স্কুলে বরাবর বাংলা পড়ান সতুবাবু-সতীনাথ বোস।তিনি সেদিন গরহাজির।হেডমাসটার মশাই তাই মৌলভী সাহেবকে ডেকে বললেন,সতুবাবু আজ আসেন নি দেখছি।ফোর্থ ক্লাসে আজকে বাংলার পিরিয়ডটা আপনিই কোনোরকমে চালিয়ে দিন গে,কেমন?
'জ্বি আচ্ছা।'বলে মৌলভী সাহেব রাজি হয়ে গেলেন।রাজি হলেন সত্যি কিন্তু মনে মনে প্রমাদ গুনলেন।একে তো পড়াতে হবে বাংলা তাও আবার ফোর্থ ক্লাসে অর্থাৎ দুষ্টের শিরোমণি লেবুদের ক্লাসে।মৌলভী সাহেব সরল গোবেচারি গোছের লোক।ধর্মপ্রাণ এই নিরীহ লোকটিকে স্কুলের শিক্ষক-ছাত্র প্রায় সবাই ভক্তি-শ্রদ্ধার চোখে দেখত,তাছাড়া একটু ভয়ও করত।ভয়ের কারণ স্বয়ং হেডমাষটার মশাইও মৌলভী সাহেবকে সমীহ করে চলতেন।অনেক কাজেই তিনি মৌলভী সাহেবের পরামর্শ নিতেন।
কিন্তু মৌলভী সাহেব নিজে মনে মনে ভয় করতেন লেবুকে।ফোর্থ ক্লাসে ফারসি পড়াতে গিয়ে লেবুর নিত্যনতুন উৎপাতের জ্বালায় তিনি অস্থির থাকেন।তার ওপর আজ আবার পড়াতে হবে বাংলা।গোলমাল এড়ানোর জন্য তিনি তাই ক্লাসে ঢুকেই এক বুদ্ধি আঁটলেন।বললেন,'আজকে ক্লাসে সংক্ষিপ্ত একটি রচনা লিখতে দিচ্ছি তোমাদের।মনে করো পাঁচ শ করে টাকা দিলাম তোমাদের সব্বাইকে।সেই টাকা দিয়ে কে কী করবে লিখে দেখাও।কোনোরকম গোলমাল করবে না আগেই বলে রাখছি'।খাতা-পেন্সিল নিয়ে রচনা লেখায় মনোযোগ দিল সবায়।লেবু এক কোণ থেকে ওঠে বলল,'পাঁচ শ করে প্রতিজনকে দিলে সে যে অনেক টাকার বেপার,স্যার।দু-পাঁচ হাজারেও কুলোবে না!এত টাকা দিয়ে ফেলবেন স্যার?কিছু কমিয়ে দিলেই তো ভাল'।
লেবুর এ অবান্তর উক্তিতে মৌলভী সাহেব মনে মনে রেগে গেলেন।বাইরে তা প্রকাশ না করে বললেন,'যাকে বলে হোপলেস ছেলে,তুমি হয়েছ তাই।বললেই কি আর দেয়া হলো?বললাম তো,মনে করে নাও পাঁচ শ করে টাকা তোমরা পেলে।
'ওহো,তাই বলুন,মনে করতে হবে পাঁচ শ করে টাকা আপনি দিলেন,বেশ।বলেই লেবু এক মিনিটে কী যেন লিখে খাতা উল্টে রাখল।মৌলভী সাহেবের তা দৃষ্টি এড়াল না।
ঘনটা বাজবার আগেই সবার রচনা লেখা শেষ হলো।মৌলভী সাহেব খাতা দেখতে লাগলেন।কেউ লিখেছে,টাকা পেয়ে ব্যাবসা করবে,কেউ দান করবে।কেউ কেউ লিখেছে,গাঁয়ে স্কুল করে দেবে,গরিব ছেলেমেয়েরা সেখানে বিনা বেতনে পরবে।কিন্তু লেবু লিখেছে চমৎকার।দু-চার কথায় রচনা তার শেষ।
চলবে.....