somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ

০২ রা মে, ২০১৩ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তনু বিছানায় শুয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে চাঁদটার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে আছে। এত সুন্দর চাঁদ, কি সুন্দর আলো ছড়াচ্ছে, কিছুক্ষন পর পর কালো মেঘ চাঁদটাকে ঢেকে দিচ্ছে। আনমনা হয়ে যায় তনু, নিজের অজান্তেই হাত বাড়িয়ে ছোট্ট বালিশটাকে ছোঁয়, চোখের কোনটা যেন একটু ভিজে উঠে, আরেকটা হাত বাড়িয়ে অন্য পাশে নীলকে ছোঁয় –
ঃ “কি হল – ঘুমাওনি ?” পাশ ফিরে নীল জানতে চায়।
ঃ “ঘুম আসছে না” –
তনুর গলাটা একটু ভেজা, এই স্বর নীল চিনে। তাই কোন কথা না বলে তনুকে কাছে টেনে নেয়, কপালে ছোট্ট একটা চুমু খায়, ওর চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। ও জানে তনু এখন কাঁদবে, চেষ্টা করবে যাতে নীল ওর কান্নাটা টের না পায়, ওর শরীর কান্নাটাকে চেপে রাখতে গিয়ে বার বার কেঁপে উঠবে, নীল সব বুঝতে পারে, তবু না বোঝার ভান করে চুপ করে থাকে। তনু ঘুমিয়ে পরলে একসময় চেষ্টা করে ঘুমানোর, সাধারনত এমন রাতগুলোতে ওর আর ঘুম আসে না। কিছুক্ষণ চেষ্টার পর হাল ছেড়ে দেয়, ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদটার দিকে তাকিয়ে থাকে, একসময় টের পায় ও আর কিছুই দেখছে না, না চাঁদ, না তার আলো...।
বিয়ের মাস দু’য়েক পরই অফিসের কাজে নীল তখন ব্যাংককে, এক বছরের ট্রেনিংয়ে। এর মাঝে খবর পায় তনুর বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, একমাত্র সন্তান হওয়ায় তনু খুব ছুটাছুটির মাঝে তখন। রোজ রাতে কথা বলতো তনুর সাথে, মাঝে মাঝে রাতে তনু হাসপাতালে থাকতো, রাতে সব রোগীরা যখন ঘুমিয়ে পড়তো, তনু হাসপাতালের করিডরে হাঁটত আর কথা বলত। এই সময়েই তনু একদিন নীল কে জানায়, ওর শরীর ভাল যাচ্ছে না, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। হেসে নীল জানতে চেয়েছিল, ‘ কি, কোন সুখবর আছে নাকি’? তনু বলেছিল, ‘ দূর, ওসব কিছু না, এত টেনশান, ছুটোছুটি করতে হচ্ছে, তাই এমন লাগছে’।
কিন্তু তার ক’দিন পরেই তনু টের পায় শারীরিক অস্বস্তিটা বাড়ছে। নীল প্রতি রাতে ফোন করলেই তাকে ডাক্তারের কাছে যেতে বলে। যাব, যাচ্ছি বলে তনু খুব আলসেমি করে। নীলের মনে পরে খুব রেগে গিয়ে যেদিন রাতে ফোন রেখে দেয়। পরদিন দুপুরে তনু তাকে ফোন করে বলে –
ঃ ‘তুমি বাবা হতে যাচ্ছ’ – খুব উত্তেজিত স্বর তনুর।
ঃ ‘সত্যি নাকি’ ?- ক’দিন ধরে নীলের মনে হচ্ছিল এমন কথাই সে শুনবে। কেমন গর্বিত মনে হয় নিজেকে।
তনু খুব খুশি খুশি গলায় বলে, ‘জানো ডাক্তার বলেছে তোমার বাবুর বয়স দু’মাস, কিন্তু আমার হিসাব মত দেড় মাস’।
ঃ ‘তুমি একদম দিন তারিখ সব জানো দেখছি’ - খুব মজা লাগে নীলের।
ঃ ‘জানব না’- দুষ্টুমির হাসি হাসে তনু।
ঃ ‘দেখতে হবে না কার ছেলে? ওর growth তো ভাল হবেই’ – গর্বিত বাবার ভঙ্গিতে বলে নীল।
ঃ ‘হুম! একদম বাবার মত’ – লাজুক হাসে তনু।
অনেক কষ্ট করে নীল এক মাসের ছুটি নিয়ে বাংলাদেশে আসে। সামনেই পহেলা বৈশাখ, এমন দিনে তনুকে ছাড়া থাকতে একটুও ইচ্ছে করে না। এর মাঝেই তনুর শরীর খুব খারাপ হয়ে গেছে। কোন কিছুই মুখে তুলতে পারে না বেচারি। নীলের মা ভাবে বাবার অসুস্থতার কথা ভেবেই বুঝি তনুর এই অবস্থা। ছেলের বউ কে নিজের মেয়ের মতন দেখেন তিনি। অনেক লক্ষ্মী মেয়ে তনু, শাশুড়ির সাথে খুব ভাব তার। ডায়নিং টেবিলে খেতে বসে নীল দেখে তনু ডাল দিয়ে ভাত চটকাচ্ছে, কোন তরকারিই পাতে তুলছে না। নীল তার মা-কে ইশারা করে তনুর প্লেটে মাংস তুলে দিতে। তনু করুনার চোখে নীলের দিকে তাকায়। নীল রাগী চোখে বুঝিয়ে দেয়- সবটুকু ভাত খেতে হবে। তনুর ভেতরটায় একটা ভাললাগায় ভরে যায়, শুধু চোখের ভাসায় বুঝিয়ে দেয়া যায় কত কিছু। নীলের চোখ খুব সুন্দর, শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। ওর চোখের দিকে তাকালেই তনু বুঝতে পারে ও কি চায়। এই যেমন, এখন বুঝতে পারছে প্লেটের সবটুকু ভাত না খেলে নীল ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবে।

দিনগুলো যেন হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছিল। সেবার পহেলা বৈশাখের দিন ছবি তোলার সময় নীল তনুর কাঁধে আলতো ছুঁয়ে বলেছিল, “এটা আমাদের তিন জনের প্রথম ছবি”।
মাঝে মাঝেই তনু সেই ছবিটা বের করে দেখে। এই একটাই ছবি আছে ওদের “তিনজনের”।

ভার্সিটি থেকে ফিরেই আনন্দে তনুর লাফাতে ইচ্ছে করছে। ওর স্বপ্ন যেন এখন হাতের মুঠোয়। ওর রিসার্চ পেপারটা ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া একসেপ্ট করেছে। ওরা চাচ্ছে বাকি কাজটুকু তনু ওখানে গিয়ে করুক, সব কাগজ এসে গেছে। কত কষ্ট, কত পরিশ্রম করতে হয়েছে ওকে, রাতদিন বই ঘাটাঘাটি, online browse করা, স্যার দের পিছনে দৌড়ানো ...।
নীল খবরটা শুনে খুব আনন্দিত হয়, ও জানে তনু কত পরিশ্রম করেছে এই research পেপারটার জন্য, কত স্বপ্ন দেখেছে, অবশেষে সুযোগটা তনু পেল।

সেদিন রাতে আনন্দে তনুর ঘুম আসছিল না, কিভাবে যাবে, কি করবে এসব ভাবতে গিয়ে তনুর কপাল কুঁচকে যায়। শরীরের এ অবস্থায় ও যাবে কি করে? পেটে হাত দিতেই ও যেন “স্বপ্ন” কে টের পায়। তনুর মনে হয় ওর অনাগত সন্তানটা ছেলেই হবে, তাই তার নামও ঠিক করে ফেলেছে। নীলকে প্রশ্ন করতেই ও অবাক চোখে তনুর দিকে তাকায়। ওর মাথাটা হঠাৎ করে ফাঁকা হয়ে যায়। সত্যি তো তনু কি করে যাবে ? তবে কি ...... ?

অবশেষে সিদান্তটা নীলকেই নিতে হয়, শুধুই তনুকে খুশি করতে। যদিও তনুকে ও সেটা বুঝতে দেয়নি, যুক্তি তর্ক করে ও তনুকে বুঝিয়েছে এসময় এটাই সঠিক সমাধান।


Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৩ রাত ২:৫০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×