somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মিরপুর চিড়িয়াখানায় রেস্টুরেন্টের নামে প্রতারণা, দর্শনার্থীদের কাছ থেকে কৌশলে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অর্থ!

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকার মিরপুর চিড়িয়াখানায় যে এসব হচ্ছে আগে আমার জানা ছিলো না। অনেক দিন ব্যস্ততার মধ্যে কাটায় সহধর্মিণীর সাথে কোথাও বের হওয়ার ইচ্ছা ছিলো। তাই কম সময়ে যাওয়ার সুবিধা এবং কাছাকাছি হওয়ায় মিরপুর চিড়িয়াখানাকেই বেছে নিলাম।



সকাল থেকে পুরো চিড়িয়াখানা ঘুরে বেড়ালাম। এরপর দুপুরের কিছু আগে একটু ক্লান্ত হওয়ায় ভাবলাম কিছু খেয়ে নেয়া যাক। চোখের সামনে দেখতে পেলাম একটা রেস্টুরেন্ট, নাম ঈগল ক্যান্টিন। ওরা আমাদেরকে দেখা মাত্র ডাকতে শুরু করলো। ভাবলাম যেহেতু ডাকছেই, খেয়ে নিতে অসুবিধা কি?

তারা তাদের মূল দোকানের পেছনে নদীর (নাকি খাল, আমি শিওর নই। তবে বেশ মনোরম ছিলো জায়গাটা) কাছে কয়েকটা ছাউনি দেয়া জায়গায় নিয়ে গেল। এখানে ছাউনির বর্ণনা দেয়া উচিৎ। কিছু পিভিসি প্লাস্টিক দিয়ে ছাদের মত বানানো হয়েছে, আর চারপাশে হাটু সমান পিভিসি আর বাঁশের বাউন্ডারি দেয়া। ভেতরে পোকায় খাওয়া একটা কাঠের টেবিল, আর ময়লা দুটো প্লাস্টিকের চেয়ার। সেখানে ঢোকার সাথে সাথে ওরা মেন্যু এনে দিলো। ঢাকার নিউমার্কেটে এর চাইতে সাইজে বড় প্লেটের চটপটির দাম যেখানে ৪০ টাকা, এখানে দাম রাখা হচ্ছে ৮০ টাকা। সেই সাথে ২৫ টাকার ঠান্ডা পানীয়ের দাম রাখা হচ্ছে ৭০ টাকা।

তারপরও এটা নিয়ে আমি কোন অভিযোগ করলাম না। কারণ যেহেতু একটা বিনোদন এর কেন্দ্র, সুতরাং খাবারের দাম এখানে একটু বেশি হবে খুব স্বাভাবিক। দুই প্লেট চটপটি আর দুটো ঠান্ডা পানীয়ের অর্ডার দিলাম। খেয়ে উঠে বিল জানতে চাইলাম। লোকটা বললো,

"বিল হয়েছে ২৮০ টাকা, সার্ভিস চার্জ ৪০ টাকা, আর কেবিন চার্জ ৫৫০ টাকা।"

আমি একটু হতভম্ব হলাম, আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো, "হোয়াট? কেবিন চার্জ মানে?"
লোকটা বললো, "এই যে এখানে বসে খেলেন সেটার চার্জ দিতে হবে না? চার্জ ৫৫০ টাকা।" এইবার একটু রাগ হল, "তাই বলে দাঁড়িয়ে খাবো নাকি? বসে খেলে ৫৫০ টাকা চার্জ দিতে হবে মানে কি? ফাইজলামী পেয়েছেন?"
লোকটা তখন বললো, "এত কথা জানিনা, এটা আমাদের রেট করা, দিতে হবে।"

এবার আমি বললাম যে আমি অমুক পত্রিকার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করি, আপনাদের মালিককে ডাকুন, আমি তার সাথে কথা বলি। তাকেই জিজ্ঞেস করি কেন এবং কি কারণে এখানে বসে খেলে ৫৫০ টাকা চার্জ দিতে হবে। লোকটা এইবার একটু গাঁই গুঁই শুরু করলো। এরপর বললো, "আসলে এটা সবাই জানে এখানে। মানুষজন এখানে বসে খায়, এর পর খুশি হয়ে যা দেয় তাই আমরা নেই!"

আমি বললাম, "ভালো কথা, বুঝলাম। আপনার মালিককে ডাকুন, জিজ্ঞেস করি। কিসের এত কেবিন চার্জ, আর এটা কিসেরই বা কেবিন। আর দুইটা চেয়ার, পিভিসি ছাউনি আর একটা পোকায় খাওয়া টেবিল দিয়ে কেমনে কেবিন হয় সেটাও জানা দরকার।"

এবার হাতে সমিতির খাতা নিয়ে এক লোক উপস্থিত হয়ে ঘটনা জানতে চাইলেন। তাকে যখন জিজ্ঞেস করলাম তিনি মালিক কি না, তিনি উত্তর না দিয়ে আমাদের বিদায় দিতে চাইলেন। আমি আরো কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম, তবে তারা আর কথা বলতে রাজি হলেন না। বললেন, "আপনাদের টাকা দিতে হবে না, সমস্যা নেই। আপনারা যান।"

পরে এদিক সেদিক ঘুরে চিড়িয়াখানার রক্ষণাবেক্ষণ কারীদের কাছে জানতে পারলাম এখানে কতিপয় রাজনৈতিক নেতার বেশ প্রভাব আছে, তারা প্রতিদিন একটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এইসব রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করেন এবং এর থেকে প্রতিদিন কেবিন চার্জের নামে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করা হয়। যখন দর্শনার্থীরা খেতে আসেন, তখন কিন্তু এই চার্জের কথা তাদের জানানো হয় না। বরং রেস্টুরেন্টের কর্মচারীরা একরকম জোর করে নিয়ে খেতে বসায় তাদের। তারপর কেউ সেখানে বসে খাওয়া দাওয়া সারার পরই তার কাছ থেকে কেবিন চার্জ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দাবি করা হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দর্শনার্থীদের তা না দিয়ে উপায় থাকে না।

আজকে হয়তো আমি প্রতিবাদ করাতে বেঁচে গেছি, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মান সম্মানের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করেন না। কার কাছে সাহায্য চাইবো, কিংবা কার দৃষ্টি আকর্ষণ করবো জানি না। কেবল এটুকু জানি যে এই ধরণের অপরাধ চলতে দেয়া উচিৎ নয়!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×