সাংবাদিক, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবীসহ সব মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় চির বিদায় নিয়ে জন্মভূমে মায়ের কবরের পাশে শায়িত হলেন এবিএম মূসা।
Published : 10 Apr 2014, 01:52 PM
৮৩ বছর বয়সে বুধবার মারা যান বরেণ্য এই সাংবাদিক। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সবার শ্রদ্ধা জানানোর পর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ফেনীর ফুলগাজীতে তার গ্রামের বাড়িতে।
রাতে ফুলগাজীর মুন্সীর হাটের ডিপটি বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে মা শাজেদা খাতুনের কবরের পাশে সমাহিত করা হয় মূসাকে। এসময় তার একমাত্র ছেলে নাসিম মূসা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
দাফনের আগে স্থানীয় আলী আজ্জম স্কুল এন্ড কলেজের মাঠে এই সাংবাদিকের চতুর্থ জানাজায় কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।
ফেনীতে নেয়ার পর জেলা শহরের ঐতিহাসিক মিজান ময়দানে তৃতীয় জানাজার পর সর্বস্তরের মানুষ দেশজুড়ে খ্যাত এই ব্যক্তিত্বের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানায়।
আজীবন সাংবাদিকতায় সক্রিয় এবিএম মূসা স্বাধীনতার পর ফেনী থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়ে বাংলাদেশের প্রথম সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
কয়েকদিন লাইফ সাপোর্টে থাকা এবিএম মূসা মারা গেলে সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরে প্রথম জানাজার পর মরদেহ রাখা হয় হাসপাতালের হিমঘরে।
সেখান তেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে মরদেহ নেয়া হয় জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে। বেশ কয়েকবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা এবিএম মূসা ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য।
সেখানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেসক্লাবে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “৬০ বছরের বেশি সময় ধরে তাকে চিনতাম। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তিনি যে উদাহরণ স্থাপন করেছেন তা অনুসরণ করলে দেশ উপকৃত হবে।”
প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানী বলেন, “১৯৫৬ সালে যখন প্রথম সাংবাদিকতা শুরু করি তখন থেকে তাকে চিনি। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়চেতা ছিলেন। কর্মক্ষেত্রে তিনি যেমন সফল ছিলেন তেমনি সাংবাদিকদের জন্য ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।”
প্রবীণ সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবির প্রয়াতের স্মৃতিচারণ করে বলেন, “তিনি প্রফেশনালি যেমন ছিলেন সাহসী, তেমনি সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তেমনি ছিলেন প্রতিশ্রুতিশীল।”
প্রেসক্লাবে এবিএম মূসার মরদেহে শ্রদ্ধা জানান দৈনিক ইত্তেফাকের উপদেষ্টা সম্পাদক হাবিবুর রহমান, প্রবীণ সাংবাদিক আবদুর রহিম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, দৈনিক অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রমুখ।
এছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, জাসদ নেতা তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মওদুদ আহমদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রয়াত সাংবাদিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এবিএম মূসা নিজেই ইতিহাসের নির্মাতা, তিনি অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ মানুষ ছিলেন। তার পরামর্শ শেখ হাসিনা সরকারকে সাহায্য করেছিল।”
সহকর্মী আর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জানাজা শেষে এবিএম মূসার মরদেহ ফেনীতে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৯৩১ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারিতে ফেনীতে জন্ম নেয়া মূসার সাংবাদিকতার হাতেখড়ি হয়েছিল স্থানীয় ‘সাপ্তাহিক কৈফিয়ৎ’ সম্পাদনার মাধ্যমে।
পরে ঢাকায় চলে আসেন মূসা। বাসস, বিটিভিসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন এই সাংবাদিক।