বিমানের লোকসানের পরিণতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে এর কর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হলে সবাইকে চাকরি হারাতে হবে, তাই লাভে আনার কোনো বিকল্প নেই।
Published : 27 Mar 2014, 12:54 PM
বৃহস্পতিবার বিমানের চতুর্থ বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ ‘রাঙা প্রভাত’ সংযোজন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “একটা পর্যায় এসেছিল, বিমান বন্ধ করে দেয়ার পর্যায়। তাই যদি লাভজনক না হয় বিমান টিকবেই না। বন্ধ হয়ে যাবে।
“আর বন্ধ হয়ে গেলে কি হবে- আপনারা ভালো করেই জানেন। সকলকে চাকরি হারাতে হবে। সকলকে বসে যেতে হবে। সে কথা মনে রেখে বিমান যাতে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় সেজন্য যথাযথভাবে আপনারা কাজ করবেন, সেটাই আমরা চাই।”
সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বাণিজ্যিকভাবে বিমানকে লাভজনক করতে বিমানের নিজস্ব কার্গো ব্যবস্থা থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের নিজেদের কার্গো নেই। বিমানকে লাভজনক করতে হলে কিছু কার্গো বিমান কেনা দরকার। বিদেশ থেকে আর ভাড়া করতে হবে না।”
যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “নতুন উড়োজাহাজ নিয়ে নতুন প্রেরণায় বিমান নতুন নতুন গন্তব্যে সার্ভিস সম্প্রসারণ করবে। আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে দিচ্ছি। কিন্তু সেবার মানটা বাড়িয়ে বিমানের নিরাপত্তার দিকটা আরো শক্তিশালী করা দরকার।”
বাংলাদেশের বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানকে নিয়মিত ঘটনা হিসাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা নিয়মিতই ছিলো। বরং এখন বিমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক উন্নতমানের হয়েছে বলে বিষয়টা ধরা পড়ছে। এটা বাস্তবতা।”
অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান যেনো ভালো ভাবে চলে সে ব্যবস্থা নেয়ারও এবং দেশে আসা যাত্রীদের মালপত্র দ্রুত খালাস ও তারা যেনো দ্রুত বিমানবন্দর থেকে বেড়িয়ে যেতে পারে সে দিকটায় বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, “গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের ক্ষেত্রে একটা অভিযোগ রয়েই গেছে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের অসুবিধা থাকলে এগোনো যাবে না। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের যে অসুবিধাগুলো রয়ে গেছে- সেগুলো কঠোরভাবে দেখতে হবে।”
চুক্তি অনুযায়ী বোয়িং কোম্পানি এ পর্যন্ত চারটি ৭৭৭-৩০০ইআর উড়োজাহাজ বিমানের কাছে হস্তান্তর করেছে। অবশিষ্ট দু’টি ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ ২০১৫ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে হস্তান্তর করবে। ইতোমধ্যে উড়োজাহাজ দু’টির জন্য প্রি-ডেলিভারি পেমেন্ট বাবদ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চুক্তি অনুযায়ী চারটি ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজ আগামী ২০১৯ ও ২০২০ সালে হস্তান্তরের কথা রয়েছে। এই উড়োজাহাজগুলোর ডেলিভারি ২০১৫-১৬ সালে অগ্রগামী করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল।”
বিমানের বহরে সংযুক্ত অন্য তিনটি ট্রিপল সেভেন হলো, পালকী, অরুণ আলো এবং আকাশ প্রদীপ।
যাত্রীসেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৩২টি বোর্ডিং ব্রিজসহ তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নির্মাণেরও উদ্যোগ এবং রেলস্টেশনের সঙ্গে বিমানবন্দরে যাতায়াতের আন্ডারপাস তৈরি করার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
ইজিপ্ট এয়ার থেকে দ্বিতীয় উড়োজাহাজ আগামী মাসে বিমান বহরে যোগ হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিমানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেভিন স্টিল জানান, এই দুটি উড়োজাহাজ ড্রাই লিজে আনা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব খুরশীদ আলম চৌধুরী এবং বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জন ডে ড্যানি লুইজ, বিমানের পরিচালনা পর্ষদের এমডি জামাল উদ্দিন প্রমুখ।
পরে প্রধানমন্ত্রী বিমান সংযোজন উপলক্ষে কেক কাটেন এবং ভিআইপি টারমার্কে দাঁড়ানো বিমান দুটি ঘুরে দেখেন।