বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম সেমিষ্টার শেষ হওয়ার আনন্দে প্রতি বছরের মত এবারও আয়োজন করা হচ্ছে অনুষ্ঠানটি। নবীন ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠানের মহড়া দারুনভাবে চলছে। তরু এখানে একটা নাচে পারফর্ম করবে। ওর অনুরোধে (সত্যি বলতে আদেশে) আমার মহড়া দেখতে আসা। বসে বসে বিরক্ত লাগছিল। হঠাৎ আমার চোখ পড়ল পাশে বসা মেয়েটার দিকে। কোন কারনে বোধয় মেয়েটার মন খারাপ। চোখের কোনায় পানি টলমল করছে। কাঁদলেও যে কাউকে এত সুন্দর দেখায় আমার জানা ছিলনা। কেন জানি মনে হচ্ছে, এই মেয়েটার যে স্বামী হবে এমন অবস্থা দেখার জন্য ওকে কথায় কথায় কাঁদাবে। ফিসফিস করে তরুকে বললাম,"এই মেয়েটি কে রে...?"
ভেংচি কেটে তরু বলল, "কেন পছন্দ হয়েছে নাকি?"
-"আরে ধ্যাত...। দেখ মেয়েটা বোধয় কাঁদছে।"
-"ওর নাম উর্মি । অনুষ্ঠানে ও আনিলা তপুর 'এক পায়ে নুপুর' গানটা গাইতে চাচ্ছে। কিন্তু স্যার বলেছে, গানটা ডুয়েট গাইলে ভাল হবে। এদিকে উর্মি ওর সাথে গাওয়ার জন্য কাউকে পাচ্ছে না।"
-"এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে কাঁদতে হয়। ও তো অন্য কোন গান গাইলেই পারে।"
-"উঁহু। এই গানটা ওর খুবই পছন্দের। তাছাড়া বেশ কিছুদিন থেকে ও গানটা প্রাকটিস করছে।"
কিছুক্ষন চুপ থেকে তরু বলল," আচ্ছা তুই তো কবিতা আবৃতি করিস। তুই উর্মির সাথে গানটা গাইলে কেমন হয়।"
- "পাগল নাকি। আমি জীবনে কোনদিন মঞ্চেই উঠিনি আর গান। তাছাড়া কবিতা আর গান এক হল নাকি।"
খুব রেগে তরু বলল, "আমি কিচ্ছু জানিনা। তোকে উর্মির সাথে গানটা গাইতে হবে, এটাই ফাইনাল। আরেকবার না বললে আমি আর কোনদিন তোর সাথে কথা বলব না।"
ইদানিং তরু প্রায়ই আমার সাথে কথা বলবেনা বলে হুমকি দিচ্ছে। মহড়া দেখতে এসে এ কোন ঝামেলায় পড়লাম। যা হোক। আমি তরু, উর্মি টি.এস.সির দোতলায় গেলাম। উর্মি আমাকে গানটা শিখিয়ে দিচ্ছে। আশ্চর্য আমিও অনেক ভাল গাইছি। শুধু একটা যায়গায় আমার সুর মিলছে না। উর্মি দক্ষ শিক্ষকের মত আমাকে বারবার দেখিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু আমি কোনভাবেই পারছিনা। আমার ভীষণ অস্থির লাগছিল। আমি ঘামতে শুরু করলাম। আমার এই অবস্থা দেথে উর্মি হাসতে লাগল। আশ্চর্য ওর হাসি এত সুন্দর!!!
আমার আগের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ছিল। উর্মির স্বামী ওকে কখনোই কাঁদাবে না, সারাক্ষণ মজার মজার গল্প বলে হাসাবে।
যা হোক উর্মি বলল, "তুমি আজ রাতে গানটা ভালভাবে শুনবে। কাল আমরা স্যারকে গানটা শোনাব।"
আমি হলে ফিরে এলাম। হেডফোনে অনেক রাত পর্যন্ত গানটা শুনলাম আর সাথে সাথে গাইতে লাগলাম।
পরদিন বিকেলে মহড়ায় গিয়ে দেখি উর্মি অন্য একটা ছেলেকে খুঁজে পেয়েছে, ছেলেটা অনেক সুন্দর গায়। তরু আমার কাছে এসে বলল," তুইতো বেঁচে গেলি। অবশ্য তোর যে গানের গলা তাতে উর্মিই বেঁচে গেছে।" বলেই ও হাসতে শুরু করল। আমিও তরুর সাথে হাসতে লাগলাম।
সেদিনের মত বেঁচে গেছি সত্যি কিন্তু একটা দারুন ঝামেলা হয়েছে। আনমনে কোথাও বসে থাকলে মাথার ভেতরে অসহ্য যন্ত্রনায় বাজতে থাকে....
এক পায়ে নুপুর তোমার অন্য পা খালি
এক পাশে সাগর একপাশে বালি
আমার ছোট তরি বল, যাবে কি ???
গল্পের পিছরনর গল্পঃ "উর্মির সাথে এখনো মাঝে মধ্যে রাস্তায় দেখা হয়। ভাল আছি, ভাল আছ জিজ্ঞাসও করা হয়। শুধু এই গল্পটা বলা হয়না। গল্পটা লিখেছিলাম সেই ফার্স্ট ইয়ারে। আর গত ২০ ডিসেম্বর অনার্স জীবনের শেষ পরীক্ষা দিয়ে আসলাম। ইন্টার্নি নামের ৬ মাসের একটা লেজ না থাকলে, অনার্স জীবনের এখানেই শেষ হত। ভালই হয়েছে, চাকরির চিন্তা ৬ মাস পরে থেকে শুরু করব।"
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:৫১