somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হরতাল কি হারাম?

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হরতালের ইসলামিক দৃষ্টিকোণ নিয়ে সাম্প্রতিক নানা কথা শোনা যায়। এননিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি লেখা উপহার দিতে চাই। আবূদাঊদ শরীফে বর্ণীত হাদীসে রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন, أعظم الجهاد كلمة حق عند سلطان جائر অর্থাৎ সর্বোচ্চ জিহাদ হলো, জালেম শাসকের সামনে হক ও সত্য কথা বলা। হরতাল হলো অন্যায়ের বিরোদ্ধে প্রতিবাদের একটি ভাষা। তবে গণতন্ত্র হলো এর জন্মস্থান। সমাজের খাঁজে ভাঁজে থাকা ইসলামের কণাগুলোও পরিস্কার করে কুরআন ও সুন্নাহকে চার দেয়ালে বন্দি করে ফেলাই গণতন্ত্রের মুল লক্ষ্য। এখন প্রশ্ন হলো, গণতন্ত্রের কালচার হলেই কি সেটা কুফুরী? বা হারাম? এর জবাব হলো, কোন কিছু মুলগতভাবে মন্দ হলে যে তার ভেতরকার সব কিছুই একবাক্যে মন্দ বলে বিবেচিত হয়ে যাবে, তার কোনই কারণ নেই। তার মধ্যকার যে বিষয়টি কুরআন ও সুন্নাহ এর বিরুদ্ধ প্রমাণ হবে, সেটাই কেবল হারাম বা কুফুরী বলে বিবেচিত হবে। গণতন্ত্রে ন্যয় বিচারের কথাও বলা হয়, (হোক না সেটা মুখে) সেটাও কি মন্দ?
অনেকেই প্রশ্ন করেন, গণতন্ত্রের প্রতিবাদের ভাষা আমরা কেন গ্রহণ করবো? প্রতিবাদের কি ইসলামিক ভার্সন নেই? বরং আমরা প্রতিবাদ স্বরূপ কোন মাঠে জনসমাবেশ কিংবা শান্তিপুর্ণ মিছিল বা স্মারক লিপি পেশ করতে পারি। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এর প্রথম উত্তর হলো, জনসমাবেশ, মিছিল কিংবা স্মারক লিপি বা অনশন থেকে নিয়ে প্রচলিত সব প্রতিবাদই হলো গণতন্ত্রের রীতি। শুধু তাই নয়, কোন সংগঠন বা কাজের সুবিধার জন্য কমিটি গঠন, ও পদবী নির্ধারণের (যেমন প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি, কোষাধ্যক্ষ, সদস্য ইত্যাদি সহ) প্রচলিত নিয়মও গণতন্ত্রের রীতি। এটাও কি আমরা পরিহার করতে হবে? এছাড়াও আজকের বাস্তবতায় প্রতিনিয়ত আমরা সবাই, এমনকি ইসলামিস্টরাও হাজার হাজার রীতি নীতি অবলমবন করি, যা মুলত: গণতান্ত্রিক সমাজের সৃষ্টি বা সেখানকার আইডিয়া। শুধু গণতন্ত্রের রীতি বলে যদি হরতাল হারাম হয়ে যায়, তবে সবগুলোই হারাম হতে হবে। সুতরাং গণতন্ত্রের তৈরি বলেই পরিহার্য, বিষয়টি এমন নয়।

দ্বিতীয় উত্তর হলো-ইসলামের নির্দেশিত বিষয়গুলো কয়েক প্রকার। এর মধ্যে একটি হলো, ''হাসান লি জা-তিহী' বা সরাসরি ইবাদত। এর নিয়ম পদ্ধতি সবই নির্ধারিত থাকে আল্লাহ ও রাসুল সা: এর পক্ষ হতে। সুতরাং সেগুলো অপরিবর্তনযোগ্য। যেমন সালাত, জিকির ইত্যাদি। আর কিছু ইবাদত আছে যেগুলোকে ''হাসান লিগাইরিহী''(মুলগতভাবে ইবাদত নয়, তবে আনুষাঙ্গিক কারণে ইবাদত) বলা হয়। এই প্রকারের ইবাদতে মুল লক্ষ্য বাস্তবায়নই কাম্য। পদ্ধতিতে সরাসরি কোন আবশ্যিক হারাম না থাকলে যেকোনটিই গ্রহনণযোগ্য। যেমন জিহাদ। ইসলাম জিহাদ করার নির্দেশ প্রদান করে। মুলগত ভাবে যুদ্ধ বিগ্রহ ভাল জিনিস নয়। তবে বিশেষ বাধ্যবাধকতার কারণে এটা অবশ্যকর্তব্য হয়ে যায়। ইসলামের প্রথম যুগে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সামনা সামনি যুদ্ধ হতো, তরবারী বা বল্লম ইত্যাদি দিয়ে। আজ সেই পদ্ধতি অবলম্বন জরুরী নয়। এমনকি সম্ভবও নয়। এমন নজীর ভুরি ভুরি রয়েছে ইসলামে। প্রতিবাদ করা ইসলামের নির্দেশ। যুগের চাহিদা অনুযায়ী তার পদ্ধতি পরিবর্তন হতে পারে। আপনি যদি প্রথম যুগের মুসলিমদের পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করতে চান, তবে আপনাকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে মৌখিক প্রতিবাদ করে আসতে হবে। এটাই সাহাবীদের প্রতিবাদের ভাষা ছিল। নিজের চোখে কোন অন্যায় দেখে তাঁরা সরাসরি খলীফা বা রাষ্ট্রনায়কের সম্মুখে গিয়ে অভিযোগ জানাতেন। জালেম হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের বেলায়ও একই পদ্ধতি অবলম্বিত ছিল। সুতরাং সাহাবীদের যুগের রীতি অনুযায়ী প্রতিবাদ করতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এমনকি সে যুগের সাথে আজকের শাসক ও প্রজাদের মাঝে অবস্থানগত দুরত্ব, জনসংখ্যার বিস্তর ফরাক ও অন্যান্য বাস্তবতার নিরিখে এটা সম্ভবও নয়।

তৃতীয় উত্তর হলো, শরিয়তে কোন কিছু হারাম হতে হলে স্পষ্টভাবে কুরআন অথবা হাদীসের অকাট্য সুত্রে সতর্কতাবাহক নিষেধাজ্ঞা থাকতে হবে। সারা বিশ্বের আলেমগণের ঐক্যবদ্ধ মূলনীতি হলো, শরিয়তে অনালোচ্য বিষয়গুলো সাধারণভাবে হালাল ও বৈধ থাকে। এটাকে বলা হয়-الأصل في الأشياء الإباحة অর্থাৎ যেকোন জিনিস মূলগতভাবে হালাল। হারাম হয় সেগুলো, যেগুলোর আলোচনা করা হয়েছে কুরআন বা সুন্নায়। এজন্য কুরআনে নিষিদ্ধ খাদ্যদ্রব্যের তালিকা দিয়ে আল্লাহ বলেন-, وأحل لكم ما وراء ذلكم অর্থাৎ এগুলো ব্যতিত যা আছে, সব হালাল করা হয়েছে তোমাদের জন্য। সুতরাং এককথায় হালালের কোন তালিকা নেই, হারামের তালিকা দেওয়া হয়েছে। এথেকেও বুঝা যায়, যেকোন জিসিনকে হারাম বলতে হলে প্রমাণের প্রয়োজন, হালালের জন্য নয়। এধরণের বিষয়কে আনুষাঙ্গিক কোন কারণে যদি হারাম বলতে হয়, তবে সেই অনুষঙ্গের উপস্থিতির শর্ত আরোপ করেই বলতে হবে যে, অমুক উপাদান হারাম, সেটি থাকলে হারাম হবে, নতুবা নয়।
এরপর যে প্রশ্নটি উঠে আসে সেটা হলো, হরতাল সহিংস প্রতিবাদ। এতে মানুল মারা যায়, গাড়ি ভাংচুর হয়। আর কিছু হোক বা না হোক, মানুষের চলাচলের কষ্ট হয়। কাউকে কষ্ট দেওয়া তো ইসলাম অনুমোদন করে না! এর উত্তর হলো-হরতালের অর্থ ভাংচুর বা মানুষ হত্যা নয়। হরতাল হলো, প্রতিবাদের জানান দিতে নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করা, বা কর্ম পরিত্যগ করা। উভয় পক্ষ এর অপব্যবহার করার কারণেই উপরিউক্ত অবস্থা সৃষ্টি হয়। যেমন গত পরশুর হরতালটিতে (যদিও এটা আঁতাতের হরতাল, তবুও) শান্তিপুর্ণ হরতালের একটি নমুনা ছিল। এরচেয়ে শান্তিপূর্ণ হরতালও বহু হয়েছে। এটা অনেকটা নির্ভর করে সদিচ্ছার উপর। আর মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ে কথা হলো, জনগুরুত্বপূর্ণ বাহন ও হাসপাতাল ইত্যাদি হরতালের আওতামুক্ত থাকে। এরপরও যে মানুষের কিছুটা কষ্ট হবে, সেটা খুবই স্বাভাবিক। এর কোনই প্রতিকার নেই এবং প্রয়োজনও নেই। ইসলামের অস্তিত্ব এবং ব্যপক জুলুমের প্রতিরোধের প্রশ্নে প্রথমেই উল্লেখিত হাদীসের আলোকে এটা এক প্রকারের জিহাদ। জিহাদ চলাকালীনও তো মানুষের সাময়ীক কষ্ট হয়। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হয়। বিশেষ করে আজকের যুগে পূর্ব ঘোষিত হরতালে এগুলোও খুবই কম হয়। এরপরও হরতালকারীদের অসদিচ্ছার কারণে অনেক হারাম উপাদান এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হতে দেখা যায়। হরতালকে হারাম বলতে হলে সেগুলোকে নির্ধারণ করেই শর্তসাপেক্ষে হারাম বলতে হবে। মাইকে আযানও তো কুরআনসুন্নার পদ্ধতির খেলাফ। আজকের প্রয়োজনের বাস্তবতায় আমরা সেটা করে থাকি। কেউ যদি বলে, এতে শব্দ দুষণ হয়, বা কোন রুগির সমস্যা হয়, তবে আপনার কী বলার থাকবে? পরিশেষে বলবো, কুরআন ও হাদীসে অনুল্লেখিত যেকোন বিষয়কে হারাম বলার আগে মনে রা্খতে হবে, আল্লাহ তা'আলা বলেছেন-لم تحرم ما أحل الله لك অর্থাৎ আল্লাহ যা হালাল রেখেছেন, তুমি কেন সেটাকে হারাম সাব্যস্ত কর?
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:২৮
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×