somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতীয় সংগীত এর বিশ্বরেকর্ড ও আমার ভাবনাঃ ‘লাখো কন্ঠে’র বদলে ‘কোটি কন্ঠে জাতীয় সংগীত’ হোক।

২২ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(১)
আগামী ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে ৩ লাখ কণ্ঠে একইসঙ্গে জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে। সৃষ্টি হবে নতুন এক বিশ্বরেকর্ড। জাতীয় সংগীত নিয়ে বর্তমানে এ রেকর্ডটির মালিক ভারত। ১ লাখ ১২ হাজার লোকের উপস্থিতিতে দেশটি এ রেকর্ড গড়ে। এই রেকর্ড ভাঙার আয়োজন করেছে সরকার। বাংলাদেশের সাহস তো কম না!!

এই আয়োজনের আসলেই প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে অবশ্য নানা মত আছে। তবে সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, এক সুরে গান গেয়ে জাতি আবার এক সুরে ঐক্যবদ্ধ হবে। দেশের সব মানুষ একসঙ্গে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডর্স-এ বাংলাদেশের নাম তুলে ধরতে পারবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।

সকল কর্মযজ্ঞে যেমন ভেজাল থাকে এখানেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। প্রথমে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর “...চাঁদা তুলবো” বলা নিয়ে সাংঘাতিক প্রতিক্রিয়া হলো। এর রেশ ধরে আবার ইসলামী ব্যাংকের ৩ কোটি টাকা অনুদান নিয়ে লেগেছে ভেজাল। সবাই বলছে এতে নাকি “চেতনার বারোটা বেজে গেছে”। এখন কোন বেয়াক্কল যদি বলেন “ভাই, চেতনা কি” তাহলে আপনার জন্য উত্তর হলো, “অবিলম্বে পাকিস্তানে চলে যান”।

যাইহোক, এত টাকা খরচ না করে, কোন ভেজালে না গিয়েই কিন্তু আপনি বিশ্ব রেকর্ড করতে পারেন। কিভাবে? সরকার একটা ফরমান জারি করুক এই মর্মে যে, অমুক দিনে অমুক সময়ে সারা বাংলাদেশের মানুষ জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া শুরু করেন। বিশ্ব দেখবে ৩ লাখ নয়, একেবারে গোটা দেশের মানুষ একযোগে জাতীয় সংগীত গাইছে। ‘লাখো কন্ঠে’র বদলে ‘কোটি কন্ঠে জাতীয় সংগীত’ হোক। সেক্ষেত্রে ২৬শে মার্চ রাত ১২টা ১ মিনিটে সবাই যে যেখানে যে অবস্থায় আছে জাতীয় সংগীত গেয়ে উঠবে। ভাবা যায় কী চমৎকার কোটি কন্ঠে ভরে উঠবে দেশ! এমনটি হলেই তো—‘পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়...’।

(২)
এখন একটু টক শো (মানে টক কথা) হোক। আমাদের প্রিয় জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্স-এ নাম উঠানো কি খুব জরুরী কোন ব্যাপার? আগামী ২৬শে মার্চ এর পরে বাংলাদেশ কি আমূল বদলে যাবে? দেশ থেকে কি সকল অনাচার, অবিচার, চুরি-বাটপারী, রাহাজানি দূর হয়ে যাবে? আর ওয়ার্ল্ড গিনেজ বুকে কি থাকে? কে দাঁড়িতে বেঁধে ট্রাক টেনে নিচ্ছে, কে গায়ে কত হাজার আলপিন বিঁধিয়ে হেটে বেড়াচ্ছে, বা কে কয় দশক ধরে গোসল করেনি, চুল কাটেনি--এসব উদ্ভট কান্ড-কীর্তি রেকর্ড করার জন্য যে গিনেজ বুক—তাতে আমাদের লাখো কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে নাম উঠানোর চেষ্টাটা মোটেই সম্মানের নয়। অসম্মানের! গভীর অপমানের!

আমার মতে এসব রাষ্ট্রপক্ষের সাংস্কৃতিক দেউলিয়াত্বের প্রদর্শনী। দেশপ্রেম দেখানোর বা রেকর্ডের বিষয় নয়, কয়েক মিনিটের বা ঘন্টার বিষয়ও নয়। স্বদেশের হৃদয়-আর্কাইভে অনন্তকাল ধরে রাখার বিষয়। গিনেস রেকর্ডের আয়ু কয়েক ঘন্টা, কয়েক দিন বা বড়জোর কয়েক মাস মাত্র! ন্যুনতম আক্কেলটুকু খরচ করলেইতো বোঝা সম্ভব যে অন্য যে কোন দেশ যে কোন সময় এর চেয়ে বড় আয়োজন করে বসলেই আমাদের রেকর্ডের মৃত্যু ঘটবে। কীভাবেই বা আমরা অন্যের রেকর্ড দিয়ে আমার জাতীয় সংগীতকে প্রতিস্থাপিত হতে দেবার মধ্য দেশপ্রেম খুঁজে পাই?

সবচে’ বড় ভয় পরবর্তী প্রজন্ম না দেশপ্রেমকে বিচিত্রানুষ্ঠান আর প্রদর্শনী ভেবে বেড়ে উঠে!

আহারে দেশপ্রেম! এই লোক দেখানো দেশপ্রেম না দেখিয়ে ২৬শে মার্চ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ যদি শপথ করতেন যে, “আজকে থেকে সোনার বাংলায় আর কোন দুর্নীতি হবে না” তাহলে কতই না মঙ্গল হতো।

সবাইকে ধন্যবাদ।

[আমার একজন শ্রদ্ধেয় স্যার এবং নিজের কিছু কথা মিলিয়ে লেখাটি প্রস্তুত করা হয়েছে]।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৪৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×