somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিষিদ্ধ হোক সাম্প্রদায়িক শব্দ দুটি - মালাউনের বাচ্চা

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অমুসলিম ভাই ও বন্ধুদের কথা

মাঝে মাঝে ভাবি, আমার যেসব হিন্দু, খৃষ্টান, চাকমা বন্ধু ছিলো, যাদের সাথে একসময় একসাথে চলাফেরা করেছি, স্কুলে গিয়েছি, কিংবা অন্য ধর্মের বড় ভাই যাদের সাথে কত আড্ডায় মেতেছি তাদের সংগে আমি কতটা খারাপ ব্যাবহার করতে পারবো? আমার খুব কাছের এক বড় ভাই ছিলেন। তার নাম রাজু। রাজু দা ছিলেন এমসি কলেজ ছাত্র ইউনয়নের সেক্রেটারী। পুরো নাম অম্লান দেব রাজু। আমি একসময় উনাদের সাথে একই মেসে থাকতাম। যেহেতু তিনি ছাত্র ইউনিয়ন করেন সেহেতু আদর্শের জায়গায় উত্তর মেরু-দক্ষিন মেরু অবস্থান। রা্ত পার হয়েছে তর্ক করতে করতে। কখনো কখনো এমন হয়েছে রেকর্ডার নিয়ে বসেছি। যাতে ইতোমধ্যে বলা কোন কথা আমরা চেঞ্জ না করতে পারি। ত্যাক্ত হয়েছি, বিরক্ত হয়েছি, তুমুল ঝগড়া হয়েছে, শেষে আপনার সংগে আর কোন কথা নেই বলে আমরা রণভঙ্গ দিয়েছি। আবার পরেরদিন নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। এতো গেলো রাজু'দার কথা। এছাড়াও আরো অনেক বন্ধু-ভাই রয়েছেন যাদের সাথে জিবনের কোন এক সময় একসাথে চলেছি, এক সাথে খেয়েছি, এক সাথে রাত জেগে জোছনা পাহারা দিয়েছি।

নৈতিকতার শিক্ষা কতটুকু ধারন করি

আচ্ছা এই যে মানুষ গুলোর সাথে আমার এতো সম্পর্ক ছিলো। যাদের ধর্ম আমার ধর্ম থেকে আলাদা। তাদের সাথে আজ কোন কারনে মনোমালন্য হলে কিংবা তখনো যে মনোমালন্য হয়েছে তাতে করে সর্বোচ্চ কতটা খারাপ ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পেরেছি। রাজনৈতিক আদর্শগত কারনে অনেক বিবাদ হয়েছে বলে তাদেরকে কি কোন দিন আমি "মালাউনের বাচ্চা" বলে গালি দিতে পেরেছি? কিংবা আজো কি তাদেরকে "মালাউনের বাচ্চা" বলে গালি দিতে পারবো? আমি অনেক ভেবে চিন্তে নিজের মাঝে আবিষ্কার করলাম অনেক খারাপ ব্যবহার হয়তো করতে পারবো কিন্তু কোনদিন "মালাউনের বাচ্চা" বলে গালি দিতে পারবোনা। কারন আমার পরিবার, আমার পিতা-মাতা, আমার ধর্ম, আমার নবী আমাকে এই শিক্ষা দেন নি। আমি সেই আদর্শ এখনো আমার বুকের মাঝে লালন করি, যে আদর্শ আমাকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের, কেবল মাত্র ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়ার কারনে তাকে এমন অসভ্য বলে গালি দেয়া থেকে বিরত রাখে।

কথিত প্রগতীশীলদের সাম্প্রদায়িক চেহারা

গত কয়েকদিন যাবৎ আমার মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছে শাহবাগে জড়ো হওয়া তরুনদের সংগঠনের মধ্যে অন্তর্কলহ থেকে মারামারির বিষয়টি। এক হিন্দু ছেলের উপর হাত উঠাতে ও মারধর করতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের দ্বারা নিগৃহীত হওয়ার এক পর্যায়ে তাকে "শালা মালাউনের বাচ্চা" বলে গালি দেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা প্রায় ফ্যাসিবাদী শাহবাগ আন্দোলনের পানি অনেক দিন যাবৎ অনেক দিকেই গড়িয়েছে। শাহবাগের আন্দোলন হচ্ছে আওয়ামীলীগের নিজস্ব আন্দোলন, এই আন্দোলনের সমস্ত সাপোর্ট, জনবল যোগান, নিরাপত্তা, সকালের নাস্তা, বিকেলের ডিনার, যাবতীয় লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়া হয়েছে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে। শাহাবাগ ও আওয়ামীলীগ একে অপরের পরিপূরক ছিলো, এখনো আছে। সেখানেই অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা ও ভিক্টিম নবেন্দু একে অপরের খুব পরিচিত কিংবা অন্তরঙ্গ হন। শাহবাগ আন্দোলনের শুরু থেকে এরা পরষ্পর পরষ্পরের হয়ে কাজ করছেন। কিন্তু আজ ভাগ্যের নির্মম কোন এক পরিহাসে তারা শত্রু হয়েছেন। রাজনীতি ও নোংরা রাজনীতিতে আমাদের দেশে আজকের বন্ধু কাল শত্রু আবার আজকের শত্রু কাল বন্ধু হয়ে যেতে পারেন কিন্তু তাই বলে কারো ধর্ম তুলে গালাগাল, "শালা মালাউনের বাচ্চা" বলে একজনের শিকড় ধরে গালাগাল মেনে নিতে কষ্ট হয়, কারন হিন্দু বিরোধী বলে যেসব সংগঠনের নাম আমাদেকে গেলানোর চেস্টা করা হয় যেমন, ছাত্রদল বা ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে আজো আমরা এমন গালি দিতে শুনিনি কখনো কোনদিন কোন হিন্দু ভাই-বোনকে উদ্দেশ্য করে। কিন্তু প্রগতীবাদের তথাকথিত ধারক সংগঠন ছাত্রলীগ তাদেরই ভোট ব্যাংক হিন্দু ধর্মের কোন ব্যাক্তিকে যখন "শালা মালাউনের বাচ্চা" বলে গালি দেয় তখন প্রগতীশীলতার সংজ্ঞা কি তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হয়।

আসাম্প্রদায়িকদের আরো কৃষ্ণ চেহারা

চরম আদর্শগত সংঘাত থাকার কারনে যাদের সংগে বিভিন্ন সময়ে ঝগড়া কিংবা বাক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলাম তাদেরকে আমি কোন দিন এমন একটি রেসিস্ট গালি দিতে পারিনি। কিন্তু একই আদর্শের সতীর্থ হয়েও যখন ছাত্রলীগ নবেন্দু কে এই চরম প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্প্রদায়িক ও রেসিস্ট গালি দিতে পারে তখন বুঝতে বাকী থাকেনা এসব সংগঠনের নৈতিক মান কোন পর্যায়ের। এখানেই শেষ নয়, আরো দুঃখের বিষয় হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতার শ্লোগানে ভরপুর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পালিত গুন্ডা পুলিশও যখন নবেন্দুকে পেঠানোর সময় "মালাউনের বাচ্চা" বলে গালি দেয় তখন সরকার, সরকারী দল, সরকারী কর্মচারী, সরকারের পুলিশ, র‌্যাব, বিডিআরদেরও নৈতিকতার অধঃপতন দেখে লজ্জায় মুখ লুকাতে হয়। ছাত্র লীগের সর্বোচ্চ মুরুব্বী ও বাংলাদেশ পুলিশের অভিভাবক হিসেবে এই সাম্প্রাদায়িক রেসিস্ট গালির দায়ভার কি প্রধানমন্ত্রীর উপর কিছুটা হলেও বর্তায় না?

সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনের ব্যার্থতা

সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে আমরা অনেক শ্লোগান শুনি, মিছিল দেই, বড় বড় গলায় বক্তৃতাবাজি করি। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে কারো কারো স্বার্থের পক্ষে দালালী করি, কিন্তু প্রকৃত অর্থে আমাদের যুদ্ধটা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে হয়না। হয় কোন বিশেষ দলের বিরুদ্ধে, হয় কোন বিশেষ ধর্মের বিরুদ্ধে, হয় কোন বিশেষ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। তাই আমার কাছে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করছেন তাদের জন্য বিশেষ করুনা হয়। তারা না সাম্প্রদায়িকতা দূর করতে পারছেন, না সাম্প্রদায়িকতা চিহ্নিত করতে পারছেন, না সাম্প্রদায়িকতার ভয়াবহতা সত্যিকারভাবে অনুধাবন করতে পারছেন। আর তাই আজ যাদের নিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তথাকথিত যুদ্ধ করা হচ্ছে তারাই একে অপরকে "মালাউনের বাচ্চা" বলে গালি দিচ্ছে।

একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মানের স্বপ্ন

আমার কাছে সবসময় বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনের ব্যর্থতার মূলে রয়েছে একটি বিশেষ দলের দালালিবাজি, সেই বিশেষ দলটির স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কাজ করা। সাম্প্রদায়িকতা ও সংখ্যালঘুদের হেয় করা ও তাদের সাথে অন্যায় আচরন করা বলতেই এদেশে যেমন করে বিএনপি-জামায়াত চিহ্নিত করার চেস্টা করা হয় সে সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সাম্প্রদায়িকতার মূল চিহ্নিত করতে হবে। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প সম্পর্কে অবগত হতে হবে। আজ আমরা যদি এই দুই শব্দের ছোট্ট গালিটিকে সিরিয়াসলি না নিয়ে উড়িয়ে দেই তাহলে কাল আমরা হয়তো হিন্দু মুসলিম দাঙ্গাকেও প্রশ্রয় দেয়ার বাহানা খুঁজে নেব। তাই নিষিদ্ধ হোক ঘৃনিত এই শব্দ দুটি। মুছে যাক সমাজ থেকে এই ধরনের সাম্প্রদায়িক গালি। মুলোৎপাটন করি যাবতীয় রেসিজমের।

সবাইকে সদা সতর্ক হওয়ার তাগিদ দিচ্ছি। আসুন সকলে মিলে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। আসুন আপনার আমার সকলের জন্য, আমাদের অমুসলিম বন্ধু-বান্ধবদের জন্য একটি সুখী সুন্দর সমাজ বিনির্মান করি। যেখানে কোন উদ্ধত পুলিশ কিংবা কোন রাজনৈতিক ভারাটে "শালা মালাউনের বাচ্চা" বলে আমার বন্ধুকে গালি দিবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৩২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×