somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

স্বাধীনতার আলো ও ধর্মান্ধ রাজনীতি

২৯ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বাধীনতার আলো ও ধর্মান্ধ রাজনীতি
ফকির ইলিয়াস
_________________________________________________

বাংলাদেশে একাত্তরের পরাজিত শক্তি নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একাত্তরে গণহত্যাসহ সাত ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামাতে ইসলামীকে চিরতরে নিষিদ্ধ করার আবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনে সে সময়কার জামাতের সহযোগী সংগঠনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আবেদন জানানো হয়। পাশাপাশি জামাতের মুখপত্র ‘দৈনিক সংগ্রাম’কে অভিযুক্ত করে নিষিদ্ধের সুপারিশও করা হয়। বলে রাখি, একটি দৈনিককে নিষিদ্ধের কথা ওঠার পর কেউ কেউ বলবে সংবাদ মাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হচ্ছে। অথচ এই দৈনিকটি একাত্তরে কী করেছিলÑ তা কি আমরা ভুলে যাচ্ছি?
বাংলাদেশ আরো একটি স্বাধীনতা দিবস পালন করলো। তেতাল্লিশ বছর একটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতার জন্য কম সময় তা বলা যাবে না। বাংলাদেশ এই দীর্ঘ সময় পেরিয়ে এসেছে। কিন্তু সময়টি কি খুব সুখকর ছিল জাতির জন্য? খুব অনুকূল ছিল রাষ্ট্র গঠনের জন্য? না ছিল না। কেন ছিল না, সে উত্তর খোঁজার প্রয়োজন মনে করি। ১৯৪৭ সালে যখন পাক-ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হয় তখন ধর্মীয় সম্বন্ধের দোহাই দিয়ে উর্দুভাষী পাকিস্তানিরা দল বাঁধতে আগ্রহী হয় বাঙালিদের সঙ্গে। এই ঐক্যের মূলমন্ত্র কী ছিল, তা পর্যালোচনা করার প্রয়োজন আজো আসছে।
জাতিসত্তার পরিচয় নয় বরং ‘আমরা মুসলমান’Ñ এই ডঙ্কা বাজিয়ে উর্দুভাষীরা ‘বিগব্রাদার’ সেজেছিল বাঙালিদের। কেন বাঙালিরা সেদিন এই নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিলেনÑ সে প্রশ্ন আমি আজো করি নিজেকে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সমকক্ষ নেতা কি ছিলেন না সেদিন বাঙালিদের মাঝে? হ্যাঁ, ছিলেন। তারা কেন সেদিন বাঙালিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ডাক দেননিÑ তা এখনো আমার বোধে আসে না।
ভারত পাকিস্তান এবং বাংলাদেশÑ এই তিনটি রাষ্ট্র ১৯৪৭ সালেই জন্ম নিতে পারতো। কিন্তু তা নেয়নি। পাকিস্তানি নেতারা সে সময়েই নিজেদের স্বার্থ চাপাতে ব্যস্ত ছিলেন বাঙালিদের ওপর। ভাষার দাসত্ব চাপিয়ে দেয়ার কাজটি ছিল প্রথম প্রচেষ্টা। তাতে তারা সফল হননি। এরপর সামরিকতন্ত্র চাপিয়ে দিয়ে যে শেকল পরানোর চেষ্টা করা হয়েছিল তার প্রধান লক্ষ্য ছিল সেই বাঙালি জাতিই। পাকিস্তানিরা আসলেই গণতন্ত্রমনা ছিল না। এবং তাদের গণতন্ত্রমনস্কতা যে এই ২০১৪ সালেও গড়ে ওঠেনি তার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। সেই পাকিস্তানিরা ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বাঙালিদের সঙ্গে যে আচরণ করেছিল, এখন তারা সে আচরণ করছে নিজ দেশের মানুষের সঙ্গেই। পাঞ্জাব, বেলুচ, সিন্ধিরা যে একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারছে নাÑ তা স্পষ্ট হচ্ছে ক্রমেই। আর অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে এগুচ্ছে পাকিস্তান। ঠিক একইভাবে পাকিস্তানিরা, বাঙালি জাতিকে অনিশ্চয়তায় ডুবিয়ে রেখে শোষণ করতে চেয়েছিল। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাঙালি জাতি। সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে আদায় করে নিজেদের স্বাধীনতা।
কিন্তু স্বাধীনতা পাওয়াটাই কি শেষ কথা ছিল? না, ছিল না। সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রত্যাশা নিয়ে যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল এর জনসংখ্যা এখন দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। বাড়েনি ভূমি। কিন্তু মানুষ ঠিকই বেড়েছে। যে ভূমি, শক্তি, সামর্থ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে এই দেশটিও উন্নতির বরমাল্য পেতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি। কাক্সিক্ষত লক্ষ্যবিন্দুতে পৌঁছতে না পারার প্রথম কারণটি হচ্ছে রাজনৈতিক ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার বীজ কারা বুনেছিল এবং কিভাবে বুনেছিল তা সচেতন মানুষের অজানা নয়। ১৯৭২ থেকে পঁচাত্তরের আগস্ট, মাত্র সাড়ে তিন বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে যতোই সমালোচনা করার চেষ্টা করা হোক না কেনÑ রাষ্ট্রগঠন এবং জাতির স্বপ্নপূরণে তার চেষ্টার কোনো ঘাটতি ছিল না। অথচ ঠিক সে সময়ে সেই শকুনেরা ছিল তৎপর। তারা সর্বহারা, সমাজবাদী, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের বিপ্লবীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে তৎপর ছিল। জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার পর এরা নিজ চরিত্রে বেরিয়ে আসে প্রত্যক্ষরূপে। সেনা শাসকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারা গোটা বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে ’৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তৎপর হয়।
সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের ছায়াতলে দাঁড়িয়ে যারা তথাকথিত ‘দেশ গড়া’-র যে প্রত্যয় (?) ব্যক্ত করেছিল তারা কি আসলেই জাতিসত্তার প্রতি অনুগত ছিল? না ছিল না। মুখে তারা ‘মিলেমিশে’ কাজ করার কথা বললেও মূলত ছিল সেই পাকিস্তানি পরাজিতদের প্রেতাত্মা। যারা বাংলাদেশের বিজয়কে মেনে নিতে পারেনি। আর পারেনি বলেই ছলে-বলে-কৌশলে তারা সেই পাক প্রভুদের স্বার্থরক্ষা করেছে। তাদের জয়গান গেয়েছে। ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকার খাম্বা হিসেবে তারা কাজে লেগেছে সামরিক শাসকদের। এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের সংগঠিত করেছেন নানাভাবে আবির্ভূত হয়েছে সস্তা বুলি আউড়িয়ে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের জন্য এখনো প্রধান হুমকি হচ্ছে সেই মৌলবাদীরাই। যারা ধর্মীয় জোশ কাজে লাগিয়ে জনগণের চোখে ধুলা দিতে চায়। বাংলাদেশে গেলো কয়েক বছরে নতুন নতুন ধর্মীয় জঙ্গিবাদী দলের অস্তিত্বের খবর পত্রপত্রিকায় বেরিয়েছে। এরা কারা? তারা কি নতুন? না তারা নতুন নয়। তারা বহু নামে আবির্ভূত হচ্ছে। বহু পরিচয়ে। একই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে। আর সেই তত্ত্বটি হচ্ছে ধর্মীয় উন্মাদনা ভরা মৌলবাদ। যা ক্রমশ পাকিস্তান-আফগানিস্তানকে গ্রাস করেছে। যে আল-কায়েদা তত্ত্ব হরণ করতে চাইছে গোটা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের পরিশুদ্ধ চেতনার উৎস।
বাংলাদেশে এখনো দুটি পক্ষ। একটি গণমানুষের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ী। আর অন্যটি ‘মিলেমিশে’ কাজ করার প্রত্যাশী। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় দেখা গেছে, এই ‘মিলেমিশে’ কাজ করার প্রবক্তারা ক্রমশ গ্রাস করেছে বিএনপির বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। মীর শওকত, কর্নেল অলি, মেজর আখতারুজ্জামানের মতো বিএনপির নেতারা কোণঠাসা হয়েছেন রাজাকারদের হাতে। এর কারণ কী? এটি হচ্ছে, জিয়াউর রহমান কর্তৃক রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব পরাজিত রাজাকারদের হাতে তুলে দেয়ার পরিণতি।
বর্তমান সরকার দেশে রাজাকারদের বিচার শুরু করেছে। রায় কার্যকর হচ্ছে। এটা ভালো লক্ষণ। এই প্রক্রিয়া থামিয়ে দিতে চেষ্টা হচ্ছে প্রতিদিন। এজন্য প্রজন্মকে সজাগ থাকতে হবে। বর্তমান সরকার দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কাজটি করার মাধ্যমেই একটি ধাপ এগিয়ে যেতে পারে। যতোই কঠিন হোক এই কাজটি করতেই হবে বর্তমান সরকারকে। চলমান সরকারকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে নানাভাবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হচ্ছে, দলের ও সরকারের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাবাদী চক্র। এই চক্র অতীতেও অনেক সরকার ডুবিয়েছে। আগামীতেও ডুবাবে। যদি এদের শায়েস্তা করা না যায়।
আমি খুব দৃঢ়ভাবে এই প্রজন্মের শক্তিতে বিশ্বাস করি। এই প্রজন্মের চেতনায় স্বাধীনতার পরিশুদ্ধ বিবেক উজ্জ্বলভাবে জাগ্রত। এই শক্তিকে ধরে রাখতে হবে। কাজে লাগাতে হবে। যতোই বাধা আসুক, এই পতাকার প্রতি সম্মান জানাতেই হবে বুকে হাত দিয়ে। মনে রাখতে হবে, যারা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ স্বীকার করে না তারা এ মাটির মিত্র নয়।
---------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ // ঢাকা // : ২৯/মার্চ/২০১৪ শনিবার
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×