somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুলনার দাদা ম্যাচের কান্না থামছে না

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পিএফ, গ্রাচ্যুইটির প্রায় ৬ কোটি আর ১০ মাসের বেতন বাবদ এক কোটি টাকা পাওনা থাকলেও বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন বন্ধকৃত খুলনার ঐতিহ্যবাহী দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরীর শ্রমিকরা। দাদা ম্যাচ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের খোদ সভাপতিই টাকার অভাবে চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে না পেরে বাসায় অবস্থান করছেন। ঋণগ্রস্ত হয়ে খুলনা, ঢাকা এমনকি কলকাতা থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করে এখন বিত্তবানদের কাছে সাহায্য চাচ্ছেন আলমগীর হোসেন নামের এক শ্রমিকের প্রতিবন্ধী স্ত্রী। আর ২০১০ সালে বন্ধের পর এ পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত ৭০ জন শ্রমিক। মৃত্যুবরণকারী এসব শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা কে কোথায় তারও কোন হদিস নেই। এভাবেই নিরবে কাঁদছে দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী ও এর শ্রমিকরা। খুলনাবাসীর প্রশ্ন দাদা ম্যাচের যৌবন কি আর কোনদিন ফিরে আসবে ? কবে শেষ হবে দাদা ম্যাচের কান্না ? শুধু কান্নাই নয়, যেটুক সম্পদ আছে তাও এখন অনিরাপদ। সবকিছুই চুরি এমনকি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে রূপসা নদীর পানি উঠে যন্ত্রপাতি যাতে ধ্বংস না হয় সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আবেদন করেছেন দাদা ম্যাচের শ্রমিক নেতারা। কিন্তু এভাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত, বৈঠক আর আলোচনা চললেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে উৎপাদন এবং একই বছর ১৮ আগষ্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণার পর নানা নাটকীয়তা চলে দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী চালু নিয়ে। বন্ধের এক বছরের মাথায় ২০১১ সালের ৫ মার্চ খালিশপুরের জনসভায় বিসিআইসির আওতায় দাদা ম্যাচ চালুর ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকেও পত্র দেয়া হয় বিভিন্ন দপ্তরে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের বেঁকে বসার কারণে শেষ পর্যন্ত চালু না করেই সরকারের প্রথম দফার মেয়াদ শেষ হয়। এরপর দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলেও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী চালু হয়নি। আর মিলটি চালু না হওয়ায় ৪২ জন থেকে এখন ৮/৯ জনে দাঁড়িয়েছে নিরাপত্তা কর্মী। তা’ থেকেও কেউ কেউ ডিউটি না করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। মাত্র ৪/৫ জন নিরাপত্তা কর্মী ডিউটি করায় পুরো ফ্যাক্টরী পাহারা দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে প্রায়ই সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল চুরি হচ্ছে। রোববার রাতে ঢাকা ম্যাচ(দাদা ম্যাচ) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষের তালা ভেঙ্গে চুরি হয় কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ঘড়ি, টেলিফোনসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। এর আগে যন্ত্রপাতি চুরির সময় হাতে-নাতে ধরে পুলিশে দেয়া হয় একাধিক ব্যক্তিকে। কিন্তু চুরি রোধ করা যাচ্ছে না কোনভাবেই।
চুরির পাশাপাশি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় গুরুত্বপূর্ণ মেশিনারীজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গত বছরের ন্যায় আগামী বর্ষা মৌসুমকে নিয়েও চিন্তিত এর শ্রমিকরা। যে কারণে সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আবেদন করা হয়েছে দাদা ম্যাচ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে। আবেদনে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরীর সামনের রূপসা নদী থেকে যাতে পানি উপচে না উঠতে পারে সেজন্য বাঁধ দেয়া ও সøুইস গেট নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে।
এভাবে চুরি ও মালামাল নষ্টই নয়, বরং কোটি কোটি টাকা পাওনা থাকলেও অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে দাদা ম্যাচের শ্রমিকদের। কেউ চিকিৎসা নিতে না পেরে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য কামনা করেছেন। আবার কেউ মান-সম্মানের ভয়ে বিনা চিকিৎসায়ই দিন কাটাচ্ছেন। এরকমই একজন দাদা ম্যাচ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেন দিলখোশ। সম্প্রতি তিনি কিডনিসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হলে শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। কিন্তু অর্থাভাবে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পারেননি। ফ্যাক্টরীর অপর এক শ্রমিক আলমগীর হোসেন যক্ষ্মাসহ অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে দৃষ্টিহীন অবস্থায় রয়েছেন। তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকার বার্ডেম হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনষ্টিটিউট এমনকি কলকাতা জিডি হাসপাতালেও। কলকাতা থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে দু’লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন হবে। কিন্তু এত অর্থ না থাকায় তার প্রতিবন্ধী স্ত্রী সরকারী বিভিন্ন দপ্তরসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছেন।
এছাড়া ফ্যাক্টরী বন্ধের পর এ পর্যন্ত অন্তত ৭০ জন শ্রমিক বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন বলে জানান ফ্যাক্টরীর শ্রমিক নেতারা। এর মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন, আঃ আজিজ, আঃ মান্নান, আনোয়ার হোসেন, নূরুল ইসলাম, মানিক, নূরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন, আবুল বাশার, লুৎফর রহমান, হাবিবুর রহমান, মুনসুর, জামিল হোসেন, শামসু সানা, এলাহী বক্স, কেয়াম উদ্দিন, আঃ কুদ্দুস, মোহন ও বাদল ব্যাপারী। মৃত্যুবরণকারী এসব শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা কে কোথায় কিভাবে আছেন তারও কোন হিসাব পাওয়া যায়নি।
দাদা ম্যাচ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম শাহাদাৎ বলেন, সরকারের প্রধান ব্যক্তির প্রতিশ্রুতিকে উপেক্ষা করে দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী চালু না করার পেছনে বড় শক্তি কোথায় সেটি খতিয়ে দেখা উচিত। অর্থ মন্ত্রণালয় মাত্র ১০ কোটি টাকা ছাড় না দেয়ায় ফ্যাক্টরীটি চালু হচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেন এ শ্রমিক নেতা।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব আলহাজ্ব শেখ মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী চালু করা উচিত। এজন্য আগামী জাতীয় বাজেটেও প্রয়োজনী অর্থ বরাদ্দ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অবশ্য বিসিআইসির আওতায় চালুর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি থাকলেও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরীর জমিতেও আইটি ভিলেজসহ অন্য কিছু করা যায় কি না সেটি দেখার জন্য বলা হয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে। সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে খুলনার জেলা প্রশাসনকে পত্র দিয়ে একথা জানানো হয় বলে জেলা প্রশাসক আনিস মাহমুদ জানান।
তবে এ প্রসঙ্গে খুলনার নাগরিকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একটি প্রকল্প শুরু করে কিছুদূর এগিয়ে নেয়ার পর সেখানে অন্য প্রকল্প নিয়ে চিন্তা করার অর্থই হচ্ছে প্রকল্পটির পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করা। যেমনটি করা হচ্ছে খুলনা টেক্সটাইল পল্লী নিয়ে। এ ধরনের নাটকীয়তা পরিহার করে দাদা ম্যাচ, টেক্সটাইল পল্লী, নিউজপ্রিন্টসহ সকল বন্ধ শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু করা উচিত বলেও খুলনার নাগরিকদের দাবি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×