somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাসর

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটা একটু অন্যরকম । আর দশটা মেয়ের মত না । পাশাপাশি বাসায় থাকে অথচ ওর চেহারাটা ভালভাবে দেখতে পায়নি রুমি । ওর নাম সাথী । লোকমান সাহেবের তিন মেয়ের মধ্যে ও বড় । বাকী দুটো ছোট । মাঝে মাঝে রুমিদের বাসায় আসা যাওয়া করে । মায়ের সাথে বা একা একাও । প্রায় পাঁচ বছর যাবত লোকমান সাহেব আর রুমিদের পরিবার পাশা পাশি বাসায় বাস করে । টিনশেড বিল্ডিং । প্রতিটিতে দুটি করে মোট ছটি বাসা । সরকারী কোয়ার্টার । বাসাগুলোর সামনে পেছনে বেশ খালি জায়গা । তাতে নানা রকম গাছ গাছালি- আম , কাঁঠাল , নারিকেল , কামরাংগা । শহরতলীতে চমৎকার গ্রামীন পরিবেশ । পেছনে আবার একটা পুকুর আছে । এতে পাকা ঘাট আছে । ইউনিভার্সিটি বন্ধ থাকলে রুমির রুমমেটরা হলে থাকলেও ও চলে আসত মফস্বল শহরের এই বাসায় ।
ওর এ বাসায় তেমন থাকাই হয়নি । বাবা যখন বদলী হয়ে এলেন এ শহরে তার আগে থেকেই রুমি ঘর ছাড়া । সে ইন্টার করেছে নটরডেম থেকে । কজন মিলে ঢাকার আরামবাগে মেসে থেকেছে । ইন্টারের পর কোচিং । তাও ঢাকায় । শেষে বুয়েট । মাস ছয় আগে পাশ করে বেরিয়েছে । এর মাঝে একটি স্বায়ত্বশাসিত সংস্থায় চাকরি হয়েছে । চাকরীর বয়স দুমাস ।
লোকমান সাহেবের বড় মেয়েটি বেশ কিছুদিন ধরে ওকে ভাবাতে শুরু করেছে । উনার তিন কন্যার কাউকেই সে কোনদিন ভালভাবে লক্ষ্য করেনি । মনে হয় দু আড়াই বছর আগেও সবাই বেশ পিচ্চি ছিল । সাথী মনে হচ্ছে হঠাৎই বড় হয়ে উঠেছে । থার্ড ইয়ার ফাইনালের পর বাসায় এসে বিষয়টা রুমির নজরে পড়ে । মোড়ের দোকান থেকে সিগারেট কিনে ফিরছিল । পাশের বাসার দিকে তাকাতেই দেখল দীর্ঘ কাল চুল ছড়িয়ে মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে । এমন ভাবে পেছন ফিরে দাড়িয়ে আছে নুইয়ে করে রাখা মুখের একপাশের সামান্য দেখা যায় । রুমি চিনতে পারল না মেয়েটিকে । কে ও ? লোকমান সাহেবের বড় মেয়েটা ? সাথী ? অবশ্য মেয়েটি যখন ছোট ছিল ওদের বাসায় আসতো । রুমির ছোট বোন দীবার সাথে গল্প টল্প করতো । তখনো গুরুত্ব দিয়ে লক্ষ্য করা হয়নি ।
রুমির ছোট বোন দীবা শহরের ইউনিভার্সিটি কলেজে সেকেন্ড ইয়ার অনার্সের ছাত্রী । বাসায় ঢুকে দীবাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞেস করল আচ্ছা , ‘ লোকমান কাকার বাসায় কি কেউ বেড়াতে এসেছে ?’ এমন অদ্ভূত প্রশ্ন শুনে দীবা অবাক হল । বলল, ‘ কেন বলতো ?’
‘ দেখলাম বারান্দায় বড় একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।’
‘ উনাদের মেহমান এসেছে বলেতো জানিনা । সাথী নয়তো ?’
‘আমি কেমন করে জানব ?’
‘ বাহ , তুমি সাথীকে চিন না ?’
‘ মুশকিল । এত বছর পাশাপাশি আছি চিনি না বলি কিভাবে ? তবে সত্যি কথা হল আসলেই দেখে চিনতে পারবনা ।’ দীবা অবাক হয়ে চেয়ে রইল রুমির দিকে । বলল, ‘ কি অবিশ্বাস্য কথা বলছ তুমি । এত বছর পাশাপাশি বাসায় থাকছি । সামনে দিয়ে ছোট থেকে বড় হল । ওকে তুমি চিনতে পারবেনা একথা আমাকে মেনে নিতে বল ? নাকি সাধু সাজতে চাইছ ?’
‘ কি বলছিস তুই । সাধু সাজতে চাইছি মানে ?’ দীবা ওর পাঁচ বছরের ছোট । তবে ইদানিং খোঁচা দেয়ার কিংবা রসিকতার অভ্যাস ভালই রপ্ত করেছে ।
দীবা বলল, ‘ না মানে এইযে মেয়েদের দিকে তোমার কোন আগ্রহ নেই , ওদের মুখের দিকে চেয়েই দেখ না তুমি ।’
‘ শোন ফাজলামী করিস না । যা সত্যি তাই বলছি ।‘
‘আচ্ছা ঠক আছে । আমি খোঁজ নিয়ে তোমাকে জানাব ওই মেয়েটি কি মেহমান না সাথী ? আর সাথীকে এনে তোমার সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেব ।’
‘ দেখ দীবা উলটাপালটা কাজ করবিনা । ভুলে যাবিনা আমি তোর বড় ভাই ।’
‘ ঠিক আছে । ফাজলামী বাদ । তোমাকে শুধু খবরটাই এনে দেব ।’
রুমি তাকাল দীবার দিকে । ওর চোখে মুখে প্রচ্ছন্ন কৌতুক ।
সন্ধায় দীবা এসে হাসতে হাসতে জানাল কোন মেহমান নয় মেয়েটি স্বয়ং সাথী । দুষ্টুমীর হাসি ওর মুখে । রুমিকে জিজ্ঞেস করল, ‘ মেয়েটি কিন্তু খুব সুন্দর আর লক্ষী । পছন্দ হয় তোমার ?’
‘ কিসব বলছিস , ওকে তো ভাল করে দেখিইনি । পছন্দ অপছন্দের কি আছে ?’
‘ সেজন্যই বলছি ওকে এনে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই ।’
‘ কি আবোল তাবোল কথা বলিস ?’
‘ আবোল তাবোল কথা না ভাইয়া । ভেবে দেখ । মেয়েটা কিন্তু যথেষ্ট সুন্দর আর ভাল । সাথীর মা বাবা কত ভাল দেখ না ?’ কথা ঠিক । লোকমান সাহেব খুবই ভাল ও নিরিবিলি ধরনের মানুষ । অল্প কথা বলেন । বলেনও খুব নীচু স্বরে । দোকান টোকান বা ক্লাবে আড্ডা ফাড্ডায় যান না । ব্যবহার অতি মধুর । খালাম্মাও খুবই ভাল মহিলা । উনার সাথে দেখা হলে রুমির কিঞ্চিৎ কথা বার্তা হয় । যথেষ্ট ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মহিলা । পরিবার হিসেবে এরা সত্যিই ভাল ।
রুমির ভেতর কেমন নরম ভাব জমতে শুরু করেছে । কিন্তু সাথী কি কিছুটা অহংকারী ? দুতিন দিন পরের ঘটনা । বিকেলের দিকে রুমি বাসা থেকে বেরিয়েছে । বাসায় এলে এসময়টায় ও পার্কে ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করে । বেরিয়েই দেখতে পেল রাস্তার পারের ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে সাথী বাসার দিকে আসছে । ওর দৃষ্টি অবনত । কাছাকাছি আসতেই সে মাথা আরো নুইয়ে দিল । প্রায় নব্বই ডিগ্রীর কাছাকাছি । চেষ্টা করেও রুমি চেহারা ভাল করে দেখতে পেল না । মেয়েটি ফর্সা তবে একেবারে উজ্জ্বল ফর্সা নয় । বেশ লম্বা । এদেশের গড় মেয়েদের চেয়ে বেশি । পাঁচ ফিট তিন ইঞ্চির কম হবেনা ।
ওর চুলগুলো খবই সুন্দর । বেনী করেছে । পিঠের নীচ পর্যন্ত ঝুলে আছে । চমৎকার মোটা পেঁচান বেনী । মাথার উপর দিয়ে উড়না জড়ান । ক্রস করার পর রুমি আড়ে ঘাড়ের উপর দিয়ে চেয়ে দেখল সাথীর নোয়ান মাথা বেশ খানিকটা উপরে উঠল । এটা কি হল ? শুধু রুমির জন্যই চেহারাকে এভাবে আড়াল করল ? সৌন্দর্যের অহংকার ? নাকি রুমির প্রতি অবজ্ঞা ? ওর খানিকটা রাগ আর অভিমান হল । সাথী ওর মস্তিষ্কে স্থান দখল করতে থাকল । ফোর্থ ইয়ারে যে কবার বাসায় এল প্রতিবারই ওকে দু একবার যা দেখেছে সে ওই বারান্দায় গ্রীলে ঠেস দেয়া রাস্তার দিকে পেছন ফিরা অবস্থায় । শুধু ফোর্থ ইয়ার ফাইনালের প্রিপারেটরী লীভে একদিনের জন্য বাসায় এসে ছোট্ট ধাক্কা খেল রুমি । মোড়ের দোকানে দাঁড়য়ে সবে সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করেছে । দেখা গেল সাথী আসছে । একদম কাছে । অতিক্রমের সময় মুখ তুলে তাকাল । মুখোমুখি একেবারে চোখে চোখে। একপলকের জন্য । ওই একপলকই যথেষ্ট ছিল । রুমির হৃদয়ের গভীরে কবিতার পংতি জেগে উঠল । সুখের তারে মধুর সংগীতের ঝংকার ধনিত হল । রুমি ভাবল , এত সুন্দর গভীর চোখ মেয়েটির ! ওতো অহংকারী হতেই পারে !
রুমি অবাক হল ! অবহেলার কলি এমন ফুল হয়ে ফুটল কবে ? ছেলেবেলা সামনে দিয়ে কত ঘুরেছে । তেমন খেয়ালই করা হয়নি । ভেতরে অচেনা আন্দোলন শুরু হল । ফাইনাল পরীক্ষার চিন্তা মাথায় হাল্কা হয়ে এল ।

ফাইনালের ফলাফল হয়ে যাওয়ার পর রুমি তল্পি তল্পা সহ বাসায় চলে এল । সাথীকে বারান্দায় দেখা যাচ্ছে না । রাস্তা ঘাটেতো নয়ই । বিষয়কি ? দীবাকে জিজ্ঞেস করা যায় । কিন্তু এতে ঝুঁকি আছে । ও খেপানোর মওকা পেয়ে যাবে । না না করেও শেষে দীবাকেই জিজ্ঞেস করল । বলল, ‘ কিরে সাথী কিসে পড়ে ?’ দীবা মুখ বাঁকা করে জবাব দিল, ‘ সত্যি জাননা ? আরে ওযে এবার ইন্টার পরীক্ষা দিচ্ছে । পরীক্ষা চলছেতো ।’ রুমি এবার বুঝতে পারল কেন ওকে বারান্দায় দেখা যায়না ।
‘ কি মনে ধরেছে ওকে ?’ কেমন যেন চোখ নাচিয়ে প্রশ্ন করল দীবা ।
ওর দিকে কপাল কুঁচকে চাইল রুমি । জবাব দিল না ।
‘ দেখ ভাইয়া , হেলায় সুবর্ণ সুযোগ হারিও না ।’
‘ খুব পেকে গেছিস , না । কথা কম বলতে পারিস না ?’
‘ ঠিক আছে এখন থেকে কম কথা বলব ।’ বেনী দুলিয়ে বিদায় নিল দীবা ।
এর মাঝেই একটা স্বায়ত্বশাসিত সংস্থায় রুমির চাকরি হয়ে গেল । ময়মনসিংএ পোষ্টিং পেল । দ্বিতীয় মাসের বেতন পেয়ে বাসায় এসেছে । শুক্রবারের সাথে দুদিন সিএল এনেছে । লোকমান সাহেবের একজন জুনিয়র কলিগ আলতাফ সাহেব । উনি এলেন । রুমিকে বললেন , ‘ তোমার সাথে কিছু জরুরী কথা আছে, এসো । ‘ বলে রুমিকে নিয়ে উনি পার্কের দিকে চলে গেলেন । নিরিবিলি একটা বেঞ্চি দেখে বসলেন । রুমি খানিকটা অবাক হল । ব্যাপার কি ? কি এমন কথা যার জন্য ওকে একেবারে দূরে পার্কে নিয়ে এলেন আলতাফ কাকা । ‘ লোকমান সাহেবের মেয়ে সাথীকে কেমন লাগে তোমার ?’ একেবারে সরাসরি প্রশ্ন করলেন উনি । রুমি অবাক হয়ে বলল, ‘ কি ব্যাপার কাকা , এভাবে জিজ্ঞেস করলেন ?’
‘ বল, মেয়েটিকে তোমার কেমন লাগে ?’
‘ খারাপ লাগার কি আছে ?’
‘ তার মানে ভাল লাগে ?’
একটু ভাবল রুমি । বলল, ‘ জ্বি ভালই লাগে ?’
‘ ওকে বিয়ে করবে ?’
সাথে সাথেই কোন উত্তর দিলনা রুমি । আলতাফ কাকার মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল । বলল, ‘ কাকা আমার মনে হয় আপনি নির্দিষ্ট কিছু বলতে চান । তার পুরোটা একবারে বলুন ।’
আলতাফ সাহেব কিছু সময় ভাবলেন । রুমির আরো কাছে এগিয়ে বসলেন । বললেন, ‘ তুমি মনে হয় বুঝতে পারছ । তোমার বাবা মা সাথীকে তোমার বউ করে আনতে চান । সাথীর মা বাবাও রাজী । বরং ওদেরই আগ্রহ বেশি । এখন তুমি মত দিলেই হতে পারে ?’
‘ সবার মতামত জানলাম । কিন্তু সাথীর কি ইচ্ছে ?’
আলতাফ চাচা অবাক হয়ে বললেন , ‘ সাথীর কি ইচ্ছে মানে , আরে ও তো এক পায়ে খাড়া । নিজেকে কি ভাব তুমি ? তোমার মত সোনার ছেলে আর একটা দেখাওতো এই এলাকায় ! বলে সাথী রাজী কিনা ?’
রুমির বেশ ভাল লাগল কথাগুলো শুনতে । মনে হল ওই সুন্দর চোখ আর চুলের লম্বা মেয়েটা ওর হতে যাচ্ছে ।
‘ সবই ঠিক আছে কাকা । ধরুন আমারো পছন্দ হয়েছে । কিন্তু আমার তো কাকা বিয়ে করতে দেরী আছে ।‘
‘কেন বাবা , দেরী কেন ।’
‘ দেখেন কাকা মাত্র চাকরিতে ঢুকেছি । দু তিন বছর যাক । কিছু টাকা পয়সা জমাই । খরচ আছেনা ?’
‘ কিচ্ছু খরচ নেই । কোন অনুষ্ঠান হবেনা । ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হবে ব্যস । এতে তোমার আপত্তি আছে ?’
‘ কোন আপত্তি নেই । আমি বরং এটাই পছন্দ করি । কিন্তু তারপরো সময় দরকার ।’
‘ কেন সময় দরকার বলতো ? ওদের কোন চাহিদা নেই । তোমার বাবারও কোন চাহিদা নেই । ওরা মেয়েকে সাজিয়ে দেবে । ছেলের বউএর জন্য তোমার মাও সাত ভরির অলংকার গড়িয়ে রেখেছেন । তাহলে ?’
‘ কিন্তু আমার হাত একেবারেই খালি । এমাসের বেতনের চব্বিশশ টাকা আছে ।’
‘ আরে পাগল । তোমার কিছুই লাগবেনা । মেয়ের কাপড় শাড়ি সাজার জিনিস পাতি সব তোমার মা বাবাই কিনবে । তোমাকেও নিজের পছন্দ মাফিক কিছু কেনার জন্য তিন হাজার টাকা দেবে তোমার বাবা । এবার বল ঠিক আছে ?’
বেশ চিন্তায় পড়ে গেল রুমি । মাথার ভেতর ভাবনা জট পাকিয়ে যাচ্ছে । কি হচ্ছে এসব ? এত হুট হাট করে বিয়েতে মজা আছে ? তবে মেয়েটার চোখ দুটো ওকে টানছিল ভীষন ।
‘ কিন্তু কাকা , বাবা মাতো আমাকে কিছু বললেননা ?’
‘ তুমিকি বোকা ? এসব কথা কি মা বাবা বলে ? আমাকে পাঠিয়েছে কে ? ’
‘ কে, বাবা ? ’
‘ হ্যাঁ তোমার বাবা মাই পাঠিয়েছে । শুধু তারাই না । আমাকে আজ রাতেই লোকমান সাহেবকেও তোমার মত জানাতে হবে । এখন বল তুমি রাজী আছ ? বল আলহামদুলিল্লাহ ?’
আলতাফ কাকার অবস্থা দেখে রুমি অল্প হাসল । মনে হচ্ছে ও রাজী না হলে উনি নিজেই হার্টফেল করবেন । ‘ ঠিক আছে কাকা আমি রাজী । ’ আলতাফ সাহেবের দিকে চেয়ে বলল রুমি । কেউ যেন এতক্ষণ আলতাফ সাহেবের হার্ট খামচি দিয়ে ধরে রেখেছিল । এইমাত্র ছাড়ল । হো হো করে হেসে উঠলেন তিনি । ভাবটা এমন যেন এভারেস্ট জয় করেছেন ।

পরের মাসে বসের কাছে বলে শুক্রবারের সাথে আরো চারদিন সিএল নিয়ে বাসায় এল রুমি । বিয়ের জন্য আসা । ওর বেশ লজ্জা লাগছিল । ও বলেছিল বটে ওর হাত খালি । আসলে ওর হাত একেবারে খালি না । টিউশনির জমানো তিন হাজার দুইশ টাকা আছে ওর কাছে । বাবার কাছ থেকে পেয়েছে তিন হাজার । ও ভাবল নিজের জন্য দু একটা ভাল জামা কাপড় দরকার । সেদিন সকাল এগারটার দিকে গেল শহরের সবচেয়ে বড় কাপড়ের দোকানে । বিশাল দোকান । সার্ট প্যান্ট ছোট ও বড়দের , শাড়ি , সার্ট প্যান্ট স্যুটের কাপড় সবই পাওয়া যায় । সবসময়ই ভিড় লেগে থাকে । ও সার্ট প্যান্ট সেকশনের দিকে গেল । গিয়ে দেখল বেলী । সাথীর ছোট বোন । ক্লাশ সেভেনে পড়ে । বিগত পাঁচ ছয় মাসে এর সাথে ভালই খাতির হয়েছে । ওকে দেখতে পেয়েই বেলী বলল, ‘ কেমন আছেন ভাইয়া ভাল ?’
দু পাশে সাবধানে দৃষ্টি বুলিয়ে দেখে নিল রুমি আর কেউ আছে কিনা , সাথী বা লোকমান সাহেব আছে কিনা । মনে হল কেউ নেই । তাহলে বেলী কি একা এসেছে ? বলল ও, ‘ আমি ভাল আছি । তুমি ভাল আছ ?’
‘ ভাইয়া আপনি আসাতে ভাল হয়েছে । আমাদের একটু সাহায্য করুন । সার্ট পছন্দ করে দিন ।’
‘ তোমার আব্বুর জন্যতো ?’
‘ না না আব্বুর জন্যনা ।’ বলে ও পাশে তাকাল । রুমি দেখল বেলীর পাশেই সাথী দাঁড়িয়ে আছে । ধক করে উঠল ওর বুকের ভেতরটা । এ এতক্ষণ কোথায় ছিল ? কোথা থেকে এল ? রুমি দেখতে পেল না কেন ?
‘ বেলী বল উনার মতই একজনের জন্য । লম্বা চওড়ায় একই রকম ?’
এ আবার কোন স্টাইলে কথা শুরু করল । সাংঘাতিকতো । রুমিইবা কম যায় কেন । বলল, ‘ বেলী জিজ্ঞেস কর গায়ের রঙ কেমন ?’
‘ বেলী বল উনার মতই ।’ ওদের এমন কথা বার্তায় বেশ মজা পাচ্ছে বেলী ।
রুমি সার্ট পছন্দ করে দিল ।
সাথী বলল, ‘ বেলী বল আরেকটা পছন্দ করে দিতে ।’
রুমি বলল, ‘ একটাই যথেষ্ট । অপচয় করা ভাল না ।’
‘ বেলী বল দুটাতে অপচয় হয়না , এর বেশি হলে হয় ?’
‘ বেলী , বল এমন আজব থিওরীতো শুনিনি , এটা তো ছেলে হোক মেয়ে হোক দু সন্তানই যথেষ্ট সেই কথার মত মনে হচ্ছে ।’
‘ যেটার মতই মনে হোক বল আরেকটা সার্ট পছন্দ করতে ।’
রুমি ভাবল মেয়ে দেখি হেভী সেয়ানা । আরেকটা সার্ট পছন্দ করে দিল ও । এরপর পছন্দ করে দিতে হল স্যুটের কাপড় । টাই পছন্দ করতে গিয়ে বলল , ‘ এটা কিন্তু একটার বেশি কোনই প্রয়োজন নেই । ফাঁসির জন্য মজবুত রশি একটাই যথেষ্ট ।’
‘ বেলী বল ফাঁস একা নেয়া যাবেনা দুজনে নিতে হবে । মজবুত রশি তাই দুটোই লাগবে ।’ রুমি যেন ভিরমি খেল । ওরেব্বাপ, এতো ভয়ানক ট্যাটনা ।

আজ রুমি সাথীর বাসর রাত । সাথীদের মাঝের ঘরে । বারটার সময় রুমিকে ভেতরে ঢোকাল । খাট পুরনো তবে বিছানা বালিশ ঝকঝকে নতুন । তাজা ফুলে সাজিয়েছে মেয়েরা । আশে পাশের সব বাগানের ফুল ছিঁড়ে নিয়ে এসেছে মনে হয় । সাথীকে আগেই বসিয়ে রেখে গেছে । চমৎকার লাল শাড়ি পরে আছে ।
রুমি এসে সাথীর সামনে মুখোমুখি বসল । অবগুন্ঠনের ভেতরে অবনত মুখ । ফ্লোরসেন্ট বাতির আলো পড়েছে নক্সা আঁকা মসৃন মুখটিতে । কি সুন্দর ত্বক , ঠোঁট , নিমিলিত চোখ । রুমি মুগ্ধ বিস্ময়ে বলল, ‘ বাহ , কি অপরূপ রূপ তোমার ? তোমার অহংকার আমার মনে অভিমানের কষ্ট জন্ম দিয়েছিল , আজ তা ভুলে গেলাম ।’ সাথীর নিমীলিত চোখের পাঁপড়িগুলো সামান্য কাঁপল । ঠোঁট জোড়া অল্প নড়ল । তারপরো কিছু বলে উঠতে পারল না । রুমি বলল, ‘ তুমি কেমন আছ সাথী ? ’ কিছু বলল না মেয়েটি । তবে খাট থেকে নীচে নেমে এল । উবু হয়ে রুমির পায়ে হাত ঠেকিয়ে সালাম করল । রুমি বোধহয় এর জন্য তৈরী ছিল না । কি করবে ভেবে উঠতে পারল না । হঠাৎ সাথীকে দুহাতে বুকে টেনে নিল । জীবনের প্রথম নারী স্পর্শ ওর ভেতরে হাহাকার তৈরী করল । সুখ নায়েগ্রা প্রপাতের শব্দ আর গতি নিয়ে হৃদয়ে আলোড়ন তুলল ।


৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×