প্যারেড মাঠে খাবারের বাক্সে ইবনে সিনার ওষুধ

ইসলামী ব্যাংক ‘সুযোগ না পেলেও’ তাদেরই সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড’ ঢুকে পড়েছে ‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ গাওয়ার অনুষ্ঠানে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2014, 07:45 AM
Updated : 27 March 2014, 06:22 PM

সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে গিনেজ বুকে স্থান করে নিতে বুধবার স্বাধীনতা দিবসের সকালে জাতীয় প্যারেড ময়দানে এই আয়োজনে অংশ নেন আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষেদের সদস্য ও তিন বাহিনীর প্রধানও শামিল ছিলেন জাতীয় এই অনুষ্ঠানে।   

অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্বে ছিল সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ।

প্যারেড ময়দানে প্রবেশের পর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সেনা সদস্যরা অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেককে একটি করে ক্যাপ, ব্যাগ ও খাবারের বাক্স সরবরাহ করেন।

ওই বাক্সে রুটি, বিস্কুট, জুসের সঙ্গে ছিল এক প্যাকেট খাবার স্যালাইন ‘ইউনিস্যালাইন’, প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ‘সিনাপল’

ও অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট ‘এন্টানিল’।

খাবারের এই প্যাকেটটি সরবরাহ করছে ক্যাপ্টেনস বেকারি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আর ওষুধগুলো ইবনে সিনা ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠান ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের তৈরি।

ইবনে সিনা ট্রাস্ট হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের স্পন্সর শেয়ারহোল্ডারদের, যাদের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতের ইসলামীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। 

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের মামলায় বিচারাধীন মীর কাসেম আলী ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন।

ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু নাসের মোহাম্মদ আব্দুজ জাহের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান। ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান শাহ আব্দুল হান্নান ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান।   

অথচ এই ইসলামী ব্যাংকের দেয়া তিন কোটি টাকা ‘লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত’ আয়োজনে নেয়া হবে না বলে তিন দিন আগে ঘোষণা দেয় সরকার।

এ আয়োজনের পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য গত ১৪ মার্চ গণভবনে বিভিন্ন টেলিকম প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি ব্যাংক এবং বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার চেক গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নেতারাও ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর হাতে সহায়তার চেক দেন, যাদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মুস্তাফা আনোয়ারও ছিলেন।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবিতে আন্দোলনরত গণজাগরণ মঞ্চ কর্তৃক চিহ্নিত ‘যুদ্ধাপরাধীদের’ প্রতিষ্ঠান’  ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তার ওই অনুষ্ঠানে থাকার  খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

এরপর গত ২৩ মার্চ সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসলামী ব্যাংক সম্বন্ধে কারো তেমন ভাল ধারণা নেই এবং তাদের সহায়তা গ্রহণে আগেও অনেক প্রতিষ্ঠান অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাই দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যেতে পারে যে, ‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ অনুষ্ঠানে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সহায়তা গ্রহণ করা হচ্ছে না।”

এর আগে জামায়াতে ইসলামীর সাথে সম্পৃক্ততার কারণে গণজাগরণমঞ্চের কর্মীরা যেসব প্রতিষ্ঠান বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিল, তার মধ্যে ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডও ছিলে।

ওই সময় সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এ কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লেখা বন্ধ করে দেন।