somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের কাল্পনিক পাকিস্তান সফর(একটি ক্ষুদ্র প্রতিবাদ)

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জিহাদে আযাদ মুজাহিদের এর সদস্যরা গিলগিতের পহাড়ি অঞ্চলে মিলিত হয়। এদেরকে অপরেশন নাইন ডাবল ওয়ানের জন্যে বিশেষভাবে সিলেক্ট করা হয়েছে। খুররম এই টিমের লিডার। অবশ্য তার নাম খুররম নয়। এই অপরেশনে তার নাম খুররম। সে সবাইকে নিয়ে মিটিংয়ে বসে। সদস্যদের উদ্দেশ্যে সে জেহাদি ভাষন দেয়:

“মুজাহিদো হাম লোগোকো ইস ইমতেহান কো জিতনে হোঙ্গে। হামারা মাকসাদ সিরফ কামিয়াবি। হাম হার নেহি মানেঙ্গে। হামারে মুজাহিদ ভাইয়োকো আযাদ করনে কে লিয়ে হামলোগোকো কিসি ভি হাদ পার করনে হোঙ্গে। অওর হামারে কাম মে যো ভি মুসিবাত খাড়ি কারেঙ্গে উসকো খোদা কি ওয়াস্তে হাটা দেঙ্গে। আল্লাহু আকবার।”

টিমের সবাই আল্লাহু আকবার বলে বিকট চিৎকার দেয়। গিলগিতের পাহাড়ি অঞ্চল তা কয়েকবার প্রতিধ্বনিত হয়।

তারা কাজে লেগে পড়ে। নির্জন পাহাড়ি অঞ্চলে তারা বেশ কয়েকবার মহড়া করে। মুল প্লান এখন ও জানানো হয়নি। কিন্তু মহড়ার আদেশ দেয়া আছে।

খুররম তার বিগ বস জাফরকে(ছদ্মনাম) কল করে। জাফর আইএসআইয়ের বেশ বড় একজন কর্মকর্তা।
রিং হয়।
বিগ বস?
পাসওয়ার্ড।
এসটুয়েন্টিফোর।

এর পরেই ফোন কেটে যায়। পরপরই একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল আসে। সে রিসিভ করেভ
এসটুয়েন্টিফোর অল কনফার্মড। গেট রেডি। আ রেড কার নিয়ার গিলগিত। অল দ্যা প্লানস ইন আ লকার। নাম্বার ইজ 2046589. এগেইন 2046589।
ক্লিয়ার বস।

খুররমকে লাহোরে যেতে হবে। সে টিমের সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেয়। এই কয়দিন সেই হবে লিডার। সে লাহোরের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। টিমের কয়েকজন সদস্যকে এখানে থাকতে হবে আর কয়েকজনকে ১০ জানুয়ারি লাহোর যেতে হবে। সে সবকিছু বুঝিয়ে দেয় তাদের।

লাহোর ব্যাংক থেকে সে তার লকার থেকে ব্রিফকেসটি বের করে আনে। এটার কম্বিনেশন নাম্বার বস বলে দিয়েছে। সে ধীরেসুস্থে হোটেল রুমে যায়। অপারেশনের প্লান তাকে কিছু বলা হয় নি। সব কিছু এই ব্রিফকেসে আছে। সে কম্বিনেশন নাম্বারটি প্রবেশ করায়। খুট করে ব্রিফকেসটি খুলে যায়।

ভেতরে একটা প্যাকেটে একটা মোবাইল ফোন আর একটা পেনড্রাইভ আছে। সে প্রথমে মোবাইলটি চালু করে। প্রায় সাথে সাথে তার কাছে একটি কল আসে। সে রিসিভ করে।
এসটুয়েন্টিফোর?
রাইট।
কিপ দ্যা ফোন ওপেন টিল 13 জানুয়ারি। কল ইউ লেটার।
বলেই ফোন কেটে দেয়।
খুররম পেনড্রাইভ হতে সব প্ল্যান টুকে নেয়।
প্রথমেই সে সেলুনে গিয়ে মাথা ন্যাড়া করে, দাড়ে কেটে পরিষ্কার করে ফেলে।
তারপর অন্য একটি হোটেলে গিয়ে ওঠে।
তখন একটি প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল আসে। সে বুঝে যায় বিগ বস কল করেছে।
এসটুয়েন্টিফোর?
ইয়েস বস।
খুররম হামারে প্ল্যান..........




১১ জানুয়ারি সকাল দশটায় বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন মুশফিকুর রহিম এবং গোটা বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম লাহোর বিমারবন্দরে অতরন করে। এয়ারপোর্টে অপেক্ষারত পাকিস্তানি সাংবাদিকদের ক্যামেরা গুলো সব একসাথে ফ্ল্যাশ করে ওঠে। মুশফিকদের কাছে ভিড়তে দেয়া হয় না কাওকে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদেরকে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। হোটেলেও কোন সাংবাদিক তাদের সাথে কথা বলার অনুমতি পায় না। ন্যাড়া মাথার একজন লোক সব সাংবাদিকদের হটিয়ে দেয়।

হোটেলে পোঁছে টিমের সবাই হাসিখুশি থাকার অভিনয় করে। কিন্তু কাচা অভিনয়। তাদের মনের উৎকণ্ঠা তাদের মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠছে।
মুশফিক সবাইকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করে। ইনডোর প্র্যাকটিস করে সবাই। আগামীকাল ওয়ানডে ম্যাচ।



১২ জানুয়ারি রাত নয়টা। সারা বাংলাদেশ আনন্দে ভাসছে। কারন সফরের একমাত্র ওডিআই ম্যাচটি বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দারুণ ভাবে জিতে নিয়েছে। এশিয়া কাপের হারের ক্ষত এই জয়ে ঢাকা পড়ে যায়। বাংলাদেশ হতে একের পর এক কল আসছে টিমের সদস্যদের কাছে। সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছে। আর একটা টি টুয়েন্টি ম্যাচ তারপরই দেশে ফিরবে টিম বাংলাদেশ। প্লেয়াররা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। এছাড়া সফরের আগের উৎকণ্ঠা অনেকখানি কমে যায় সবার মন থেকে। বেশ ফুরফুরা মেজাজে সবাই ডিনার করে।

মুশফিকের বৃদ্ধ বাবা ছেলের সাথে আসতে পারেন নি। বাকপ্রতিবন্ধী স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে। আদরের ছেলেকে ফোন দিয়ে আপ্লুত হয়ে গেলেন তিনি।
বাবা আমাদের জন্যে দোয়া করবেন। কালকেই খেলা শেষ হয়ে যাবে। আল্লাহ চাইলে আমরা ভালভাবেই ঘরে ফিরবো।
তার বাবা কিছু বলতে পারেন না। বৃদ্ধ লোকটি রুমালে অশ্রু মোছেন।
মুশফিক হোটেলের লবিতে সেই ন্যাড়া মাথা লোকটিকে দেখে। লোকটি তার দিকে তাকিয়ে হাসে। জবাবে মুশফিকও একটি হাসি দেয়।

১৩ জানুয়ারি সকাল আটটায় বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম এবং সাথে থাকা ম্যনেজমেন্ট গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বাসে সবাই বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে। গতকালের জয়ের রেশ এখন ও কাটেনি। রিয়াদ এবং তামিম সবার সাথে বেশ মজা করছে। সাকিবের আইফোনে তার নববধুর ছবি দেখে সবাই সাকিবকে নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করে। সাকিব লাজুক হাসি হাসে।

শুধু মুশফিক একটু গম্ভীর যেটা তার স্বভাবের সাথে মেলে না। তার মনটা কেন জানি ভার ভার হয়ে আছে। তবুও তার চিন্তা জুড়ে ম্যাচের কথা ঘুরপাক খায়। নাহ্ রিয়াদ ভাইকে তিন নম্বরে নামালেই বরং ভালো হবে। সাকিবকে উপরে পাঠাবো আজ। মনে মনে ভাবে সে।

হঠাৎ কি হয়? বাসটি একটা শব্দ করে থেমে যায়। নিরাপত্তার দায়িত্বে একটি গাড়ি ভর্তি পুলিশ আছে এবং ওপরে হেলিকপ্টার রয়েছে সার্বক্ষণিক। কিন্তু মুশফিকের মনে কেন জানি কু ডাকে।

সে দ্রুত জানালা দিয়ে তাকায়। নিরাপত্তার গাড়িটিতে কয়েকজন অস্ত্রধারি অতর্কিতে হামলা চালায়। বেশ কয়েকজন পুলিশ নিহত হয়। তারপর তারা বাসের দিকে গুলি ছুড়তে থাকে। সবাই মাথানিচু করে। বাসে বেশ কয়েকজন অস্ত্রধারি জঙ্গি উঠে পড়ে। বাসের ড্রাইভারকে তারা খুন করে ফেলে।

কয়েকজন ক্রিকেটারের গায়ে গুলি লাগে। ‍মুশফিক সেই হোটেলের সেই ন্যাড়া মাথা লোকটিকে দেখে। লোকটি চিৎকার করে বলে:
পেয়ারে দোস্তো ইয়ে এক জিহাদি অপারেশন হ্যায়। আপলোগোকো কুরবানি দেনে হোঙ্গে। সাব লোগ আপনে ফোন মুঝে দো।
এরপরই লোকটি এক রাউন্ড গুলি বর্ষন করে। সবাই ভীত হয়ে যার যার মোবাইল লোটিকে দেয়।

মুশফিক দিশেহারা হয়ে তাকিয়ে দেখে তামিম এবং রিয়াদের গায়ে গুলি লেগেছে। মুশফিক আশা করে হেলিকপ্টারটি থেকে সহায়তা করা হবে। কিন্তু অজানা কোন কারণে হেলিকপ্টারটি শুধু উপরে বার কয়েক ঘুরপাক খায়। মুশফিক বুঝতেই পারে না কি এক গভীর পরিকল্পনা করে তাদের অপহরণ করা হচ্ছে। যে পকিল্পনায় আইএসআই জড়িত রয়েছে।

সকাল নয়টা।
গোটা বংলাদেশ স্তম্ভিত হয়ে যায়। সবগুলো চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে যে ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে জেহাদে আযাদ মুজাহিদ নামক একটি জঙ্গি দল অপহরণ করেছে। তাদের গুলিবর্ষনে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার আহত হয়েছেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাঁচজন পুলিশ এবং ক্রিকেটারদের বহনকারী বাসের চালক হামলায় নিহত হয়েছেন। এ সংক্রান্ত সকল দায় দায়িত্ব তারা স্বীকার করেছে। পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে উদ্ধার করার জন্যে।’

সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তোলপাড় ঘটে যায়। প্রধানমন্ত্রী জরুরি মিটিং শেষ করেন। তার প্রেস সচিব মিডিয়াকে জানান যে জঙ্গিরা বাংলাদেশে সরকারের সাথে যোগাযোগ করে জানায় যে যুদ্ধাপরাধের দাযে যাদেরকে সরকার গ্রেপ্তার করে রেখেছে তাদের সবাইকে ৪৮ ঘন্টার মাঝে মুক্তি না দিলে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের প্রতিটি সদস্যকে হত্যা করে তাদের লাশ বাংলাদেশে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসিকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ক্রিকেটারদের জন্যে মন্দিরে মসজিদে গীর্জায় প্রার্থনা করতে থাকে। চরম উৎকণ্ঠায় পরবর্তী ব্রেকিং নিউজের অপেক্ষা করতে থাকে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পাকিস্তান সফরের সিদ্ধান্তের একটি ক্ষুদ্র প্রতিবাদ। আমার এবং জটিল বাক্যের যৌথ প্রচেষ্টা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫০
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×