somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হে আদালত, হে সরকার আমার যবন দেশপ্রেমকে ফিরিয়ে দে, ফিরিয়ে দে!

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সরকার দেশপ্রেম বলতে কঠোরভাবে একটা পুস্তিকা অনুসরণ করেন। ঠিক একখানা বেদবাণী। এর ব্যতিক্রম যারা করেন, তারা সমমর্যাদা ও সমান নাগরিক অধিকার পান না। আদর্শ দিয়ে, চেতনা দিয়ে, বিশ্বাসের বাধ্যবাধকতা দিয়ে সকল নাগরিককে কীভাবে বশে আনা যায়, বাধ্য রাখা যায়?

ধরুন ৭১ এর যুদ্ধের সময় বাংলাদেশে একমাত্র রাজনৈতিক দল ছিল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল। একমাত্র দল হিসেবে তারাই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিলেন । ফলে যে নতুন দেশটির জন্ম হবে, তার দেশপ্রেমের নীতিমালাগুলো কঠোরভাবে কমিউনিস্ট ম্যানিফ্যাস্টো অনুসরণ করবে। অর্থাৎ, আপনি যদি বলেন, আপনি কমিউনিজমে বিশ্বাস করেন না, তার মানে আপনি বাংলাদেশে বিশ্বাস করেন না। এটা দেশদ্রোহীতা এবং সেই অপরাধে আদালতে রুল জারি হতে পারে।

একটা ভূখন্ডে জন্মের পর সেই মাটি ও মানুষকে ভালোবাসা খুবই মৌলিক অনুভূতি এবং সহজাত। গরুও তার গোয়াল চিনে, ঘরে ফিরতে চায়। মাটিকে ভালবাসার এই সহজাত প্রবৃত্তিকে আদর্শ বা পছন্দ সাপেক্ষে প্রশ্নবিদ্ধ বা কলুষিত করার প্রক্রিয়াটা শুরু হয় যখন একটা আদর্শভিত্তিক দলের হাত দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়।

৭১ এ আওয়ামীলীগ বিরোধী যে কেউ অবধারিতভাবে পাকিস্তানপন্থী ছিল। কিন্তু ২০১৪ তে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তেমনটা মনে করেনা। কিন্তু দেশকে স্বাধীন করার ঔদ্ধত্য নিয়ে এখনও আ্ওয়ামীলীগ সেটাই মনে করে। অর্থাৎ আওয়ামীলীগের দলীয় নীতিমালাই এখন দেশের সংবিধান, আওয়ামীলীগের প্রণীত ম্যানিফেস্টো বাধ্যতামূলকভাবে দেশের মানুষকে একপ্রকার দেশপ্রেমের কঠোর অনুশীলন করাচ্ছে।


মানুষ এখন বহুবিধ কারণে প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পায়। প্রথমত, আওয়ামীলীগ জাতীয় বিবেক নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের পক্ষে ও সমর্থনে আছে পরাধীন একটা আদালত । দেশের মানুষ আন্দোলনপন্থী নয়, মিশর, সিরিয়ার মত জঙ্গী-সাহসী নয়। ক্ষমতা বদলে, ক্ষমতা দখলে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কিছু যায় আসেনা। মানুষ এই আদালতের শাসন ও তার সরকারের ধমকিকে ভয় পায়।

শাহবাগে যেটি হয়েছে সেটা ২০-৩০ জন সাহসী যুবকের কারণে। বিষয়টি সেখানেই মুখ থুবড়ে যেত, যদি সরকার দলীয় পুলিশ লাঠি পেটা করতো, কিংবা শক্তিশালী স্বাধীন আদালত তার রায়ের প্রকাশ্য অবমাননার কারণে নিষেধাজ্ঞা বা হুমকি জারি করতো। কিন্তু তার উল্টোটাই ঘটেছে। বিতর্ক এড়াতে চাইলে বলতে হয়, সরকার নিঃস্বার্থভাবে জনগণকে শাহবাগে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগে যে জনসমুদ্র হতে পেরেছ, আদালত তার সামনে মাথা নিচু করে নিজেদের ভুল শোধরাতে পেরেছে। ঠিক নির্বাচনের আগের এক বছর সরকারের সমর্থনে এই বিপ্লবটা খুবই জরুরি ছিল।

এখানে একটা দখলদারি মানস কাজ করে। আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, তাই দেশ শুধুই আমাদের । গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মত সংখ্যালঘুদের এ দেশে ঠাই নেই। ছাত্রলীগ কর্মীরা যখন ছাত্রলীগ নেতা সাদকে হত্যা করলো--সেটা ঠিক আলোচনার বিষয় নয়। শিবির নেতা হত্যা করলেই বরং সংসদে একটা নিন্দা প্রস্তাব আসতো । কারণ ছাত্রলীগের হত্যাকান্ডের লাইসেন্স/বৈধতা আছে, শিবিরের নেই । কারণ বিশ্বের শীর্ষ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে শিবিরের স্থান ২য় বলে খবরে প্রকাশ পেয়েছে। সাদকে রড দিয়ে পেটানোর ভিডিও থাকলেও হয়তো জনগণের তেমন সহানুভূতি পেতনা, যেমন আওয়ামীলীগের মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেছিলেন ৭১ হলো দুই কুকুরের কামড়া কামড়ি।

অথবা সাদ যদি নিরীহ, নির্দলীয় ছাত্র হতো, তার প্রতি দয়া দেখানো মানুষ কৌশলেই কমানো যেত। সাদ মুসলিম নাম। কাজেই এর সাথে দেশদ্রোহী জামাত-শিবির চক্রের সংশ্লিষ্টতা অবধারিতভাবে আনা যায়। সাদ শিবির কর্মী, তাই তার হত্যার পক্ষে অগণিত মানুষের সমর্থন ও যৌক্তিকতা মিলবে। বাংলাদেশে সে অর্থে হিন্দু হয়ে জন্মানো তাই সৌভাগ্যের, বিশ্বজিৎকে দেশদ্রোহীদের দোসর বানানো যায়নি শুধু তার ধর্ম পরিচয়ের কারণে।


এসব হত্যাকান্ডের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিধিরাম সর্দার তারেক জিয়া সাত সমুদ্র ওপারে বসে নিজের পিতৃদেবের প্রশস্তি গাইতে গিয়ে তাকে প্রথম প্রেসিডেন্ট বলে বসলো। ফিলিস্তিন যেমন আর কোন কালেই স্বাধীনতা পাবেনা, বি এন পি আর কোন কালেই ক্ষমতায় আসতে পারবেনা। ক্ষমতার লোভে আদর্শহীন যে ক'জন বি এন পিতে ভিড়েছিলেন, পাঁচ বছর হতে না হতেই দল ছাড়বেন । কাউকে দুর্নীতির দায়ে, কাউকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে (জাহিদ হোসেন প্রমুখ), কাউকে প্রথম প্রেসিডেন্ট বলায় আদালত অবমাননার দোহাই দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হবে। গুম চলবে, রেব বন্দুকযুদ্ধে সক্রিয় থাকবেই। জনগণ কোন কিছুর ব্যাপারেই কিছু বলতে পারবেনা। মানুষের একে তো আদালত বা গুমের ভয়, অপরদিকে বাধ্য থাকার সুবাদে পদোন্নতির লোভ ।সবার উপরে জ্বলজ্বল করবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই ।

৭১ এ জামায়াতে ইসলামের কর্মকান্ডের কারণে অনেকেই ইসলাম ধর্মের উপরেই শ্রদ্ধা, আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। হিন্দুরা সাম্প্রদায়িক আক্রমণের শিকার হয়ে, সাম্প্রদায়িক ক্ষোভ বিদ্বেষ লালন করছেন মুসলিম/ইসলামিক বিষয়াদির বিরুদ্ধে। তার মাঝে মধ্যস্থতাকারীরা চিৎকার করে বলছে, "জামাতে ইসলামী আসল ইসলাম না, ইসলাম শান্তির ধর্ম ।" মুখে মেনে নিলেও অন্তরে বিদ্বেষ থেকে যাচ্ছে। ফলে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাইতে যারা দিনরাত উচ্চকন্ঠ তারা এই ফাঁসির মাঝে শুধু ন্যায়বিচারের স্বার্থ দেখেননা, মৌলবাদের মৃত্যুর স্বপ্ন দেখেন, ধর্মভিত্তিক যেকোন ব্যবস্থাপনাকে সভ্যতা ও দেশের শত্রু মনে করেন ও তা ধ্বংসের কৌশলও খুঁজেন এই ফাঁসির মাঝে। কারণ জামাতের অপকর্মের কারণ হলো ধর্মের দোহাই ও মৌলবাদ--যাকে সমূলে উচ্ছেদ করার কঠোর পণ এই ফাঁসির দাবির মাঝে সুকৌশলে উহ্য থাকে।


মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে আওয়ামীলীগের এ সমস্ত কর্মকান্ডের কারণে কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যাপারে বিতশ্রদ্ধ হয়ে যায়, ঈমানহারা বেঈমান হয়ে যায়--তার দায়টা কার? মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি এমন প্রজন্ম যখন আওয়ামীলীগের কর্মকান্ড দেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুঝতে চেষ্টা করে তখন "আওয়ামীলী মানে মুক্তিযুদ্ধ নয়" ইত্যাদি বলে কি পার পাওয়া যাবে?

সরকার একটা কাজ করতে পারেন । বেঈমান হয়ে যাওয়া তরুণ প্রজন্মকে জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা, তাদের নাগরিকত্ব বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণ করা। এতে করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিশ্বাসকারীর কপাল খুলে যেতে পারে ভিনদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে। জার্মানিতে দাউদ হায়দার, সুইডেনে তসলিমা, আমেরিকাতে রাজাকার মইনুদ্দিনরা 'সুখেই' আছেন। এসব দেশ বরং সহাবস্থানে বিশ্বাস করে, পাকি, হিন্দি, ইহুদি, আফগানি, 'পুছলিম' সবাই মানুষ পরিচয় নিয়ে সমান নাগরিক অধিকার নিয়ে শান্তিতে বাস করে।


দেশ তসলিমাকে ঘাড় ধরে বের করে দিলেও, তসলিমার কি দেশে ফিরতে ইচ্ছে করেনা? পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখা নিজামী-সাঈদী কি পাকিস্তানে চলে যেতে পারতোনা? মার্কিন প্রবাসী মিনা রানী সাহার কি ইচ্ছের করেনা দেশে পিতার ভিটায় আসার? নাগরিকত্ব বাতিল বা তার আগেই নাগরিক অধিকার কেড়ে নেবার মানসিকতা থেকে কবে মুক্ত হবো? সরকার এবং তার পোষ্য আদালত ঠিক কি ধরনের নাগরিক আচরণ প্রত্যাশা করেন? কতটা বাধ্য, কি রূপে বাধ্য নাগরিক তারা চান? সেইসব বুঝবার মত জাতীয়তাবাদী জ্ঞান কি দেশে ৭০ ভাগ মানুষের আছে?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:০৬
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×