হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে লেখার মত দুঃসাহস আমার নেই। বাংলা সাহিত্যের এই ইচ্ছে ঠাকুর যিনি সোনার মুকুট ছুঁড়ে ফেলে মাথায় তুলে নিয়েছেন নিন্দা আর কাঁটার ফুল। আমি ত তাঁকে চিনি সেই ছোট্ট কাল থেকে । খুব আপন জন ছিলেন আমাদের।কেন যেন কিভাবে হঠাৎ করে একদিন তিনি আমাদের থেকে অনেক দূরে সরে গেলেন । শুধু মনে আছে আমাদের বইয়ের আলমারি ভরতি উনার বই ছিল ।প্রচুর বাংলা বানান শিখেছি উনার বইয়ের নাম বানান করে করে। আম্মুর বালিশের নিচে, খাওয়ার টেবিলের উপর, চুলার পাশে, পরিক্ষার খাতার সাথে সমান তালে বিচরন করেছে হুমায়ুন আহমদের বই। কত বার যে ভাত পুড়ে গেছে আম্মু তার হিসাব দিতে পারবে না। আমার প্রিয় লেখক জাফর ইকবাল। হুমায়ুন স্যারের ভাই এর বই ---আম্মু খুশি হয়ে কিনে দিতেন। উন্মাদ পত্রিকাও এভাবে ঢুকে পড়েছে আমাদের বাসায়। কিন্তু কি হল একদিন আম্মু উনার সব বই ফেলে দিলেন ---অনেকটা ছুঁড়ে ছুড়ে, রাগে, দুঃখে,কাঁদতে ,কাঁদতে । আব্বু একবার মিউ মিউ করে বলছিল, আরে কর কি ! আম্মু তেড়ে ফুঁড়ে উঠেছিল ,ও এখন খুব ভাল লাগতাছে তাই না। আগে ত বলতা কি লেখছে ,সব রাবিশ । আমাদের আলমারিতে এখন একটাও হুমায়ুন আহমদ নেই । আসলে আম্মু আর গল্পের বই তেমন পড়েই না । আজকাল খুব নামাজ পড়ে । কথায় কথায় দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। এই আম্মু যখন হুমায়ুন স্যারের মৃত্যু সংবাদ শুনল তখন মনে হল যেন আমার নানাজান ইন্তেকাল করেছেন।আশপাশের বাড়ির মানুষ জনে ঘর ভরে গেছে। আসল খবরটা শুনে উনারাও কেঁদে ভাসিয়েছেন । আমার আম্মু এখন ও কাঁদে।হয়ত সারা জীবন কাঁদবে ।হুমায়ুন স্যার যে আম্মুর ভালবাসা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০০