somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাখিরা...

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে অনেক অনেক অনেক কাল আগের কথা না...
এই কয়েক বছর আগের কথা।
এক দেশে এক রাজা আর এক রানী ছিলো না, ছিলো পাখি। অনেক অনেক পাখি।
এই অনেক পাখির মধ্যে ছিলো একটা লাজুক ছেলে পাখি, একটু হাবাগোবা কিসিমের। সে ভার্সিটি যেতো, আসতো, ক্লাস করতো। ওহ, বলা হয়নি, সেই দেশে পাখিদের আবার কিন্তু ভার্সিটিও ছিলো। সেইখানে তাদের আর্কিটেকচার, ফ্যাশন ডিজাইনিং, ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন এইসব সাবজেক্ট পড়ানো হতো।
আমাদের ছেলে পাখিটা পড়তো আর্কিটেকচারে। ছেলে পাখিটা যখন ফাইনাল ইয়ারে পড়ে তখন তাদের ভার্সিটিতে একটা নতুন বিভাগ খোলা হলো, ফটোগ্রাফি অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ নামে। এখানে পাখিদের শেখানো হবে ছবি তোলার সময় ডানা কিভাবে ভাঁজ রাখতে হবে, কিভাবে মিডিয়ার সামনে নিজেকে আরো আকর্ষনীয়ভাবে উপস্থাপন করা যাবে। মেয়ে আর ঝলমলে পালকের পাখিদের জন্য এই বিভাগে ভর্তির আবার বিশেষ কোটাও রাখা হলো।
যাইহোক, এই বিভাগেই একদিন এসে ভর্তি হলো একটা মেয়ে পাখি, কি তার রূপ, কি তার পালক! রিও-র জুয়েলও এর কাছে নস্যি। পুরো ভার্সিটির ছেলেরা থেকে শুরু করে অনেক কম বয়েসী ফ্যাকাল্টিও এই পাখির প্রেমে আকাশে ডিগবাজি খেতে শুরু করলো।
আর আমাদের লাজুক ছেলে পাখিটা, যে কিনা কখনো কোন মেয়ে পাখিতো দূরের কথা, কোন মেয়ের দিকেও জীবনে চোখ তুলে তাকায় নি, সেই কিনা প্রথম ডানার ঘষায় এই মেয়ের প্রেমে উড়ে গেলো!

ছেলেটা আস্তে আস্তে মেয়েটার সাথে ভাব জমাতে শুরু করলো। সফলও হলো কিছুটা, কিন্তু একটা ঝামেলা রয়েই গেলো। মেয়েটা ছেলেটাকে ভার্সিটির সিনিয়র ভাই হিসেবেই দেখে, এর বেশি কিছু না। প্রেমে পড়ে এই কয়দিনে ছেলেটার মাথায় একটু বুদ্ধিশুদ্ধি হয়েছে। সে তাই বিভিন্নভাবে মেয়েটাকে ভালোবাসা বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকলো। সে BeakBook (আমাদের যেমন ফেসবুক পাখিদের তেমন বিকবুক) দিয়ে মেয়েটাকে অ্যাঙরি বার্ডসে বিভিন্ন গিফট পাঠায়, মেয়েটার স্মার্টফোনে ফ্ল্যাপি বার্ডসের লেভেল পার করে দেয়। রিও ছবির ডিভিডি গিফট করে, রিও ২ ছবির ট্রেইলার পাঠায়। মেয়েটা তবুও কিছু বুঝতে পারে না।
শেষমেষ আর থাকতে না পেরে একদিন ছেলেটা তার বন্ধু পায়রাকে একটা মেয়েটার জন্য একটা প্রেমপত্র দিয়ে বললো, কবুতর যাহ, যাহ, যাহ... কবুতর যাহ, যাহ, যাহ...
কবুতর চিঠি নিয়ে উড়ে গেলো, কিন্তু মেয়ে পাখি আর তার মাকে আলাদাভাবে চিনতে না পেরে মায়ের ঠোঁটেই চিঠিটা দিযে এলো। মা পাখিটা আবার একটু উদারমনা ছিলেন। তিনি তাই খালি মেয়ে পাখিকে নিষেধ করলেম সেই ছেলেটার সাথে না মিশতে, আর কিছু বললেন না। এইখানে ছোট করে বলে রাখি, মেয়ে পাখিটাও কিন্তু ছেলেটাকে ভালোবাসতো, কিন্তু ডানা ঝাপটে কখনো বলতে পারে নি। আর এখন যখন জানতে পারলো ছেলেটাও তাকে ভালোবাসে, তখন মায়ের নিষেধের কারনে সে তাতে সাড়াও দিতে পারলো না।

ছেলে পাখিটাতো আর এতশত জানে না, কবুতর তাকে বলেছে সে চিঠি মেয়েটার হাতেই দিয়েছে। আর মেয়েটা এখন তার সাথে কথা বলে না, তাকে বিকবুকের লিস্ট থেকেও কেটে দিয়েছে। মেসেজেরও উত্তর দেয়না। ছেলেটা নিশ্চিত হয়ে গেলো মেয়েটা তাকে ভালোবাসে না। তখন সে ভাবলো এই জীবন রেখে আর কি হবে। তখন বর্ষাকাল, সে বরং বৃষ্টির দিনে ইলেকট্রিকের তারে বসেই আত্নহত্যা করবে।
যেই ভাবা, সেই কাজ। বন্ধু কবুতরকে তার সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে একটা টেক্সট দিয়েই সে উড়ে গেলো মোটা তারের খোঁজে। খুঁজে পেলোও একটা তার। গিয়ে দেখলো সেখানে দুই গ্রুপে ৪টা আর ৩টা মোট আরো ৭টা পাখি বসা। সে একাই সরতে চায়, তাই একাই বসলো। আর এদিকে বন্ধুর টেক্সট পেয়েই কবুতর ছুটে গেলো মেয়ে পাখিটার বাড়িতে। সেখানে গিয়েই শুরু করলো মেয়ে পাখিটাকে আচ্ছামতো বকাঝকা। এদিকে চেঁচামেচিতে ছুটে এলেন মা পাখিটা, তিনি আসতে কবুতর তার ভুলটা বুঝতে পারলো। মেয়ে পাখিটাও আবার ছেলেটা আত্নহত্যা করবে শুনে স্বীকার করলো সে ছেলেটাকে ভালোবাসে, আবার মা পাখিটাও তাদের ভালোবাসা মেনে নিলেন, যেহেতু ছেলেটা ভালো, পড়াশোনাতেও ভালো। কিন্তু এখন তো ছেলেটাকে বাঁচাতে হবে! তাই তারা তিনজনই উড়ে গেলেন মোটা ইলেকট্রিক তারটার খোঁজে।

এদিকে, আকাশে মেঘ গুড়গুড় করছে, যে কোন সময়ে বৃষ্টি নামবে। ছেলে পাখিটা চোখ বন্ধ করে মেয়েটার কথা ভাবছে। হঠাৎ সে শুনতে পেলো মেয়েটার গলা। চোখ খুলতেই সে সামনের বাড়ির বারান্দায় মেয়ে পাখিটাকে দেখতে পেলো, সাথে কবুতর আর মা পাখিটাকেও। মেয়ে পাখিটা তক্ষুনী ছেলেটাকে ভালোবাসি বললো, মা পাখিটাও ছেলেটাকে তার খেকে নেমে আসতে বললো। ছেলেটাও আবেগে আটখানা হয়ে তার থেকে নেমে আসতে গেলো, ঠিক তখনি একটা বিদ্যুৎ চমকালো... মেয়ে পাখিটা চিৎকার করে উঠলো, ভাবলো ছেলেটা মারা গেছে....

কিন্তু না, আসলে ওইটা বজ্রপাত ছিলো না, ছিলো একটা ক্যামেরার ফ্ল্যাশের আলো। এক অতি উৎসাহী ফটোগ্রাফার ইলেকট্রিকের তারে একটা পাখি চারটা পাখি তিনটা পাখি এই সিরিয়ালে বসে থাকতে দেখে সেটাকে I Love You ধরে ছবি তুলছিলেন আসলে। ফ্ল্যাশের আলো চোখে সয়ে আসতে দেখা গেলো বাকী ৭টা পাখি ভয়ে উড়ে চলে গেছে, আর ছেলে পাখিটা মেয়ে পাখিটার ডানা ধরে আছে! ফটোগ্রাফার সেটাও ক্যাপচার করলেন, এবার অবশ্য ফ্ল্যাশ ছাড়া!

এই দুইটা ছবি তুলে সেই ফটোগ্রাফার বিখ্যাত হয়ে গেলেন। সারা পৃথিবীতে তখন থেকেই একটা পাখি চারটা পাখি তিনটা পাখি বলতে আমি তোমাকে ভালোবাসি বোঝানো হতে লাগলো। বাংলাদেশ নামে একটা দেশের লেখক হুমায়ূন আহমেদও তার আঙুল কাটা জগলু বইতে একটা পাখি চারটা পাখি তিনটা পাখি লিখলেন।
আর সেই ছেলে পাখিটা আর মেয়ে পাখিটা? তারা এখন খুব ভালো আছে, তাদের অনেকগুলো নাতি নাতনী হয়েছে, বিশাল সুখের সংসার! রোমিও-জুলিয়েট, শিরি-ফরহাদ, লাইলি-মজনু, জ্যাক-রোজের মতো তাদের প্রেম কাহিনীও পাখি সমাজে খুব জনপ্রিয়। তাদেরটা আরে জনপ্রিয়, কারণ তাদেরটাতে যে হ্যাপি এন্ডিং আছে!


( গল্পটির জন্য ছবিটি বানিয়ে দিয়েছেন তাওহিদ মিলটন :) )

আর, তুমি যদি এখনো কখনো দেখো ইলেকট্রিকের তারে বিভিন্ন সারিতে পাখি বসে আছে, বুঝবে, এটা তাদের প্রেম নিবেদনের ভাষা!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:১৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×