somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসপাতালে রোগীরা নির্যাতিত হচ্ছে !

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সত্য হলো, দেশে অনেক হাসপাতাল গড়ে উঠেছে, বিশেষ করে প্রাইভেট সেক্টরে। কিন্তু সেগুলো তদারক করার জন্য কোনো রেগুলেটরি কমিশন বা তদারকি সংস্থা নেই। সেই কাঙ্ক্ষিত রেগুলেটরি কমিশন ওষুধ কম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও নেই। তাই আজ বাংলাদেশে হাসপাতাল ব্যবসা ও ওষুধ তৈরি করে বিক্রি করা সবচেয়ে ফ্রি ব্যবসা, নির্ঝঞ্ঝাটের ব্যবসা। এরা বাণিজ্য করে যাচ্ছে আর তার মূল্য দিতে হচ্ছে এই দেশের লাখ লাখ রোগীকে। তদারকির অভাবে হাসপাতাল ও ওষুধ কম্পানি মিলে দেশে রোগী ভালো করার নামে লাখ লাখ রোগী সৃষ্টি করে চলেছে। এরা ভালো করেই জানে, বেশি রোগী হলে বেশি লাভ। আজকাল বাংলাদেশের আনাচকানাচে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বারান্দায় যে এত রোগী দেখেন, এরা কি এমনি এমনি রোগী হয়েছে, না এদের রোগী বানানো হয়েছে? আপনারা কি বিশ্বাস করেন না ডাক্তার আর হাসপাতাল শুধু রোগ সারায় না, তারা রোগের সৃষ্টিও করে! বিশ্বাস না হলে রোগীদের জিজ্ঞেস করুন। সামান্য বুকের ব্যথা নিয়ে ইউনুছ মিয়া গেলেন এক হার্ট ফাউন্ডেশনে। ডাক্তার বললেন হার্টে ব্লক আছে, রিং পরাতে হবে। ইউনুছ মিয়া রিং পরলেন। দুই বছর পর আবার হার্টে ব্যথা, আবার সেই ফাউন্ডেশন, সেই ডাক্তার। এবার ডাক্তার বললেন, তৃতীয় ব্লক আছে। আরেকটি রিং পরাতে হবে। রিং পরালেন, কিন্তু রোগ গেল না। মাত্র ছয় মাস পর সেই একই অসুখ। এবার হাসপাতাল ও ডাক্তার বদল করলেন। এই হাসপাতালের ডাক্তার বললেন, রিংয়ে কাজ হবে না, বাইপাস করাতে হবে। এও বললেন, উনার তো ডায়াবেটিসও আছে। প্রথমেই বাইপাস করালে এই সমস্যা হতো না। শেষ পর্যন্ত বাইপাসের পর ১৮টি ওষুধ। ইউনুছ মিয়ার রিং লাগাতে ও বাইপাস করাতে ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। এখন ইউনুছ মিয়া বুঝলেন কেন অন্য রোগীরা বিদেশে পাড়ি দেয়। তিনি এও বুঝলেন, তাঁর আগের ডাক্তার ছিলেন রিং মাস্টার। তাই তিনি শুধু রিংয়ের কথা বলতেন। এ তো গেল ইউনুছ মিয়ার কথা। আবদুল্লাহ একজন অধ্যাপক ডাক্তার দেখালেন বিকেলে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। শরীরটা কেমন যেন যাচ্ছে- ঘুম কম হয়, পেটেও খাদ্য সইতে চায় না, ঢেঁকুর ওঠে। আবদুল্লাহর বয়স ৪০-৪৫ বছর। তিনি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে ওষুধের দোকানে গেলেন। আবদুল্লাহ ইংরেজি পড়তে পারেন না। একটা ওষুধের নাম দোকানিও পড়তে পারছে না। আমি প্রেসক্রিপশনটা নিয়ে দেখলাম, চারটি ওষুধ লেখা হয়েছে, একটি ঘুমের ওষুধ, একটি গ্যাসের ওষুধ, একটি ব্লাড প্রেশারের ওষুধ, আরেকটি ভিটামিন। আবদুল্লাহর প্রেসক্রিপশনে লেখা ছিল ব্লাড প্রেশার ১৩০-৯০। ডাক্তারের সামনে আবদুল্লাহর এই ব্লাড প্রেশার থাকতেই পারে। আমাদের নজরে এই প্রেশার নর্মাল। অথচ ডাক্তার দিয়ে দিলেন তাঁকে সারা জীবনের জন্য ব্লাড প্রেশারের ওষুধ। তাও শুধু একবার গেছেন। এখন বলুন, ডাক্তার সাহেব এই রোগীর প্রতি সুবিচার করেছেন কি না? হাসপাতালগুলোতে রোগীদের কাছ থেকে নানা রকমের বিলও নেওয়া হয়। বিল বানানোর দিক দিয়ে তারা ওস্তাদ। একটা বড় হাসপাতাল, জরুরি বিভাগে জলিল সাহেব গিয়ে উপস্থিত হলেন, তাঁর বীমা পলিসি আছে। তাই ভাবলেন, শরীরটা চেকআপ করাবেন। জরুরি বিভাগে যাওয়ার উদ্দেশ্য হলো তাড়াতাড়ি যাতে ভর্তিপ্রক্রিয়াটা সারতে পারেন। কিন্তু জলিল সাহেবের তিক্ত অভিজ্ঞতা হলো, তাঁকে পরীক্ষার নামে এখানে চার ঘণ্টা ফেলে রাখা হলো। পরে ভর্তি ঠিকই হলেন, তবে সিট পাওয়া গেল সবচেয়ে গুমোট রুমগুলোয়। চার দিন পর জলিল সাহেব যখন রিলিজ নিলেন, তখন দেখলেন বিল এসেছে এক লাখ টাকা এবং জরুরি বিভাগে প্রতি ঘণ্টায় ডাবল চার্জ। এখন বলুন তো, জরুরি বিভাগে তাঁকে কেন চার ঘণ্টা রাখা হলো? বলছিলাম হাসপাতাল, ডাক্তার, ওষুধ কম্পানিগুলো মিলে পারলে বাংলাদেশকে রোগী উৎপাদনের ফ্যাক্টরি বানিয়ে ফেলে! জুলেখা বেগম, বয়স ৫০, সামান্য অসুখ নিয়ে হাসপাতালের ওপিডিতে গেলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, এখন তাঁকে প্রায়ই ওপিডিতে যেতে হয়। কারণ কি জানেন? কারণ হলো প্রথম ডাক্তার তাঁকে কিছু ওষুধ দিয়েছেন। জুলেখা বেগম ওই সব ওষুধ খাওয়ার পর আরো বেশি অস্বস্তিতে পড়েছেন। এরপর গেলেন অন্য হাসপাতালের অন্য ওপিডিতে। ওই ডাক্তার আগের ওষুধের সাইড অ্যাফেক্ট ভালো করতে আরো দুটি ওষুধ দিলেন। এখন জুলেখা বেগম পূর্ণভাবে ওষুধনির্ভর একজন রোগী। সারাক্ষণ রোগ নিয়ে চিন্তিত। তাঁর রোগচিন্তা দেখে ঘরের লোকেরা ত্যক্ত-বিরক্ত। তাঁকে রোগী বানাল কে? হাসপাতাল আর ডাক্তার। জুলেখার অবস্থা এমনই হয়েছে যে এখন ওষুধ ছাড়তেও পারবেন না। পারতপক্ষে ডাক্তারের ওষুধ বাদ দিয়ে জুলেখা আগের মতো চলতে চেষ্টা করলেন। এভাবে লাখ লাখ জুলেখা সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের ডাক্তার আর হাসপাতালগুলোর মাধ্যমে। এক হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে পেলাম রমজান মাসে ইফতারির টেবিলে। বললাম, হাসপাতাল করেছেন বড়, কিন্তু ভালো ডাক্তার নেই। তিনি বললেন, বিদেশে ভালো ডাক্তার আছে। তবে বিএমডিসি বাইরের ডাক্তার আনতে অনুমোদন দেয় না। বিএমডিসি হলো দেশি ডাক্তারদের জন্য সনদ অনুমোদনের সংস্থা। এই সংস্থা বাইরের ডাক্তার আনতে দেবে কেন? প্রত্যেকেই তো নিজের স্বার্থ আগে দেখবে। তবে সত্য হলো, বিএমডিসির সিনিয়র সদস্যরা কিন্তু চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন। তাহলে অধিকার নেই কি শুধু আমাদের দেশের ওই রোগীদের, যারা বাইরে যেতে পারছে না?
লেখক : আবু আহমেদ(অর্থনীতিবিদ ও কলামিস্ট)
Click This Link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×