somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আই লাভ ইউ, সাকিব ভাইয়া!

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের বাসার সবাই মহা টেনশনে আছি। টেনশনটা সাকিব ভাইয়াকে নিয়ে। সাকিব ভাইয়া আমার কাজিন। বড় চাচার ছেলে। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে একদিন তাদের বনানীর বাসা থেকে আমাদের গাবতলীর বাসায় এসে আব্বুকে বলেন, চাচা, আমাকে কয়েকদিনের আশ্রয় দিবেন? আমি সবকিছু থেকে কয়েকদিন পালিয়ে থাকতে চাই।
আমরা যারা যারা তখন ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলাম, আমি, আব্বু আর আম্মু, আমরা তিনজনই খুব অবাক হলাম। সাকিব ভাইয়া খুব ভদ্র স্বভাবের একজন মানুষ। সারাক্ষণ নিজের কাজেই ব্যাস্ত থাকেন। কারুর সাতেও নাই, পাঁচেও নাই। এমন মানুষ কী এমন কাজ করতে পারে যে পালিয়ে আমাদের বাসায় এসে তাকে আশ্রয় নিতে হবে? আসলেই মহা তাজ্জব হওয়ার মতো একটা ব্যাপার।
আম্মু তখন প্রশ্ন করলেন, কি ব্যাপার সাকিব! কি হয়েছে?
কিছু না আন্টি। আমাকে কয়েকটা দিন থাকতে দিবেন কি না বলেন। কাঠখোট্টা জবাব ভাইয়ার।
আববু বললেন, আমাদের বাসা আর তোমাদের বাসা কি আলাদা কিছু হল? তুমি যখন খুশি এখানে আসবে, থাকবে।
ধন্যবাদ জানিয়ে সাকিব ভাইয়া হাতের ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে গেস্ট রুমে ঢুকে গেলেন। ব্যাগের সাইজ দেখে বুঝাই যাচ্ছে বেশ কদিন থাকার পরিকল্পনা।
আমরা তিনজন মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলাম। কি ব্যাপার! বাসায় ঝগড়া করে এসেছে না কি? নাহ! উনি তো ঝগড়া করার মতো মানুষ না। দরকার ছাড়া কারোর সাথে তেমন কথাও বলেন না সাকিব ভাইয়া।
ঠিক তখনি আববুর মোবাইলের রিং টোন বেজে উঠল। বড় ভাইয়া কল দিয়েছেন। আমাদের এ কথা জানিয়ে কলটি রিসিভ করলেন আববু। আমি আববুকে বললাম লাউড স্পিকারটি অন করে দিতে।
হ্যালো, সাকিব কি তোদের বাসায় গেছে? ওপাশ থেকে বড় চাচার প্রশ্ন।
জ্বি ভাইয়া।
ও মনে হয় তোদের ওখানে থাকতে পারে কয়েকদিন। কেন যে গেল কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। মোবাইলটাও বন্ধ করে রেখেছে। জিজ্ঞেস করে দেখিস তো কিছু বের করতে পারিস কিনা। ওকে কোন একটা ব্যাপারে খুব টেন্সড বলে মনে হল।
ভাইয়া আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমি দেখছি ব্যাপারটা।
*********************************************
পাঁচ দিন হয় সাকিব ভাইয়া আমাদের বাসায়। তাকে ঘিরে টেনশন ক্রমেই বাড়ছে। সে সারাক্ষণ মনমরা হয়ে গেস্ট রুমে পড়ে থাকে। আমাদের সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তা বললেও কি কারনে এখানে এসেছে জিজ্ঞেস করলেই চুপ করে থাকে। মোবাইল অন করতে বললেও করে না। সারাদিন ঘরে বসে কম্পিউটার গেইম খেলে আর ঘুমায়। রোজ সকালে ড্রয়িং রুমে এসে বসে থাকে। বসে বসে পত্রিকাওয়ালার অপেক্ষা করে। পত্রিকা আসলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সবার আগে তাকেই পত্রিকা পড়তে হবে। অনেক মনোযোগ দিয়ে পত্রিকা পড়ে। খেয়াল করে দেখেছি প্রথম পাতাতেই তার বেশি আগ্রহ। অথচ আমি জানি সাকিব ভাইয়া খেলার পাতা ছাড়া আর তেমন কিছু পড়ত না। আববুও বোধ হয় তার পত্রিকার প্রতি এই অতিরিক্ত আগ্রহ খেয়াল করেছেন। একদিন তাই আববু আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করল,
সাকিবের কিছু কি বুঝলি?
না আববু, তেমন কিছুই তো বলে না। জিজ্ঞেস করলেই রাগ করে ফেলে। বলে, আমার এখানে থাকাটা তোমাদের ভাল না লাগলে চলে যাচ্ছি।
আমিও জিজ্ঞেস করেছিলাম সেদিন। চুপ করে থাকল। বুঝলাম না ঘটনাটা কী?
সেটাই আববু। আমিও বুঝতে পারছি না।
তুই কি খেয়াল করেছিস সে খুব মনোযোগ দিয়ে পত্রিকা পড়ছে ইদানিং?
হ্যা আববু, খেয়াল করেছি। অথচ আগে কখনো পত্রিকার প্রতি এতো ইন্টারেস্ট ছিল না তার।
আমিও তো সেটাই জানতাম। কি যে হল! সে কোন ক্রাইম টাইম করেছে বলে কি তোর মনে হয়?
আববুর প্রশ্নটা শুনে আমার খুব রাগ হল।
কি যে বলো আববু। সাকিব ভাইয়া কি ওরকম মানুষ?
না, তা না। তবু দিনকাল খারাপ। কে যে কখন কোন খারাপ পাল্লায় পড়ে, তা তো আর বুঝা যায় না।
এমন সময় আম্মু রুমে ঢুকলেন। আশ্চর্য আম্মুর কণ্ঠেও আববুর কথার সমর্থন!
ঠিক বলেছ । আমারও কেমন কেমন লাগছে ব্যাপারটা। সে কিসের থেকে পালাচ্ছে? নিশ্চয়ই পুলিশ খুঁজছে তাকে। নইলে বন্ধু-বান্ধব সবার সাথে যোগাযোগটা পর্যন্ত বন্ধ করে দেবে?
আম্মু! তুমি কি মানুষের মধ্যে ভাল কিছু দেখতে পাও না? বলেই আমি রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। আমরা মানুষরা কত সহজেই না অন্যদের মধ্যে খারাপ কিছু খুঁজে পাই। আমি ভাবতেই পারি না আববু আম্মু কিভাবে সাকিব ভাইয়াকে নিয়ে অতো খারাপ কিছু মনে আনতে পারল! আশ্চর্য!

*******************************************
সাকিব ভাইয়ার আম্মু এসেছিলেন আজ। সাকিব ভাইয়াকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন কবে বাসায় ফিরে যাবেন তিনি। সাকিব ভাইয়া কোন উত্তর দিলেন না। আন্টি আমার সাথেও অনেকক্ষণ কথা বললেন। আমাকে দায়িত্ব দিলেন বিষয়টা বের করার। আন্টি চলে যাওয়ার পরই আমি ঢুকলাম সাকিব ভাইয়ের রুমে। উনি বিছানায় শুয়েছিলেন। আমাকে দেখে উঠে বসলেন। এটা সেটা অনেক কথার পর তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
ভাইয়া, আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা কে?
তিনি খানিকক্ষণ ভাবলেন, তারপর বললেন, আমার সবচাইতে প্রিয় মানুষটা হল ...আম্মু। কেন হঠাৎ এমন প্রশ্ন?
এমনি এমনি। হঠাৎ জানার ইচ্ছে হল।
ও আচ্ছা।
তিনি বরাবরের মতোই চুপ হয়ে গেলেন। এখন আমি আবার প্রশ্ন করার পর তার মুখ খুলবে। আশ্চর্য এই মানুষটা! সত্যি কথা বলতে কি, আমি প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেছিলাম বিনিময়ে তিনি যেন পাল্টা আমাকে একই প্রশ্ন করেন। করলেই আমি সাথে সাথে জবাব দিয়ে দিব, পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা হল- আপনি। কথা কিন্তু সত্য। আমি মনে মনে সাকিব ভাইয়ার প্রেমে পড়ে গেছি অনেক আগেই। কিন্তু ব্যাপারটা সাকিব ভাইয়াকে বলার সুযোগ পাচ্ছিনা কিছুতেই। আমি খুব চটপটে মেয়ে, কথাটা বলতে আমার বিন্দু মাত্র সময় লাগার কথা না। কিন্তু বলা হচ্ছে না সাকিব ভাইয়ার কারনেই। সারাক্ষণ এমন মুড ধরে থাকে যে সাহস হয় না। এমন মুডওলা মানুষকে আমার ভাল লাগার কথা না। তবু ভাল লাগে অন্য একটা কারনে। আমি তখন ক্লাস টেইনে। তাদের বাসায় বেড়াতে গেছি। রাত তখন সাড়ে বারোটা। আমরা ভাইবোনরা মিলে আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ করেই আমি বলে উঠলাম, আমার খুব মোগলাই পরোটা খেতে ইচ্ছে করছে। বলেই আবার ব্যাপারটা ভুলে গেলাম। কিন্তু আমাকে যার পর নাই অবাক করে দিয়ে রাত একটার দিকে সাকিব ভাইয়া এসে বলে, তিতলি, চোখ বন্ধ করতো। করলাম। এবার চোখ খোল। চোখ খুলে দেখি কি জানেন? দেখি এক থালা ভর্তি মোগলাই। এতো রাতে আমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য উনি বাইরে থেকে মোগলাই পরোটা নিয়ে এসেছেন। আমার কাছে মনে হল এ যেন মোগলাই না। এ যেন তন্ন তন্ন করে খোঁজে আনা নীলপদ্ম। সেই থেকেই আমার মনে হল সাকিব ভাইয়া নিশ্চয়ই আমাকে পছন্দ করেন। তাই আমারও ভাল লাগা তৈরী হয়ে গেল তার প্রতি। এখন সেই ভাল লাগা বাড়তে বাড়তে প্রেমে পরিণত। কিন্তু সাকিব ভাইয়া থেকে যে কোন সাড়া পাচ্ছি না। এখন তিনি যেহেতু আমাদের বাসায়, আমার মনের কথাটা বলে ফেলার এটাই সবচেয়ে ভাল সুযোগ। কিন্তু উনি তো আবার কিসের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন! কি যে করি! পালিয়ে বেড়ানোর ব্যাপারটা আগে জানতে হবে।
ভাইয়া একটা প্রশ্ন করি? রাগ করবে না তো?
না, কেন রাগ করব? বল।
আগে প্রমিজ করো।
ওকে প্রমিজ করলাম।
আরো প্রমিজ কর, সঠিক জবাব দিবে।
আগে তো তোর প্রশ্ন শুনি!
তুমি কি এমন কাজ করলে যে তোমাকে এভাবে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে?
পালাচ্ছি কই? আমি তো তোদের বাসায় বেড়াতে আসলাম।
যাই হোক, তুমি ঘর থেকে বেরুচ্ছো না। কারো সাথে যোগাযোগ করছ না। এমন কি তোমার মোবাইলটা পর্যন্ত অফ করে বসে আছ। আমাকে বলতেই হবে তোমার। কি হয়েছে? খুব জোর দিয়ে কথাগুলো বললাম।
নারে তিতলী, একটা খুন... এইটুকু বলেই ভাইয়া চুপ মেরে গেলেন!
বলো। থামলে কেন?
নাহ! শুনে কি হবে? আরেকদিন শুনবি। ভাল্লাগছে না এখন। তুই যা। আমাকে একটু একা থাকতে দে।
আমি ভয়ে ভয়ে বের হয়ে এলাম। আমি কি ঠিক শুনলাম? ভাইয়া তো খুনের কথা কি জানি বলল। মানে কি হতে পারে? তবে কি ভাইয়া খুন করেছে কাউকে? নাহ! এ আমার বিশ্বাস হয় না। তবে কি কোন খুনের ঘটনা সামনে থেকে দেখে ফেলেছে? তাই হবে। এখন নিশ্চয়ই খুনীরা তাকে খুঁজছে। পেলেই মেরে ফেলবে। এ যদি হয় তবে তো মহা সর্বনাশ। ভাইয়াকে তো বাঁচাতে হবে! এভাবে পালিয়ে থাকবে কতোদিন?
কোনকিছু না ভেবেই আম্মুকে বললাম ব্যাপারটা।
আম্মু শুনে তো মহা অস্থির! উনাকে বললাম একটু সাহায্যের জন্য। উনি কিনা বলে উঠলেন,
ঠিক! আমি আগেই বুঝেছিলাম। উনি কোন অঘটন ঘটিয়ে এসেছেন। তুই সাবধান থাকবি। ওর সামনে যাবিনা। আজই ওকে বিদেয় করতে হবে।
আম্মু! তোমার কী হল? এমন কথা বলছ কেন?
আরে, সকিব যে খুন করে এসেছে এটা ওকে দেখেই বুঝা গেছে। কেমন ছেলেরে বাবা! একেবারে খুন!
আম্মু! তুমি কিন্তু বেশি বেশি করছ! খুব রাগ হল মহিলাটির উপর।
কী বেশি বেশি করছি? একটা খুনিকে আশ্রয় দিয়ে তোমরা যা করছ সেটা কি বেশি হচ্ছে না?
আম্মু, সাকিব ভাইয়া খুন করতে পারে না। নিশ্চয়ই অন্য কোন ব্যাপার।
হাহ! খুন করতে পারে না! বললেই হল আর কি! এমন নিরীহ ভাব দেখানো ছেলেরাই এমন কান্ড করে, বুঝছিস। উপরটাতো তাদের একটা খোলস মাত্র। যাতে কেউ সন্দেহ না করতে পারে। তুই আর ওর সামনে যাবি না। কখন কি করে বসে! আজই তোর আববুকে বলব।
আম্মুর কথা শুনে আমার সত্যি সত্যি খুব কান্না পেল। আমি আমার রুমে চলে এলাম।
পরদিন সকালে ছাদে উঠেছি। হঠাৎ দেখি বাসার গেটের সামনে পুলিশ। পুলিশ! পুলিশ কি তবে সাকিব ভাইয়াকে খুঁজতে আসল! আমি তড়িঘড়ি নীচে নেমে সাকিব ভাইয়ার রুমে গিয়ে বললাম, ভাইয়া বাইরে পুলিশ!
শব্দটা শুনামাত্র সাকিব ভাইয়া চমকে উঠল। তাড়াতাড়ি লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল।
আমি বললাম, এভাবে তো হবে না ভাইয়া। তুমি বরং ছাদ চলে যাও।
ভাইয়ার কাছে আমার সাজেশন খুব পছন্দ হল বলে মনে হল।
ঠিক বলেছিস। সে বিছানা থেকে নেমে পড়ল। তারপর আবার কি ভেবে জানি বিছানায় বসল। জিজ্ঞেস করলাম, পালাবে না?
আরে না। পুলিশ আমার কি করবে? পুলিশকে ভয় পেলেও অতোটা ভয় পাই না যে পালাতে হবে। তুই যাতো আমার চোখের সামনে থেকে।
জানিনা ভাইয়া কি কারনে আমার উপর রেগে গেল। আমি মন খারাপ করে ড্রয়িং রুমের দরজা খুলে উ^কি দিলাম। এতোক্ষণে পুলিশ চারতলায় আমাদের ফ্ল্যাট পর্যন্ত পৌছে যাওয়ার কথা। ভুল শুদ্ধ একটা কিছু বলে পুলিশকে তাড়িয়ে দিব, এটাই ইচ্ছে। কিন্তু না। পুলিশ নেই। দৌড়ে ছাদে উঠলাম। দেখি,দোতলা থেকে পুলিশ বের হয়ে যাচ্ছে। উফ! বাঁচলাম!
******************************************************************
রাতে ভয়াবহ একটা মিটিং বসল। সাকিব ভাইয়ার বাসার সবাইকে খবর দিয়ে আনানো হয়েছে। মিটিঙের এক পর্যায়ে ঠিক করা হল সাকিব ভাইয়ার সাথে খোলামেলাভাবে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। তাকে ডেকে আনা হলো। প্রথমে আববু শুরু করলেন।
দেখো সাকিব। আজ আমরা সবাই তোমাকে নিয়ে খুব টেনশনে। তুমি কিছু না বললেও আমরা ঠিকই বুঝতে পারছি তুমি মহা বিপদে আছো। আরো বুঝতে পারছি, আমাদের সবার সাহায্য তোমার প্রয়োজন। এখন তুমি যদি সবকিছু খুলে না বল তবেতো আমাদের করার কিছুই থাকবে না।
চাচা, আমার কোন বিপদ হয়নি। আপনার নিশ্চিন্তে থাকুন।
সাকিব ভাইয়ার উত্তর শুনে তার আববুর মেজাজ বোধ হয় একটুখানি গরম হয়ে গেল। বললেন, বিপদ হয়নি তবে তোর এভাবে পালিয়ে আসার দরকার কি। যতোসব ননস্যান্সের দল!
আমার আম্মু এবার কথা বলে উঠলেন। মহিলাটিকে কেন জানি আমার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।
সাকিব, তুমি আমাদের নির্দ্বিধায় সব বলতে পার। যে কোন খারাপ কিছু শোনার জন্য আমরা প্রস্ত্তত। তুমি যদি খুন টুনের মতো ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়ো, তাও বলতে পার। আমরা তোমায় কিছু বলব না।
না আন্টি, ঘটনা তেমন কিছু না। আসলে একটা খুন... সাকিব ভাইয়া আবার থেমে গেল।
কি হয়েছেরে বাবা আমার? তুই আমাদের বলবি না বুঝি? চাচী, মানে সাকিব ভাইয়ার আম্মু এবার কেঁদে ফেললেন।
আহ আম্মু! তুমি কাঁদছ কেন? কান্না থামাও বলছি। আসলে একটা খুন...
এবারে আমি কথা বলে উঠলাম। বলো সাকিব ভাইয়া। বলে ফেল। আমরা জানি খুন করার মতো সাহস তোমার নাই। কথাগুলো বলে একটু সাহস দিতে চাইলাম তাকে।
আসলে একটা খুন আমাকে খুব ভাবাচ্ছে।
একটা খুন তাকে ভাবাচ্ছে! মানে সাকিব ভাইয়া খুন করেনি! ওয়াও! আমি জানতাম। সাকিব ভাইয়া এমন মানুষ না মোটেও। তাকে প্রশ্ন করলাম। কিসের খুন? ব্যাপারটা খুলে বলতো তাড়াতাড়ি!
ঐ যে খুনটা ... ঐ যে সেদিন হরতালের দিন সবাই মিলে বিশ্বজিৎ নামের ছেলেটিকে খুন করল। সেই খুনটা খুব ভাবাচ্ছে আমাকে।
আমরা সবাই অবাক! কোথাকার কোন বিশ্বজিৎকে মারা হয়েছে। সেটা নিয়ে সাকিব ভাইয়ার এই কান্ড!
চাচার রাগ আরো বেড়ে গেল। গাধার দলেরা সবাই। বিশ্বজিৎকে মারা হইসে তো তোর কি হইসে?
সাকিব ভাইয়া চুপ।
আববু বললেন, তুমি বুঝিয়ে বলোতো সাকিব। কি হয়েছে তাতে?
বলছি। আমাকে একটু সময় দেন চাচা। ব্যাপারটা বুঝিয়ে না বললে আসলে বুঝবেন না।
চাচী বললেন, বল বাবা, ধীরে ধীরে বল। তোর কি হয়েছে?
সাকিব ভাইয়া শুরু করলেন। আসলে আমি জানি ব্যাপারটা শুনলে তোমরা সবাই হাসবে। স্বাভাবিক চোখে ব্যাপারটা হাসার মতোই। এটা ঠিক বিশ্বজিৎ ছেলেটার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তাকে আমি দেখিও নাই কোনদিন। ঘটনার সময় আমিও অনেক দূরে আমার বাসায় ছিলাম, এটাও ঠিক। তবু ঘটনাটা যখন টিভিতে দেখালো, টিভিতে যখন বলল যারা তাকে মেরেছে সবাই ছাত্রলীগের ছেলে, তখন আমার মনে হল আমি তো নীতিগত ভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থণ করি। ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন। তাই আমার মথায় ঢুকে গেল, এ হত্যাকান্ডের সথে আমিও কোন না কোন ভাবে জড়িত। সেই থেকে তীব্র একটা ঘৃণা আর ভয়ে ভরে গেল মনটা। আমার মনে হল আমার যারা বন্ধুরা বা পরিচিতজন, সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করবে তোমার দল এটা কি করল। তখনই মোবাইলের রিং টোন বেজে উঠায় আমার মনে হল কেউ না কেউ নিশ্চয়ই কল করেছে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলার জন্য। তাকে আমি কি জবাব দেব, ভেবে পেলাম না। প্রচন্ড ভয়ে মোবাইলটা বন্ধ করে দিলাম। ভাবলাম পরিচিত জায়গা থেকে আমাকে পালিয়ে যেতে হবে। তাই হুট করে চাচার এখানে চলে আসলাম।
থাম বলছি। থাম! তোর এই ননস্যান্স কথা শুনার জন্য আমার হাতে কোন সময় নেই। যত্তসব গাধার দলেরা। বলে উত্তেজিত চাচা বের হয়ে হয়ে গেলন।
এটা তো দেখি পাগল হয়ে গেছে! আম্মু আপন মনেই বলে উঠলেন।
জ্বি চাচী। সাকিব ভাইয়া এক্সপ্লেইন করা শুরু করলেন। ঠিক বলেছেন, এটা যে এক ধরনের পাগলামী, আমিও বুঝি। কিন্তু বিষয়টা যখন মাথায় ঢুকে তখন কিচ্ছু করার থাকে না। চেষ্টা করি নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে। কিন্তু এতোটাই অসহায় হয়ে পড়ি যে কিছু করতে পারি না তখন।
এটা কি সবসময় হয়? আমি জিজ্ঞেস করলাম। ব্যাপারটা বুঝতে হবে।
এমনটা মঝে মাঝে হয়। এরকম যেকোন অন্যায়ের ঘটনা জানলেই এমন বোধ হয় আমার। এই যেমন, পদ্মা সেতু নিয়ে যেটা হল সেটা জানার পর মনে হল, এ দুর্নীতির ভাগীদার তো আমিও। বিদেশের কাছে এমন হেয় হতে হলো যে কারনে তার দায়ভার তো খানিকটা হলেও আমার উপরই পড়ে। আমি নিজেও তো এই বাংলাদেশের মানুষ। পত্রিকায় যদি কোন রেপ করার ঘটনা জানতে পাই, তখন মনে হয়, এই ঘৃণ্য কাজটা যে করল সেতো একজন পুরুষ। আমি নিজেও একজন পুরুষ। এ দায় আমারও। ইলিয়াস আলীকে গুম করা হল, পরাগকে কিডন্যাপ করা হল। এসব যারা করল তারা তো আমারই দেশের মানুষ। চেষ্টা করলেও তো এ অপরাধগুলোর বাইরে থাকতে পারি না আমি।
ভাইয়া, কিছু মনে করো না। তোমাকে তো ডাক্তার দেখাতে হবে।
আমি জানি, এটা এক ধরনের মানসিক রোগ। তাই আমি নিজেই গত বছর ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। ডাক্তার বলেছে হাইলি সেনসিটিভ মানুষদের মধ্যে এমন উদ্ভট চিন্তা ভাবনা আসে। এদেরকে সংক্ষেপে এইচ এস পি বলা হয়ে থাকে। ডাক্তার কিছু ওষুধ দিয়েছে। আরো বলেছে, আমি নিজে থেকে যদি চেষ্টা করি তবে এ উদ্ভট চিন্তা ভাবনা দূর হয়ে যাবে একসময়।

হাইলি সেনসিটিভ পারসন! সাকিব ভাইয়া একজন অতিমাত্রায় সংবেদনশীল মানুষ। আমার কাছে এখন অতীতের অনেক ব্যাপার ক্লিয়ার হয়ে যায় এখন। রাত একটার সময় আমার জন্য মোগলাই পরোটা কিনে নিয়ে আসা, আমার ছোট্ট একটা কথায় ছয় মাস আমার সাথে কথা না বলে থাকা, আমার খুব ইচ্ছে করছে তুমি আজ আমাদের বাসায় চলে আসো-আমার মুখে এমন কথা শুনে সাকিব ভাইয়ার সাথে সাথে আমাদের বাসায় চলে আসার ঘটনা, এসব কিছুই তার উচ্চমাত্রার সংবেদনশীলতার কারনেই। অথচ আমি কিনা তার এসব কর্মকান্ডকে ভেবেছিলাম তিনি আমাকে ভালবাসেন। না বাসুক। আমি তো বাসি। তার মতো এমন সুন্দর করে ভাবতে আর কজন পারে? মনে মনে বলি, সাকিব ভাইয়া, তোমার মনের এক পারসেন্ট সংবেদনশীলতা যদি আমাদের রাজনীতিবীদদের, আমাদের দেশের সব মানুষদের মধ্যে থাকতো, তবে দেশটা কতোই না সুন্দর হতে পারতো। আই লাভ ইউ, সাকিব ভাইয়া। আই লাভ ইউ।

১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×