somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নোয়াখালী ও বরিশাল অঞ্চলের মানুষকে খারাপ বলে যে কারণে!

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার লেখার এই শিরণাম দেখে দয়া করে কেউ ভুল বুঝবেন না প্লিজ! কোন নির্দিষ্ট অঞ্চল বা গোত্রের মানুষকে খাটো করার জন্য আমি এই লেখা লিখছি না।
কিছু ঐতিহাসিক ও কিছু বৈজ্ঞানিক কারন ব্যাখ্যা করবো। মজা করছি না, সিরিয়াস!

আজ থেকে অনেক অনেক দিন আগে প্রায় ১২৫০ সালের দিকে বর্তমান বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বঙ্গের কিছু অঞ্চলের শাসক যারা ছিলেন তারা নিজস্ব আইনকানুনের মাধ্যমেই শাসন কার্য পরিচালনা করতেন। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আইনবিদ শ্রী দীনেশ চন্দ্র এর বই থেকে জানা যায় তৎকালিন শাসন ব্যবস্থায় অপরাধের দন্ড ছিল পাঁচ প্রকার-
১। বেত্রাঘাত
২। অর্থদন্ড
৩। কারাদন্ড
৪। মৃত্যুদন্ড এবং
৫। দীপান্তর বা বনবাসে প্রেরণ।

বর্তমান বাংলাদেশে ১। অর্থদন্ড ২। কারাদন্ড ও ৩। মৃত্যুদন্ডের প্রচলন থাকলেও বেত্রাঘাত এবং দীপান্তর বা বনবাসে প্রেরণের মতো দন্ডের বিলুপ্তি ঘটেছে অবশ্য উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই ‘মৃত্যুদন্ড’রও বিলুপ্তি ঘটেছে। দীপান্তর বা বনবাসে প্রেরণের এই দন্ড ব্রিটিশ শাসন আমল পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। ব্রিটিশ শাসন আমল পর্যন্ত ভয়ংকর আসামী বা রাষ্ট্রদ্রোহীদের আন্দামান দীপপুঞ্জে অবসি'ত কারাগারে প্রেরণ করা হতো। আন্দামানের ঐ কারাগারটি ব্রিটিশ শাসনের অবসান হওয়ার পর স্বাধীন ভারত সরকারও কিছুদিন ব্যাবহার করেছে। ঐতিহাসিক স্থান হিসাবে কারাগারটি এখনো বিদ্যমান। আমার আলোচনাটা এখানে নয়।

আমার আলোচনা- তৎকালিন বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের এই সব অঞ্চলের শাসকগণ দীপান্তর বা বনবাসের প্রেরণ করতেন কিন্তু সেই দীপ বা বনটি কোথায়? শ্রী জ্যতীষ নারায়ণ বাগচীর ‘বঙ্গ ও বাংলার আইন এবং ইতিহাস’ নামের পুস্তক থেকে জানা যায় সেই সময়ে নোয়াখালী, কুতুবদিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালী ইত্যাদি অঞ্চলে কোন মানুষ বসবাস করতো না। এগুলি ছিল দীপ অঞ্চল (অবশ্য বর্তমানেও দীপ অঞ্চল)। মানুষের বসবাস বা চলাফেরার মতো কোন রাস্তা-ঘাট বা ব্রিজ-কার্লভার্টও ছিল না। দীপগুলিতে ছিল গহীন জঙ্গল ও ভয়ানক সব প্রাণী। তৎকালীন শাসকরা ভয়ানক সব আসামীদের এইসব অঞ্চলে বড় বড় জাহাজের মতো নৌকায় এনে শাস্তি হিসাবে মাত্র কয়েক দিনের খাবার ও প্রয়োজনিয় কিছু দ্রব্যাদি দিয়ে ছেড়ে দিতেন। সেই সব অপরাধিরা হিংস্র প্রাণী সাথে লড়াই করে অনেকেই বেঁচে থাকতো অনেকেই প্রাণ হারাতো। যারা বেঁচে থাকতো তাদের ফিরে আসার কোন উপায় থাকতো না কারন ডাকাতি হওয়ার ভয়ে ঐ অঞ্চল দিয়ে কোন নৌকা বা জাহাজও কেউ চালাতো না। দিনে দিনে ঐসব দীপে অপরাধিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং এভাবেই অপরাধিরা মিলে নোয়াখালি ও বরিশাল অঞ্চলে গড়ে তোলে সভ্যতা। এই সভ্যতার শুরুর দিকে নৌকা বা জাহাজ ডাকাতি, লুটপাট ও খুন-খারাপিই ছিল ঐ অঞ্চলের সর্বত্র।

বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মানুষরা তাই বহু প্রাচীন কাল থেকেই নোয়াখালি ও বরিশাল অঞ্চলের মানুষদের অপরাধিদের উত্তরাধিকার হিসাবে ধারণা করতো। মানুষের দেহে অবস্থিত ক্রমোজম হচ্ছে তার বংশগতির ধারক-বাহক, তাই অনেকের মতে নোয়াখালি ও বরিশাল অঞ্চলের মানুষের ক্রমোজমে এখনও সেই অপরাধি স্বভাব বিদ্যমান!

প্রকৃত বাস্তবতা সৈয়দ ওয়ালী উল্ল্যা’র মতো শত বিখ্যাত মানবতাবাদি লেখক, সাহিত্যিকও নোয়াখালী এবং বরিশাল অঞ্চলের। ভালো-মন্দ মানুষ সব অঞ্চল ও জেলাতেই আছে। আমার এই লেখা কোন অঞ্চলের মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য নয়। অজানা কিছু তথ্য শুধু তুলে ধরাই আমার উদ্দেশ্যে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৪৮
৩৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×