজে টুকি-টাকি সাহায্য করত তারা প্রতিদিন ৩০-৫০ টাকা মজুরী পেত । তখন এক কেজি চালের মূল্য ছিল সর্বোচ্চ ১০ টাকা ।৮০-১০০ টাকায় পরিধানের লুঙ্গি পাওয়া যেত । সময় বদলেছে । হু হু করে সব কিছুর দাম বেড়েই চলছে । দিনমজুরের বেতনও ৫০ টাকায় থেমে নাই । এখন যারা দিনমজুরের কাজ করে তারা প্রত্যেকেই প্রতিদিন কম করে হলেও ৩৫০-৫০০ টাকা মজুরী পায় । তাদের আয়ের তুলনায় পাল্লা দিয়েই নিত্য প্রয়োজীনয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে । ১০ টাকার চাল ৩০ টাকা হয়েছে,১০০ টাকার কাপড় ৪০০ টাকা হয়েছে । এভাবে প্রতিটি দ্রব্যের দাম গড়ে হিসাব করলে দেখা যাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসল নিম্ন শ্রেণীর পেশাধারীদের জীবনযাত্রার মান আশানুরুপ বৃদ্ধি না পেলেও আগেও তুলনায় তারা অনেক ভালো আছে । সমাজের উচ্চ মধ্যমে এবং অভিজাত শ্রেণীর জীবযাত্রায়ও দ্রব্যমূল্যের উর্ব্ধগতি তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারে নি । মাত্র পাঁচ বছর আগেও যারা ১২ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন পেয়ে সাচ্ছন্দে জীবন ধারন করতে পারত সেই তারাই ৪০-৬০ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছে । যারা মাঝারী বা বড় ব্যবসা করছে তাদের আয়ও ঠিক এমন করে বেড়েছে । সুতরাং সময়ের তালে তাল মিলিয়ে যাদের বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের জীবন ধারনেও দ্রব্য মূল্যের উর্ব্ধগতি তেমন কোন উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি । দ্রব্যমূল্যের উর্ব্ধগতি নিয়ে যখন কথা ওঠে, আন্দোলন হয় তখন এ শ্রেণীর মানুষও মিডিয়ার মূখোমূখি হয়, রাস্তায় নামে । তবে সেটা টাকা বাঁচানোর স্বার্থে । প্রকৃতার্থে দ্রব্য মূল্যের উর্ব্ধগতি নিম্নশ্রেণী এবং উচ্চশ্রেণীর প্রাত্যাহিক জীবনেও পূর্বের তুলনায় তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারে নি ।

চালের দাম, তেলের দাম, ডালের দাম, আলুর দাম, লবনের দামসহ নিত্যপ্রয়োজীয় দ্রব্যের দাম স্বাভাবিকের তুলনায় কেজি প্রতি এক টাকা বৃদ্ধি পেলেও সমাজের একশ্রেণীর মানুষের জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে । মাত্র কয়েকটি খুচরা টাকা বাঁচানোর জন্য রাস্তায় নামতে হয় । এরা সমাজের মধ্যম শ্রেণী । না আছে চাকরি না করতে পারে দিনমজুরের কাজ । জন্মসূত্রের বাবার অথবা বংশের নামকাওয়াস্তে সুনাম-সূখ্যাতি পেয়েছিল । সে খ্যাতি ধরে রেখে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে অথবা উচ্চ শিক্ষিত হয়েও ঘুষের টাকা দিতে পারেনি বলে চাকরি হয় । এ শ্রেণীর মানুষের না পারে উৎপাদন করতে না পারে উৎপাদন করাতে । না পারে আদেশ দিতে না পারে আদেশ শুনতে । এ শ্রেণীর লোকেরা সকল সামাজিক সমস্যা, জাতীয় সমস্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় । এরা প্রতিমূহুর্তে জীবনের কর্তব্য থেকে পালাতে চায় । বাইরে জমিদারীভাব প্রকাশ করলেও ভেতরে এরা সমাজের দিনমজুরদের চেয়েও বেশি কষ্টে থাকে । বড় ব্যাগ নিয়ে বাজারে গেলেও বাজার থেকে ফেরে খালি ব্যাগে বা ব্যাগের তলানিতে কিছু না । যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে সামান্য ।

দ্রব্য মূল্যের উর্ব্ধগতিতে কারা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় বা কারা কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে সেটা পরখ করে দেখে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহন করার অবকাশ নাই । দ্রব্য মূল্যের উর্ব্ধগতি আমাদের সবার সমস্যা । এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সকলকেই সমানভাবে সচেতন হতে হবে । স্বাভাবিক কারনে দ্রব্যমূল্যের যতটুকু বৃদ্ধি পায় তার তুলনায় ঢেরবেশি বৃদ্ধি পায় মানুষের অনৈতিকতা ও অসেচতনার কারনে । বেশি মুনফা লাভের কারনে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় দ্রব্য মওজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি করে । পরে সুযোগবুঝে দ্রব্যের প্রকৃত মূল্যের তুলনায় তিনগুন, পাঁচগুন বেশি মূল্য বৃদ্ধি করে বাজারে ছাড়ে । নিত্যপ্রয়োজনীয় যতগুলো দ্রব্য আছে তার মধ্যে খাদ্য দ্রব্য অন্যতম । খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে ঋতুভেদের কাঁচা তরীতরকারী উল্লেখযোগ্য । বাংলাদেশের মাটির উর্বরতার কারনে তরকারীর মওসুমে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমানে জন্মে । কিন্তু সুষ্ঠু রক্ষনব্যবস্থা না থাকার ফলে সিংহভাগ তরকারীই পঁচে নষ্ট হয়ে যায় । বাংলাদেশের তুলনায় পার্শ্ববর্তী ভারতে অনেক পন্যের মূল্য বেশি থাকার কারনে সীমান্তরক্ষীদের প্রত্যক্ষ্য অথবা পরোক্ষ সহযোগিতায় এক বিপুল পরিমান দ্রব্য পাচার হয়ে যায় । পাচার হওয়া দ্রব্যের সংকট পড়ে বাংলাদেশে । তখন পাচার হওয়ার পর যে পরিমান দ্রব্য থাকে তা দেশের সকল স্থানে বন্টন করার জন্য কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়িয়ে দেয় ।

আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যবৃদ্ধি আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে অস্বাভাবিক কোন পরিবর্তন সূচিত করতে পারে না যদি দেশের সকল মানুষ নীতিবান এবং সচেতন হয় । দ্রব্যমূল্যের উর্ব্ধগতি দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবনে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন বা সমস্যা সম্মুখীন করতে না পারলেও দেশের বিপুল পরিমান মানুষকে চরম সমস্যায় ফেলে । দেশের সকল মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য দ্রব্যমূল্যের উর্ব্ধগতিসহ সকল সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধান করতে হবে । শুধু সংবিধানে কল্যান রাষ্ট্রের কথা সীমাবদ্ধ থাকলেই হবে না, বাংলাদেশকে সতিকারার্থের একটি কল্যান রাষ্ট্রের রুপদান করতে হবে । সুতরাং দ্রব্যমূল্যের উর্ব্ধগতিরোধে আইনের সহায়তা নিয়ে দোষীদের শাস্তির মূখোমূখি দাঁড় করাতে হবে । দ্রব্যমূল্যের উর্ব্ধগতি কমবেশি সকলেরই সমস্যা, এ সমস্যা রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ।

রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
[email protected]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×