somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাক-ভারত যুদ্ধে বিলুপ্তি ঘটবে মানবজাতির!

৩১ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট আকারের একটি আঞ্চলিক পরমাণু যুদ্ধও পৃথিবীকে অসম্ভব রকম শীতল করে দিতে পারে। জলবায়ুর তাপমাত্রা এতোটাই কমে যেতে পারে যে এ গ্রহ বসবাসের অযোগ্য হবে। শুধু তা-ই নয় এর ফলে জীবজগতের অস্তিত্বের জন্য অতি প্রয়োজনীয় বায়ুমণ্ডলের ওজনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলবে টানা অনাবৃষ্টি। এসময়ের মধ্যে মানবজাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে দুর্ভিক্ষে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশের অস্ত্রাগারে রক্ষিত পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা ১৭ হাজারের বেশি। এই গবেষণা নিরস্ত্রিকরণ আন্দোলনকে আরো একধাপ এগিয়ে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময় দুই পরাশক্তির (সুপারপাওয়ার) মধ্যে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা চরম আকার ধারণ করেছিল, তাতে কয়েক দশক মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটিয়েছে। এমন যদি কখনো হয় যে, একটি বিশ্বযুদ্ধ বেঁধেই যায় তাহলে সেই পরমাণু যুদ্ধের ফলাফলকে বলতে হবে ‘নিউক্লিয়ার শীতকাল’। পরমাণু বোমার বিস্ফোরণে যে ভয়াবহ অগ্নি ও ধোঁয়ার ঝড় হবে, ধূলোবালি ও ছাইয়ের মেঘ ঢেকে দেবে সূর্যকে তাতে দিনের পর দিন চলবে সূর্যগ্রহণ। ফলে যা দাঁড়াবে তা কল্পনাতীত এক বিপর্যয়। ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে, মানুষ মরতে থাকবে না খেয়ে। অবশেষে দুর্ভিক্ষে মানব জাতিসহ প্রাণীকূলের বিনাশ ঘটবে। বর্তমানে সুপারপাওয়ার বলতে যুক্তরাষ্ট্রকেই বুঝানো হয়। আর এরকম একটি শীতকালের জন্য যদি কেউ হুমকি হয়ে থাকে তো সেটা তারাই। অবশ্য ভারত পাকিস্তানের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোও যেভাবে পরমাণু অস্ত্রপ্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে তাতে এরাও কম হুমকি নয়। এরকম একটি আঞ্চলিক পরমাণু উত্তেজনার পরিনামের ভয়াবহতা পরিমাপ করার চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা দেখেছেন, এরকম একটি যুদ্ধ আবহাওয়া ও জলবায়ুতে কী ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ডেকে আনবে! ভারত-পাকিস্তানকে মডেল ধরে তারা দেখেছেন, এমন যুদ্ধে হিরোশিমাতে আঘাত হানা পরমাণু বোমার সমান শক্তি সম্পন্ন ১০০টি বোমা ব্যবহৃত হবে। প্রত্যেকটি বোমার শক্তি হবে ১৫ হাজার টিএনটি। সবচেয়ে বড় কথা হলো এ শক্তি সারা বিশ্বের অস্ত্রাগারে রক্ষিত মোট পরমাণু অস্ত্রের নগণ্য অংশ। ওই মডেলে দেখা গেছে, এমন যুদ্ধের প্রভাব পড়বে বায়ুমণ্ডল, মহাসাগর, ভূমি এবং সমুদ্রে জমা বরফে যা পৃথিবীর জলবায়ুর অপরিহার্য অংশ। সুতরাং এমন একটি ‍যুদ্ধ হবে এক মহাবিপর্যয়। এ ব্যাপারে কলোরাডোর ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমোসফেরিক রিসার্চের বিজ্ঞানী মাইকেল মিলস বলেন, ‘মানুষ এটা শুনে হতবাক হবে যে, পৃথিবীর একপ্রান্তে একটি ছোট আকারের আঞ্চলিক পরমাণু যুদ্ধ এক দশক সময় ধরে পৃথিবীর জলবায়ুকে কীভাবে ব্যাহত করতে পারে এবং একই সময় পর্যন্ত ওজনস্তরকে নষ্ট করে দিতে পারে।’ এই গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক মিলস। তিনি লাইভ সায়েন্স সাময়িকীকে এ তথ্য দেন। গবেষকরা হিসাব করে দেখেছেন, পাক-ভারত যুদ্ধের মতো কোনো আঞ্চলিক পরমাণু যুদ্ধে যে অগ্নিঝড় বইবে তাতে ৫৫ লাখ টন কালো কার্বন তৈরি হবে যা ছড়িয়ে পড়বে বায়ুমণ্ডলের অনেক উঁচুস্তর পর্যন্ত। এই ছাই সূর্যের তাপ শোষণ করে পৃথিবীর উপরিপৃষ্ঠ শীতল করে তুলবে। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে তাপমাত্রা কমবে ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস), সেসব এলাকায় এক হাজার বছরেও এমন অভিজ্ঞতা হয়নি। উত্তর আমেরিকার বেশকিছু এলাকা, এশিয়া, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে শীতকালের তাপমাত্রা ৪ দশমিক ৫ থেকে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। আর গ্রীষ্মকালের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১.৮ থেকে ১.২ ডিগ্রি কমে যেতে পারে। তাপামাত্রার এই অবনতির ফলে পৃথিবীতে বিপজ্জনক মাত্রায় বরফ জমবে। এর ফলে শস্য উৎপাদনের মৌসুমের পরিধি প্রতিবছর ১০ থেকে ৪০ দিন করে কমতে থাকবে। আর সূর্যের তাপ শোষণ করে ছাইগুলো উত্তপ্ত হয়ে উঠার ফলে বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার এতোটাই উত্তপ্ত হবে যে সেখানে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ওজনস্তর নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার মতো আর কিছু থাকবে না। এতে মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি কৃষি এবং স্থল ও জলের বাস্তুতন্ত্র ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পৃথিবী শীতল হওয়ার ফলে সারা বিশ্বেই বৃষ্টিপাত কমবে। এর ফলে আমাজনের মতো বড় বড় বনভূমিতে নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য দাবানল হবে। এতে ধোঁয়া ও ছাই আরও বাড়বে। মিলস বলছেন, এই শীতল অবস্থা ২৫ বছরের বেশি সময় চলতে পারে। বরফের বিস্তৃতি বেড়ে যাওয়ার ফলে সূর্যের তাপ প্রতিফলিত হয়ে আবার বায়ুমণ্ডলে ফিরে যাবে। সমুদ্রের উপরিতলে ৩০০ ফুট পর্যন্ত অতি শীতল হবে। এ দুই কারণে পৃথিবী আবার ধীরে ধীরে গরম হতে থাকবে। একসময় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে। এই গবেষণা প্রতিবেদনটি আর্থ ফিউচার সাময়িকীর মার্চ সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়েছে। এতে সারা বিশ্বে পরমাণু অস্ত্রের মজুদ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো যখন উন্নয়নের দিকে নজর না দিয়ে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় মেতে উঠছে, তখন এরকম একটি বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×