somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~~~ছোটগল্প 'চিঠি'~~~

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘এই রনি এদিকে আয় ।’
বাসা থেকে সকাল বেলা বের হচ্ছিলাম এমন সময় বাবার চড়া গলার ডাক শুনে থমকে গেলাম। আমি কি কিছু করেছি মনে মনে ভাবলাম নাহ্ মনে তো পড়ছেনা। বাবা সাধারণ উচু গলায় কথা বলেননা, সবসময় চুপচাপ থাকেন তার পরেও বাড়ির সবাই তাকে যমের মত ভয় পাই । এই সব ভাবতে ভাবতে বাবার কছে যাচ্ছি ।
‘জ্বি আব্বা ।’
‘এতো সকাল বেলা কোথায় যাও ।’
সর্বনাশ বাবা তো পুরা ক্ষেপে আছে যখন বাবার মাথা হট থাকে তখন সবাইকে তুমি বলে আর যখন সুপার হট হয় তখন আপনিতে চলে যায় ।
‘জ্বি, ক্লাসে যায় ।’
‘মিথ্যা কথা বলাতো ভালই শিখেছেন ।’
‘ওরে বাপরে আজ আমার খবর খারাপ। আমার ভাগ্যে কি আছে এক আল্লাহ জানে।’
‘কি কথা বলেন না ক্যান?’
‘জ্বি আসলে......’
‘আমি কি আপনার কলেজের মাস্টার যে প্রতি কথার আগে জ্বি লাগাতে হবে?’
‘না মানে ইয়ে .....।'
‘লেখা নেই পড়া নেই সারাদিন মেয়েদের পেছনে ঘুরে বেড়ানো। ঘুরে বেড়ান ভালকথা মেয়েরা আমার বাড়িতে আসে ক্যান, আবার আমাকে চিঠিও দিয়ে যায়। বলে “রনিকে এটা দিয়েন প্লিজ খুব আজেন্ট” । তোর আজেন্টের আমি কেঁথা পুড়ি। বেয়াদব মেয়ে।’
আমিতো শেষ কে চিঠি দিবে আমাকে তাও আবার আমার বাপের কাছে? পুরো বারেটা বেজে গেছে আমার ।
‘এই নেন চিঠিটা আমার সামনে জোরে জোরে পড়েন ।’
খাম ছিড়ে চিঠি বের করে তো আমি পুরো ‘থ’ সাথে বাবার ও। সাদা কাগজ, কোন লেখা নেই । বুঝলাম পাঁজি কণাই এই কাজটা করেছে। আমার হার্ডও্যয়ারে যেন সফটও্যয়ার ফিরে আসল । বাবা বললেন,
‘যা কলেজে যা ।’

বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। আচ্ছা কণা মেয়েটা এমন কেন? মেয়েট‍াকে যেদিন প্রথম দেখলাম ....
রেল স্টেশনের সামনে দঁড়িয়ে আছি। ফুয়াদের আসার কথা । সালা হারামি কয় ‘দোস্ত প্লিজ তুই আধঘন্টা দাঁড়া আমি আসছি।’ বন্ধুবরের কথা মত দাঁড়িয়েই আছি । সাইন বোডের লেখা পড়ে সময় কাটাচ্ছি । ‘কলকাতা হারবাল ১০০% , গ্যারান্টি সহকারে আপনার যাবতীয় সমস্যার সমাধান করা হয়।’ এমন সময় কেও আমার পা মাড়িয়ে দিল, ‘কোন শালারে’ বলে তকিয়েতো অমি পুরা টাসকি খাইয়া গেলাম। দেখলাম এক অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । সুন্দরী মেয়ে দেখলে নাকি ছেলেরা ট্যারা হয়ে যায়। এটা বাস্তবে আমি পর্যবেক্ষণ করলাম। মেয়েটার ঠোঁটের নিচে একটা লাল তিল, যেটা তার সৌন্দয্যকে হাজার গুনে বড়িয়ে দিয়েছে। আচ্ছা আমি বাস্তবে তো? নাকি সপ্ন দেখছি । আসলে বাস্তবে এমন মেয়ে দেখা যায়না ।
‘সরি ভাইয়া আসলে আমি খেয়াল ‍করিনি । I am so sorry.’
আমি কোন মতে বললাম, ‘Its ok.’
ঘুরতেই দেখি ফুয়াদ, পেছনে দাঁড়িয়ে জ্বালাময়ী হাসি হাসছে । ‘দোস্ত জোস মাইয়া তো । তোর সাথে জব্বর মানাবে।’
‘চুপ বান্দর । এতক্ষণ কই ছিলি । পারমানবিক (প্রামানিক) স্যারের ক্লাস টেস্ট আছে দিবি না? চল ইউনিভার্সিটিতে যায়।’
‘জো হুকুম ব্রো!’


কণার সাথে দ্বিতীয়বার দেখা হল ইউনিভার্সিটিতে। ফিজিক্স ল্যাবের পাশে দাঁড়িয়ে আছি পেছন থেকে কে যেন ডাক দিল ‘ভাইয়া’ । ঘুরে তাকাতেই আমার চক্ষু চড়ক গাছ ‍অবস্থা। দেখি সেই মেয়েটি দাঁড়িয়ে । আমি তো পুরা হতভ্বম্ব । বললাম, ‘তুমি এখানে পড়?’
‘হ্যা ফিজিক্স ফাস্ট ইয়ার ।’
‘তোমার নামটা যেন কি?’
‘কণা।’
‘আমি....’
‘জানি আপনার নাম রনি । আপনি ফিজিক্স 3rd ইয়ারের Student ক্লাসের ফাস্ট বয়। আচ্ছা আপনাকে সবাই নগা আর্কু বলে ডাকে কেন?’
খাইসে এই মাইয়া আমার পুরা প্রোফাইল জাইনা বইসা আছে । কিন্তু কেন?
‘ভাইয়া বলেন না কেন?’
‘না এমনি আমার ক্লাসের সবার একটা করে নাম আছে। আমার টার পূর্ণ অর্থ ন্যাংটা আকিমিডিস ।’
হা হা হা হাঁসি, এমন সুন্দর হাঁসি কোন দিন শুনিনি।

আমি মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেলাম। কিন্তু কিভাবে তাকে প্রস্তাব দিব তা ভেবেই পাচ্ছিনা। একদিন পুরা ডিটারমাইন্ড হয়ে কণাকে ডাকলাম, আজ তাকে প্রস্তাব দিব ? ডিপার্টমেন্টের পেছনে বসে আছি । কেও একজন আমার ঘাড়ে হাত রাখল ঘুরে দেখি কণা । বসতে বসতে বলল ‘কি সমস্যা ?’
‘সমস্যা মানে ?’
‘ডাকলেন ক্যান? ক্লাস ছিল তো ...’
‘আমি তোমাকে কয়েকটি গুরুত্বপূণ কথা বলব খব মনোযোগ দিয়ে শুনবে।’
‘আমি জানি আপনি কি বলবেন।’
‘মানে?’
‘আপনি বলবেন, তোমার চোখ সুন্দর, তোমার হাঁসি সুন্দর, তুমি দেখতে পরীর মত। তোমাকে আমার খুব পছন্দ। শেষে এক কথা দু কথা বলে বলবেন আই লাভ ইউ ’ ।’
ওরে এই মাইয়া কি থট রিডিং জানে নাকি প্রচুর শুইনা অভ্যস্ত? কোন কুক্ষণে যে এরে এখানে ডাকছিলাম । আবার সে বলল,
‘কি ঠিক বললাম না?’
‘এসব শোনার পর তুমি কি বলবে?’
‘তা তো বলা যাবে না আগে বলেন আমাকে তারপর দেখি কি করা যায়?’
‘আই লাভ ইউ ।’
এটা শুনে কণা শধু হাসলো কোন কথা না বলে উঠে চলে গেল, আর আমি গাধার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম ।
পরে অবশ্য আমাকে পজেটিভ উত্তর জানায় তারপর থেকে শুরু হয় আমার প্রেমিক জীবন। মনের যতটুকু ভালবাসা আছে সবই তাকে দান করলাম । সেও আমাকে প্রচন্ড ভালবাসে ।

কণা অদ্ভুত কাজ করতে পছন্দ করত। একদিন আমি আর ও একসাথে আইসক্রিম খাচ্ছি সে বলল, ‘অ্যাই তোমাদের বাড়িতে আমাকে নিয়ে যাবে না ।’
‘কি? মাথা খারাপ না পেট খারাপ? আমার বাপরে তো চিন না তাই এই কথা বলছ । একদম আশরাফুল কে আউট করার মত করে আমাকে বাড়ি থেকে সোজা বোল্ড আউট করবে।’
‍ ‘ও তাই , ঠিক আছে এই বোলারকে একদিন দেখে আসতে হবে।’
‘খবরদার তোর পায়ে পড়ি তুই যাইস না ।’
‘দেখা যাবে ।’
দেখলেনই কিরকম রিয়্যাকশান করল আমার বাপ। এখন ইউনিভার্সিটি যাচ্ছি কণার সাথে একটু বোঝাপড়া আছে । তার একদিন কি আমার ‍একদিন । রাবির গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখলাম কণা । আজ সে সম্পূর্ন সাদা পোষাক পরেছে, দেখে মনে হচ্ছে এ যেন এক স্বাক্ষাত হুর । মেয়েদের এত সুন্দর হতে হয়না ও এত সুন্দর কেন ওকে দেখলেই বুকের কাছে একটা ব্যাথা অনুভব করি, যদি তাকে হারিয়ে ফেলি এই ভয়ে । এসেছিলাম ওকে কড়া কথা বলতে... আর নাহ, আমি পারবনা এই মেয়েকে কোন দিনও কষ্ট দিতে, শুধু পারব তাকে ভালবাসতে হৃদয়ের সবটুকু ভালবাসা দিয়ে। কণার ব্যাগ্র কণ্ঠস্বর শুনা যাচেছ,
‘অ্যাই এমন হ্যাবলার মত তাকিয়ে কি দেখছ? অ্যাই কি হইসে তোমার ? অসুখ করেছে অ্যাই ...’

সত্ত্ব – আহমেদ সজীব আমান ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:১৬
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হেঁটে আসে বৈশাখ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০০


বৈশাখ, বৈশাখের ঝড় ধূলিবালি
উঠন জুড়ে ঝলমল করছে;
মৌ মৌ ঘ্রান নাকের চারপাশ
তবু বৈশাখ কেনো জানি অহাহাকার-
কালমেঘ দেখে চমকে উঠি!
আজ বুঝি বৈশাখ আমাকে ছুঁয়ে যাবে-
অথচ বৈশাখের নিলাখেলা বুঝা বড় দায়
আজও বৈশাখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×