জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারী এবং আমাদের দেশাত্মবোধের ওয়ানটাইম ব্যবহার

মাহবুবুল হক এর ছবি
লিখেছেন মাহবুবুল হক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৭/০৩/২০১৪ - ৮:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[ /জাতীয় পতাকাকে অসম্মানিত করার ছবিটি মুছে দিয়েছি/]

২৬ মার্চ সকাল থেকেই আমার চোখ ছিল জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে জাতীয় সংগীতের বিশ্বরেকর্ড গড়ার আয়োজন সম্প্রচারের ওপর। টিভি পর্দায় অনুষ্ঠানটিকে সুপরিকল্পিত ও সুসমন্বিত বলেই মনে হচ্ছিল। মনে মনে আয়োজকদেরকে ধন্যবাদ দিতে শুরুও করেছিলাম। কিন্তু মূল সময় যতই ঘনিয়ে আসছিলো ততই স্পষ্ট হতে থাকলো অনুষ্ঠানের দলীয় চেহারা । ফারজানা ব্রাউনিয়া চিৎকার করে 'জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু' শ্লোগান উপস্থিত জনতার মধ্যে ছুঁড়ে দিয়ে এর ষোলকলা পূর্ণ করেন । আমি জানি, এই শ্লোগান উচ্চারণ না করে সেটাকে বিকৃত করে বলা বা তাচ্ছিল্যের স্বরে ‌ব্যঙ্গ করার বহু মানুষ উপস্থিত ছিল সেখানে। জাতির জনককে অসম্মান করে বিমলানন্দ উপভোগ করার বিকৃত রুচির মানুষ এ দেশে বহু আছে এটা কে না জানে। বঙ্গবন্ধুকে অসম্মানিত করার সে সুযোগ তারা হরহামেশাই পেয়ে যায় এভাবে। আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের বা সরকারের এক শ্রেণির সুবিধাবাদী চাটুকার, যারা ক্ষমতাসীনদের হিতাকাঙ্ক্ষী নয় মোটেই, সুযোগ পেলেই নিজের আনুগত্যের প্রমাণাকৃতির প্রমাণ হাজির করতে লেগে পড়ে, তাতে রাষ্ট্রের বা সরকারের ক্ষতি-বৃদ্ধি হোক, তার তো আনুকূল্য বা পদোন্নতির পথ প্রশস্ত হয় ! যেমন এই একই আয়োজনে প্রত্যেকের জন্য ছিল একটি ক্যাপ, যাতে আঁকা ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। শুধু এ কারণে এই ক্যাপ অনেকে টোকাই বা হকারদেরকে দিয়ে গেছে শুনেছি। তাতে অবশ্য 'ব্ঙ্গবন্ধু' নামের প্রতীকের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় না; কিন্তু এই কথাগুলো জনে জনে ছড়িয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনলেই যাদের কর্ণবিদীর্ণ হয় তারা এমন আচরণে তুষ্ট হয়, পরিতৃপ্তি ছড়িয়ে পড়ে তাদের চোখে মুখে। এবং এর ক্রুড়তা না বুঝলেও আমোদিত হয় কেউ কেউ। তাতে অবশ্য কিচ্ছু যায় আসে না কোট-টাই পরিহিত চাকরদের। তাদের তো উদ্দেশ্য হাসিল হলেই হয়।

আরও মর্মান্তিক হল, এই বিপুল জনতা, যারা চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যেও সমস্বরে 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি' গেয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়লো, যাবার সময় তাদের হাতে থাকা হাজার হাজার জাতীয় পতাকা তারা ছুঁড়ে ফেলে গেল প্যারেড স্কোয়ারে। আমার প্রাণের পতাকা পদদলিত হল, ছিন্ন-ভিন্ন হল। বিক্ষুব্ধ, বেদনাহত কয়েকজন ব্যথিত দেশপ্রেমিক, কিছু কিছু পতাকা এক জায়গায় জড়ো করে রাখার চেষ্টা করেছেন। সেটা সামান্যই। এতে অবশ্য আয়োজকদের দায় কতটুকু তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কারণ কাগজে-কলমে তাদের কাজ শেষ পর্যন্ত জাতীয় পতাকার মর্যাদার দিকটি দেখা বা সে বিষয়টি ভাবার মধ্যে হয়তো থাকে না। জাতীয় পতাকার সম্মান বা মর্যাদা কীভাবে সমুন্নত রাখতে হয় এমন প্রশিক্ষণের জন্য বাজেট বরাদ্দ না থাকলে তারা এটা ভা্ববেন কেন? কিন্তু যে জনতার একটা বড় অংশই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগত অথবা যারা সবাই ঢাকা শহরকেন্দ্রিক সচেতন জনগোষ্ঠী, তাদের এখনও এমন শিক্ষার অভাব থেকে গেল কোন রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতায় তা ভেবে দেখতে হবে। কিন্তু কারা ভাববেন ?

জনতা ব্যাংকের আব্দুল গণি রোড শাখায় গিয়েছিলাম টাকা তুলতে। আমার আগে থাকা এক ব্যক্তি ক্যাশ কাউন্টারে চেকসহ হাত বাড়াতেই বিপরীত দিকে থাকা অফিসার 'এখন টাকা দেয়া যাবে না, টাকা নেই' বলে চেকটি ফিরিয়ে দিলেন। ব্যাংকে গিয়ে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখী হওয়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেই লোক তার জ্বালা ঝাড়লেন এভাবে,
"ক্যান, আপনার ব্যাংক তো 'সোনার গান' গাওয়ার লাইগা হাসিনারে টাকা দিছে। এহন নাই কন ক্যান?'
মুহূর্তেই আমার সারা গায়ে ঘৃণা এবং ক্রোধ ছড়িয়ে গেল। নিজের টাকা-গোনা বন্ধ রেখে তাকে বললাম, "জাতীয় সংগীত গাওয়ার আয়োজনের জন্য টাকা দিয়েছে"। বিব্রত হয়ে লোকটির উত্তর "ওই একই কথা"।
আমি এবার জোর গলায় বললাম, "না, আপনি যেভাবে বলেছেন, এভাবে বলা ঠিক নয়"। আরও কিছু বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে লোকটি সটকে পড়ায় বলা হলো না।

তারপর থেকে দ্বিধান্বিত একটি জিজ্ঞাসায় সারাপথ তাড়িত হয়েছি। আসলে আমরা 'জাতীয় পতাকা-জাতীয় সংগীত' এসবের উপযুক্ত হয়েছি তো !

পাবলিক-প্রাইভেট যৌথ-উদ্যোগের সাফল্যে পরিতৃপ্ত হওয়ার কোন কারণ আছে বলে তো মনে হয় না। আম-জনতার কাছে যদি জাতীয়তার সারার্থ একটি খাবারের ‌প্যাকেটের সমান হয়, যা কেবল কর্পোরেট মুনাফা ও ‌'বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী'র মত বর লাভ করে এবং কাড়াকাড়ি বা ধাক্কাধাক্কি করে সেটি দখলে নিতে পারলেই অংশগ্রহণের সার্থকতা থাকে, তাহলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বরেকর্ড শুধু "অফিসিয়াল এটেম্পট" ক্যাটাগরিতে নাম লেখানোর ব্যাপার হয়েই থাকে; সেটি দিয়ে কোন জাতীয় উদ্দেশ্য অর্জিত হয় না। আমরা রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধার হৃদয়াবেগমাখা চিঠিকে পণ্যমূল্যে বিকোতে দেই, আমরা জাতীয় পতাকাকে বিজ্ঞাপনী মোড়কের মত ওয়ান-টাইম সংস্কৃতির সাময়িকতায় বেঁধে ফেলি, জাতীয় নেতা-জাতীয় সংগীতকে মূর্খের তাচ্ছিল্যে পরিণত হতে দেখলেও দল আর বিবৃতির দাসত্ব থেকে বের হতে পারি না। তবে কোন মমতায়, কোন বিহ্বলতায়, কোন প্রেমাস্বাদিত দেশাত্মবোধে আমাদের পূর্বপুরুষ এই পতাকাকে এই মাটির সম্পত্তি করে গিয়েছিলেন? এই মহাজগতে বাংলাদেশের একমাত্র চিহ্ন হিসেবে গেঁথে দিয়েছিলেন? যে পতাকা তাঁরা আমাদের হাতে দিয়ে গেছেন তা বহণ করার শক্তি আমরা হারিয়ে ফেলছি না তো ? আমার মনে হয় সময় এসেছে জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে কঠোর হওয়ার। এর জন্য কী কী করা যেতে পারে তা নিয়ে বিস্তর পরিকল্পনা হতে পারে, বহু লেখায়, বহু বক্তৃতা ও সেমিনারে পরামর্শ-প্রস্তাবনা আসতে পারে। কিন্তু কাজের কাজটি্ করতে হবে আর সময় নষ্ট না করে, এটাই আসল কথা। এজন্য সবচেয়ে বেশি দরকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-আধাসরকারি অফিসে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের সর্বোচ্চ সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা- তা প্রচলিত আইন প্রয়োগ করেই হোক বা নতুন করে আ্ইন গড়েই হোক। এখনই। এই কাজটি করতে শুধু আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর ওপর নির্ভর না করে প্রতিটি সচেতন মানুষকে কাজে লাগানো জরুরি। বাঙালি এবং বাংলাদেশি পরিচয়গর্বী যেকোন মানুষ একাজে সৈনিকের ভূমিকা নিতে পারে। বাবার কাছে শুনেছি, আইয়ুব খান নামে এক পাকিস্তানি সামরিক শাসকের আমলে নাকি জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের অমর্যাদার জন্য তাৎক্ষণিক বেত্রাঘাতের ব্যবস্থা থাকতো। সেই ভয়ে তটস্থ থাকতো সিনেমা হলের দর্শকও। স্কুলের এ্যাসম্বলিতে জাতীয় সংগীত সজোরে না গাওয়ার জন্য যে শাস্তি আরোপিত ছিল তা আজো ভুলিনি।ভুলিনি পিটিতে উপস্থিত হতে দেরি হলেও জাতীয় সংগীতের আগে লাইনে উপস্থিত থাকতেই হতো। এসবই এখন ইতিহাস। দূর (নাকি দুর্?)-আলাপন। এভাবে বাধ্যবাধকতার মাধ্যমে জাতীয় বিষয়াদি চর্চার পাশাপাশি জাতীয় উদ্দীপনামূলক বিজ্ঞাপন, বিজ্ঞপ্তি-পট, প্রতিযোগিতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ করে মাদ্রাসায় কার্যকর করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ অবশ্যই আমাদের নবীন-তরুণ প্রজন্মকে বিকলাঙ্গ-প্রতিবন্ধী-শেকড়হীন-ধরনের জাতীয় পরিচয় আমরা দিতে চাই না। আমরা এমন প্রজন্ম চাই না যারা জাতীয় পতাকা বা সংগীতকে, জাতির বীর সন্তান বা জাতির স্থপতিকে তাচ্ছিল্যের মাধ্যমে আত্মবিধ্বংসী খেলায় মেতে উঠবে। আমরা চাই স্বাধীনতার ৪৩ বছরে হলেও এটা নিশ্চিত হোক যে, হৃদয়ের কতটা গভীর থেকে উচ্চারিত হয় জাতীয় সংগীত, কীভাবে চেতনার আকাশ-ছোঁয়া পবিত্রতম স্থানে তুলে ধরতে হয় জাতীয় পতাকা ।


মন্তব্য

নির্ঝর অলয় এর ছবি

তারপর থেকে দ্বিধান্বিত একটি জিজ্ঞাসায় সারাপথ তাড়িত হয়েছি। আসলে আমরা 'জাতীয় পতাকা-জাতীয় সংগীত' এসবের উপযুক্ত হয়েছি তো !

না আমরা উপযুক্ত হইনি। হলে সেই বর্বর লোকটিকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার অনুকূল পরিবেশ থাকত।

মনটা ভারী হয়ে গেল। ওই শুওরটাকে একটা চড় দিলে আইন বোধ হয় আপনাকেই হয়রানির শিকার বানাত। মন খারাপ

আয়নামতি এর ছবি

হৃদয়ের কতটা গভীর থেকে উচ্চারিত হয় জাতীয় সংগীত, কীভাবে চেতনার আকাশ-ছোঁয়া পবিত্রতম স্থানে তুলে ধরতে হয় জাতীয় পতাকা ।

চলুক
***
শব্দটা 'দূরালাপনী' হবে ভাইয়া।

মাহবুবুল হক এর ছবি

না, দূরালাপনী শব্দটি ইংরেজি 'টেলিফোন'এর পরিভাষা। আমি 'দূরের কথা' বা 'অতীত-কথা' বা 'ইতিহাস' বোঝাতে 'দূর-আলাপন' শব্দটি প্রয়োগ করেছি। তাই বন্ধনিতে 'দুর' উপসর্গের মাধ্যমে ভিন্ন ব্যঞ্জনা দেখাতে চেয়েছি। ধন্যবাদ।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

মাহবুবুল হক, আপনার এই কথাগুলো কারো কানে পৌছাবেনা। এর কারণ আমি আমার একটি লেখা কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ এ লেখেছিলাম। চেতনা কোন ট্যাব্লেট না যে পানিতে গিলে খেয়ে ফেললাম আর পাঁচ মিনিট পরেই আমার চেতনা ফিরে আসলো, দেশের প্রতি ভালবাসা ফিরে আসলো। এগুলোকে স্বযত্নে ভেতরে লালন করতে হয়। যা দেখছেন বা শুনছেন সবই হলো বয়সের সঠিক সময়ে চর্চা না করার ফল।

Shah Waez (শাহ্‌ ওয়ায়েজ।)
Facebook

..............................................................................................
ভাবনা আমার শিমুল ডালে লালচে আগুন জ্বালে, মহুয়ার বনে মাতাল হাওয়া খেলে।
এক মুঠো রোদ আকাশ ভরা তারা, ভিজে মাটিতে জলের নকশা করা,
মনকে শুধু পাগল করে ফেলে।

রংতুলি এর ছবি

চলুক

মাহবুবুল হক এর ছবি

সহমত। 'তবু বিহঙ্গ ওরে বিহঙ্গ মোর, এখনই অন্ধ বন্ধ কোরো না পাখা।'

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

রংতুলি এর ছবি

ছবিটা দেখে থ হয়ে গেলাম। কিছু বলার নেই আসলেই!

এই বিশ্বরেকর্ড বিশ্বরেকর্ড শুনতে শুনতেই বিরক্তি ধরে গেল। শব্দটা নিজেই কেমন যেন প্রতিযোগিতাপূর্ন, আহাম্বরাই আর কৃত্রিমতায় ভরা।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

লেখা ভালো লেগেছে। গানের রেকর্ড করতে গিয়ে পতাকা পদদলিত করে রেখে আসাটা দুঃখজনক।
মনে হয় এদের হাতে পতাকে না দিলেই ভালো হত।

আর, বিশ্বরেকর্ড আর গিনেস বুকের রেকর্ড আলাদা জিনিস নয় কি?

শুভেচ্ছা হাসি

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

চলুক

____________________________

এক লহমা এর ছবি

"আরও মর্মান্তিক হল, এই বিপুল জনতা, যারা চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যেও সমস্বরে 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি' গেয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়লো, যাবার সময় তাদের হাতে থাকা হাজার হাজার জাতীয় পতাকা তারা ছুঁড়ে ফেলে গেল প্যারেড স্কোয়ারে।" - ওঃ! অত্যন্ত মন-খারাপ করা ব্যাপার। মর্মান্তিক, খুবই মর্মান্তিক!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

কিন্তু মূল সময় যতই ঘনিয়ে আসছিলো ততই স্পষ্ট হতে থাকলো অনুষ্ঠানের দলীয় চেহারা । ফারজানা ব্রাউনিয়া চিৎকার করে 'জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু' শ্লোগান উপস্থিত জনতার মধ্যে ছুঁড়ে দিয়ে এর ষোলকলা পূর্ণ করেন ।

'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' কোনো দলের শ্লোগান নয়, এটা বাংলাদেশের সর্বজনীন শ্লোগান। ছাগুরা এটাকে আওয়ামী লীগের শ্লোগান হিসেবে ট্যাগ করে এমনভাবে অপপ্রচার করেছে, যাতে সেটা বাংলাদেশ-সংশ্লিষ্ট কোনো কাজে ব্যবহৃত না হতে পারে। উলটা দোষ চাপায় আওয়ামী লীগের ওপরই "আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুকে দলীয় সম্পদ বানিয়ে ফেলেছে" বলে। ফ্যাক্ট হলো, এই শ্লোগানটা আওয়ামী লীগের কপিরাইটেড না, 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' বললে আওয়ামী লীগ এসে রয়ালটি দাবি করে না।

আমি জানি, এই শ্লোগান উচ্চারণ না করে সেটাকে বিকৃত করে বলা বা তাচ্ছিল্যের স্বরে ‌ব্যঙ্গ করার বহু মানুষ উপস্থিত ছিল সেখানে।

এটা ফ্যাক্ট। এই দেশে স্বাধীনতা বিরোধিরা ভোট পেয়ে ক্ষমতায় বসে। জামাতি-বামাতিতে ভরপুর। সুতরাং জাতীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠানেও তারা থাকবে, এটা অস্বাভাবিক কিছু না। পত্রিকায় দেখলাম, ইউনিভার্সিটির ছাত্রও প্যাকেট নিয়া ভাগছে। কিন্তু এই ছাগুগোষ্ঠী জাতীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে থাকার আশঙ্কায় 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' শ্লোগান দেয়া যাবে না, এটা কোনো যুক্তি না।

যেমন এই একই আয়োজনে প্রত্যেকের জন্য ছিল একটি ক্যাপ, যাতে আঁকা ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। শুধু এ কারণে এই ক্যাপ অনেকে টোকাই বা হকারদেরকে দিয়ে গেছে শুনেছি। তাতে অবশ্য 'ব্ঙ্গবন্ধু' নামের প্রতীকের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় না; কিন্তু এই কথাগুলো জনে জনে ছড়িয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

উপরিউক্ত কারণেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিযুক্ত ক্যাপ পরিত্যাগ করার কোনো যুক্তি নাই। যেখানে বাংলাদেশ-সংশ্লিষ্ট কিছু থাকবে, সেখানে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি খুবই স্বাভাবিক। কিছু জারজ সেটাকে অসন্মান করতে পারে, এই ভয়ে তাকে লুকিয়ে রাখার কোনো মানে নাই। জনে জনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির কাজটা ছাগুরা যেকোনো মূল্যেই করবে। সচেতন মানুষের উচিত ছাগুদের সেই কাজের বিরুদ্ধে বলা, সেটার ভয়ে কুঁকড়ে থাকা নয়।

আরও মর্মান্তিক হল, এই বিপুল জনতা, যারা চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যেও সমস্বরে 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি' গেয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়লো, যাবার সময় তাদের হাতে থাকা হাজার হাজার জাতীয় পতাকা তারা ছুঁড়ে ফেলে গেল প্যারেড স্কোয়ারে।

এটাও আগের কেস। জামাতি-বামাতি-অসচেতনকে এক ধাক্কায় সচেতন করে তোলা কারো পক্ষে সম্ভব না। পতাকার কিছু ছবি দেখে মনে হয়েছে, সেগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবেই করা হয়েছে।

"ক্যান, আপনার ব্যাংক তো 'সোনার গান' গাওয়ার লাইগা হাসিনারে টাকা দিছে। এহন নাই কন ক্যান?'
মুহূর্তেই আমার সারা গায়ে ঘৃণা এবং ক্রোধ ছড়িয়ে গেল। নিজের টাকা-গোনা বন্ধ রেখে তাকে বললাম, "জাতীয় সংগীত গাওয়ার আয়োজনের জন্য টাকা দিয়েছে"।

ক্রোধ একটু সংবরণ করে ওই লোককে আর ২টা প্রশ্ন ঠাণ্ডা মাথায় করলেই বুঝতেন সে ছাগু। হাসিনা ইসলামী ব্যাঙ্কের টাকা নিলে সেটা হাসিনার প্রবলেম, সেটা জাতীয় সঙ্গীতকে 'সোনা(যৌনাঙ্গ অর্থে)র গান' বলা জায়েজ করে না। আপনি আরো বলতে পারতেন, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য ইসলামী ব্যাঙ্কের টাকা ব্যবহার করা হবে না।

আপনার পুরো পোস্টেই দ্বিধা আর দ্বিধা। যেমন,

তারপর থেকে দ্বিধান্বিত একটি জিজ্ঞাসায় সারাপথ তাড়িত হয়েছি। আসলে আমরা 'জাতীয় পতাকা-জাতীয় সংগীত' এসবের উপযুক্ত হয়েছি তো !

এমনই দ্বিধা যে, আমরা জাতীয় সঙ্গীতের উপযুক্ত হয়েছি কিনা, এই নাবালক প্রশ্নও মনকে আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরে আছে। এই চিন্তাধারা 'দেশ স্বাধীন হয়ে কি পেলুম' বা 'আমরা স্বাধীন হতে পেরেছি কই' টাইপ। এরকম দ্বিধা সংক্রামক। সুতরাং দ্বিধা ঝেড়ে ফেলুন। যা ঠিক, তার পক্ষে বলুন। ছাগুরা কিভাবে নাক সিঁটকাবে, বা সমালোচনা করবে, সেটা নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়াই ভালো। আপনার দ্বিধা নয়, আত্মবিশ্বাসই ছড়াক পাঠকের মাঝে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

মাহবুবুল হক এর ছবি

আপনার প্রতিজ্ঞা ও তেজকে অভিনন্দন। আমার পোস্টটি থেকে দ্বিধাটুকু ছেঁটে ফেলতে পারলে সবচেয়ে সুখী হতাম আমিই। কিন্তু বাস্তবতা হল দেশে ৭১-এর প্রত্যক্ষ রাজাকারের চেয়ে তাদের বংশবদ ৪ গুণ বেশি, একথা সবাই বলেন। আর জাতীয় সঙ্গীত ও পতাকার প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব বিগত বছরগুলোতে ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে, এটাও ঠিক। সুতরাং 'কিছু ছাগু অপকর্মগুলো করছে' এমন সরল ভাবনা আমাদের ক্ষতি করবে আরো। আপদ কখন বিপদ হয় সেটা বুঝতে না পারলে ক্ষতি আমাদেরই। উপযুক্ততার প্রশ্নটি হয়ত আবেগী উচ্চারণ (ওইটুকু রাখতে চাই বলেই ব্লগে লিখি), কিন্তু ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও ভারতের স্বাধীনতা প্রশ্নে রবীন্দ্রনাথ-গান্ধী দূরত্বও একই কারণে হয়েছিলো। স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতি হাজার বছর ধরে যে ত্যাগ স্বীকার করেছে তা তার উপযুক্ততার একটা শর্ত পূরন করে, সব নয়। ধন্যবাদ ।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

কিন্তু বাস্তবতা হল দেশে ৭১-এর প্রত্যক্ষ রাজাকারের চেয়ে তাদের বংশবদ ৪ গুণ বেশি, একথা সবাই বলেন।

এজন্যই দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে দেয়া দরকার। 'সবাই বলা' কথার অনেক কিছুই সঠিক না, মুখে মুখে রটে যাওয়া প্রোপাগান্ডা। দ্বিধা সেই প্রোপাগান্ডা প্রতিরোধ করে না।

আর জাতীয় সঙ্গীত ও পতাকার প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব বিগত বছরগুলোতে ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে, এটাও ঠিক।

এটা সরলীকৃত স্টেটমেন্ট মনে হচ্ছে, এর ভিত্তি ও টাইমলাইন স্পষ্ট না।

সুতরাং 'কিছু ছাগু অপকর্মগুলো করছে' এমন সরল ভাবনা আমাদের ক্ষতি করবে আরো।

ছাগু আর অসচেতন ছাড়া আর কারা অপকর্মগুলো করেছে বলে আপনার ধারণা?

স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতি হাজার বছর ধরে যে ত্যাগ স্বীকার করেছে তা তার উপযুক্ততার একটা শর্ত পূরন করে, সব নয়।

বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাস সম্পর্কে আমার ধারণা অনেক কম। ইতিহাস যতোটুকু জানি, তাতে বাংলা বরং বিদেশিদের দ্বারাই শাসিত হয়েছে বেশিরভাগ সময়। ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের বাইরে 'হাজার বছর ধরে' স্বাধীনতার জন্য আমরা কি ত্যাগ স্বীকার করেছি, জানা নাই। সুতরাং 'সুবর্ণময়' অতীতের তুলনায় এখন যে পরিস্থিতি রসাতলে গিয়েছে, এমনটাও ভাবতে পারছি না।

১৯৭৫ এর পরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ইতিহাসবিকৃতি করা হয়েছে। এন্টি-বাংলাদেশ শক্তিশালী মিডিয়া এখনো পুরোমাত্রায় সক্রিয়। এর মধ্যে লোকজনকে সচেতন করার জন্য আত্মবিশ্বাস দরকার, হা-হুতাশ কোনো কাজে আসবে না। এই সচেতন করার একটা উদাহরণ, সাম্প্রতিক খেলার মাঠে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিনদেশি পতাকার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। ব্লগে এটা নিয়ে সরাসরি অবস্থান নেয়া হয়েছে, সারা বাংলাদেশে এটা নিয়ে পোস্টারিং হয়েছে, বিসিবিও উদ্যোগ নিয়েছে। বাংপাকিদের হাতে পাকি পতাকা দেখে শুধু হা-হুতাশ করলে এটা সম্ভব হতো না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

১৯৭৫ এর পরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ইতিহাসবিকৃতি করা হয়েছে। এন্টি-বাংলাদেশ শক্তিশালী মিডিয়া এখনো পুরোমাত্রায় সক্রিয়। এর মধ্যে লোকজনকে সচেতন করার জন্য আত্মবিশ্বাস দরকার, হা-হুতাশ কোনো কাজে আসবে না। এই সচেতন করার একটা উদাহরণ, সাম্প্রতিক খেলার মাঠে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিনদেশি পতাকার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। ব্লগে এটা নিয়ে সরাসরি অবস্থান নেয়া হয়েছে, সারা বাংলাদেশে এটা নিয়ে পোস্টারিং হয়েছে, বিসিবিও উদ্যোগ নিয়েছে। বাংপাকিদের হাতে পাকি পতাকা দেখে শুধু হা-হুতাশ করলে এটা সম্ভব হতো না।

চলুক চলুক চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মাহবুবুল হক এর ছবি

এটা সরলীকৃত স্টেটমেন্ট মনে হচ্ছে, এর ভিত্তিও টাইমলাইন স্পষ্ট না।

আপনি নিজেই এরকম প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বের কয়েকটি উদাহরণ দিয়েছেন। আরো অনেক হতে পারে। এর ভিত্তি আরো অনেক দূর প্রসারিত, ধরা যাক মাদরাসার কথা। কটা মাদরাসায় জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় ? তার মানে দেশের অন্তুত ১৫ লাখ শিশু সরাসরি জাতীয় সংগীত ও পতাকা থেকে দূরে আছে। শুধু তাই না তারা এটাকে পূণ্য বলে মনেও করে না। তা ছাড়া জাতীয় পতাকা উত্তোলন বা প্রদর্শনের জন্য কোন মনিটরিং নেই।

ছাগু আর অসচেতন ছাড়া আর কারা অপকর্মগুলো করেছে বলে আপনার ধারণা?

আপনি নিজেই 'অসচেতন'দেরকে যোগ করেছেন। আর আমি যোগ করলাম 'অপসচেতন'দেরকে। মানে জ্ঞানপাপী দেরকে ।

ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের বাইরে 'হাজার বছর ধরে' স্বাধীনতার জন্য আমরা কি ত্যাগ স্বীকার করেছি, জানা নাই

ইতিহাসে বাঙালি কোনকালেই স্বাধীন ছিল না। কেবল রাজা বিজয় সিংহ আর গোপালের কিছু সময় আমাদের ছিল। কিন্তু সাঁওতাল-গারো-হাজং-কৈবর্তরা কখনও বিন লড়াইয়ে এ মাটিকে পরভোগ্যা হতে দেয়নি। তাদের লড়াই আমাদেরই লড়াই। তারা আমাদেরই পূর্বপুরুষ। হাজার বছর ধরে একের পর এক লড়াই চলেছে। ৭১ এ এসে আমরা চূড়ান্তভাবে জয়ী হয়েছি। কিন্তু লড়াই এখনও জারি আছে।

আমার পোস্টে কোন দ্বিধা বা হতাশা নেই। এটা কেবল বাস্তবতাকে উদ্ধৃত করার কারণে মনে হয়েছে। আমি শুধু বোঝাতে চেয়েছি, জাতীয় ঐক্য ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সবরকম দুর্বলতা বা ক্ষতিকারক উপদানকে আমরা চিহ্নিত করছি তো ?

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ফারজানা ব্রাউনিয়া চিৎকার করে 'জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু' শ্লোগান উপস্থিত জনতার মধ্যে ছুঁড়ে দিয়ে এর ষোলকলা পূর্ণ করেন । আমি জানি, এই শ্লোগান উচ্চারণ না করে সেটাকে বিকৃত করে বলা বা তাচ্ছিল্যের স্বরে ‌ব্যঙ্গ করার বহু মানুষ উপস্থিত ছিল সেখানে।

ষোল কলার আগের পনের কলা কিভাবে পূর্ণ হল সেটা অবশ্য বলেন নি, সেটা নিশ্চয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। বিকৃত মনস্ক মানুষের কথা বিবেচনা করে "জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু" শ্লোগান দেয়া যাবে না, এই যদি হয় আপনার বিধান, তাহলে আপনার মনোভাব নিয়েও গভীরভাবে ভাবতে হবে।

মাহবুবুল হক এর ছবি

জনাব আবদুল্লাহ
আমি মনে করি না জাতীয় সংগীত গাওয়ায় বিশ্বরেকর্ড করতে সবার ক্যাপে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপানো বা মঞ্চে শেখ হাসিনা বা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি লাগানো খুব দরকার ছিল। এর একটা সর্বদলীয় সর্বসাধারণসুলভ চারিত্র্য রক্ষা করা যেত। নির্বাহী আদেশ বা ক্ষমতা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়োজন নেই। ২৫ বছর বঙ্গবন্ধুর নামোচ্চারণ করা যায় নি কোথাও কিন্তু তাতে বঙ্গবন্ধু প্রতীকের মর্যাদা বিন্দুমাত্র কমেনি। যদি আওয়ামী লীগ সঠিক কাজ করে দেশের মানুষের ভাগ্য ফেরাতে পারে তাহলে কোর্টের আদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে টানানোর দরকার হবে না। আর এজন্য আপনাকে বা আমাকে বিতর্কেও জড়াতে হবে না কারো সাথে।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

যদি আওয়ামী লীগ সঠিক কাজ করে দেশের মানুষের ভাগ্য ফেরাতে পারে তাহলে কোর্টের আদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে টানানোর দরকার হবে না।

আর যদি দল আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ভাগ্য ফেরাতে না পারে, তাহলে বঙ্গবন্ধুর কি হবে? এ দেশের অনেকেই বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে সমার্থক বলে মনে করে, আপনিও হয়তো সেই দলে। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান দেখানো রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব, বিএনপি যদি সেটা না করে তো সেটা তাদের ব্যর্থতা, আওয়ামী লীগকেও কেন সেই একই ব্যর্থতা পালন করতে হবে? আপনি ক্যাপে বঙ্গবন্ধুর ছবি সহজভাবে নিতে পারছেন না, কারন অনেকের মতোই আপনিও বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামী লীগের সম্পত্তি বলে মনে করছেন।

দীনহিন এর ছবি

আপনি ক্যাপে বঙ্গবন্ধুর ছবি সহজভাবে নিতে পারছেন না, কারন অনেকের মতোই আপনিও বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামী লীগের সম্পত্তি বলে মনে করছেন।

চলুক চলুক

আর যদি দল আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ভাগ্য ফেরাতে না পারে, তাহলে বঙ্গবন্ধুর কি হবে?

আমিও ঠিক এই প্রশ্নটিই করতে যাচ্ছিলাম!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

মাহবুবুল হক এর ছবি

আবদুল্লাহ এ.এম.
৭১ এর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ছিলেন আওয়ামী লীগের, ৭১এর পর প্রথমে বাংলাদেশের জনগণের পরে দলের কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সেই উচ্চতায় থাকতে দেয়নি আওয়ামী লীগের কতিপয় সুবিধাবাদী নেতা। সে ইতিহাস থাক। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়ার সমীকরণটি বুঝতে না পারলে, সেই প্রত্যাশ পুরন করতে না পারলে আমাদের রাজনীতিতে তার বিরোধী শক্তির আসনই পাকাপোক্ত হয়। আর সেক্ষেত্রে বিএনপি-জামাত-জাপা বঙ্গবন্ধু বা স্বাধীনতার ইতিহাসকে যে কোন দিকে নেবে এটা জলের মত পরিষ্কার। আমাদের দেশের বাস্তবতায়, এখনও এমন রাজনীতি নেই যে সবদল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অকুণ্ঠ থাকবে। তাই এখনও, খোদ স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দানকারী দল ক্ষমতায় থাকতেও এদেশে শহীদ মিনার ভাঙচুর হয়, বুদ্ধিজীবী দিবস বা শহীদ দিবসের অসাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠানকে 'বেশরিয়তী' বলে ঘোষণা দেয়া হয়। সাম্প্রদায়িকতার বিষনিঃশ্বাস ছাই করে ফেলে রামু-উখিয়া-সাতক্ষীরা-লালমনিরাহাট-যশোর আরো কত জনপদ !! তারপরও আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, কিন্তু আমি পারি না। আর যে ২০ বছর বঙ্গবন্ধুকে নির্বাসিত করা হয়েছিল সব প্রকাশ্য আয়োজন থেকে, টিভিতে-পত্রিকায়-সিনেমায়-পোস্টারে-বিলবোর্ডে কোথাও ছিলেন না বঙ্গবন্ধু, ছিলেন কেবল মানুষের মনে ; তখনকার সেই বঙ্গবন্ধুই ছিলেন সবচেয়ে শক্তিশালী। আজ তো পোস্টারের কোণায় দুই-বাই-দুই ইঞ্চি বঙ্গবন্ধুকে ঠেলে দিয়ে ১২-বাই-১২ মাপের ছিঁচকে মাস্তানের দোয়া প্রার্থনার ছবি ও বাণীতে আমাদের জাতির পিতার প্রতি ভালবাসা প্রকাশিত। এটা যদি আপনার কাছে তৃপ্তিদায়ক হয় তো আমার কিছু বলার নেই। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরপরই সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি অফিসগুলোতে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ভাংচুর করা হয়। আজকের বাস্তবতা তার চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। তাই আমি শুধু সেই বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চেয়েছিলাম যাকে মানুষই উপরে বসাবে, টেনে নামানোর মত কেউ থাকবেই না। এই চাওয়াটা বোধ হয় একটু বেশি হয়ে গেছে।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

দীনহিন এর ছবি

এর একটা সর্বদলীয় সর্বসাধারণসুলভ চারিত্র্য রক্ষা করা যেত।

সর্বদলীয় চরিত্র থাকা দরকার, এইটা ঠিক, কিন্তু তার জন্য বঙ্গবন্ধুকে ছেঁটে ফেলতে হবে??? কি আজব!!!
জানেন তো বাংলাদেশের অনেক সাম্প্রদায়িক মানুষ এমনকি জাতীয় সঙ্গীতকে বদলে দিতে চায়, তো তাদের অ্যাকোমোডেট করার জন্য জাতীয় সঙ্গীতকেও বদলে দিতে হবে, কি বলেন???

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

মাহবুবুল হক এর ছবি

দীনহিন
আপনার কথা ঠিক। তবে স্বাধীনতার পর থেকেই বঙ্গবন্ধু বা স্বাধীনতার ইতিহাস যেসব অপপ্রচারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেভাবে এটাকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে তেমনটি আমাদের জাতীয় সংগীত নিয়ে হয়নি। কিছু কথা উঠেছে এর সুরকার গগন হরকরার স্বীকৃতি নিয়ে; সেটা স্বাস্থ্যসম্মত বিতর্কই আমি বলবো। আর এ গানটিকে জাতীয় সংগীত করার যৌক্তিকতা নিয়ে কয়েকজন জ্ঞানপাপী মৌ-লোভী কথা তুললেও তা হালে পানি পায়নি।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

দীনহিন এর ছবি

তবে স্বাধীনতার পর থেকেই বঙ্গবন্ধু বা স্বাধীনতার ইতিহাস যেসব অপপ্রচারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেভাবে এটাকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে তেমনটি আমাদের জাতীয় সংগীত নিয়ে হয়নি।

ঠিক কি বোঝাতে চাইলেন? যেহেতু বঙ্গবন্ধুকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে, তাই তার ছবি মঞ্চে থাকা উচিত ছিল না ইভেন্টটির সর্বদলীয় চরিত্র রক্ষার্থে? মানে, বঙ্গবন্ধু যেহেতু বিতর্কিত হয়েই গেছেন, তাই ছেঁটে ফেলাই ছিল সমীচীন, অন্যদিকে জাতীয় সঙ্গীতকে যেহেতু কিছু 'মৌ-লোভী' ছাড়া অন্য কেউ বিতর্কিত করেনি (যেমন, বিএনপি, জাপা ইত্যাদি), তাই একে ছেঁটে ফেলার দরকার নেই? এমনটাই তো বোঝাতে চাইলেন, তাই না?
আশ্চর্য হলেও, আবারও বলতে হচ্ছে 'আজব'!!! অদ্ভুত থিয়োরি কিনা বলুন?? মুজিব অপপ্রচারের শিকার বলে তাকে ছেঁটে ফেলতে হবে, যদিও জাতীয় সঙ্গীত 'ছেঁটে' ফেলার দরকার নেই, যেহেতু এটি অতটা অপপ্রচারের শিকার হয়নি- সত্যি অদ্ভুত!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

মাহবুবুল হক এর ছবি

দীনহিন
আপনি যেভাবে আমার কথার কাল্পনিক ব্যাখ্যা দাঁড় করাচ্ছেন তাতে মূল কথাই হারিয়ে যাচ্ছে। আমি আমার মূল বক্তব্য জনাব আবদুল্লাহর কমেন্টের জবাবে (২২) দিয়েছি। এটা শুকনো বিতর্কের বিষয় নয়। আপনি অবলীলায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্কের সাথে জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্ককে এক করে ফেললেন। তাই লিখলাম। বঙ্গবন্ধু বা জাতীয় সংগীত কোনটাই বিতর্কিত হওয়া উচিত নয় বা ছেঁটে ফেলার কথা নয়। আমি শুধু বাস্তবতা বোঝাতে চেয়েছিলাম। সেটা যদি আপনি বুঝতে পারেন তাহলেই যথেষ্ট।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

দীনহিন এর ছবি

বঙ্গবন্ধু বা জাতীয় সংগীত কোনটাই বিতর্কিত হওয়া উচিত নয় বা ছেঁটে ফেলার কথা নয়।

তাহলে নীচের কথাটি কেন বলেছিলেন?

আমি মনে করি না জাতীয় সংগীত গাওয়ায় বিশ্বরেকর্ড করতে সবার ক্যাপে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপানো বা মঞ্চে শেখ হাসিনা বা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি লাগানো খুব দরকার ছিল।

'আমি শুধু বাস্তবতা বোঝাতে চেয়েছিলাম।'

কথাটির ব্যাখ্যা করবেন প্লিজ? মানে, বাস্তবতা কাকে বলে এবং কি কি শর্ত পালন করতে হয়, বাস্তবসম্মত হতে হলে? বাস্তবতা আর আপোষকামিতার মধ্যে পার্থক্যাটাই বা কি? প্লিজ!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

মাহবুবুল হক এর ছবি

ক্ষেপলেন নাকি !! বাস্তবতার সংজ্ঞার্থ কী তা আপনাকে বোঝানো আমার কর্ম নয়। বাস্তবতা বুঝতে বিদ্যা লাগে না, লাগে কাণ্ডজ্ঞান ; সব জ্ঞানের সেরা জ্ঞান। ক্যাপে ছবি ছাপিয়ে বা দেয়ালে টেনে তুলে যে বঙ্গবন্ধুকে খাড়া করবেন সেটা বাস্তবতা আর মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে যে বঙ্গবন্ধু সবার হৃদয়ে ছিল তাকে ফিরে পাবার আকুতিটা স্বপ্ন। বাকিটা আপনি যেমন বোঝেন। আপোষকামিতার কথা বলছেন ? সেটাও তো বাস্তবতার ভিন্নরূপ। বিপুল বৈভবের মালিক (অর্ধশিক্ষিত-মাস্তান-চাঁদাবাজ) রাজনৈতিক নেতার পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে ছাত্রদেরকে সুনাগরিক হওয়ার জ্ঞান দেয়া হল বাস্তবতা আর এসব অপমান সহ্য করেও মাস শেষে তার কাছ থেকে হাত কচলিয়ে মোটা টাকা বেতন নেয়া আপোষকামিতা। প্রতিষ্ঠার লোভে মানুষ আপোষকামী হয়, আপোষকামিতায় আদর্শের বেচাকেনা হয় না । ভাল থাকুন।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

দীনহিন এর ছবি

বাস্তবতা বুঝতে বিদ্যা লাগে না, লাগে কাণ্ডজ্ঞান ; সব জ্ঞানের সেরা জ্ঞান।

তাহলে 'কান্ডজ্ঞান থেকেই আপনার মনে হল, "জাতীয় সংগীত গাওয়ায় বিশ্বরেকর্ড করতে সবার ক্যাপে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপানো'" বা, "বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি লাগানো খুব দরকার ছিল" না? আবার এই 'কান্ডজ্ঞান' থেকেই আপনার মনে হল, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি বাদ দিলেই ইভেন্টটির "একটা সর্বদলীয় সর্বসাধারণসুলভ চারিত্র্য রক্ষা করা যেত"??

যাহোক, ভাই, মানছি, আমার সত্যি কান্ডজ্ঞান নেই; যদি থাকত, তাহলে কান্ডজ্ঞানের মাজেজা এদ্দিনে হলেও বুঝতাম!!

আর অনেক বিতর্ক করেছি (আপনার ভাষায়, ক্ষ্যাপার মত), কিছু মনে করবেন না, কান্ডজ্ঞানহারা লোকেরা তো কত কিছুই করে! আর আপনিও ভাল থাকুন।

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

পোষ্ট পড়ে মন যতটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। অছ্যুৎ বলাই-এর কমেন্ট পড়ে মন ঠিক ততটাই ভাল হয়ে গেল।

অন্ধবিন্দু এর ছবি

মাহবুবুল,
আপনিও কিন্তু সেই দ্বিধান্বিতই থেকে গেলেন !
ভালো এবং সঠিক কাজটি করুন।।।। সেটাই দেশপ্রেম।।।।

শুভ কামনা।

মাহবুবুল হক এর ছবি

অন্ধবিন্দু
আপনি দ্বিধাহীন থাকুন, আমি একটু সংশয়ী থাকতে চাই।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।