somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আগুন থেকে যেমন ধোঁয়া বের হয়, তেমনি ঈশ্বর থেকে বেদ উৎপন্ন হয়েছে

১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেদ হিন্দুদের প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থের নাম। এর চারটি মূল অংশ রয়েছে। বেদ মানবিক গ্রন্থ না। ‘বেদ’ শব্দের বু্ৎপত্তিগত অর্থ জ্ঞান। বেদকে ঈশ্বরের বাণী বলে মনে করা হয়। এটি কতগুলি মন্ত্র ও সূক্তের সংকলন। বেদ রচনার শুরু থেকে তা সম্পূর্ণ হতে বহুকাল সময় লেগেছে। সেই কালসীমা মোটামুটিভাবে খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০-৯৫০ অব্দ পর্যন্ত ধরা হয়। বেদকে শুধু ধর্মগ্রন্থ হিসেবেই নয়, প্রাচীন ভারতের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও ইতিহাসের একটি দলিল হিসেবেও গণ্য করা হয়। মনু বেদ রচনার দুই-তিন শতাব্দী পরের লোক। অবশ্য কেউ কেউ বলেন তিনি খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর মানুষ ছিলেন। মহর্ষি কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাস বেদকে চার ভাগে ভাগ করেন। এতে বোঝা যায় আগে চার বেদ ছিল না, একটিই ছিল। বেদ মানুষের দ্বারাই রচিত।

হিন্দুদের গরুর গোস্ত খাওয়া বেদের কোথাও নিষিদ্ধ নেই; বরং খাওয়ার বিধান আছে। সবচেয়ে প্রাচীন হচ্ছে ঋগবেদ। এতে প্রায় ১০,০০০ এর ও বেশী মন্ত্র আছে। বেদসমূহ কোনো একক ব্যক্তির দ্বারা রচিত নয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, একাধিক ঋষির নিকট বেদসমূহ প্রদত্ত হয়েছিল। এই ঋষিগণ আবার তাঁদের শিষ্যদের কাছে বেদসমূহ হস্তান্তরিত করেন। মহর্ষি ব্যাস হলেন বেদসমূহের বিন্যাসক, বা আমাদের আজকের ভাষায় বললে, সম্পাদক। বেদ এবং সাধারন বুদ্ধি অনুসারে তিনি অবশ্যই নিরাকার। বেদে ঈশ্বরের সাকার রূপ ধারণ করার কোন ধারণা নেই। অধিকন্তু সেখানে এমন কিছুর উল্লেখ নেই যে ঈশ্বর আকারহীন হয়ে কিছু করতে পারবে না তাই তাকে অবশ্যই আকার ধারণ করতে হবে। বেদ-এর ভাষা আদি সংস্কৃত।

আগুন থেকে যেমন ধোঁয়া বের হয়, তেমনি ঈশ্বর থেকে বেদ উৎপন্ন হয়েছে। অপর মতে, বেদ পঞ্চভূত থেকে উৎসারিত। বেদের উৎস সম্পর্কে নানা মুনির নানা মত। কিন্তু একটি ব্যাপারে সবাই একমত। সেটি হল, বেদ মানুষের প্রতি ঈশ্বরের একটি প্রত্যক্ষ উপহার। এই জন্য বেদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধও সর্বোচ্চ স্তরের। বেদ-এ রয়েছে সর্বমোট ২০,৩৭৯টি মন্ত্র বা ঋক। প্রাচীন ভারতকে বলা হয় বৈদিক ভারত। ওই বৈদিক কথাটা এসেছে বেদ থেকেই। দীর্ঘকাল বেদ বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। পরে বেদ সঙ্কলন করলেন কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস। ইঁনিই রচেছিলেন মহাভারত। যিশুখ্রিস্টের জন্মের ১৫০০ বছর আগে আর্যরা পারস্য হয়ে প্রাচীন ভারতে এসেছিল প্রাচীন । তার আগেই প্রাচীন ভারতে হরপ্পা ও মহেনজোদারো সভ্যতা প্রায় ধ্বংসের মুখে এসে পৌঁছেছিল। তো, আর্যরা প্রথমে ভারতবর্ষের পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করে; আরও পরে তারা পূবের গাঙ্গেয় অববাহিকা অবধি পৌঁছেছিল। এভাবেই সূচিত হয়েছিল বৈদিক যুগের।

বেদে ৩৩ মিলিয়ন দেবতার উল্লেখ করেনি কিন্তু ৩৩ ধরনের দেবতার উল্লেখ রিয়েছে। সংস্কৃতিতে দেবতা অর্থ হচ্ছে ধরন বা প্রকার।বিষয়টি শতপথ ব্রাক্ষনে খুবই পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই ৩৩ ধরনের দেবতাদের মধ্যে রয়েছে ৮ বসু (পৃথিবী, জল, আগুন, বাতাস, আকাশও, চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহ/নক্ষত্রাদি ) যা বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের (Universe) অংশীভূত যেখানে আমরা বাস করি। ১০টি দেহের জীবনী শক্তি (প্রান, অপান, বায়ু,উদানা, সামানা, নাগা, কুর্মা, কুকালা এবং দেবাদত্ত) ১টি আত্মা যাকে বলা হয় রুদ্র। বেদের প্রধানতম দেবতা ছিল অগ্নি ।হিন্দু ধর্মে যত ইশ্বরের নাম দেওয়া হয় সেগুলো আসলে এক জন ইশ্বরেরই গুনবাচক নাম। তাঁরই নাম ব্রহ্মা, তাঁরই নাম বিষ্ণু, তিনিই ইন্দ্র তিনিই সরস্বতি । বেদ থেকে তার সুস্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায়।

বেদ বলে- যে ব্যক্তি অলীক দেব দেবীর পুজা করে, সে দৃষ্টি হরনকারী গাঢ় অন্ধকারে ডুবে যায়’(ঋকবেদ-৫;২;৫)।আরও আছে ‘যারা সম্ভুতির (অর্থাৎ যা আল্লাহর সৃষ্টি যেমন জল, বাতাস, সুর্য ইত্যাদি) পুজা করে তারা অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে । আর যারা অসম্ভুতির পুজা করে তারা আরো অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে’ (ঋকবেদ)। গৌতম বুদ্ধ বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তন করেছিলেন ; যিশু খ্রিস্ট খ্রিস্টধর্ম এবং হজরত মহম্মদ ইসলাম ধর্ম প্রবর্তন করেন। কিন্তু হিন্দুধর্ম কোনো এক জন মাত্র ব্যক্তির দ্বারা প্রবর্তিত হয়নি। এটি ধর্মের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। কোনো এক জন মানুষের জীবনকথা হিন্দুধর্মের ভিত্তি নয়। প্রত্যেক ধর্মের আচার-আচরণ ও বিধিমালা সম্বলিত নিজস্ব ধর্মগ্রন্থ থাকে। তেমনি হিন্দু ধর্মেরও ধর্মগ্রন্থ আছে। তবে হিন্দু ধর্মের ধর্মগ্রন্থের সংখ্যা অনেক। এ ধর্মগ্রন্থগুলো হল ১. বেদ, ২. উপবেদ, ৩. বেদান্ত, ৪. স্মৃতি সংহিতা, ৫. গীতা, ৬. পুরাণ, ৭. আগামশাস্ত্র, ৮. রামায়ণ ও মহাভারত, ৯. চন্ডী এবং ১০. ষড়দর্শন, উপনিষদ ইত্যাদি।

শ্রুতি কী? ‘শ্রুতি’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল ‘যা শোনা হয়েছে’। সুপ্রাচীন কালের বৈদিক ঋষিরা কঠোর তপস্যা করে নিজেদের শুদ্ধ করেন। তখন তাঁরা তাঁদের হৃদয়ে স্বয়ং ঈশ্বরের বাণী শুনতে পান। ঈশ্বরের মুখ থেকে শোনা এই সত্যগুলি তাঁরা যে পবিত্র গ্রন্থরাজিতে ধরে রাখেন, তারই নাম হল ‘শ্রুতি’। শ্রুতি মানুষের লেখা বই নয় ; তাই শ্রুতিকে বলা হয় ‘অপৌরুষেয়’। শ্রুতিকেই আমরা সাধারণত চিনি ‘বেদ’ নামে। ‘বেদ’ শব্দের অর্থ ‘জ্ঞান’। এই প্রসঙ্গে স্বামী নির্মলানন্দ লিখেছেন, “হিন্দুদের কয়েকখানি বিশেষ ধর্মগ্রন্থকে কেন বেদ বলে তাহার একটি কারণ আছে। সংস্কৃতে ‘বিদ্‌’ ধাতুর অর্থ ‘জানা’। এই ধাতু হইতে নিষ্পন্ন বলিয়া ‘বেদ’ শব্দের মূল অর্থ ‘জ্ঞান’। বেদ বলিতে বিশেষতঃ ঈশ্বর, জীব ও জগৎ সম্বন্ধে পারমার্থিক জ্ঞানই বুঝায়।

এবং বেদই সর্বপ্রাচীন ও সব শাস্ত্র এই বেদ থেকেই জন্ম নিয়েছে বলে কথিত ও প্রসিদ্ধ। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপধ্যায় তাঁর দেবতত্ব ও হিন্দুধর্ম প্রবন্ধে বলেছেন বেদের অতিরিক্ত ও কিছু যা অন্য শাস্ত্রে আছে — বেদ বলে প্রচার পেয়েছে। যা বেদে নাই বা বেদবিরুদ্ধ তাও অনেক সময় বেদের অন্তর্ভূক্ত বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বেদ যে হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির মূল উত্স এ কথা হিন্দুমাত্রেই জানেন ও স্বীকার করেন। কিন্তু অনেকে বেদের একটি সীমাবদ্ধ বা সঙ্কীর্ণ অর্থ করেন। প্রকৃতপক্ষে বেদ একটি গ্রন্থবিশেষের নাম নয়। বেদ বলতে বোঝায় সম্পূর্ণ একটি সাহিত্য। পণ্ডিতেরাও, যাঁরাই হিন্দুশাস্ত্রের সম্যক জ্ঞান লাভ করেছেন তাঁরা জেনেছেন বেদের সমগ্রতা।

৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×