somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

যদি আমাদের গার্মেন্ট শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যদি আমাদের গার্মেন্ট শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়...
ফকির ইলিয়াস
বিষয়টি নতুন নয়। তা চলছে কয়েক বছর থেকেই। ২০১১ সালে বিশ্বের প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস একটি রিপোর্ট করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোতে অশান্তির মূল কারণ শ্রমিকদের বেতন নিয়মিত না দেয়া। বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে সে সময় ১৮ জন শ্রমিক গ্রেফতার, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিক্রিয়াসহ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি নিউইয়র্ক টাইমসে বিজনেস সেকশনে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গার্মেন্ট শ্রমিকদেরও ন্যূনতম মাসিক মজুরি ৩০০০ টাকা (৪৩ ডলার) করা হয়েছে। কিন্তু কিছু শ্রমিক সংগঠন ঘোষিত এই মজুরি মেনে নিলেও গার্মেন্ট শ্রমিকদের কিছু সংগঠন ৫০০০ টাকা (৭২ মার্কিন ডলার) ন্যূনতম মাসিক মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত। সরকার শ্রমিকদের এ আন্দোলনকে অনিয়মতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে বল প্রয়োগ এবং শ্রমিকদের গ্রেফতার করছে। গার্মেন্ট শ্রমিকদের গ্রেফতারের হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ইন্টারন্যাশনাল লেবার রাইটস ফোরাম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে শ্রমিক সংগঠনগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ৩০০০ টাকা দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এ প্রসঙ্গে মালিকপক্ষ বলেছেন, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে এর চেয়ে বেশি মজুরি সম্ভব নয়। মালিকপক্ষ বলেছেন, আর্থিক কারণে ভিয়েতনামের সঙ্গেও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে।
প্রতিবেদনে তুলনামূলক বিশ্লেষণে বলা হয়, ওয়াল মার্ট এবং এইচ অ্যান্ড এম-এর মতো পাশ্চাত্যের বড় বড় স্টোরের কাপড় প্রস্তুতকারী এসব গার্মেন্ট শ্রমিকরা প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের তুলনায় অনেক কম মজুরি পাচ্ছে। টাইমসে প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা হয় চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হচ্ছে মাসিক ১১৭ ডলার। সেই তুলনায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা পাচ্ছে মাত্র ৪৩ ডলার। প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং শ্রমিক সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলন এবং গ্রেফতারের বিষয়টি হাইলাইট করা হলেও আন্দোলনের নামে ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের উল্লেখ সে সময় করা হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইন্টারন্যাশনাল লেবার এবং হিউম্যান রাইটস অ্যাডভোকেসি গ্রুপ আন্দোলন দমনে সরকারের প্রতি নির্যাতন অভিযোগ করেছেন এবং তারা গ্রেফতারকৃতদের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এর পরে আসা যাক আন্দোলনের বিষয়ে। শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ড দেশে বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কবলে পড়েছে দেশের গার্মেন্ট শিল্প। সহিংসতা ও সংঘাত সৃষ্টি করে গোটা গার্মেন্ট শিল্পকে হুমকির মধ্যে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিকে সামনে রেখে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির নামে গার্মেন্টসে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য গার্মেন্ট শ্রমিকদের উসকে দেয়া হচ্ছে। গার্মেন্ট শিল্পে অশান্ত, উত্তপ্ত ও অস্থিরতা সৃষ্টির নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে কয়েকটি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী নিজে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও গার্মেন্ট শিল্পের সংঘর্ষ, সংঘাত, অবরোধ, ভাংচুর ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড অব্যাহত আছে বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা জানায়। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়-গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি তো দূরের কথা, সময়মতো পরিশোধও করা হয় না। বেশিরভাগ গার্মেন্ট শিল্পে শ্রমিকদের ছুটি, কর্মঘণ্টা, পিসরেট, শ্রমিক ছাঁটাই, মানবিক আচরণ পালিত হয় না। শ্রমিকদের সঙ্গে অসদাচরণ, এমনকি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব কারণে গার্মেন্ট শিল্পে শ্রমিকদের মধ্যে এমনিতেই অসন্তোষ, ক্ষোভ বিরাজমান। এসব ক্ষোভ ও অসন্তোষকে পুঁজি করে এখন গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে শ্রমিকদের কৌশলে উসকে দেয়া হচ্ছে এই অভিযোগের পাশাপাশি আরো অভিযোগ আছে। গার্মেন্ট শ্রমিকদের উসকে দেয়ার নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে কয়েকটি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন।
নিকট অতীতে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গার্মেন্ট শিল্পে সহিংসতা ও সংঘাত ছড়িয়ে দেয়ার নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম নিহত হওয়ার আগে যে শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেই শ্রমিক সংগঠনটি। আরো অভিযোগ আছে, গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের বেশ কিছু নেতার সঙ্গে বিদেশি প্রভাবশালী মহলের যোগাযোগ আছে। এটাই যদি বাস্তবতা হয়, তাহলে প্রশ্ন আসে-কোথায় চলেছে বাংলাদেশ? আসুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে তা যদি পরিকল্পিত হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, তীব্র শঙ্কার দিকে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ। পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, এ বছরের ৫ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ২ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। ৬ মে রোববার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অব ঢাকার (আইএসডি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হিলারি ক্লিনটন বক্তব্যের একপর্যায়ে গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যার তদন্ত নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের তদন্ত না হলে বিদেশি ক্রেতারা ভুল সংকেত পাবে। শ্রমিক নেতা খুন হওয়ার ঘটনা বা কারখানায় কাজের যথাযথ পরিবেশ না থাকায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সংকটের মুখে পড়তে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন আমিনুল হত্যার তদন্ত ও বিচার নিয়ে কথা বলার পর দেশে-বিদেশে আলোচিত হতে থাকে এ গার্মেন্টস শ্রমিক নেতার হত্যাকাণ্ড।
এরপর গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও হত্যাকারীরা গ্রেফতার না হওয়ায় আমেরিকা-ইউরোপের দেশগুলোতে গার্মেন্টস পণ্য রফতানিতে প্রভাব পড়তে পারে বলে এরই মধ্যে বিদেশি রাষ্ট্রের প্রভাবশালী মহল থেকে কথা বলা শুরু হয়। গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় ইতিপূর্বে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা। এটা খুবই স্বীকৃত বিষয়, আমেরিকার মেসি’স, জে সি পেনি, সিয়ারস, ওয়ালমার্টসহ অনেক বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এখন বাংলাদেশের পোশাকে সয়লাব-যা গোটা জাতির জন্য গর্বের বিষয়। জাতিগতভাবে আমরা কী এ গৌরব ধরে রাখতে পারব না? এই যে এত আহ্বান, তার কী কোনো সুরাহা হয়েছে? না হয়নি। কেন হয়নি? নিশ্চিন্তপুর ট্র্যাজেডি নিয়ে জাতীয় শোক পালিত হয়েছে। কিন্তু এই যে অশনি সংকেত, তার যদি স্থায়ী সমাধান না করা যায়, তাহলে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এতে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে যেতে পারে।
আসল কথা হচ্ছে, যে কোনো অপশক্তিই এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে জড়িত থাক না কেন, ওদের চিহ্নিত করা হোক; বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক।
=========================================
দৈনিক মানবকন্ঠ/ ঢাকা / ২১ ডিসেম্বর ২০১২ শুক্রবার

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×